নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে কোম্পানীর শেয়ার বিক্রি হতে অর্জিত মূলধনি মুনাফার ওপর করের হার কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। গতকাল সোমবার এক প্রজ্ঞাপন জারীর মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত শেয়ার লেনদেন হতে ৫০ লাখ টাকার অধিক অর্জিত মূলধনি মুনাফার ওপর করের হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) হতে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জানা গেছে, বিদ্যমান আইনে শেয়ার ক্রয়ের ৫ বছরের মধ্যে উক্ত শেয়ার ১ জুলাই ২০২৪ হতে ৩০ জুন ২০২৫ সময়কালে বিক্রয় করে মূলধনি আয় অর্জন করলে তার ওপর সাধারন হারে কর আরোপ করা হয়। বর্তমানে আইন অনুসারে ৫০ লক্ষ টাকার অধিক মূলধনি আয়ের ওপর সর্বোচ্চ করের হার হলো ৩০ শতাংশ। তবে সম্পদশালী করদাতাগণকে প্রদেয় করের ওপর বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ প্রদান করতে হয়। এতে শেয়ার বাজার হতে অর্জিত মূলধনি মুনাফার ওপর বিদ্যমান আইন অনুসারে আয়কর ও সারসার্জ বাবদ মোট ৪০দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কর প্রদেয় হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন নং ৩৮৩/আইন/আয়কর-৫২/২০২৪ তারিখ ০৪/১১/২০২৪ অনুসারে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত শেয়ার অর্জন পরবর্তি লেনদেনের সময়কাল নির্বেশেষে অর্থাৎ শেয়ার ক্রয়ের ৫ বছরের মধ্যে অথবা ৫ বছরের পরে সকল ক্ষেত্রে শেয়ার বিক্রি হতে অর্জিত মূলধনি আয়ের ওপর করের হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে ১ জুলাই ২০২৪ হতে ৩০ জন ২০২৫ সময়কালে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সকল শেয়ার লেনদেন হতে ৫০ লক্ষ টাকার অধিক অর্জিত মূলধনি আয়ের পরিমান নির্বিশেষে ১৫ শতাংশ কর এবং করদাতার নীট সম্পদের পরিমান ৪ কোটি টাকার অধিক, ১০ কোটি টাকার অধিক, ২০ কোটি টাকার অধিক এবং ৫০ কোটি টাকার বেশী হলে প্রদেয় করের ওপর যথাক্রমে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ হারে সারসার্জ প্রদান করতে হবে। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী একজন করদাতার ৫০ কোটি টাকার অধিক নীট সম্পদ থাকলে, শেয়ার বাজার হতে অর্জিত ৫০ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত আয়ের ওপর তাঁকে ১৫ শতাংশ হারে কর এবং প্রদেয় কর ১৫ শতাংশ এর ওপর ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫.২৫ শতাংশ সারচার্জসহ কর প্রদান করতে হবে। তবে করদাতার নীট সম্পদের পরিমান ৫০ কোটি টাকার কম হলে সারচার্জের হার ৩৫ শতাংশ এর পরিবর্তে কম হারে (১০ শতাংশ /২০ শতাংশ /৩০ শতাংশ) হতে পারে। সেক্ষেত্রে আয়কর ও সারসার্জের মোট হার নীট সম্পদের ভিত্তিতে ২০.২৫ শতাংশ হতে আরোও কম হবে। স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাসহ অন্যান্য সকল করদাতার ০১ জুলাই, ২০২৪ হতে ৩০ জুন, ২০২৫ সময়কালে (করবর্ষ-২০২৫-২০২৬), স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে ৫০ লক্ষ্ টাকার অধিক অর্জিত মূলধনি মুনাফার ওপর প্রদেয় আয়কর ও সারচার্জ বাবদ সর্বোচ্চ করের হার ৪০.৫০ শতাংশ হতে কমিয়ে ২০.২৫ শতাংশ করায় দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশের পুজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মনে করে।
অর্থ উপদেষ্টাকে অভিনন্দন
এদিকে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হতে অর্জিত মূলধনী মুনাফার ওপর করের হার কমিয়ে ১৫ শতাংশ করায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে শেয়ারবাজারের স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। গতকাল সোমবার (৪ নভেম্বর) ডিবিএ থেকে পাঠানো এক বার্তায় সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম অর্থ উপদেষ্টাকে এ অভিনন্দন জানান। ডিবিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, বাজারের দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করে বাজারকে বিনিয়োগসমৃদ্ধ করতে মূলধনী মুনাফার ওপর কর ছাড়ের বিষয়টি খুবই প্রয়োজন ছিল। এ বিষয়ে মূলধনী মুনাফার ওপর বিদ্যমান কর প্রত্যাহার চেয়ে আমরা এরই মধ্যে অর্থ উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ করেছিলাম। অর্থ উপদেষ্টা আমাদের সুপারিশ সুবিবেচনা করে মূলধনী মুনাফার ওপর করের হার কমিয়ে ১৫ শতাংশ করায় আমরা ডিবিএর পক্ষ থেকে তাকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সাইফুল মূলধনী মুনাফার ওপর কর হার হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামসহ সকল গণমাধ্যম কর্মীদের অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।