ঢাকা ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শত্রুকে ১৭ বছর ধরে মনে রাখে কাক, গবেষণা

  • আপডেট সময় : ০৬:৪৮:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৬৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: কেউ তোমার ক্ষতি করলে তার প্রতি তোমার রাগ হতেই পারে। মনে মনে তুমি তাকে শত্রু ভাবতেই পারো। সভ্য মানুষ হিসেবে তুমি তার ক্ষতি করবে না নিশ্চয়ই। আক্রমণ করার তো প্রশ্নই আসে না। তবে প্রাণীদের মধ্যে মানুষের মতো কিছু বুদ্ধিমত্তার নিদর্শন দেখা যায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গবেষকেরা পর্যন্ত এসব তথ্য পেয়ে অবাক হন। প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এমনই কিছু নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। যে তথ্য আগে কখনো শোনা যায়নি।

নতুন গবেষণা অনুযায়ী, যদি কোনো কাক মানুষের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে, তবে এরা ১৭ বছর পর্যন্ত মনে রাখতে পারে। শুধু তাই না, এরা প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টাও করতে পারে।

সাধারণভাবে দেখলে মনে হবে, কাক শুধু গাছে বসে কা কা করে ডাকে। এদের স্মৃতিশক্তিই বা আর কতটুকু হবে? উইনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একদল বিশেষজ্ঞের নেতৃত্বে ২০০৬ সালে এই গবেষণা শুরু হয়। পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক জন মার্জলাফ গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তিনি বুঝতে চেয়েছিলেন, কাক প্রতিশোধ নিতে পারে কিনা। পরীক্ষার সময় তিনি একটি ভয়ংকর মুখোশ পরে জাল দিয়ে সাতটি কাক ধরেন। কিছু সময় কাকদের আটকে রাখেন। এদের পায়ে চিহ্নিত রিং পরিয়ে দেন। কাকগুলোর ডানায়ও চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়। পরে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।

কাকগুলো ছেড়ে দেওয়ার পর ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। কাকগুলো তাঁকে অনুসরণ করা শুরু করে। যখনই তিনি ক্যাম্পাসে মুখোশটি পরে হাঁটতেন, কাকগুলো তাঁকে আক্রমণ করত।

শুধু এই সাতটি কাক আক্রমণ করত এমন না, অন্যান্য কাকও এসে আক্রমণে যোগ দিত। এই আক্রমণের ঘটনা সাত বছর ধরে চলতে থাকে। অধ্যাপক মার্জরফ ও তাঁর সহকারীরা মাঝেমধ্যে একই মুখোশ পরে ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি করতেন এবং কাকদের খাবার দিতেন। মার্জলাফ বলেছেন, একবার সেই মুখোশ পরে হাঁটার সময় ৫৩টির মধ্যে ৪৭টি কাক তাঁকে চিৎকার করছিল। এর মানে, কাকেরা শুধু বিপদ চিনতে পারে এমন না, অন্যদেরও বিপদের এই তথ্য শিখিয়ে দিতে পারে।

কাকের যে শুধু ভালো স্মৃতিশক্তি আর বুদ্ধিমত্তা আছে, এমন না, এদের সামাজিক কাঠামোও খুব জটিল। এরা পারিবারিক গোষ্ঠীতে বসবাস করে। এদের আচরণ থেকে বোঝা যায়, এদের আবেগও জটিল।

যেমন কাক মৃত সঙ্গীর জন্য একধরনের ‘শোকসভা’ করতে দেখা গেছে। এরা খুব দারুণভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এরা শুধু অন্য কাককে হুমকির বিষয়ে সতর্কবার্তাই দেয় না, খাবারের উৎস নিয়ে তথ্য শেয়ার করে, শিকারিদের মোকাবিলা করতে দল গঠন করে।

কাকের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো, এদের শেখার ক্ষমতা। এক কাক যদি কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে বিপদ হিসেবে শনাক্ত করে, তবে সে অন্য কাককে তথ্যটি শেখাতে পারে!

২০১৩ সালের পর থেকে অধ্যাপক মার্জলাফের ওপর কাকের আগ্রাসন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, পরীক্ষার প্রায় ১৭ বছর পর অধ্যাপক মার্জলাফ আবার সেই মুখোশ পরে বাইরে হাঁটেন। এই প্রথমবারের মতো কাক তাঁকে আক্রমণ করেনি। কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখায়নি। সূত্র: আর্থ ডটকম

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দাভোসে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

শত্রুকে ১৭ বছর ধরে মনে রাখে কাক, গবেষণা

আপডেট সময় : ০৬:৪৮:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: কেউ তোমার ক্ষতি করলে তার প্রতি তোমার রাগ হতেই পারে। মনে মনে তুমি তাকে শত্রু ভাবতেই পারো। সভ্য মানুষ হিসেবে তুমি তার ক্ষতি করবে না নিশ্চয়ই। আক্রমণ করার তো প্রশ্নই আসে না। তবে প্রাণীদের মধ্যে মানুষের মতো কিছু বুদ্ধিমত্তার নিদর্শন দেখা যায়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গবেষকেরা পর্যন্ত এসব তথ্য পেয়ে অবাক হন। প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এমনই কিছু নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। যে তথ্য আগে কখনো শোনা যায়নি।

নতুন গবেষণা অনুযায়ী, যদি কোনো কাক মানুষের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে, তবে এরা ১৭ বছর পর্যন্ত মনে রাখতে পারে। শুধু তাই না, এরা প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টাও করতে পারে।

সাধারণভাবে দেখলে মনে হবে, কাক শুধু গাছে বসে কা কা করে ডাকে। এদের স্মৃতিশক্তিই বা আর কতটুকু হবে? উইনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একদল বিশেষজ্ঞের নেতৃত্বে ২০০৬ সালে এই গবেষণা শুরু হয়। পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক জন মার্জলাফ গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তিনি বুঝতে চেয়েছিলেন, কাক প্রতিশোধ নিতে পারে কিনা। পরীক্ষার সময় তিনি একটি ভয়ংকর মুখোশ পরে জাল দিয়ে সাতটি কাক ধরেন। কিছু সময় কাকদের আটকে রাখেন। এদের পায়ে চিহ্নিত রিং পরিয়ে দেন। কাকগুলোর ডানায়ও চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়। পরে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।

কাকগুলো ছেড়ে দেওয়ার পর ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। কাকগুলো তাঁকে অনুসরণ করা শুরু করে। যখনই তিনি ক্যাম্পাসে মুখোশটি পরে হাঁটতেন, কাকগুলো তাঁকে আক্রমণ করত।

শুধু এই সাতটি কাক আক্রমণ করত এমন না, অন্যান্য কাকও এসে আক্রমণে যোগ দিত। এই আক্রমণের ঘটনা সাত বছর ধরে চলতে থাকে। অধ্যাপক মার্জরফ ও তাঁর সহকারীরা মাঝেমধ্যে একই মুখোশ পরে ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি করতেন এবং কাকদের খাবার দিতেন। মার্জলাফ বলেছেন, একবার সেই মুখোশ পরে হাঁটার সময় ৫৩টির মধ্যে ৪৭টি কাক তাঁকে চিৎকার করছিল। এর মানে, কাকেরা শুধু বিপদ চিনতে পারে এমন না, অন্যদেরও বিপদের এই তথ্য শিখিয়ে দিতে পারে।

কাকের যে শুধু ভালো স্মৃতিশক্তি আর বুদ্ধিমত্তা আছে, এমন না, এদের সামাজিক কাঠামোও খুব জটিল। এরা পারিবারিক গোষ্ঠীতে বসবাস করে। এদের আচরণ থেকে বোঝা যায়, এদের আবেগও জটিল।

যেমন কাক মৃত সঙ্গীর জন্য একধরনের ‘শোকসভা’ করতে দেখা গেছে। এরা খুব দারুণভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এরা শুধু অন্য কাককে হুমকির বিষয়ে সতর্কবার্তাই দেয় না, খাবারের উৎস নিয়ে তথ্য শেয়ার করে, শিকারিদের মোকাবিলা করতে দল গঠন করে।

কাকের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো, এদের শেখার ক্ষমতা। এক কাক যদি কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে বিপদ হিসেবে শনাক্ত করে, তবে সে অন্য কাককে তথ্যটি শেখাতে পারে!

২০১৩ সালের পর থেকে অধ্যাপক মার্জলাফের ওপর কাকের আগ্রাসন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, পরীক্ষার প্রায় ১৭ বছর পর অধ্যাপক মার্জলাফ আবার সেই মুখোশ পরে বাইরে হাঁটেন। এই প্রথমবারের মতো কাক তাঁকে আক্রমণ করেনি। কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখায়নি। সূত্র: আর্থ ডটকম