দেশের খবর ডেস্ক : কোটা পদ্ধতি সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে গতকাল বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরঃ
চাঁদপুরে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ সমর্থনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনের অংশ হিসেবে সমন্বয়কদের একাংশের আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে চাঁদপুর জেলা জজ আদালত ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় এলাকায় প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় সম্মুখে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের উত্তর পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভের শুরুতে শিক্ষার্থীরা জেলা জজ আদালতের সম্মুখে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং তাদের সরিয়ে সড়কের একপাশে নিয়ে আসে। সেখানে মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘আমার খাও, আমার পর, আমাকে গিয়ে গুলি কর’ ‘তোমার কোটা তুমি নাও, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দাও’ ‘আমার ভাই মরলো কেন, আমার বোন মরলো কেন, জবাব চাই, ‘দিয়েছিতো রক্ত, আরও দেব রক্ত, জেগেছেরে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’ ‘কোটা না মেধা, মেধা, মেধা…’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারি বিভিন্ন বাহিনী, ছাত্রলীগ-যুবলীগ গুলি করে ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। আর পুলিশ নিরীহ শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে ঘটনাস্থলে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও স্পেশাল পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করতে পারে, সেজন্য তাদের শান্ত রাখতে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইয়াসির আরাফাত, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ মুহসীন আলম ও জেলা ডিবির ওসি এনামুল হক চৌধুরী। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন করার জন্য বলেছি। তারা যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করে এবং জনগণের জানমালের ক্ষতি না করা এসব বিষয়ে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে, গত ১৯ জুলাই চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তিতে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের সাতটি মামলায় এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩০ জুলাই এদের মধ্যে একজনকে একদিনের রিমান্ড এবং পাঁচজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদেশ দিয়েছেন চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
বাকৃবিতে শিক্ষকদের মৌন মিছিল
বাকৃবি সংবাদদাতা জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদে মৌন মিছিল করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অর্ধশতাধিক শিক্ষক। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সংলগ্ন করিডোর থেকে মিছিলটি শুরু হয়। পরে তারা বাকৃবির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। ওই মৌন মিছিলে বাকৃবির প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। এসময় মার্চ ফর জাস্টিস, গণ গ্রেফতার বন্ধ করা, স্টুডেন্টস ব্লাড ম্যাটারসহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিলে অংশ নেন শিক্ষকবৃন্দ। অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়াসহ দেশব্যাপী সংগঠিত সব সহিংসতার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা। এসময় উপস্থিত শিক্ষকগণ জানান, বিবেকের তাড়নায় আজ আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আর একটি শিক্ষার্থীরও প্রাণ যাতে না ঝরে সেটাই আমাদের কামনা। মিছিল শেষে কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
৯ দফা মেনে নিতে সরকারকে আহ্বান
ময়মনসিংহ সংবাদদাতা জানান, সারা দেশের মতো ময়মনসিংহেও ৯ দফা দাবিতে কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ ও সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে নগরীর জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেন। সমাবেশে ৯ দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আন্দোলনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আশিকুর রহমান, নকিব, আরিফসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা নগরী টাউন হল চত্বরে অবস্থান নেন। এ সময় তারা দাবি আদায়ে নানা স্লোগানে মুখরিত করে তোলে। সমন্বয়কারী আশিকুর রহমান জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশের মতো ময়মনসিংহে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাস্তায় সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে তিনি জানান। যেকোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ২
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জ। এতে দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে দিকে ঠাকুরগাঁও টাঙ্গন ব্রিজ সংলগ্ন অপরাজেয় একাত্তর চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ সময় মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে জর্জ কোট চত্বরে দিকে যাওয়ার অভিমুখে পুলিশ বাধা দেয়। পরে এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বাধা অতিক্রম করে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ও জেলা দায়রা জজ আদালতের গেটের সামনে এলে আবারও পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা বাধা অতিক্রম করে কোর্ট চত্বরে দিকে যেতে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তাতে দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীরা আরও জানান, গুম, গ্রেপ্তারকৃত সমন্বয়কসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার, দমন-নিপীড়ন বন্ধ, নিহত শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচারসহ নয় দফা দাবিতে আমার শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি বের করি। কিন্তু পুলিশ আমাদের বার বার বাধা দেয়। তারা আমাদের নিরাপত্তা না দিয়ে তারাই আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে দুজনকে আহত করেছে। আমরাতো কোনো বিশৃঙ্খলা করিনি। পরে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ও জেলা দায়রা জজ আদালতের গেটের সামনে সড়কে তারা প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান নেন ও যোহরের নামাজ আদায় করেন এবং বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য স্লোগান দিতে থাকেন।
চট্টগ্রামে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ করছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে আদালতের প্রবেশপথে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন চট্টগ্রাম আদালতের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত একাধিক আইনজীবী। আদালতের প্রবেশপথে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের কারণে আদালত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনকারীদের একজন আবদুল মোনাফ বলেন, কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার সারা দেশে আদালত প্রাঙ্গণে আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা-মামলা, গুম-খুনের প্রতিবাদে এবং ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ নামে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পূর্বনির্ধারিত এ কর্মসূচি শুরুর আগে আদালতের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ মার্কেটসহ আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। আদালতে বিনা কারণে আসা লোকজনকে উঠতে দেওয়া হয়নি। বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর আদালতের প্রবেশপথে সোনালী ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেন। এদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের একটি অংশ আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ঘটনাস্থলে থাকা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এস ওবায়েদুল হক এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খুলনায় শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ
খুলনা সংবাদদাতা জানান, ৯ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধে গেলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সেখান থেকে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে বলে জানা যায়। গতকাল বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলন শুরু করেন। তারা নগরীর শিববাড়ি, রয়্যাল মোড়, সাতরাস্তা মোড়, ময়লাপোতা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। অবরোধের শুরুতে নগরীর ময়লাপোতা মোহন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ সেখান থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে বলে জানা যায়। পরে শিক্ষার্থীরা রয়্যাল মোড় এলাকায় এলে পুলিশ তাদের চারদিক থেকে ঘিরে রাখে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সাতরাস্তার মোড়ে থাকা পুলিশের দুটি গাড়ি পিছু হটলেও দুপুর সোয়া ২টার দিকে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ শুরুর পর পুলিশ কাঁদানেগ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদের ছাত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ নগরীর শান্তিধাম মোড়, রয়্যাল মোড়, সাতরাস্তা মোড়, ফুল মার্কেট এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, গতকালই আমাদের ঘোষণা দেওয়া ছিল আর কোনো ছাত্রকে আন্দোলন করতে দেওয়া হবে না। তারা আইন নিজেদের হাতে নিয়েছে। আমাদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশ বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
বরিশালে পুলিশের লাঠিচার্জ, সাংবাদিকসহ আহত ১৫
বরিশাল সংবাদদাতা জানান, হত্যার বিচার, গণগ্রেপ্তার বন্ধ, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয় দফা মেনে নেওয়ার দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ নামক শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এ সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে সাংবাদিকসহ ১০-১৫ জন আহত হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার পর সড়ক থেকে দুই ছাত্রীসহ ১১ জনকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নগরের সদর রোড ও ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকা জুড়ে এ ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর বরিশাল জেলার সমন্বায়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ছিল। সেখানে এসে পুলিশ হামলা করেছে। নারী শিক্ষার্থীদের আহত করেছেন। আমি জানতে পেরেছি অর্ধশত শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। অন্তত ১০-১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যেভাবে গ্রেপ্তার চালিয়েছে, সেটাও ন্যক্কারজনক। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করে ডা. মনীষা পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে আসা শিক্ষক বিপ্লব দাস বলেন, শিক্ষার্থীরা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে ডেকেছিলেন। সবাই আমার ছাত্র। সেই কারণে আমি এসে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছি। শিক্ষার্থীরা সদর রোড থেকে আদালত পাড়ায় আসার সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করেছে। অথচ শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের গোলযোগ করেনি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল থেকে পুলিশ বাহিনীই বরিশাল নগরের প্রধান সড়কগুলো আটকে রাখে। নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা দাবি আদায়ে সুশৃঙ্খলভাবে নগরের ফকিরবাড়ি রোড থেকে সদর রোডে উঠতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এরপরও বাধা উপেক্ষা করে তারা অশ্বিনী কুমার হলে সামনে চলে আসলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরে তারা আদালত পাড়ার সামনের সড়কে গেলে সেখানেও পুলিশ বাধা দেয় এবং ১০-১১ জনকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা কোনো ধরনের সংঘাতে ছিল না। তারপরও বিনা উসকানিতে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং সহপাঠীদের ধরে নিয়ে গেছে। ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, বিরোধী ছাত্রসংগঠনের কিছু নেতা রাস্তা অবরোধ করেছিল। কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটার সামনেও অবরোধ করেছিল। তারা পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের উঠিয়ে দিয়েছি। বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে। উপ-পুলিশ কমিশনারের দাবি এখানে বেশ কিছু শিবিরের ছাত্র ছিল, যাদের আটক করেছে তারা। তবে এতে ভিন্নমত জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর বরিশাল জেলার আহ্বায়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিল। আর হামলার শিকার শিক্ষার্থী মৌসুমি জানিয়েছেন, পুলিশ নিজেদের দোষ ঢাকতে জামায়াত শিবিরের তকমা লাগানোর চেষ্টা করছে। পুরুষ পুলিশরা এসে আমাদের সবাইকে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে। কাউকে বাদ দেয়নি, চুল ধরে লাঠিপেটা করছে। যদিও কোতোয়ালি থানা পুলিশের সদস্যরা জানিয়েছেন-ঘটনাস্থলে নারী পুলিশ সদস্যরা ছিল, যারা নারীদের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ী রোড থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে। ঘটনার ছবি ধারণ করতে যাওয়া দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার আলোকচিত্রি শামীম আহমেদ, হৃদয়, তুহিনসহ অন্তত ৬ সাংবাদিক পুলিশি লাঠিপেটার শিকার হন এবং আহত হন। লাঠিপেটার শিকার সাংবাদিকরা জানান, বিনা উসকানিতে উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাতের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের বাদ দিয়ে সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। এমনকি পরে গিয়ে আহত হওয়া সাংবাদিক শামীম আহমেদও বাদ যায়নি লাঠিপেটা থেকে। ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকরা এর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদও জানালে, তারা ঘটনা অস্বীকার করেন। পরে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে তাৎক্ষণিক জানানো হয়। তিনি নিজে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানালে সাংবাদিকরা আহতদের নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য চলে যায়। এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টায় ছাড়া পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বায়ক হুজাইফা রহমান জানান, ১ জন প্রতিবন্ধী পথচারীসহ পুলিশ ১১ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। ওই প্রতিবন্ধীসহ ৫ জনকে কিছুক্ষণ আগে ছেড়েছে। বাকি ৬ শিক্ষার্থী এখনও তাদের হেফাজতে রয়েছে।