ঢাকা ০৪:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

রংপুরে বেগুনের কেজি ১ টাকা

  • আপডেট সময় : ০২:৩৪:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪
  • ১৩২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কেসামত ছাওলা গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম ২০ শতক জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। শুরুতে কিছুটা দাম থাকায় ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে এখন ক্রেতা না থাকায় আর ক্ষেত থেকে বেগুন তুলছেন না আর। এতে ক্ষেতেই বেগুন পচে নষ্ট হচ্ছে। ছাওলা গ্রামের অনেক কৃষকই জানান, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১ টাকায়। ক্ষেত থেকে বেগুন তুলতে যে খরচ সেটিও উঠছে না। ফলে অনেকেই গবাদিপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন এই সবজি। শুধু তাই নয়, ৮ মণ বেগুন বিক্রি করেও এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পারছেন না বলে জানান তারা। কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, বেগুন বাজারে নিয়ে গেলে ১০০ টাকা বস্তা অথবা এক টাকা কেজি দাম বলে। তাই এখন ক্ষেতেই বেগুন থাকছে। মাঝে মাঝে কিছু বেগুন তুলে গরুকে খাওয়াই নিজে খাই। কাঙিক্ষত দাম না পাওয়ায় পচে যাচ্ছে বেগুন। একই গ্রামের কৃষক মমিনুল ইসলাম। দাম না থাকায় বাসায় বেগুন এনে গরুকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। এই কৃষকের দাবি, বেগুন বিক্রি করে উৎপাদন খরচের টাকা বাদ দিয়ে শুধু শ্রমিকের মজুরির টাকা তোলাই সম্ভব নয়। এ কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বেগুনের দাম মাত্র ১ টাকা কেজি বলায় অনেকে ক্ষোভে বেগুনকে বানিয়েছেন গো-খাদ্য। ওই এলাকায় আব্দুল ওয়াহাব, মিজু মিয়া ও নজরুল ইসলামসহ বেগুন চাষিদের অবস্থা একই। তাদের আক্ষেপ এক কেজি মাংস কিনতে হলে বেগুন বিক্রি করতে হবে সাড়ে ১৭ মণ। এই কারণে জমি থেকে বেগুন তুলছেন না তারা। কারণ এক টাকা কেজি বেগুন বিক্রি করলে শ্রমিকের মজুরি তুলতেই তাদেরকে হিমশিম খেতে হবে। তবে পীরগাছার তাম্বুলপুর-পাওটানা হাটে বেগুন প্রতিকেজি ২ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ছাওলা ইউনিয়নে ১ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হলেও একই উপজেলার কান্দি ইউনিয়নে ভিন্নচিত্র। এখানকার কান্দি বাজারে জাত ভেদে বেগুনের কেজি ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর রংপুরের সবচেয়ে বড় কাঁচামালের ব্যবসা কেন্দ্র সিটি বাজারের পাইকারি আড়তেও বেগুনের দামে এখনো খানিকটা আগুন অনুভব করছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি বছর রমজান এলেই আগুন লাগে বেগুনের বাজারে। ব্যতিক্রম ছিল না এবারও। দুই সপ্তাহ আগেও জাত ভেদে বেগুনের দাম ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। তবে হঠাৎ করেই ধস নেমেছে বেগুনের দরে। বর্তমানে সিটি বাজারের আড়তে বেগুন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে জাত ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর খান বহুমুখী মার্কেট, কামাল কাছনা বাজার, মুলাটোল বাজার, কামারপাড়া বাজার, নিউ আদর্শপাড়া বউ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, জাত ভেদে খুচরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বেগুন। শহরের বাজারগুলোতে বেগুনের কেজি ৩০-৪০ টাকা হলেও যাতায়াত সুবিধা না থাকায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না প্রান্তিক কৃষক। বেগুন চাষিদের দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়ার দাবি কৃষক সংগঠনের নেতাদের। তারা বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকদের মুনাফা যাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চাষাবাদ থেকে বিমুখ হলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

রংপুরে বেগুনের কেজি ১ টাকা

আপডেট সময় : ০২:৩৪:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কেসামত ছাওলা গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম ২০ শতক জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। শুরুতে কিছুটা দাম থাকায় ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে এখন ক্রেতা না থাকায় আর ক্ষেত থেকে বেগুন তুলছেন না আর। এতে ক্ষেতেই বেগুন পচে নষ্ট হচ্ছে। ছাওলা গ্রামের অনেক কৃষকই জানান, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১ টাকায়। ক্ষেত থেকে বেগুন তুলতে যে খরচ সেটিও উঠছে না। ফলে অনেকেই গবাদিপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন এই সবজি। শুধু তাই নয়, ৮ মণ বেগুন বিক্রি করেও এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পারছেন না বলে জানান তারা। কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, বেগুন বাজারে নিয়ে গেলে ১০০ টাকা বস্তা অথবা এক টাকা কেজি দাম বলে। তাই এখন ক্ষেতেই বেগুন থাকছে। মাঝে মাঝে কিছু বেগুন তুলে গরুকে খাওয়াই নিজে খাই। কাঙিক্ষত দাম না পাওয়ায় পচে যাচ্ছে বেগুন। একই গ্রামের কৃষক মমিনুল ইসলাম। দাম না থাকায় বাসায় বেগুন এনে গরুকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। এই কৃষকের দাবি, বেগুন বিক্রি করে উৎপাদন খরচের টাকা বাদ দিয়ে শুধু শ্রমিকের মজুরির টাকা তোলাই সম্ভব নয়। এ কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বেগুনের দাম মাত্র ১ টাকা কেজি বলায় অনেকে ক্ষোভে বেগুনকে বানিয়েছেন গো-খাদ্য। ওই এলাকায় আব্দুল ওয়াহাব, মিজু মিয়া ও নজরুল ইসলামসহ বেগুন চাষিদের অবস্থা একই। তাদের আক্ষেপ এক কেজি মাংস কিনতে হলে বেগুন বিক্রি করতে হবে সাড়ে ১৭ মণ। এই কারণে জমি থেকে বেগুন তুলছেন না তারা। কারণ এক টাকা কেজি বেগুন বিক্রি করলে শ্রমিকের মজুরি তুলতেই তাদেরকে হিমশিম খেতে হবে। তবে পীরগাছার তাম্বুলপুর-পাওটানা হাটে বেগুন প্রতিকেজি ২ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ছাওলা ইউনিয়নে ১ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হলেও একই উপজেলার কান্দি ইউনিয়নে ভিন্নচিত্র। এখানকার কান্দি বাজারে জাত ভেদে বেগুনের কেজি ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর রংপুরের সবচেয়ে বড় কাঁচামালের ব্যবসা কেন্দ্র সিটি বাজারের পাইকারি আড়তেও বেগুনের দামে এখনো খানিকটা আগুন অনুভব করছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি বছর রমজান এলেই আগুন লাগে বেগুনের বাজারে। ব্যতিক্রম ছিল না এবারও। দুই সপ্তাহ আগেও জাত ভেদে বেগুনের দাম ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। তবে হঠাৎ করেই ধস নেমেছে বেগুনের দরে। বর্তমানে সিটি বাজারের আড়তে বেগুন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে জাত ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর খান বহুমুখী মার্কেট, কামাল কাছনা বাজার, মুলাটোল বাজার, কামারপাড়া বাজার, নিউ আদর্শপাড়া বউ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, জাত ভেদে খুচরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বেগুন। শহরের বাজারগুলোতে বেগুনের কেজি ৩০-৪০ টাকা হলেও যাতায়াত সুবিধা না থাকায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না প্রান্তিক কৃষক। বেগুন চাষিদের দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়ার দাবি কৃষক সংগঠনের নেতাদের। তারা বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকদের মুনাফা যাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চাষাবাদ থেকে বিমুখ হলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।