ঢাকা ০৩:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভোজ্যতেলে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুফল কোথায়?

  • আপডেট সময় : ০২:৪০:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার ভোজ্যতেলের ওপর সব ধরনের ভ্যাট প্রত্যাহার করে নিলেও বাজারে এর প্রভাব নেই। ফলে বাড়তি দামেই ক্রেতাদের তেল কিনতে হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিলাররা সেই আগের দামেই তেল বিক্রি করছেন। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছে না। ডিলারদের ভাষ্য, আমদানিকারকরা ভ্যাটমুক্ত পণ্য সরবরাহ না করলে তেলের দাম কমবে না।
বেশ কিছু দিন ধরেই ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় তেলের সংকট। এ নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছেন আমদানিকারক, পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার ভোজ্যতেলের উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে মোট ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোড্র্ (এনবিআর)। এরপর ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে মঙ্গলবার আমদানি পর্যায়েও ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে সরকার। ফলে ভোজ্যতেলের ওপর থেকে মোট ৩০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এই ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রভাব পড়েনি ভোজ্যতেলের ওপর। ফলে সেই বাড়তি দামেই তেল কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বেশিরভাগ দোকানে যথেষ্ট পরিমান তেল নেই। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ভ্যাট প্রত্যাহারের পরও দাম কেন কম রাখা হচ্ছে না- জানতে চাইলে মোহাম্মাদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল হুদা বলেন, আমরা এখনো ডিলারদের কাছ থেকে আগের দামেই কিনছি। সরকার যতোই দাম কমাক না কেন, ডিলাররা দাম না কমালে আমরা কিছু করতে পারব না।
মহাখালী কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলামেরও একই কথা। তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট পর্যায়ে তেলের দাম না কমা পর্যন্ত তেলের দাম পরিবর্তন হবে না। তাছাড়া কোম্পানির কাছ থেকে অর্ডার অনুযায়ী তেলও পাচ্ছি না। আমরাও নিরুপায়।’ কাওরানবাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী সোবহান হোসেন জানিয়েছেন, বর্তমানে যে ভোজ্যতেল বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেটা ভ্যাটসহ বেশি দামে কেনা। সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে শুনেছি, তবে এখনই তো ক্রেতারা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ, আমদানিকারকরা ভ্যাটমুক্ত পণ্য বাজারজাত করার পরেই দাম কমানো যাবে। কবে নাগাদ সঠিক মূল্যে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলসি করা পণ্যগুলো ভ্যাট-ফ্রি হয়ে আসলেই তেলের দাম কমে যাবে।
বাজার করতে আসা আসাদুল হক বলেন, তেলের উপর ভ্যাট কমানো হয়েছে শুনে ভেবেছিলাম কম দামে তেল কিনতে পারবো। কিন্তু এখন দেখছি তেল সেই আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। ভ্যাট প্রত্যাহারে আমাদের কোনো লাভ হলো না। আমদানি পর্যায়ে ভোজ্যতেলে ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ফলে তেলের দাম সামান্য কিছু কমতে পারে বলে ধারনা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আসন্ন রমজানে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পণ্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
৭৫ হাজার টন সয়াবিন তেল চট্টগ্রাম বন্দরে : দেশের বিভিন্ন তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত ৭৫ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে তিনটি জাহাজ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ইতোমধ্যে দুটি এমটি প্যাসিফিক রুবি এবং এমটি লুকাস নামের দুই জাহাজ ৩২ হাজার টন তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। ৪৩ হাজার টন তেল নিয়ে এমটি স্ট্যাভেঞ্জার পাইওনিয়ার নামের অপর একটি বড় জাহাজ আজ বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করবে। গতকাল বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বন্দর সূত্র জানায়, দেশের বেসরকারি সয়াবিন তেল রিফাইনারি ও বাজারজাতকারী শিল্পগ্রুপ টিকে, সিটি, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, মেঘনা এবং সেনা এডিবল অয়েলের ৭৫ হাজার মেট্রিকটন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল চট্টগ্রামে আসছে। এর মধ্যে আজ দুটি জাহাজ থেকে ৩২ হাজার টন তেল খালাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি একটি জাহাজ ৪৩ হাজার টন তেল নিয়ে বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে খালাস প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সয়াবিন তেলের সংকটের এই সময় আমদানিকৃত ৭৫ হাজার টন পরিশোধনের পর বাজারে গেলে তেলের সংকট আর থাকবে না বলে আমদানিকারকরা মনে করছেন। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, সিটি গ্রুপ, সেনা এডিবল অয়েলের প্রায় ৪৩ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল নিয়ে এমটি স্ট্যাভেঞ্জার পাইওনিয়ার নামের একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর অপেক্ষায় রয়েছে। শুক্রবার অথবা শনিবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙ্গরে প্রবেশ করবে। এরপর এই জাহাজ থেকে তেল খালাস শুরু হবে। তেল খালাসের পর ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যেই এই তেল বাজারজাত করা সম্ভব হবে বলে আমদানিকারকরা আশা প্রকাশ করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ভোজ্যতেলে ভ্যাট প্রত্যাহারের সুফল কোথায়?

আপডেট সময় : ০২:৪০:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার ভোজ্যতেলের ওপর সব ধরনের ভ্যাট প্রত্যাহার করে নিলেও বাজারে এর প্রভাব নেই। ফলে বাড়তি দামেই ক্রেতাদের তেল কিনতে হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিলাররা সেই আগের দামেই তেল বিক্রি করছেন। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছে না। ডিলারদের ভাষ্য, আমদানিকারকরা ভ্যাটমুক্ত পণ্য সরবরাহ না করলে তেলের দাম কমবে না।
বেশ কিছু দিন ধরেই ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় তেলের সংকট। এ নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছেন আমদানিকারক, পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার ভোজ্যতেলের উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে মোট ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোড্র্ (এনবিআর)। এরপর ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে মঙ্গলবার আমদানি পর্যায়েও ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে সরকার। ফলে ভোজ্যতেলের ওপর থেকে মোট ৩০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এই ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রভাব পড়েনি ভোজ্যতেলের ওপর। ফলে সেই বাড়তি দামেই তেল কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বেশিরভাগ দোকানে যথেষ্ট পরিমান তেল নেই। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ভ্যাট প্রত্যাহারের পরও দাম কেন কম রাখা হচ্ছে না- জানতে চাইলে মোহাম্মাদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল হুদা বলেন, আমরা এখনো ডিলারদের কাছ থেকে আগের দামেই কিনছি। সরকার যতোই দাম কমাক না কেন, ডিলাররা দাম না কমালে আমরা কিছু করতে পারব না।
মহাখালী কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলামেরও একই কথা। তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট পর্যায়ে তেলের দাম না কমা পর্যন্ত তেলের দাম পরিবর্তন হবে না। তাছাড়া কোম্পানির কাছ থেকে অর্ডার অনুযায়ী তেলও পাচ্ছি না। আমরাও নিরুপায়।’ কাওরানবাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী সোবহান হোসেন জানিয়েছেন, বর্তমানে যে ভোজ্যতেল বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেটা ভ্যাটসহ বেশি দামে কেনা। সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে শুনেছি, তবে এখনই তো ক্রেতারা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ, আমদানিকারকরা ভ্যাটমুক্ত পণ্য বাজারজাত করার পরেই দাম কমানো যাবে। কবে নাগাদ সঠিক মূল্যে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলসি করা পণ্যগুলো ভ্যাট-ফ্রি হয়ে আসলেই তেলের দাম কমে যাবে।
বাজার করতে আসা আসাদুল হক বলেন, তেলের উপর ভ্যাট কমানো হয়েছে শুনে ভেবেছিলাম কম দামে তেল কিনতে পারবো। কিন্তু এখন দেখছি তেল সেই আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। ভ্যাট প্রত্যাহারে আমাদের কোনো লাভ হলো না। আমদানি পর্যায়ে ভোজ্যতেলে ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ফলে তেলের দাম সামান্য কিছু কমতে পারে বলে ধারনা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আসন্ন রমজানে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পণ্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
৭৫ হাজার টন সয়াবিন তেল চট্টগ্রাম বন্দরে : দেশের বিভিন্ন তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত ৭৫ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে তিনটি জাহাজ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ইতোমধ্যে দুটি এমটি প্যাসিফিক রুবি এবং এমটি লুকাস নামের দুই জাহাজ ৩২ হাজার টন তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। ৪৩ হাজার টন তেল নিয়ে এমটি স্ট্যাভেঞ্জার পাইওনিয়ার নামের অপর একটি বড় জাহাজ আজ বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করবে। গতকাল বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বন্দর সূত্র জানায়, দেশের বেসরকারি সয়াবিন তেল রিফাইনারি ও বাজারজাতকারী শিল্পগ্রুপ টিকে, সিটি, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, মেঘনা এবং সেনা এডিবল অয়েলের ৭৫ হাজার মেট্রিকটন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল চট্টগ্রামে আসছে। এর মধ্যে আজ দুটি জাহাজ থেকে ৩২ হাজার টন তেল খালাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি একটি জাহাজ ৪৩ হাজার টন তেল নিয়ে বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে খালাস প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সয়াবিন তেলের সংকটের এই সময় আমদানিকৃত ৭৫ হাজার টন পরিশোধনের পর বাজারে গেলে তেলের সংকট আর থাকবে না বলে আমদানিকারকরা মনে করছেন। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, সিটি গ্রুপ, সেনা এডিবল অয়েলের প্রায় ৪৩ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল নিয়ে এমটি স্ট্যাভেঞ্জার পাইওনিয়ার নামের একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর অপেক্ষায় রয়েছে। শুক্রবার অথবা শনিবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙ্গরে প্রবেশ করবে। এরপর এই জাহাজ থেকে তেল খালাস শুরু হবে। তেল খালাসের পর ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যেই এই তেল বাজারজাত করা সম্ভব হবে বলে আমদানিকারকরা আশা প্রকাশ করেন।