প্রযুক্তি ডেস্ক: মঙ্গল গ্রহে প্রাণের প্রমাণ খুঁজে বের করতে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি স্কটল্যান্ডের হাইল্যান্ড অঞ্চলে পরীক্ষা করেছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি বা ইএসএ।
লাল গ্রহে রোবোটিক এক রোভার পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি, যাতে মঙ্গলের ভূতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা এবং জীবাশ্ম ও খনিজ অনুসন্ধান করা যায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
স্কটল্যান্ডের টোরিডন গ্রামের ‘লোয়ার ডায়াবেগ’ নামের অঞ্চলে টুলটি নিয়ে পরীক্ষা করছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট অ্যান্ড্রুজ’-এর একদল গবেষক। এ অঞ্চলে কোটি কোটি বছর পুরনো পাথর রয়েছে, যা মঙ্গলের পাথরের সঙ্গে মেলে বলে দাবি তাদের।
গবেষকরা বলছেন, এ পরীক্ষায় এমন ক্যামেরা ব্যবহার হয়েছে যেগুলো রোভারের ‘চোখ’ হিসেবে কাজ করবে। এতে এমন যন্ত্রপাতিও রয়েছে, যা পাথরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন প্রাণের চিহ্ন খুঁজে বের করতে পারবে।
ইএসএ-এর ‘এক্সোমার্স’ নামের এ প্রোগ্রামে দুটি মিশন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রথম মিশনটির নাম ‘ট্রেস গ্যাস অরবিটার’, যা ২০১৬ সালে উৎক্ষেপণ করেছে সংস্থাটি। দ্বিতীয় মিশনটি ২০২৮ সালে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার লক্ষ্য হলো রোভারটিকে মঙ্গলে নামানো।
এ রোবটটির এমন নাম রাখা হয়েছে লন্ডনে জন্ম নেওয়া বিজ্ঞানী রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের নামে। ১৯৫৮ সালে মারা যান তিনি।
ইএসএ বলেছে, এসব মিশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মঙ্গলে আদৌ কখনো প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। ‘ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট অ্যান্ড্রুজ’-এর ড. ক্লেয়ার কাউজিনস বলেছেন, মিশনের এসব প্রযুক্তি যেন মঙ্গলে ঠিকভাবে কাজ করে, তা নিশ্চিত করতে পৃথিবীতেই এগুলো নিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা করা দরকার।
তিনি বলেছেন, স্কটল্যান্ডের লোয়ার ডায়াবেগ অঞ্চলের বিরল ভূতত্ত্ব এ ধরনের পরীক্ষার জন্য ‘একেবারেই উপযোগী’। এখানের পাথরগুলো পরিবর্তিত হয়নি, যার মানে এগুলো পাহাড়ি চাপের নিচে পুড়ে, চেপে বা ভেঙে যায়নি। দারুণভাবে এখনও সংরক্ষিত রয়েছে এগুলো, যেন সময়ের এক টুকরা অংশ। এসব পাথরের মধ্যে রয়েছে শত কোটি বছরের পুরোনো কাদামাটি পাথর ও অন্যান্য স্তরে স্তরে সাজানো শিলারাশি।
ড. কাউজিনস বলেছেন, এখানে একসময় তরল পানি ও প্রাণ টিকিয়ে রাখার মতো পরিবেশও ছিল, এসব পাথর তা দেখানোর জন্য একেবারে উপযোগী। এসব পাথর প্রাচীন প্রাণের প্রমাণ ধরে রাখার ক্ষেত্রেও খুব ভালো। সেইসব প্রাচীন প্রাণের বিভিন্ন চিহ্ন পাথরের স্তরের ভেতরেই লুকিয়ে আছে। আমরা এখনও জানি না মঙ্গলে কখনও প্রাণ ছিল কি না। তবে এমন ধরনের পাথরই সেই প্রাণের চিহ্ন ধরে রাখতে পারে।
সাত বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘কিউরিওসিটি’ নামের রোভার গ্রহটির এমন এক অংশ নিয়ে পরীক্ষা করেছিল, যে অংশটির নাম রাখা হয়েছে টোরিডন গ্রামের নামে। নাসা মঙ্গলের ভূতাত্ত্বিক অঞ্চল ও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের নাম রেখেছে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের নামে। এগুলোর মধ্যে অনেক নামই স্কটল্যান্ড থেকে নেওয়া। টোরিডনের পাশাপাশি মঙ্গলে রয়েছে সিকার পয়েন্ট, মাক, উইক, স্যান্ডউইক ও হলিরুড নামের অঞ্চলও। ‘টোরিডোনিয়ান সুপারগ্রুপ’-এর কারণে টোরিডন নামটি বেছে নিয়েছে নাসা, যা উত্তর-পশ্চিম হাইল্যান্ডসের একটি ভূতাত্ত্বিক গঠন, যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে পুরনো প্রাণের প্রমাণ।