প্রত্যাশা ডেস্ক : আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর); বিশে^র সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। প্রধান দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যেই নির্ধারিত হবে জয়-পরাজয়। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কি বিজয়ীর বেশে ফের হাজির হবেন, নাকি কমলা হ্যারিস প্রমাণ করবেন যে, যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত একজন নারী প্রেসিডেন্টকে বরণের জন্য প্রস্তুত?
গুপ্তহত্যার চেষ্টা, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে যাওয়া, নামীদামী তারকাদের সমর্থন আর ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি-যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে এমন রোলারকোস্টার রাইড চলছে। এসবের অবসান ঘটতে যাচ্ছে আজ ৫ নভেম্বর-রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ডেমোক্র্যাট দলীয় কমলা হ্যারিসের মধ্যে থেকে একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন নাগরিকদের বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে। তবে এবারের নির্বাচনে প্রত্যেকের মনে বড় প্রশ্ন জাগছে; যুক্তরাষ্ট্র কি প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে নাকি দ্বিতীয় মেয়াদে ফের ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প? আর এই প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তর পাওয়া যাবে ৫ নভেম্বরের ভোটের পর। তবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলীয় দুই প্রার্থীর মাঝে ব্যাপক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানের চালানো জনমত জরিপে।
জনমত জরিপ কী বলছে? প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে কে এগিয়ে? জনসমর্থন কার বেশি? ট্রাম্প কি বিজয়ীর বেশে আবারও হাজির হবেন নাকি কমলা হ্যারিস প্রমাণ করবেন যে, যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত একজন নারী প্রেসিডেন্টকে বরণের জন্য প্রস্তুত? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর জানার আগে চলুন চোখ রাখা যাক সর্বশেষ কিছু হিসেব-নিকেশে…
অ্যাটলাস ইনটেলের জনমত জরিপে ট্রাম্পের বাজিমাত: অ্যাটলাস ইনটেলের জনমত জরিপের ফল যদি বিশ্বাস করা হয়, তাহলে ৫ নভেম্বরের ভোটের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পই বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। ব্রাজিল-ভিত্তিক এই জরিপ সংস্থার সোমবার (৪ নভেম্বর) প্রকাশিত এক জরিপের ফলে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণী সাতটি সুইং রাজ্যের সবকটিতে কমলা হ্যারিসের চেয়ে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও তাদের ব্যবধান একেবারে সামান্য।
জরিপের ফলে দেখা যায়, সুইং রাজ্য অ্যারিজোনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং হ্যারিসের প্রতি ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন। নেভাদায় জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবং ৪৬ শতাংশ হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ জনসমর্থন।
অ্যাটলাস ইনটেলের জনমত জরিপ অনুযায়ী, জর্জিয়া রাজ্যেও এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই রাজ্যে ৫০ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবং ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান বলে জানিয়েছেন। মিশিগানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং হ্যারিসের প্রতি ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন। আর পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ ও কমলা হ্যারিস ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং উইসকনসিনে ট্রাম্প ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং হ্যারিস ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন।
দেশটির সাত রাজ্যে অ্যাটলাসের পরিচালিত এই জনমত জরিপে গড়ে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি কমলা হ্যারিসের ৪৭ দশমিক ২ শতাংশের তুলনায় ৪৯ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন।
এখানে চমকে যাওয়ার মতো আরেকটি তথ্য দিয়েছে ব্রাজিলের এই জনমত জরিপ সংস্থা। অ্যাটলাস ইনটেল বলেছে, ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ও সবচেয়ে নির্ভুল জনমত জরিপ প্রকাশ করেছিল তারা। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেকটি সুইং রাজ্যে করা তাদের জনমত জরিপের ফল সঠিক হয়েছিল।
নিউইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা কলেজের জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস: মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের জরিপ অনুযায়ী, এবারে হোয়াইট হাউসের দৌড় অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে। জনমত জরিপে নেভাদা, নর্থ ক্যারোলিনা এবং উইসকনসিনে সামান্য ব্যবধানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট হ্যারিস। আর অ্যারিজোনায় এগিয়ে আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মিশিগান, জর্জিয়া এবং পেনসিলভানিয়াতেও দু’জনের মাঝে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে। ফলে দেখা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটারই ইতোমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন। আর আগাম ভোট দেওয়াদের মাঝে ট্রাম্পের চেয়ে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। তবে এখনও যারা ভোট দেননি তাদের মাঝে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বেশি দেখা গেছে। নিউইয়র্ক টাইমের জরিপ অনুযায়ী, পেনসিলভানিয়া রাজ্যেও এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের চেয়ে চার পয়েন্টে এগিয়ে আছেন হ্যারিস। তবে এই রাজ্যে পূর্বের তুলনায় ট্রাম্পের পক্ষে জনগণের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে।
ট্রাম্প-হ্যারিস, দু’জনের পয়েন্টই ৪৯: রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের চূড়ান্ত জনমত জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, দুই প্রার্থীই-ট্রাম্প আর হ্যারিস-প্রত্যেকে ৪৯ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন। গত অক্টোবর থেকেই তুলনামূলকভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে এনবিসির জরিপ। অক্টোবরে প্রকাশিত ফলাফলেও এই দুই প্রার্থীর সমান ৪৮ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছিলেন। জরিপে দেখা যায়, কমলা হ্যারিসকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নেওয়ার জন্য যেসব বিষয় ভূমিকা রাখতে পারে, সেগুলো হলো গণতন্ত্রকামীদের উত্থান, গর্ভপাত ইস্যুতে তার অবস্থান এবং মধ্যবিত্তের জন্য নেওয়া পদক্ষেপ।
আইওয়ার চমক: মার্কিন নির্বাচনের আগে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক জনমত জরিপের ফল দেখা গেছে আইওয়া রাজ্যে। ঐতিহ্যগতভাবেই এই রাজ্যটি রিপাবলিকান হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনের আগের দিনের প্রকাশিত ডেস মইনেস রেজিস্টার ও মিডিয়াকমের প্রকাশিত জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, আইওয়া রাজ্যে ৪৭ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। আর রিপাবলিকান ভূস্বর্গ-খ্যাত রাজ্যটিতে দলটির প্রার্থী ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন। এই রাজ্যের ভোটারদের মাঝে হ্যারিসের প্রতি সমর্থনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত জরিপে এই রাজ্যের ভোটারদের প্রায় ৪৭ শতাংশ ট্রাম্পকে এবং হ্যারিসকে ৪৩ শতাংশ সমর্থন দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের গত চারটি নির্বাচনেও আইওয়াতে ভোটদানের মিশ্র রেকর্ড দেখা গেছে। ২০০৮ এবং ২০১২ সালে বারাক ওবামার জন্য নীল রঙে ছেয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৬ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে আবারও রিপাবলিকান হয়ে ওঠে আইওয়া; জয় পান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নতুন জনমত জরিপে দেখা গেছে, রাজ্যের নারী ভোটারদের বৃহৎ অংশ ট্রাম্পের তুলনায় কমলা হ্যারিসের পক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। আইওয়ার নারী ভোটারদের সমর্থনের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশই হ্যারিসকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন আর ৩৬ শতাংশ ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। রাজ্যটিতে পুরুষ ভোটারদের সমর্থনে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। ৫২ শতাংশ পুরুষ তার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন; যা হ্যারিসের ক্ষেত্রে মাত্র ৩৮ শতাংশ। তবে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব জনমত জরিপের ফল উড়িয়ে দিয়েছেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, আইওয়া রাজ্যে কৃষকদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় কোনও প্রেসিডেন্টই বেশি কিছু করেননি। এমনকি এসব জনমত জরিপের ফল খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণও নয়।
ট্রাম্প বলেছেন, আমি কৃষকদের ভালোবাসি, তারাও আমাকে ভালোবাসেন। তারা আমাকে বিশ্বাস করেন। আইওয়া রাজ্যের ৮৫ শতাংশ ভূমিই কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেকোনও রাজ্যের তুলনায় আইওয়াতে ভুট্টা, শূকর, ডিম, ইথানল এবং বায়োডিজেলের উৎপাদন বেশি হয়। শেষ মুহূর্তের অন্যান্য জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিশ্লেষকরা বলেছেন, আইওয়াতে যদি কমলা হ্যারিস শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র করে তুলতে পারেন, তাহলে মার্কিন নির্বাচনের পুরো প্রতিযোগিতার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটতে পারে।
শেষ চেষ্টা: আজ ৫ নভেম্বর দেশজুড়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের জন্য আজই নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন। একেবারে শেষ সময়ে এসে উভয় প্রার্থীই ভোটারদের মন জয়ে চূড়ান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার মিশিগানে শেষ সময় কাটিয়েছেন কমলা হ্যারিস; যেখানে তিনি গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধের অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, বৃহৎ তিন সুইং রাজ্য পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়া চষে বেড়াচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেনসিলভানিয়ার লিটিজে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের গুলি করা হলে তিনি কিছু মনে করবেন না। গত জুলাইয়ে অল্পের জন্য গুপ্তহত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, তাকে আবারও গুলি করা হতে পারে। আর সেই গুলি আসতে পারে ভুয়া সংবাদের মাধ্যমে। তবে আমি এটা নিয়ে খুব বেশি কিছু মনে করবো না।
দোদুল্যমান সাত রাজ্যে এগিয়ে ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত ফল নির্ধারণী দোদুল্যমান সাত রাজ্যে শেষ সময়ের জরিপে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে চমক দেখা গেছে। সোমবার (৪ নভে¤ৃ) ব্রাজিল-ভিত্তিক এই জরিপ সংস্থা অ্যাটলাস ইনটেলের জনমত জরিপের ফলে বলা হয়েছে, দোদুল্যমান সাত রাজ্যের সবকটিতে কমলা হ্যারিসের চেয়ে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও তাদের ব্যবধান একেবারে সামান্য। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ডেমোক্র্যাট দলীয় কমলা হ্যারিসের মাঝে ব্যাপক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে অন্যান্য জনমত জরিপেও। অ্যাটলাস ইনটেলের জরিপের ফলে দেখা যায়, দোদুল্যমান রাজ্য অ্যারিজোনায় জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং হ্যারিসের প্রতি ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন। দোদুল্যমান আরেক রাজ্য নেভাদায় জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবং ৪৬ শতাংশ হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ জনসমর্থন।
অ্যাটলাস ইনটেলের জনমত জরিপ অনুযায়ী, জর্জিয়া রাজ্যেও এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই রাজ্যে ৫০ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবং ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান বলে জানিয়েছেন। মিশিগানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং হ্যারিসের প্রতি ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন। আর পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ ও কমলা হ্যারিস ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং উইসকনসিনে ট্রাম্প ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং হ্যারিস ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন। দেশটির সাত রাজ্যে অ্যাটলাসের পরিচালিত এই জনমত জরিপে গড়ে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি কমলা হ্যারিসের ৪৭ দশমিক ২ শতাংশের তুলনায় ৪৯ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন। অ্যাটলাস ইনটেল বলেছে, ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ও সবচেয়ে নির্ভুল জনমত জরিপ প্রকাশ করেছিল তারা। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেকটি দোদুল্যমান রাজ্যে করা তাদের জনমত জরিপের ফল সঠিক হয়েছিল।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ফলাফল কখন জানা যাবে: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণকারী সাত দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে আজ ৫ নভেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে ভোগ গ্রহণ শেষ হবে। এসব রাজ্যের মধ্যে প্রথম যে দুটি রাজ্যের ফলাফল সবার আগে আসতে শুরু করবে, সেটা থেকে কে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হতে যাচ্ছেন, সেটার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। এসব অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সবার আগে জর্জিয়ায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ও উত্তর ক্যারোলাইনায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার কিছু সময় পর থেকে বুথফেরত ফলাফল আসতে শুরু করবে। এসব অঙ্গরাজ্যে যদি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস এগিয়ে থাকেন, তাহলে তিনিই নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যাবে। কারণ, বাকি পাঁচ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ফলাফল সার্বিক ফলাফলে এককভাবে এতটা প্রভাবিত করতে পারবে না। ‘ব্লু ওয়াল স্টেটস’ বা নীল দেয়াল হিসেবে পরিচিতি এ পাঁচ অঙ্গরাজ্য হলো পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, নেভাদা ও অ্যারিজোনা। এ পাঁচ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ও মিশিগানের অধিকাংশ এলাকায় ভোট গ্রহণ শেষ হবে স্থানীয় সময় রাত ৮টায়, উইসকনসিন, অ্যারিজোনা ও উত্তর মিশিগানের অল্প কিছু এলাকার ভোগ গ্রহণ শেষ হবে স্থানীয় সময় রাত ৯টায়। আর দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ভোট গ্রহণ হবে নেভাদায়, ৫ নভেম্বর (মঙ্গলবার) স্থানীয় সময় রাত ১০টায়।
ইলেকটোরাল কলেজ নিয়ে কেন এত আলোচনা: যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচনের মতো নয়। এতে সরাসরি জনগণের ভোটে (পপুলার ভোট) প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। তাঁরা মূলত পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচকমণ্ডলীকে নির্বাচিত করেন। ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামের এই নির্বাচকমণ্ডলী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কাজটি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটসংখ্যা ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পেতে হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এবারের নির্বাচনে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ৫৪টি ইলেকটোরাল ভোট। গত নির্বাচনে এই রাজ্যে ৫৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ছিল। সর্বশেষ আদমশুমারিতে এই রাজ্যে জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় একটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট কমে গেছে। ফলে একটি ইলেকটোরাল কলেজও কমে গেছে। আবার আলাস্কা, সাউথ ডাকোটা, ভারমন্টের মতো অঙ্গরাজ্যের প্রতিটিতে রয়েছে ৩টি করে ইলেকটোরাল ভোট।
ইলেকটোরাল ভোট কীভাবে নির্ধারিত হয়: কোন অঙ্গরাজ্যে কত ইলেকটোরাল ভোট থাকবে, তা নির্ধারিত হয় সেখানে কতটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। প্রতিটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের জন্য একটি করে ভোট এবং দুজন সিনেটরের জন্য দুটি ভোট বরাদ্দ থাকে। এবার ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫২টি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের মতোই সেখানে রয়েছে ২টি সিনেট আসন। ফলে অঙ্গরাজ্যটির মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৪।
ইলেকটোরাল কলেজে কারা থাকেন: ইলেকটোরাল ভোট সিনেটর, নিম্নকক্ষের প্রতিনিধি, গভর্নর বা এমন কেউ দেবেন না। এ জন্য একেবারে আলাদা একটি ভোটার দলকে নির্বাচন করা হয়। এটি দুই ধাপে ঠিক হয়। প্রথম ধাপটি দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ নির্বাচনের আগে দুই দলের পক্ষ থেকে তাদের মনোনীত ইলেকটোরাল ভোটারের তালিকা জমা দেওয়া হয়, যাকে স্লেট বলে। সাধারণ নির্বাচনের সময় যখন ভোটাররা প্রেসিডেন্টকে ভোট দেন, তখন তাঁরা মূলত ইলেকটোরাল ভোটারের এই স্লেট নির্বাচন করেন। অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যেই যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জয়ী হন, তাঁর দলের স্লেটটিই ইলেকটোরাল ভোটার হিসেবে নির্বাচিত হয়। আসন্ন নির্বাচনে ক্যালিফোর্নিয়ায় কমলা হ্যারিস সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলে তিনিই ডেমোক্রেটিক পার্টির পাঠানো ইলেকটোরাল ভোটার স্লেটটি নির্বাচিত হবে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: জনগণের ভোটে নির্বাচিত ইলেকটোরাল কলেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটটি দেন। সাধারণ নির্বাচনের পর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বুধবারের পরের প্রথম সোমবার (৪ নভেম্বর) এই ইলেকটোরাল ভোটাররা সভায় বসেন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নিজেদের ভোটটি আলাদা ব্যালটের মাধ্যমে দেন। পরবর্তী ৬ জানুয়ারি এই ভোট গণনার জন্য কংগ্রেস চেম্বারে সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যমান ভাইস প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সে সভায় ভোট গণনার পরই জানা যায় নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল। পদ্ধতি এমন হলেও সাধারণ নির্বাচনের পরপরই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে জয়ী প্রার্থীর পরিচয় থেকেই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল সম্পর্কে অনুমান করা যায়। কারণ, সাধারণত দলগুলো এমন ব্যক্তিকেই ইলেকটোরাল ভোটার হিসেবে মনোনীত করেন, যাঁরা দল ও প্রার্থীর প্রতি ভীষণ অনুগত।
প্রভাবশালী ছয় অঙ্গরাজ্য: ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক, ইলিনয়, পেনসিলভানিয়া-এই ছয় অঙ্গরাজ্যের হাতেই রয়েছে ১৯১টি ইলেকটোরাল কলেজ। ‘উইনার টেক ইট অল’ নীতির কারণে এই ছয় অঙ্গরাজ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারা থাকেন-দুই দলের নির্ধারিত একটি করে নির্বাচক দল (স্লেট)। সাধারণত কোনো অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বিজয়ী হন, তাঁর দল নির্ধারিত স্লেটটি বিজয়ী হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বুধবারের পরের সোমবার (৪ নভেম্বর) ইলেকটোরাল কলেজের সভায় গোপন ব্যালটে ভোট দেন নির্বাচিত ভোটাররা। আগামী বছরের ৬ জানুয়ারি ইলেকটোরাল ভোট গণনার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হবে মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা-৫৩৮। বিজয়ী হতে প্রয়োজন-২৭০।
হোয়াইট হাউজ ছেড়ে আসাটাই উচিত হয়নি আমার: ট্রাম্প: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমার হোয়াইট হাউজ ছেড়ে আসাটাই উচিত হয়নি। রোববার (৩ নভেম্বর) পেনসিলভেনিয়ায় শেষ মুহূর্তের প্রচারে বক্তব্য দেওয়ার সময় সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, রোববার পেনসিলভেনিয়ায় বক্তব্য দেওয়ার সময় ২০২০ সালের নির্বাচনের স্মৃতিচারণ করছিলেন ট্রাম্প। সে সময় তিনি বলেন, আমি যেদিন দায়িত্ব ছাড়লাম, সেদিন পর্যন্ত আমাদের সীমান্ত দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ ছিল। হোয়াইট হাউজ ছাড়াই আমার উচিত হয়নি। আমরা খুব ভালো কাজ করেছিলাম।