প্রত্যাশা ডেস্ক: পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের নয়টি স্থানে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ভারত। তবে ছয়টি স্থানে হামলা হওয়ার কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের অন্তত ২৬ জন এবং ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে পাকিস্তানের গোলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন।
কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে কয়েক দশক ধরে চলা বিদ্রোহে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। কাশ্মিরকে পুরোপুরি নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে ভারত ও পাকিস্তান
দুই দেশই।
কাশ্মিরে হামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত গভীর রাতে পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এসব হামলায় প্রথমেই অন্তত ৮ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হওয়ার খবর আসে। এর জবাবে রাতেই পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা হামলায় অংশ নেওয়া ভারতের পাঁচটি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করেছে। কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডের সদর দপ্তর ও তল্লাশিচৌকিও গুঁড়িয় দেওয়ার দাবি করেছে তারা।
ভারতের সেনাবাহিনী বলেছে, কাশ্মিরে পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গোলার আঘাতে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যায়িত করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এর সমুচিত জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের হামলাকে ‘হতাশাজনক’ বলেছেন। শিগগির এই সংকটের সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সংঘাতপূর্ণ এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বিশ্ব নিতে পারবে না বলে সতর্ক করেছেন তিনি। উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
ভারত প্রতিবেশী দেশটিতে এই হামলা চালিয়েছে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার জেরে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাশ্মিরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সে কারণে তাদের এই হামলা চালাতে হয়েছে।
২৫ মিনিটে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র, ৯টি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে ৭০ নিহত: ভারত: মঙ্গলবার দিবাগত রাত পেরিয়ে বুধবার প্রথম প্রহরে মাত্র ২৫ মিনিটের অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ৯টি ‘জঙ্গি ঘাঁটিতে’ ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে অন্তত ৭০ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করার দাবি করেছে ভারত।
রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চালানো হয় এই অভিযান। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী যৌথভাবে এই হামলা চালায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ কোডনামে।
নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী বলেন, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মিরের পেহেলগামে যে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, তার প্রতিক্রিয়াতেই এই আঘাত হানা হয়েছে।
ভারতের দাবি, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো পেহেলগামের হামলার জন্য দায়ী। যদিও ইসলামাবাদ বরাবরই এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, গত তিন দশকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির ও পাকিস্তানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্প এবং লঞ্চপ্যাড গড়ে তোলা হয়েছে। এই অভিযান ছিল সেই অবকাঠামো ধ্বংস করে ভবিষ্যতের হামলা রোধের উদ্দেশ্যে।
বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভূমিকা সিং এই অভিযানের ছবি দেখিয়ে বলেন, বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। সবগুলো লক্ষ্য সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
ভারতের হামলায় জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ১০ আত্মীয় নিহত: ভারতের বিমান হামলায় পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে ‘সুবহান আল্লাহ’ মসজিদে বোমা পড়ে জইশ-ই-মুহাম্মদ প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারের ১০ জন আত্মীয় ও তার ঘনিষ্ঠ চার সহযোগী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি।
জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, নিহতদের মধ্যে আজহারের বড় বোন ও তার স্বামী, ভাগ্নে ও তার স্ত্রী, এক ভাতিজি এবং পরিবারের পাঁচ শিশুও রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় আজহারের তিনজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তাদের একজনের মা মারা গেছেন।
জইশ-ই-মুহাম্মদ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা চালিয়ে ভারতের ৪০ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করে। সেই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়। তথ্যসূত্র: বিবিসি
ভারতে আরো সন্ত্রাসী হামলা পরিকল্পনার গোয়েন্দা তথ্য ছিল: পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ভারতের সামরিক অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বুধবার (৭ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
তিনি বলেন, গত মাসে কাশ্মিরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই ভারত এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। ২২ এপ্রিলের হামলার পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছিল-বলেন মিশ্রি। তিনি দাবি করেন, আরো নতুন হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার গোয়েন্দা তথ্যও ভারতের কাছে ছিল। আমাদের এই পদক্ষেপের পেছনে দুটো উদ্দেশ্য ছিল-একদিকে সন্ত্রাসবাদীদের প্রতিরোধ করা, অন্যদিকে সম্ভাব্য হামলাগুলো ঠেকানো। তথ্যসূত্র: বিবিসি