ঢাকা ১২:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেসব নিয়ে শিশুর সঙ্গে ঠাট্টা করা উচিত নয়

  • আপডেট সময় : ১১:৫০:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪
  • ৫৪ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক : ঠাট্টা-তামাশা আপাতদৃষ্টে খুব নিরাপদ মনে হলেও শিশুর সঙ্গে ঠাট্টা করার ক্ষেত্রেও অনেক কিছু খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কিছু অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় আছে, যেসব নিয়ে শিশুর সঙ্গে কখনো ঠাট্টা করা উচিত নয়। এসব নিয়ে তামাশা করলে শিশুর আত্মমর্যাদাবোধ আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, তাদের বিকাশ হতে পারে বাধাগ্রস্ত, মনে সৃষ্টি হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত। মা-বাবাসহ বড়দের জন্য এখানে থাকল কিছু পরামর্শ।
শিশুরাও তাদের চেহারা এবং বাহ্যিক রূপ নিয়ে সচেতন থাকে। ফলে শিশুদের চেহারা, গায়ের রং, ওজন, উচ্চতা ইত্যাদি দিয়ে খোঁটা দিলে তাদের হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়। যেসব শিশু ওজন নিয়ে কটু কথা শোনে, তাদের মধ্যে ইটিং ডিজঅর্ডার দেখা দেয়। ঠিক এভাবেই মোটা হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ‘বুলিং’–এর শিকার হতে হতে ইটিং ডিজঅর্ডারে ভুগে কয়েক বছর আগে দেশের একটি নামকরা স্কুলের এক ছাত্রের মৃত্যুও ঘটেছিল। তাই বাহ্যিক গড়ন নিয়ে কোনো রকম বাজে কথা শিশুদের বলা যাবে না।
ব্যক্তিগত ভয়: আমাদের সবারই কোনো না কোনো ভয় আছে। শিশুরা আরও বেশি ভয় পায়। অন্ধকার, পোকামাকড়, কাল্পনিক ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়েই ভয় পেতে পারে। কিন্তু এসব ভয় নিয়ে তাদের সামনে হাসাহাসি করা যাবে না। ‘জার্নাল অব অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিজঅর্ডারস’–এর মতে, শিশুদের ভয়গুলো ছোট করে দেখালে কিংবা সেসব নিয়ে ব্যঙ্গ করলে তাদের মধ্যে ক্রনিক অ্যাংজাইটি দেখা দিতে পারে।
সামাজিক দক্ষতা: হতে পারে একজন শিশু লাজুক কিংবা অন্তর্মুখী, হয়তোবা তার সহজে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় না। কিন্তু এসব নিয়ে যদি তাকে খেপানো হয়, তাহলে তার মধ্যে ‘সোশ্যাল অ্যাংজাইটি’ তৈরি হতে পারে। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক দক্ষতা নিয়ে যেসব শিশু কটু কথা শোনে, পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি দেখা দেয়।
শেখার সমস্যা: কোনো কোনো শিশু ডিসলেক্সিয়া, এডিএইচডি ইত্যাদি সমস্যার কারণে পড়াশোনা শেখার ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে থাকে। এসব নিয়ে তাকে অপমান করা হলে তাদের পড়াশোনা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষয়টি তাদের আত্মমর্যাদার জন্যও ক্ষতিকর। এসব ক্ষেত্রে ধৈর্যহারা না হয়ে শিশুকে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে তার উপযোগী পড়াশোনা, খেলাধুলা এবং অন্যান্য কাজের সুযোগ দিতে হবে।
পরীক্ষার ফলাফল: সব শিশু পরীক্ষায় চমৎকার ফলাফল করবে না, এটি খুব স্বাভাবিক। পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে শিশুদের সারাক্ষণ কথা শোনালে, অন্যদের সঙ্গে বারবার তুলনা করলে তার মধ্যে প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং অবসাদ সৃষ্টি হয়। পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপের কারণে তার মধ্যে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা এবং অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে।
শারীরিক সক্ষমতা: কোনো শিশু হয়তো খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ ইত্যাদি খুব একটা পারে না, অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে। কিন্তু এটা নিয়ে যদি সে হাস্যকৌতুকের শিকার হয়, তাহলে তার আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা আরও কমতে থাকে। সে ভবিষ্যতে কোনো রকম শারীরিক পরিশ্রমের কাজ আর করতে সাহস পাবে না। ‘পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট’ পেলে শিশু খেলাধুলায় উৎসাহী হয়, যা শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়তা করে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট হলো কোনো ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য কাউকে পুরস্কৃত করা, যাতে ভবিষ্যতে সে কাজটি আবারও করে। যেমন আপনি শিশুকে বললেন, আজ যদি সে আধা ঘণ্টা দৌড়ঝাঁপ করে, তাহলে বাড়িতে তার প্রিয় কোনো একটি খাবার রান্না করা হবে। এ রকম যেকোনো ভালো কাজের জন্য পুরস্কার দেওয়া পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্টের উদাহরণ।
ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়: শিশুদের ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয় হতে পারে পুতুল খেলা, পোকামাকড় নিয়ে ‘গবেষণা করা’, কমিকস বই পড়ার মতো বিষয়–আশয়। শিশুর এই আগ্রহের বিষয় নিয়ে গালমন্দ বা ঠাট্টা করা যাবে না। এতে তাদের আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে। যেমন ধরুন, আপনার দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া সন্তান ছড়া লিখতে পছন্দ করে। এদিকে একদিন তার ক্লাসের শিক্ষক অভিযোগ করলেন, শিশুর হাতের লেখা ভালো না। আপনি রেগেমেগে শিশুকে শুনিয়ে দিলেন, ‘ইশ! হাতের লেখা পড়া যায় না, আবার ছড়া লেখে!’ এতে কিন্তু তার হাতের লেখা মোটেও ভালো হবে না। বরং সে ছড়া লেখার মতো একটি সৃষ্টিশীল কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। লিখতে ইচ্ছা করলেও ভয় পাবে, পাছে আপনি কিছু বলেন। শিশুকে তাদের আগ্রহের বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মানসিক বিকাশে সহায়ক।
আবেগের বহিঃপ্রকাশ: শিশুরা বিভিন্নভাবে তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। কান্নাকাটি করা, ভয় প্রকাশ করা, উত্তেজিত হওয়া নিয়ে যদি তাদেরকে খেপানো হয়, তাহলে তারা আর নিজেদের আবেগ প্রকাশ করতে পারে না। আবেগের স্বাস্থ্যকর বহিঃপ্রকাশ মানসিক সুস্থতার জন্য জরুরি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যেসব নিয়ে শিশুর সঙ্গে ঠাট্টা করা উচিত নয়

আপডেট সময় : ১১:৫০:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

নারী ও শিশু ডেস্ক : ঠাট্টা-তামাশা আপাতদৃষ্টে খুব নিরাপদ মনে হলেও শিশুর সঙ্গে ঠাট্টা করার ক্ষেত্রেও অনেক কিছু খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কিছু অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় আছে, যেসব নিয়ে শিশুর সঙ্গে কখনো ঠাট্টা করা উচিত নয়। এসব নিয়ে তামাশা করলে শিশুর আত্মমর্যাদাবোধ আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, তাদের বিকাশ হতে পারে বাধাগ্রস্ত, মনে সৃষ্টি হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত। মা-বাবাসহ বড়দের জন্য এখানে থাকল কিছু পরামর্শ।
শিশুরাও তাদের চেহারা এবং বাহ্যিক রূপ নিয়ে সচেতন থাকে। ফলে শিশুদের চেহারা, গায়ের রং, ওজন, উচ্চতা ইত্যাদি দিয়ে খোঁটা দিলে তাদের হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়। যেসব শিশু ওজন নিয়ে কটু কথা শোনে, তাদের মধ্যে ইটিং ডিজঅর্ডার দেখা দেয়। ঠিক এভাবেই মোটা হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত ‘বুলিং’–এর শিকার হতে হতে ইটিং ডিজঅর্ডারে ভুগে কয়েক বছর আগে দেশের একটি নামকরা স্কুলের এক ছাত্রের মৃত্যুও ঘটেছিল। তাই বাহ্যিক গড়ন নিয়ে কোনো রকম বাজে কথা শিশুদের বলা যাবে না।
ব্যক্তিগত ভয়: আমাদের সবারই কোনো না কোনো ভয় আছে। শিশুরা আরও বেশি ভয় পায়। অন্ধকার, পোকামাকড়, কাল্পনিক ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়েই ভয় পেতে পারে। কিন্তু এসব ভয় নিয়ে তাদের সামনে হাসাহাসি করা যাবে না। ‘জার্নাল অব অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিজঅর্ডারস’–এর মতে, শিশুদের ভয়গুলো ছোট করে দেখালে কিংবা সেসব নিয়ে ব্যঙ্গ করলে তাদের মধ্যে ক্রনিক অ্যাংজাইটি দেখা দিতে পারে।
সামাজিক দক্ষতা: হতে পারে একজন শিশু লাজুক কিংবা অন্তর্মুখী, হয়তোবা তার সহজে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় না। কিন্তু এসব নিয়ে যদি তাকে খেপানো হয়, তাহলে তার মধ্যে ‘সোশ্যাল অ্যাংজাইটি’ তৈরি হতে পারে। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক দক্ষতা নিয়ে যেসব শিশু কটু কথা শোনে, পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি দেখা দেয়।
শেখার সমস্যা: কোনো কোনো শিশু ডিসলেক্সিয়া, এডিএইচডি ইত্যাদি সমস্যার কারণে পড়াশোনা শেখার ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে থাকে। এসব নিয়ে তাকে অপমান করা হলে তাদের পড়াশোনা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষয়টি তাদের আত্মমর্যাদার জন্যও ক্ষতিকর। এসব ক্ষেত্রে ধৈর্যহারা না হয়ে শিশুকে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে তার উপযোগী পড়াশোনা, খেলাধুলা এবং অন্যান্য কাজের সুযোগ দিতে হবে।
পরীক্ষার ফলাফল: সব শিশু পরীক্ষায় চমৎকার ফলাফল করবে না, এটি খুব স্বাভাবিক। পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে শিশুদের সারাক্ষণ কথা শোনালে, অন্যদের সঙ্গে বারবার তুলনা করলে তার মধ্যে প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং অবসাদ সৃষ্টি হয়। পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপের কারণে তার মধ্যে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা এবং অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে।
শারীরিক সক্ষমতা: কোনো শিশু হয়তো খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ ইত্যাদি খুব একটা পারে না, অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে। কিন্তু এটা নিয়ে যদি সে হাস্যকৌতুকের শিকার হয়, তাহলে তার আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা আরও কমতে থাকে। সে ভবিষ্যতে কোনো রকম শারীরিক পরিশ্রমের কাজ আর করতে সাহস পাবে না। ‘পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট’ পেলে শিশু খেলাধুলায় উৎসাহী হয়, যা শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়তা করে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট হলো কোনো ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য কাউকে পুরস্কৃত করা, যাতে ভবিষ্যতে সে কাজটি আবারও করে। যেমন আপনি শিশুকে বললেন, আজ যদি সে আধা ঘণ্টা দৌড়ঝাঁপ করে, তাহলে বাড়িতে তার প্রিয় কোনো একটি খাবার রান্না করা হবে। এ রকম যেকোনো ভালো কাজের জন্য পুরস্কার দেওয়া পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্টের উদাহরণ।
ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়: শিশুদের ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয় হতে পারে পুতুল খেলা, পোকামাকড় নিয়ে ‘গবেষণা করা’, কমিকস বই পড়ার মতো বিষয়–আশয়। শিশুর এই আগ্রহের বিষয় নিয়ে গালমন্দ বা ঠাট্টা করা যাবে না। এতে তাদের আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে। যেমন ধরুন, আপনার দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া সন্তান ছড়া লিখতে পছন্দ করে। এদিকে একদিন তার ক্লাসের শিক্ষক অভিযোগ করলেন, শিশুর হাতের লেখা ভালো না। আপনি রেগেমেগে শিশুকে শুনিয়ে দিলেন, ‘ইশ! হাতের লেখা পড়া যায় না, আবার ছড়া লেখে!’ এতে কিন্তু তার হাতের লেখা মোটেও ভালো হবে না। বরং সে ছড়া লেখার মতো একটি সৃষ্টিশীল কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। লিখতে ইচ্ছা করলেও ভয় পাবে, পাছে আপনি কিছু বলেন। শিশুকে তাদের আগ্রহের বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মানসিক বিকাশে সহায়ক।
আবেগের বহিঃপ্রকাশ: শিশুরা বিভিন্নভাবে তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। কান্নাকাটি করা, ভয় প্রকাশ করা, উত্তেজিত হওয়া নিয়ে যদি তাদেরকে খেপানো হয়, তাহলে তারা আর নিজেদের আবেগ প্রকাশ করতে পারে না। আবেগের স্বাস্থ্যকর বহিঃপ্রকাশ মানসিক সুস্থতার জন্য জরুরি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া