ঢাকা ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোজ্যতেল সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্যোগ, কুড়ার তেল রপ্তানিতে শুল্কারোপের প্রস্তাব

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৪:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাইস ব্র্যান অয়েল বা ধানের কুড়ার তেল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সংস্থাটি এ জন্য অপরিশোধিত ও পরিশোধিত উভয় ধরনের কুড়ার তেল রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপের সুপারিশ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সম্প্রতি দেওয়া এক চিঠিতে এই প্রস্তাব করে ট্যারিফ কমিশন। এ ছাড়া কুড়া, অপরিশোধিত ও পরিশোধিত কুড়ার তেল রপ্তানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদনের শর্ত আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে ধানের কুড়া রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এখন অপরিশোধিত ও পরিশোধিত কুড়ার তেল রপ্তানিতে একই হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে বিটিটিসি। সংস্থাটি বলেছে, স্থানীয় বাজারে যৌক্তিক মূল্যে পরিশোধিত ধানের কুড়ার তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজন। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে সার্বিকভাবে স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়বে। দামের ক্ষেত্রেও স্বস্তি তৈরি হবে বলে কমিশন মনে করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরকে দেওয়া চিঠিতে ট্যারিফ কমিশন জানায়, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২২ থেকে ২৩ লাখ টন। এই চাহিদার বিপরীতে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি করে স্থানীয়ভাবে পরিশোধনের মাধ্যমে চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ পূরণ করা হয়। অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত কুড়া থেকে বছরে ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টন অপরিশোধিত এবং সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টন পরিশোধিত কুড়ার তেল পাওয়া সম্ভব। এই পরিমাণ কুড়ার তেল দিয়ে ভোজ্যতেলের মোট স্থানীয় চাহিদার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ হবে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী জানিয়ে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কুড়ার তেলের সরবরাহ বৃদ্ধির আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, দেশে বর্তমানে ১ লিটার বোতলজাত কুড়ার তেলের দাম ১৯৫–২০৫ টাকা, আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭২–১৭৫ টাকা। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম তেলের দাম ১৬০–১৬১ টাকা। রাইস ব্র্যান মূলত ধানের খোসা ও সাদা চালের মাঝখানের তৈলাক্ত স্তর, যা কুড়া নামেও পরিচিত। এই ব্র্যান প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কুড়ার তেল পাওয়া যায়, যা বিশ্বে জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যসম্মত রান্নার তেল হিসেবে পরিচিত। ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ কোটি টন ধান উৎপাদন হয়। এ ধান থেকে প্রায় ৬–৭ লাখ টন কুড়ার তেল উৎপাদন সম্ভব। বাংলাদেশ রাইস ব্র্যান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, দেশে মোট ২০টি রাইস ব্র্যান অয়েল মিল রয়েছে। এসব মিলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৪ লাখ ৫৩ হাজার টন। ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে একসময় কুড়ার তেলের কাঁচামাল রাইস ব্র্যান বা কুড়া রপ্তানি হতো। তাতে স্থানীয় মিলগুলো কাঁচামাল সংকটে পড়ে। এ কারণে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে কুড়া রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে কুড়া রপ্তানি নিরুৎসাহিত হলেও অপরিশোধিত কুড়ার তেল রপ্তানি হচ্ছে। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৭ হাজার ২৮৯ টন এবং ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভোমরা ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৬৪ হাজার ১৯ টন অপরিশোধিত কুড়ার তেল রপ্তানি হয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দাভোসে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

ভোজ্যতেল সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্যোগ, কুড়ার তেল রপ্তানিতে শুল্কারোপের প্রস্তাব

আপডেট সময় : ০৫:৫৪:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাইস ব্র্যান অয়েল বা ধানের কুড়ার তেল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সংস্থাটি এ জন্য অপরিশোধিত ও পরিশোধিত উভয় ধরনের কুড়ার তেল রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপের সুপারিশ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সম্প্রতি দেওয়া এক চিঠিতে এই প্রস্তাব করে ট্যারিফ কমিশন। এ ছাড়া কুড়া, অপরিশোধিত ও পরিশোধিত কুড়ার তেল রপ্তানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদনের শর্ত আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে ধানের কুড়া রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এখন অপরিশোধিত ও পরিশোধিত কুড়ার তেল রপ্তানিতে একই হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে বিটিটিসি। সংস্থাটি বলেছে, স্থানীয় বাজারে যৌক্তিক মূল্যে পরিশোধিত ধানের কুড়ার তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজন। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে সার্বিকভাবে স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়বে। দামের ক্ষেত্রেও স্বস্তি তৈরি হবে বলে কমিশন মনে করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরকে দেওয়া চিঠিতে ট্যারিফ কমিশন জানায়, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২২ থেকে ২৩ লাখ টন। এই চাহিদার বিপরীতে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি করে স্থানীয়ভাবে পরিশোধনের মাধ্যমে চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ পূরণ করা হয়। অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত কুড়া থেকে বছরে ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টন অপরিশোধিত এবং সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টন পরিশোধিত কুড়ার তেল পাওয়া সম্ভব। এই পরিমাণ কুড়ার তেল দিয়ে ভোজ্যতেলের মোট স্থানীয় চাহিদার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ হবে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী জানিয়ে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কুড়ার তেলের সরবরাহ বৃদ্ধির আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, দেশে বর্তমানে ১ লিটার বোতলজাত কুড়ার তেলের দাম ১৯৫–২০৫ টাকা, আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭২–১৭৫ টাকা। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম তেলের দাম ১৬০–১৬১ টাকা। রাইস ব্র্যান মূলত ধানের খোসা ও সাদা চালের মাঝখানের তৈলাক্ত স্তর, যা কুড়া নামেও পরিচিত। এই ব্র্যান প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কুড়ার তেল পাওয়া যায়, যা বিশ্বে জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যসম্মত রান্নার তেল হিসেবে পরিচিত। ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ কোটি টন ধান উৎপাদন হয়। এ ধান থেকে প্রায় ৬–৭ লাখ টন কুড়ার তেল উৎপাদন সম্ভব। বাংলাদেশ রাইস ব্র্যান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, দেশে মোট ২০টি রাইস ব্র্যান অয়েল মিল রয়েছে। এসব মিলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৪ লাখ ৫৩ হাজার টন। ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে একসময় কুড়ার তেলের কাঁচামাল রাইস ব্র্যান বা কুড়া রপ্তানি হতো। তাতে স্থানীয় মিলগুলো কাঁচামাল সংকটে পড়ে। এ কারণে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে কুড়া রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে কুড়া রপ্তানি নিরুৎসাহিত হলেও অপরিশোধিত কুড়ার তেল রপ্তানি হচ্ছে। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৭ হাজার ২৮৯ টন এবং ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভোমরা ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৬৪ হাজার ১৯ টন অপরিশোধিত কুড়ার তেল রপ্তানি হয়েছে।