ঢাকা ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিক্ষাঙ্গনে বাজলো ঘণ্টা, হৈ হুল্লোড়ে হারালো স্বাস্থ্যবিধি

  • আপডেট সময় : ০২:১১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাস্কঢাকা মুখে তাপমাত্রা মেপে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ, দূরত্ব মেনে ক্লাস করা- কোভিড নিয়ে সতর্কতার উল্টো চিত্রও দেখা গেছে মহামারির কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গতকাল রোববার চালু করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে রাজধানীর বিদ্যালয়গুলো। তবে চেনা পরিবেশ বদলে গেছে অনেকটা। মহামারির শঙ্কায় যেমন সতর্কতা গেছে, তেমনি শিশুদের আনন্দ-উৎসব আর অভিভাবকদের জটলায় তা হারিয়েও গেছে।
মহামারিতে ৫৪৩ দিন ঘরবন্দি থেকে গতকাল রোববার সকাল থেকে স্কুলে-কলেজে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল সাজানো হয়েছে। তাপমাত্র মেপে স্কুলে প্রবেশ, মাস্ক পড়ে ক্লাসে ঢোকা, দূরত্ব মেনে ক্লাসে বসানো হলেও ক্লাসের বাইরের পরিবেশ ভিন্ন। দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের পেয়ে শিক্ষার্থীদের আনন্দের শেষ ছিল না। বন্ধুদের দেখেই একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছেন তারা। মাস্ক খুলে দেখেছেন একে অন্যকেও। লাইন ধরে স্কুলে প্রবেশ করলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে দূরত্ব ছিল খুবই কম। রূপনগরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে (ব্যাঞ্চ-১) গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল রঙিন কাগজ আর বেলুনে সাজানো হয়েছে। লাইন ধরে শিক্ষার্থীরা তাপমাত্রা মেপে, হাত স্যানিটাইজ করে থার্মাল স্ক্রিনিং করে স্কুলে প্রবেশ করছ
আর স্কুলের বাইরে অনেক শিক্ষার্থীকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। অনেকেই জটলা করে গল্প করছে, হাসি-ঠাট্টায় স্বাস্থ্যবিধির কথা ভুলেই যাচ্ছিলেন তারা। অনেকে আবার স্কুলের বাইরের ফুচকা-চটপটি, ঝালমুড়ির দোকানে ভিড় করছেন। আগের সেই পরিচিত পরিবেশ ফিরে পাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা। দশম শ্রেণির ৮-১০ জন শিক্ষার্থীদের কয়েকজন মাস্ক খুলেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন।
এদেরই একজন বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি তো ক্লাসে মেনেছি। দূরে দূরে বসেছি। এক বেঞ্চে দুজন করে বসেছি। এখন তো বাইরে। অনেকদিন পরে দেখা হল। কারও চেহারা-হাসি মাস্কের কারণে দেখতে পাচ্ছি না। তাই মাস্ক খুলে একটু গল্প করছি।’
আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, সব সময় তো দূরত্ব মেইনটেইন সম্ভব হয় না। এই যে আমরা দুজন একসাথে রিকশায় এসেছি।
দশম শ্রেণির মাহি সকালে ঘুম না ভাঙায় স্কুলে আসতে না পারলেও বন্ধুদের জন্য আড্ডা দিতে চলে এসেছেন। মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের ক্লাস সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ১১টায়। আর ছাত্রদের ক্লাস শুরু হয়েছে বেলা ১২টায়। দুটি পৃথক গেইট দিয়ে আলাদাভাবে ছাত্র ও ছাত্রীদের প্রবেশ করানো হয়েছে। দশম শ্রেণির রেদওয়ানুল ইসলামও বহুদিন পর বন্ধুদের পেয়ে হাত মিলাচ্ছেন, জড়িয়ে ধরছেন।
স্বাস্থ্যবিধির কথা তুললে তিনি বলেন, এতোদিন পরে দেখা হলো, আর জড়িয়ে ধরব না? মাস্ক তো পরে আছি।
এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ, তাহসিন আর নাইম মাস্ক খুলেই গল্প করছিলেন। স্কুলে ফিরতে পেরে খুশি হলেও মহামারীর এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারছেন না তারা। আহনাফ বলেন, আগে তো কখনও মাস্ক পরে আসতে হয়নি। এখন তো পরিবেশ একদম আলাদা। কিন্তু এমন হলেও ক্লাসটা যাতে বন্ধ না হয়। অনলাইনে ক্লাস ভালো লাগে না।
স্কুলের ভেতরে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছে, তা যেন বজায় থাকে সেদিকে নজর দিতে বলেছেন অভিভাবকরা। এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাইফের মা বলেন, এখন যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে সেটা যেন সবসময় থাকে। দুইদিন পরই যাতে আবার সব বন্ধ না হয় সেদিকটাতে নজর দিতে হবে। এই স্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক হাজেরা পারভীন বলেন, এখানে তাপমাত্রা মেপে স্যানিটাইজ করে বাচ্চারা আলাদা আলাদা সিড়ি গেইট দিয়ে স্কুলে ঢুকেছে। আলাদা সেকশন আলাদা সিড়ি ব্যবহার করেছে।
মনিপুর স্কুলের ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষক তাসমিয়া জেরিন জানান, সোয়া দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মেপেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে তিনি বলেন, বাচ্চারা স্কুলে তো মেনে চলেছে। প্রথমদিন বলে হয়ত বাইরে স্বাস্থ্যবিধিটা হয়ত একটু কমে মেনেছে।
মিরপুরের কামাল আহমেদ মজুমদার স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে একই দৃশ্য দেখা যায়। স্কুলের গেটের বাইরে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। একসাথে জড়ো হয়ে গল্প করতে দেখা গেছে। বন্ধুর কাঁধে হাতে দিয়ে হাঁটছিলেন পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরিয়ান। তিনি বলেন, কাছাকাছি থাকলে তো অসুবিধা নাই। মাস্ক তো পরে আছি। কিচ্ছু হবে না। স্কুলে তো সব মেনেই ঢুকেছি। বসেছিও দূরে।
সন্তানকে স্কুল থেকে নিতে আসা তানিয়া ইসলাম বলেন, বাচ্চারা বাসায় থাকতে থাকতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। বাইরে তো কিছুটা এমন হবেই। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মোজাহারুল ইসলাম বলেন, আমরা স্কুলের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু বাইরে তো আমরা ওদের ধরে রাখতে পারব না। আর দীর্ঘদিনের বন্দী জীবন থেকে আজকে ওরা মুক্তি পেয়েছে। ওরা তো হুড়োহুড়ি করবেই। বাচ্চাদের ধর্মই এটা।
এই স্কুলের শ্রেণীকক্ষে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থীকে বসানো হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার মুখে রয়েছে মাস্ক। রূপনগর সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে স্কুলের বাইরে কিছু শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যবিধি মানায় ছিল অনীহা। এই স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবক নূরে জান্নাত বলেন, আপনি কি একেক জনকে ধরে স্বাস্থ্যবিধি মানাইতে পারবেন? জোর করে তো কিছু করা যাবে না। স্কুল খুলছে, এতেই বাচ্চাদের শান্তি। বাচ্চারা একটু এমন করবেই। এই পরিবেশ তো ওরা আগে পায় নাই। স্কুল খোলায় খুশির পাশাপাশি মাস্ক পরে বন্ধুদের দেখতে ভালো লাগছে না এই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর সৌরভের।
তিনি বলেন, স্কুল আসতে পেরেছি এতে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু সবাই আলাদা আলাদা, সবার মুখে মাস্ক দেখতে ভালো লাগছে না।
শিক্ষার্থীদের মত অভিভাবকরাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষায় ছিলেন। স্কুলে স্কুলে অভিভাবকদের যে ভিড় ছিল, তাতে স্বস্তির চিত্রই ছিল বেশি।
মিরপুরের এমডিসি মডেল ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ঘরে বসে থেকে বাচ্চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এখন স্কুল খুলছে, পরিস্থিতি যাতে ভালো থাকে, আর বাচ্চারা যাতে স্কুলে আসতে পারে। বাচ্চারা স্কুলে আসতে পেরে অনেক খুশি।
মিরপুর ১২ নম্বরের লিটল ফ্লাওয়ারস স্কুল ও ঢাকা আইডিয়াল প্রিপারেটরি স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের চেয়ে অভিভাবকদের ভিড়ও ছিল বেশি। তাদের কারও কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। আর সামাজিক দূরত্বও মানতে দেখা যায়নি।
লিটল ফ্লাওয়ারস স্কুলের অভিভাবক শাহ আলম বলেন, স্কুল থেকে বলে দিছে বাচ্চাদের নিয়ে যেতে। আর স্কুলের সামনে তো জায়গা কম। এখানে না দাঁড়ালে বাচ্চারা আমাদের দেখবে কেমনে? দূরে দাঁড়ানো সম্ভব না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম : রাজধানীর গণকটুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকেই দেখা গেল, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কয়েকজন অভিভাবক এদিক-ওদিক দাঁড়িয়ে আছেন। বিদ্যালয়ে তখন তাদের সন্তানের ক্লাস চলছে। বিদ্যালয়ের দোতলায় একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা গেল, এক শিক্ষক পাঠদানে ব্যস্ত। শিক্ষার্থীরা সবাই দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে। সবার মুখে মাস্ক। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির চিত্রও ভালো দেখা গেল। কিন্তু শিক্ষার্থীর উপস্থিতির যে তথ্য জানা গেল, সেটাকে ভালো বলা যায় না। আজ ছিল ষষ্ঠ, পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পঞ্চম শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৮২ জন। কিন্তু আজ উপস্থিত ছিল ৪২ জন। আর তৃতীয় শেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৭০ জন। কিন্তু উপস্থিত ছিল ৩৬ জন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। অষ্টম শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৭৭ জন। কিন্তু উপস্থিত ছিল ৫০ জন। উপস্থিতি কম কেন, জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মাহমুদা ইয়াসমিন বলেন, দীর্ঘদিন পর খুলছে এবং করোনার কারণেও হয়তো প্রথম দিন উপস্থিতি এমন হয়ে থাকতে পারে। তবে তারা আশা করছেন, আজ সোমবার থেকে উপস্থিতি বাড়বে। গণকঢুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো হাজারীবাগের আরেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও উপস্থিতি কম দেখা গেছে। হাজারীবাগ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও স্বাস্থ্যবিধি মানার চিত্র ভালো দেখা গেছে। প্রধান শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা নিজেই তদারক করছিলেন। নিচতলায় একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা গেল, ছাত্রীরা সবাই মাস্ক পরে ক্লাস করছে। তাদের বসানোও হয়েছে দূরত্ব মেনে। বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে আছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। তাপমাত্রা মাপার জন্য আছে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার। প্রধান শিক্ষকের টেবিলে প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স। এগুলো সব ঠিক থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ভালো পাওয়া গেল না। বিদ্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণিতে দুই শাখা মিলে মোট শিক্ষার্থী ৭০ জন। কিন্তু উপস্থিত ছিল ৪০ জন। উপস্থিতির হার ৫৩। আর তৃতীয় শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৮৯ জন। উপস্থিত ছিল ৫৬ জন। মানে উপস্থিতি হার ৬৩ শতাংশ। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা বলেন, তারা সব অভিভাবকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করছেন। মনে হচ্ছে, কিছু অভিভাবক এখনো দ্বিধাগ্রস্ত। আবারও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তিনি ধারণা করছেন, এরপর থেকে উপস্থিতি বাড়বে।
বগুড়ায় ব্যান্ড বাজিয়ে ফুল দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ : টানা ৫৪৩ দিন পর শিক্ষার্থীরা পা রাখবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। তাই শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে বগুড়ার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে আয়োজনের কমতি ছিল না। দেড় বছর পর বিদ্যালয়ে পা রাখে এসএসসি পরীক্ষার্থী আফিফা হাসান। তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন। স্কাউট দলের সদস্যরা করতালি দিয়ে ও ব্যান্ড বাজিয়ে আফিফাকে অভিবাদন জানায়। এরপর একে একে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এসএসসির অন্যান্য শিক্ষার্থী। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করতে রাখা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ে প্রবেশের পর শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপে স্কাউট দলের সদস্যরা। এরপর সকাল পৌনে আটটার দিকে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পরই শুরু হয়ে যায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। ক্লাস শেষে শিক্ষার্থী আফিফা হেমন্তি বলে, ‘দেড় বছর পর ক্লাসরুমে বসে ক্লাস করলাম। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। সরাসরি স্যারদের সঙ্গে দেখা হলো। এই অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
প্রথম ঘণ্টার পাঠদান শেষে বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হজরত আলী, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহবুব মোর্শেদ ও বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. রাবেয়া খাতুন বক্তব্য দেন। মোছা. রাবেয়া খাতুন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করা হয়েছে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য আইসোলেশন কক্ষও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এখনো তাপমাত্রা বেশি থাকার জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে ফেরত পাঠানো বা আইসোলেশনে নিতে হয়নি।
দেড় বছর পর নৌকা নিয়ে বিদ্যালয়ে হাবিবা : ‘দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম কবে বিদ্যালয় খুলবে। আজ সেই দিন, বিদ্যালয় খুলেছে। তবে বন্যায় রাস্তা-ঘাট সব পানিতে ডুবেছে। তারপরও নৌকা বেয়ে ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যালয়ে এসেছি। বিদ্যালয়ে পৌঁছা মাত্রই শিক্ষকরা আমাকে বরণ করে নেন।’
এভাবেই দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ে ফেরার কথা জানাচ্ছিলো টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সৈদামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার। হাবিবা আরও বলে, ‘দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় খুলেছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রিয় শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। বাবা-মা আরও উৎসাহিত হয়ে আমাকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। আমি নিজেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে নৌকা বেয়ে বিদ্যালয়ে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও দুই বান্ধবী নৌকায় এসেছে। তারাও আমাকে সহযোগিতা করেছে। বিদ্যালয়ে এসে বেশ আনন্দ পেয়েছি। আমার ক্লাস রোল-৩। এজন্য শিক্ষকরাও আমাকে অনেক আদর-স্নেহ করেন।’
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সেজুতি সরকার বলে, ‘বিদ্যালয়ে এসে আমি খুবই খুশি। দীর্ঘদিন পর শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। আমিও নৌকা নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছি। বন্যার পানি থাকায় সব সড়ক ডুবে গেছে। এজন্য নৌকা ছাড়া আর বিকল্প উপায় নেই। বিদ্যালয়ে আসা মাত্রই শিক্ষকরা আমাদের বরণ করে নেন।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন সুলতানা খান বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর পর বিদ্যালয় খুলেছে। আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহ নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছে। আমরা তাদের বরণ করে নিয়েছি। বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে ও তাদের বরণ করতে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। বিদ্যালয়ে আসার পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে করোনাভাইরাস ও ভেঙ্গু বিষয়ে আলোচনা করা হয়। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে খুবই আনন্দ পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিন আমরা পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। প্রথমদিনে পঞ্চম শ্রেণিতে ৪১ জনের মধ্যে ২৮ জন ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৪১ জনের মধ্যে ৩২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ে পাঠদানের সব প্রস্তুতি আগে থেকেই নেওয়া হয়েছিল। সকালে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর সঠিক সময়ে ক্লাস শুরু হয়। আমরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। বিদ্যালয়ে পানি নেই। তবে বিদ্যালয়ের চারদিকেই বন্যার পানিতে থৈ থৈ অবস্থা। এজন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নৌকা করে বিদ্যালয়ে এসেছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সদানন্দ পাল বলেন, ‘উপজেলায় ৭৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই একযোগে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে একটি বিদ্যালয়ে পানি থাকার কারণে পাশের বাড়িতে পাঠদান সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আর কোনও সমস্যা নেই। ’
প্রসঙ্গত, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ঢিলেঢালা স্বাস্থ্যবিধি কওমি মাদরাসার শ্রেণিকক্ষে : করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো মাদরাসাগুলোতেও রোববার ক্লাস শুরু হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি মাদরাসা সরেজমিনে ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মানায় ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ছাত্রদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি, কোথাও সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি। কোথাও দুটো একসঙ্গে নেই। তবে দীর্ঘদিন পর মাদরাসা চালু হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক- সবাই খুশি।
কক্ষ অপরিষ্কার, আজিমপুর গার্লসের অধ্যক্ষ বরখাস্ত : মহামারির মধ্যে দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথমদিন একটি কক্ষ অপরিষ্কার থাকায় আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গতকাল রোববার সকালে এ স্কুলের পাঠদান কার্যক্রমের প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের জানান। মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, একটি কক্ষ অপরিষ্কার পেয়েছি। উনাকে আমরা প্রথমে শোকজ করব, কিছু করতে হলে তো আগে শোকজ করতে হয়। অধ্যক্ষ হাসিবুর রহমান বলেন, মন্ত্রী মহোদয় যখন পরিদর্শনে আসেন, তখন তিনি আমদের কলেজের একটি স্টোর রুমে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমি তখন বলতে পারিনি যে এটা স্টোর রুম। ‘আমার চাকরির আর মাত্র পনের দিনের মতো আছে। এখন আমার কী করেন, তারাই বলতে পারবেন। ডিজি মহোদয় বলেছেন, প্রথমে শোকজ করবেন।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিক্ষাঙ্গনে বাজলো ঘণ্টা, হৈ হুল্লোড়ে হারালো স্বাস্থ্যবিধি

আপডেট সময় : ০২:১১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাস্কঢাকা মুখে তাপমাত্রা মেপে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ, দূরত্ব মেনে ক্লাস করা- কোভিড নিয়ে সতর্কতার উল্টো চিত্রও দেখা গেছে মহামারির কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গতকাল রোববার চালু করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে রাজধানীর বিদ্যালয়গুলো। তবে চেনা পরিবেশ বদলে গেছে অনেকটা। মহামারির শঙ্কায় যেমন সতর্কতা গেছে, তেমনি শিশুদের আনন্দ-উৎসব আর অভিভাবকদের জটলায় তা হারিয়েও গেছে।
মহামারিতে ৫৪৩ দিন ঘরবন্দি থেকে গতকাল রোববার সকাল থেকে স্কুলে-কলেজে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল সাজানো হয়েছে। তাপমাত্র মেপে স্কুলে প্রবেশ, মাস্ক পড়ে ক্লাসে ঢোকা, দূরত্ব মেনে ক্লাসে বসানো হলেও ক্লাসের বাইরের পরিবেশ ভিন্ন। দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের পেয়ে শিক্ষার্থীদের আনন্দের শেষ ছিল না। বন্ধুদের দেখেই একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছেন তারা। মাস্ক খুলে দেখেছেন একে অন্যকেও। লাইন ধরে স্কুলে প্রবেশ করলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে দূরত্ব ছিল খুবই কম। রূপনগরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে (ব্যাঞ্চ-১) গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল রঙিন কাগজ আর বেলুনে সাজানো হয়েছে। লাইন ধরে শিক্ষার্থীরা তাপমাত্রা মেপে, হাত স্যানিটাইজ করে থার্মাল স্ক্রিনিং করে স্কুলে প্রবেশ করছ
আর স্কুলের বাইরে অনেক শিক্ষার্থীকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। অনেকেই জটলা করে গল্প করছে, হাসি-ঠাট্টায় স্বাস্থ্যবিধির কথা ভুলেই যাচ্ছিলেন তারা। অনেকে আবার স্কুলের বাইরের ফুচকা-চটপটি, ঝালমুড়ির দোকানে ভিড় করছেন। আগের সেই পরিচিত পরিবেশ ফিরে পাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা। দশম শ্রেণির ৮-১০ জন শিক্ষার্থীদের কয়েকজন মাস্ক খুলেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন।
এদেরই একজন বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি তো ক্লাসে মেনেছি। দূরে দূরে বসেছি। এক বেঞ্চে দুজন করে বসেছি। এখন তো বাইরে। অনেকদিন পরে দেখা হল। কারও চেহারা-হাসি মাস্কের কারণে দেখতে পাচ্ছি না। তাই মাস্ক খুলে একটু গল্প করছি।’
আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, সব সময় তো দূরত্ব মেইনটেইন সম্ভব হয় না। এই যে আমরা দুজন একসাথে রিকশায় এসেছি।
দশম শ্রেণির মাহি সকালে ঘুম না ভাঙায় স্কুলে আসতে না পারলেও বন্ধুদের জন্য আড্ডা দিতে চলে এসেছেন। মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের ক্লাস সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ১১টায়। আর ছাত্রদের ক্লাস শুরু হয়েছে বেলা ১২টায়। দুটি পৃথক গেইট দিয়ে আলাদাভাবে ছাত্র ও ছাত্রীদের প্রবেশ করানো হয়েছে। দশম শ্রেণির রেদওয়ানুল ইসলামও বহুদিন পর বন্ধুদের পেয়ে হাত মিলাচ্ছেন, জড়িয়ে ধরছেন।
স্বাস্থ্যবিধির কথা তুললে তিনি বলেন, এতোদিন পরে দেখা হলো, আর জড়িয়ে ধরব না? মাস্ক তো পরে আছি।
এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ, তাহসিন আর নাইম মাস্ক খুলেই গল্প করছিলেন। স্কুলে ফিরতে পেরে খুশি হলেও মহামারীর এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারছেন না তারা। আহনাফ বলেন, আগে তো কখনও মাস্ক পরে আসতে হয়নি। এখন তো পরিবেশ একদম আলাদা। কিন্তু এমন হলেও ক্লাসটা যাতে বন্ধ না হয়। অনলাইনে ক্লাস ভালো লাগে না।
স্কুলের ভেতরে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছে, তা যেন বজায় থাকে সেদিকে নজর দিতে বলেছেন অভিভাবকরা। এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাইফের মা বলেন, এখন যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে সেটা যেন সবসময় থাকে। দুইদিন পরই যাতে আবার সব বন্ধ না হয় সেদিকটাতে নজর দিতে হবে। এই স্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক হাজেরা পারভীন বলেন, এখানে তাপমাত্রা মেপে স্যানিটাইজ করে বাচ্চারা আলাদা আলাদা সিড়ি গেইট দিয়ে স্কুলে ঢুকেছে। আলাদা সেকশন আলাদা সিড়ি ব্যবহার করেছে।
মনিপুর স্কুলের ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষক তাসমিয়া জেরিন জানান, সোয়া দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মেপেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে তিনি বলেন, বাচ্চারা স্কুলে তো মেনে চলেছে। প্রথমদিন বলে হয়ত বাইরে স্বাস্থ্যবিধিটা হয়ত একটু কমে মেনেছে।
মিরপুরের কামাল আহমেদ মজুমদার স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে একই দৃশ্য দেখা যায়। স্কুলের গেটের বাইরে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। একসাথে জড়ো হয়ে গল্প করতে দেখা গেছে। বন্ধুর কাঁধে হাতে দিয়ে হাঁটছিলেন পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরিয়ান। তিনি বলেন, কাছাকাছি থাকলে তো অসুবিধা নাই। মাস্ক তো পরে আছি। কিচ্ছু হবে না। স্কুলে তো সব মেনেই ঢুকেছি। বসেছিও দূরে।
সন্তানকে স্কুল থেকে নিতে আসা তানিয়া ইসলাম বলেন, বাচ্চারা বাসায় থাকতে থাকতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। বাইরে তো কিছুটা এমন হবেই। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মোজাহারুল ইসলাম বলেন, আমরা স্কুলের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু বাইরে তো আমরা ওদের ধরে রাখতে পারব না। আর দীর্ঘদিনের বন্দী জীবন থেকে আজকে ওরা মুক্তি পেয়েছে। ওরা তো হুড়োহুড়ি করবেই। বাচ্চাদের ধর্মই এটা।
এই স্কুলের শ্রেণীকক্ষে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থীকে বসানো হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার মুখে রয়েছে মাস্ক। রূপনগর সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে স্কুলের বাইরে কিছু শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যবিধি মানায় ছিল অনীহা। এই স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবক নূরে জান্নাত বলেন, আপনি কি একেক জনকে ধরে স্বাস্থ্যবিধি মানাইতে পারবেন? জোর করে তো কিছু করা যাবে না। স্কুল খুলছে, এতেই বাচ্চাদের শান্তি। বাচ্চারা একটু এমন করবেই। এই পরিবেশ তো ওরা আগে পায় নাই। স্কুল খোলায় খুশির পাশাপাশি মাস্ক পরে বন্ধুদের দেখতে ভালো লাগছে না এই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর সৌরভের।
তিনি বলেন, স্কুল আসতে পেরেছি এতে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু সবাই আলাদা আলাদা, সবার মুখে মাস্ক দেখতে ভালো লাগছে না।
শিক্ষার্থীদের মত অভিভাবকরাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষায় ছিলেন। স্কুলে স্কুলে অভিভাবকদের যে ভিড় ছিল, তাতে স্বস্তির চিত্রই ছিল বেশি।
মিরপুরের এমডিসি মডেল ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ঘরে বসে থেকে বাচ্চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এখন স্কুল খুলছে, পরিস্থিতি যাতে ভালো থাকে, আর বাচ্চারা যাতে স্কুলে আসতে পারে। বাচ্চারা স্কুলে আসতে পেরে অনেক খুশি।
মিরপুর ১২ নম্বরের লিটল ফ্লাওয়ারস স্কুল ও ঢাকা আইডিয়াল প্রিপারেটরি স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের চেয়ে অভিভাবকদের ভিড়ও ছিল বেশি। তাদের কারও কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। আর সামাজিক দূরত্বও মানতে দেখা যায়নি।
লিটল ফ্লাওয়ারস স্কুলের অভিভাবক শাহ আলম বলেন, স্কুল থেকে বলে দিছে বাচ্চাদের নিয়ে যেতে। আর স্কুলের সামনে তো জায়গা কম। এখানে না দাঁড়ালে বাচ্চারা আমাদের দেখবে কেমনে? দূরে দাঁড়ানো সম্ভব না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম : রাজধানীর গণকটুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকেই দেখা গেল, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কয়েকজন অভিভাবক এদিক-ওদিক দাঁড়িয়ে আছেন। বিদ্যালয়ে তখন তাদের সন্তানের ক্লাস চলছে। বিদ্যালয়ের দোতলায় একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা গেল, এক শিক্ষক পাঠদানে ব্যস্ত। শিক্ষার্থীরা সবাই দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে। সবার মুখে মাস্ক। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির চিত্রও ভালো দেখা গেল। কিন্তু শিক্ষার্থীর উপস্থিতির যে তথ্য জানা গেল, সেটাকে ভালো বলা যায় না। আজ ছিল ষষ্ঠ, পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পঞ্চম শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৮২ জন। কিন্তু আজ উপস্থিত ছিল ৪২ জন। আর তৃতীয় শেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৭০ জন। কিন্তু উপস্থিত ছিল ৩৬ জন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। অষ্টম শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৭৭ জন। কিন্তু উপস্থিত ছিল ৫০ জন। উপস্থিতি কম কেন, জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মাহমুদা ইয়াসমিন বলেন, দীর্ঘদিন পর খুলছে এবং করোনার কারণেও হয়তো প্রথম দিন উপস্থিতি এমন হয়ে থাকতে পারে। তবে তারা আশা করছেন, আজ সোমবার থেকে উপস্থিতি বাড়বে। গণকঢুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো হাজারীবাগের আরেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও উপস্থিতি কম দেখা গেছে। হাজারীবাগ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও স্বাস্থ্যবিধি মানার চিত্র ভালো দেখা গেছে। প্রধান শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা নিজেই তদারক করছিলেন। নিচতলায় একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা গেল, ছাত্রীরা সবাই মাস্ক পরে ক্লাস করছে। তাদের বসানোও হয়েছে দূরত্ব মেনে। বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে আছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। তাপমাত্রা মাপার জন্য আছে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার। প্রধান শিক্ষকের টেবিলে প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স। এগুলো সব ঠিক থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ভালো পাওয়া গেল না। বিদ্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণিতে দুই শাখা মিলে মোট শিক্ষার্থী ৭০ জন। কিন্তু উপস্থিত ছিল ৪০ জন। উপস্থিতির হার ৫৩। আর তৃতীয় শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ৮৯ জন। উপস্থিত ছিল ৫৬ জন। মানে উপস্থিতি হার ৬৩ শতাংশ। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা বলেন, তারা সব অভিভাবকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করছেন। মনে হচ্ছে, কিছু অভিভাবক এখনো দ্বিধাগ্রস্ত। আবারও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তিনি ধারণা করছেন, এরপর থেকে উপস্থিতি বাড়বে।
বগুড়ায় ব্যান্ড বাজিয়ে ফুল দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ : টানা ৫৪৩ দিন পর শিক্ষার্থীরা পা রাখবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। তাই শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে বগুড়ার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে আয়োজনের কমতি ছিল না। দেড় বছর পর বিদ্যালয়ে পা রাখে এসএসসি পরীক্ষার্থী আফিফা হাসান। তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন। স্কাউট দলের সদস্যরা করতালি দিয়ে ও ব্যান্ড বাজিয়ে আফিফাকে অভিবাদন জানায়। এরপর একে একে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এসএসসির অন্যান্য শিক্ষার্থী। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করতে রাখা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ে প্রবেশের পর শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপে স্কাউট দলের সদস্যরা। এরপর সকাল পৌনে আটটার দিকে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পরই শুরু হয়ে যায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। ক্লাস শেষে শিক্ষার্থী আফিফা হেমন্তি বলে, ‘দেড় বছর পর ক্লাসরুমে বসে ক্লাস করলাম। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। সরাসরি স্যারদের সঙ্গে দেখা হলো। এই অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
প্রথম ঘণ্টার পাঠদান শেষে বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হজরত আলী, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহবুব মোর্শেদ ও বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. রাবেয়া খাতুন বক্তব্য দেন। মোছা. রাবেয়া খাতুন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করা হয়েছে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য আইসোলেশন কক্ষও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এখনো তাপমাত্রা বেশি থাকার জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে ফেরত পাঠানো বা আইসোলেশনে নিতে হয়নি।
দেড় বছর পর নৌকা নিয়ে বিদ্যালয়ে হাবিবা : ‘দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম কবে বিদ্যালয় খুলবে। আজ সেই দিন, বিদ্যালয় খুলেছে। তবে বন্যায় রাস্তা-ঘাট সব পানিতে ডুবেছে। তারপরও নৌকা বেয়ে ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যালয়ে এসেছি। বিদ্যালয়ে পৌঁছা মাত্রই শিক্ষকরা আমাকে বরণ করে নেন।’
এভাবেই দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ে ফেরার কথা জানাচ্ছিলো টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সৈদামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার। হাবিবা আরও বলে, ‘দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় খুলেছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রিয় শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। বাবা-মা আরও উৎসাহিত হয়ে আমাকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। আমি নিজেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে নৌকা বেয়ে বিদ্যালয়ে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও দুই বান্ধবী নৌকায় এসেছে। তারাও আমাকে সহযোগিতা করেছে। বিদ্যালয়ে এসে বেশ আনন্দ পেয়েছি। আমার ক্লাস রোল-৩। এজন্য শিক্ষকরাও আমাকে অনেক আদর-স্নেহ করেন।’
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সেজুতি সরকার বলে, ‘বিদ্যালয়ে এসে আমি খুবই খুশি। দীর্ঘদিন পর শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। আমিও নৌকা নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছি। বন্যার পানি থাকায় সব সড়ক ডুবে গেছে। এজন্য নৌকা ছাড়া আর বিকল্প উপায় নেই। বিদ্যালয়ে আসা মাত্রই শিক্ষকরা আমাদের বরণ করে নেন।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন সুলতানা খান বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর পর বিদ্যালয় খুলেছে। আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহ নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছে। আমরা তাদের বরণ করে নিয়েছি। বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে ও তাদের বরণ করতে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। বিদ্যালয়ে আসার পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে করোনাভাইরাস ও ভেঙ্গু বিষয়ে আলোচনা করা হয়। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে খুবই আনন্দ পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিন আমরা পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। প্রথমদিনে পঞ্চম শ্রেণিতে ৪১ জনের মধ্যে ২৮ জন ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৪১ জনের মধ্যে ৩২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ে পাঠদানের সব প্রস্তুতি আগে থেকেই নেওয়া হয়েছিল। সকালে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর সঠিক সময়ে ক্লাস শুরু হয়। আমরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। বিদ্যালয়ে পানি নেই। তবে বিদ্যালয়ের চারদিকেই বন্যার পানিতে থৈ থৈ অবস্থা। এজন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নৌকা করে বিদ্যালয়ে এসেছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সদানন্দ পাল বলেন, ‘উপজেলায় ৭৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই একযোগে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে একটি বিদ্যালয়ে পানি থাকার কারণে পাশের বাড়িতে পাঠদান সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আর কোনও সমস্যা নেই। ’
প্রসঙ্গত, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ঢিলেঢালা স্বাস্থ্যবিধি কওমি মাদরাসার শ্রেণিকক্ষে : করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো মাদরাসাগুলোতেও রোববার ক্লাস শুরু হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি মাদরাসা সরেজমিনে ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মানায় ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ছাত্রদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি, কোথাও সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি। কোথাও দুটো একসঙ্গে নেই। তবে দীর্ঘদিন পর মাদরাসা চালু হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক- সবাই খুশি।
কক্ষ অপরিষ্কার, আজিমপুর গার্লসের অধ্যক্ষ বরখাস্ত : মহামারির মধ্যে দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথমদিন একটি কক্ষ অপরিষ্কার থাকায় আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গতকাল রোববার সকালে এ স্কুলের পাঠদান কার্যক্রমের প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের জানান। মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, একটি কক্ষ অপরিষ্কার পেয়েছি। উনাকে আমরা প্রথমে শোকজ করব, কিছু করতে হলে তো আগে শোকজ করতে হয়। অধ্যক্ষ হাসিবুর রহমান বলেন, মন্ত্রী মহোদয় যখন পরিদর্শনে আসেন, তখন তিনি আমদের কলেজের একটি স্টোর রুমে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমি তখন বলতে পারিনি যে এটা স্টোর রুম। ‘আমার চাকরির আর মাত্র পনের দিনের মতো আছে। এখন আমার কী করেন, তারাই বলতে পারবেন। ডিজি মহোদয় বলেছেন, প্রথমে শোকজ করবেন।’