ঢাকা ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রানীতি কাজে আসে?

  • আপডেট সময় : ১১:৩০:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
  • ৪৬ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১৮ জুলাই বিকেল ৩টায় মুদ্রানীতির তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এটি প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন মুদ্রানীতিতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ মুদ্রানীতি হবে সংকোচনমুখী। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়বে কিনা, এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। রিপারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা রেপো নামে পরিচিত এই নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়লে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ নিতে গুনতে হয় বেশি অর্থ। এর ফলে ঋণের প্রবাহও কমে। সামগ্রিকভাবে মানুষের হাতে টাকা যায় কম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে পলিসি রেট বা নীতিনির্ধারণী সুদের হার আরও বাড়ানো প্রয়োজন। যদিও এই নীতি সুদ হার বাড়ানোর পক্ষে নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য বাজারে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণের সুদের হার আরও কিছুটা বাড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হতে পারে আসন্ন মুদ্রানীতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগামী মুদ্রানীতিতে অনুৎপাদনশীল খাতে বা বিলাসী খাতে আমদানি আরও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া এসব খাতে ঋণের সুদহারও কিছুটা বাড়ানো হবে। এতে টাকার প্রবাহ কমে মূল্যস্ফীতি কমবে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় সরকারকে আর নতুন ঋণ দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে ছাপানো টাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব তহবিল রয়েছে, সেগুলোর আকার ছোট করার পাশাপাশি ঋণের জোগান কমানো হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করবে। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নামানো অসম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে না।’ এক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বাণিজ্যিক ব্যাংককে অতিরিক্ত তারল্য সহায়তা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে এবং বাজেট ঘাটতি মেটাতে যদি টাকা না ছাপে, তাহলে মুদ্রানীতি কাজ করবে। এক্ষেত্রে ছয় থেকে ৯ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে।’ উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের আগাম মুদ্রানীতি প্রণয়ন নিয়ে ইতোমধ্যে মনিটারি পলিসি বিভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে মুদ্রানীতি নিয়ে কর্মকর্তারা এমন পরামর্শই দিয়েছেন। এর আলোকে প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির এমন একটি কাঠামো তৈরি করেছে। জানা গেছে, পর্ষদের মতামতের ভিত্তিতে মুদ্রানীতি চূড়ান্ত করা হবে। প্রসঙ্গত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য টানা দুই বছর সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে সুদের হার। ডলারের প্রবাহ বাড়ানোর আশায় এর দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে অদৃশ্য কারণে ডলারের প্রবাহ বাড়েনি। ফলে কমেনি মূল্যস্ফীতির পারদ। উল্টো সুদের হার ও ডলারের দাম বাড়ানোর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ তুলে দিয়ে স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদের হার নির্ধারণের ভিত্তি ধরা হয় নীতি সুদহার। গত জুলাই মাসে ব্যাংকের সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ১০ শতাংশ, যা গত এপ্রিলে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর ৮ এপ্রিল বাজারভিত্তিক সুদহারের কারণে কোনও কোনও ব্যাংকের সুদের হার ১৮ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নির্বাচনে দেরি হলে জঙ্গি ও উগ্রপন্থিরাও সুযোগ নেবে: ফখরুল

মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রানীতি কাজে আসে?

আপডেট সময় : ১১:৩০:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

বিশেষ সংবাদদাতা : ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১৮ জুলাই বিকেল ৩টায় মুদ্রানীতির তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এটি প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন মুদ্রানীতিতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ মুদ্রানীতি হবে সংকোচনমুখী। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়বে কিনা, এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। রিপারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা রেপো নামে পরিচিত এই নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়লে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ নিতে গুনতে হয় বেশি অর্থ। এর ফলে ঋণের প্রবাহও কমে। সামগ্রিকভাবে মানুষের হাতে টাকা যায় কম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে পলিসি রেট বা নীতিনির্ধারণী সুদের হার আরও বাড়ানো প্রয়োজন। যদিও এই নীতি সুদ হার বাড়ানোর পক্ষে নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য বাজারে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণের সুদের হার আরও কিছুটা বাড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হতে পারে আসন্ন মুদ্রানীতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগামী মুদ্রানীতিতে অনুৎপাদনশীল খাতে বা বিলাসী খাতে আমদানি আরও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া এসব খাতে ঋণের সুদহারও কিছুটা বাড়ানো হবে। এতে টাকার প্রবাহ কমে মূল্যস্ফীতি কমবে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় সরকারকে আর নতুন ঋণ দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে ছাপানো টাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব তহবিল রয়েছে, সেগুলোর আকার ছোট করার পাশাপাশি ঋণের জোগান কমানো হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করবে। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নামানো অসম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে না।’ এক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বাণিজ্যিক ব্যাংককে অতিরিক্ত তারল্য সহায়তা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে এবং বাজেট ঘাটতি মেটাতে যদি টাকা না ছাপে, তাহলে মুদ্রানীতি কাজ করবে। এক্ষেত্রে ছয় থেকে ৯ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে।’ উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের আগাম মুদ্রানীতি প্রণয়ন নিয়ে ইতোমধ্যে মনিটারি পলিসি বিভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে মুদ্রানীতি নিয়ে কর্মকর্তারা এমন পরামর্শই দিয়েছেন। এর আলোকে প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির এমন একটি কাঠামো তৈরি করেছে। জানা গেছে, পর্ষদের মতামতের ভিত্তিতে মুদ্রানীতি চূড়ান্ত করা হবে। প্রসঙ্গত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য টানা দুই বছর সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে সুদের হার। ডলারের প্রবাহ বাড়ানোর আশায় এর দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে অদৃশ্য কারণে ডলারের প্রবাহ বাড়েনি। ফলে কমেনি মূল্যস্ফীতির পারদ। উল্টো সুদের হার ও ডলারের দাম বাড়ানোর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ তুলে দিয়ে স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদের হার নির্ধারণের ভিত্তি ধরা হয় নীতি সুদহার। গত জুলাই মাসে ব্যাংকের সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ১০ শতাংশ, যা গত এপ্রিলে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর ৮ এপ্রিল বাজারভিত্তিক সুদহারের কারণে কোনও কোনও ব্যাংকের সুদের হার ১৮ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়।