ঢাকা ০৩:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুদের ওপর সহিংসতা সামাজিক বিকাশের অন্তরায়

  • আপডেট সময় : ০৫:০২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: শিশুর প্রতি সহিংসতা কমানো অত্যন্ত জরুরি। সহিংসতার ফলে শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। সহিংসতার কারণে শিশুদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও মনোযোগ ব্যাহত হয়। এতে তাদের শিক্ষার মান নষ্ট হয় এবং ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কমে যায়। শিশুর প্রতি সহিংসতা তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতীয় আইন অনুযায়ী শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪ সালে বিভিন্ন কারণে ৪৮২ জন শিশু নিহত হয়েছে; যা ২০২৩ সালের একই সময়ের ৪২১ জন শিশুর মৃত্যুর তুলনায় বেশি। তাদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ এবং নিখোঁজের পর হত্যার ঘটনাগুলো প্রধান। এছাড়া ২১৭ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫জনের মৃত্যু হয়েছে ধর্ষণের পর। ৬১জন শিশু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। ৩৪ জন শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ৮৫জন শিক্ষক কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ৩২জন ছেলে শিশু বলাৎকারের শিকার হয়েছে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১২১জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এই সহিংসতার ঘটনাগুলো বাংলাদেশের শিশুদের সুরক্ষার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী শিশুর প্রতি শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, এবং শোষণ দণ্ডনীয় অপরাধ, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ দায়ের করা হয় না বা বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। এইজন্য প্রতিটি থানায় শিশু অধিকার বিষয়ক বিশেষ ডেস্ক স্থাপন প্রয়োজন। শিশু নির্যাতনের অভিযোগ দ্রুত গ্রহণ ও তদন্তে বিশেষ ইউনিট গঠন প্রয়োজন।
বাংলাদেশে গৃহকর্মী শিশুদের সুরক্ষার অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদিও গৃহকর্মী শিশুদের জন্য আইন (যেমন, শিশু শ্রম নিরোধ আইন, ২০১৩) এবং জাতীয় শ্রমনীতি, ২০১২ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু তা বাস্তবায়ন এবং নজরদারির অভাবে অনেক শিশু এখনও বিপদগ্রস্ত। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গৃহকর্মী শিশুদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। ব্র্যাক এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে যে, গৃহকর্মী শিশুদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শিশু শারীরিক নির্যাতন, ৪৫ শতাংশ মানসিক নির্যাতন, এবং ২০ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তাই গৃহকর্মী শিশুদের জন্য ন্যূনতম বয়স, বেতন এবং কাজের পরিবেশের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ ও গৃহকর্মী শিশুদের প্রতি মানবিক আচরণে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচারণা ও প্রশিক্ষণ জরুরি।
বাংলাদেশে সহিংসতার ঘটনা সঠিকভাবে নথিভুক্ত করার এবং দ্রুত প্রতিবেদন করার জন্য ১০৯ হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। তবে, সঠিকভাবে এটির ব্যবহারের হার কম, কারণ অনেক শিশু ও পরিবারের সদস্যরা সচেতন নয়। বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শিশু অধিকার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সঠিক শিক্ষামূলক ক্যাম্পেইন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে শিশুদের প্রতি সহিংসতার প্রতিরোধে কার্যকর প্রতিবেদন ও নথিভুক্তিকরণের হার বৃদ্ধি পায়।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিশুদের ওপর সহিংসতা সামাজিক বিকাশের অন্তরায়

আপডেট সময় : ০৫:০২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

নারী ও শিশু ডেস্ক: শিশুর প্রতি সহিংসতা কমানো অত্যন্ত জরুরি। সহিংসতার ফলে শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। সহিংসতার কারণে শিশুদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও মনোযোগ ব্যাহত হয়। এতে তাদের শিক্ষার মান নষ্ট হয় এবং ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কমে যায়। শিশুর প্রতি সহিংসতা তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতীয় আইন অনুযায়ী শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪ সালে বিভিন্ন কারণে ৪৮২ জন শিশু নিহত হয়েছে; যা ২০২৩ সালের একই সময়ের ৪২১ জন শিশুর মৃত্যুর তুলনায় বেশি। তাদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ এবং নিখোঁজের পর হত্যার ঘটনাগুলো প্রধান। এছাড়া ২১৭ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫জনের মৃত্যু হয়েছে ধর্ষণের পর। ৬১জন শিশু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। ৩৪ জন শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ৮৫জন শিক্ষক কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ৩২জন ছেলে শিশু বলাৎকারের শিকার হয়েছে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১২১জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এই সহিংসতার ঘটনাগুলো বাংলাদেশের শিশুদের সুরক্ষার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী শিশুর প্রতি শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, এবং শোষণ দণ্ডনীয় অপরাধ, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ দায়ের করা হয় না বা বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। এইজন্য প্রতিটি থানায় শিশু অধিকার বিষয়ক বিশেষ ডেস্ক স্থাপন প্রয়োজন। শিশু নির্যাতনের অভিযোগ দ্রুত গ্রহণ ও তদন্তে বিশেষ ইউনিট গঠন প্রয়োজন।
বাংলাদেশে গৃহকর্মী শিশুদের সুরক্ষার অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদিও গৃহকর্মী শিশুদের জন্য আইন (যেমন, শিশু শ্রম নিরোধ আইন, ২০১৩) এবং জাতীয় শ্রমনীতি, ২০১২ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু তা বাস্তবায়ন এবং নজরদারির অভাবে অনেক শিশু এখনও বিপদগ্রস্ত। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গৃহকর্মী শিশুদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। ব্র্যাক এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে যে, গৃহকর্মী শিশুদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শিশু শারীরিক নির্যাতন, ৪৫ শতাংশ মানসিক নির্যাতন, এবং ২০ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তাই গৃহকর্মী শিশুদের জন্য ন্যূনতম বয়স, বেতন এবং কাজের পরিবেশের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ ও গৃহকর্মী শিশুদের প্রতি মানবিক আচরণে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচারণা ও প্রশিক্ষণ জরুরি।
বাংলাদেশে সহিংসতার ঘটনা সঠিকভাবে নথিভুক্ত করার এবং দ্রুত প্রতিবেদন করার জন্য ১০৯ হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। তবে, সঠিকভাবে এটির ব্যবহারের হার কম, কারণ অনেক শিশু ও পরিবারের সদস্যরা সচেতন নয়। বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শিশু অধিকার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সঠিক শিক্ষামূলক ক্যাম্পেইন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে শিশুদের প্রতি সহিংসতার প্রতিরোধে কার্যকর প্রতিবেদন ও নথিভুক্তিকরণের হার বৃদ্ধি পায়।