নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সারা দেশেই ঝরছে বৃষ্টি। টানা না হলেও কিছু সময় পরপর ঝিরিঝিরি বৃষ্টির কবলে পড়তে হচ্ছে মানুষজনকে। এমন অবস্থায় বেশ কষ্টে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষেরা। রিকশা-ভ্যানচালক, হকারসহ জীবন জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে যারা বেরিয়েছেন তারা কাকভেজা হয়েই কাজকর্ম করছেন। সকাল থেকে কয়েকদফা বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তার পাশে জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে তাদের। আবার বৃষ্টির পানিতে ঠান্ডা যেন না লাগে সেজন্য মাথায় এবং গায়ে পলিথিন জড়িয়ে নিতেও দেখা গেছে অনেককে। গতকাল শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার হাউজবিল্ডিং, বিএনএস, রাজলক্ষ্মী এবং জসীমউদ্দিনসহ আশপাশের আবাসিক এলাকায় এমন চিত্রই চোখে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষজন জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৪-৫ বারের মতো বৃষ্টি হয়েছে। পরিমাণে বেশি না হলেও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরেছে দীর্ঘসময়। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এই বৃষ্টিতে দিনমজুর, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা এবং শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষজনই বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য পলিথিনেই ভরসা করেছেন অনেকে। বিশেষ করে, বেশিরভাগ রিকশাচালককেই পলিথিন গায়ে বা মাথায় জড়িয়ে কোনোরকমে বৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। তবে পলিথিন সাময়িকভাবে শরীরকে বৃষ্টির থেকে আড়াল করলেও তা দিয়ে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষা পাননি কেউই। বৃষ্টির তীব্রতায় পলিথিন ভেদ করেই পানি ঢুকে ভিজছে অধিকাংশের কাপড়চোপড়। এসব রিকশাচালক বলেছেন, বৃষ্টি বা রোদ সব আবহাওয়াতেই জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হতে হয়। পরিবার পরিজনের জন্য খাবার জোগান দিতে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে কাজ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। আবার বৃষ্টির মধ্যে মানুষজন বাইরে কম বের হওয়ার কারণে দৈনিক আয়ের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। হাউজবিল্ডিং মোড়ে পলিথিন গায়ে জড়িয়ে আধা ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক সোহরাব মিয়া বলেন, বৃষ্টিতে ভিজলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে আজকে সকাল থেকে দুই-তিনবার ভেজার পর হাঁচি শুরু হয়ে গেছে। সেজন্য পলিথিন নিয়েছি। নুরুল আলম নামের আরেক রিকশাচালক বলেন, এখনকার বৃষ্টির পানিতে ঠান্ডা বেশি লাগছে। অন্যসময়ের বৃষ্টির পানিতে ভিজলেও তেমন অসুবিধা মনে হয়নি। কিন্তু আজকে ঠান্ডা লাগছে। বৃষ্টির কারণে যাত্রী কম থাকায় আয়েও কিছুটা টান পড়েছে বলে জানান আরিফুল নামের আরেক রিকশাচালক। তিনি বলেন, শনিবারে এমনিতেই মানুষ কম থাকে। তারপর আবার সকাল থেকে বৃষ্টি। যাত্রী নেই বললেই চলে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র জমা খরচ উঠেছে। আবার বৃষ্টিতে ভিজে বেশিক্ষণ রিকশা চালানোও যায় না। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। বৃষ্টির কারণে ফুটপাতে যেসব হকার জুতা, কসমেটিক সামগ্রী নিয়ে বসেন তারাও দোকান দিতে পারেননি। বৃষ্টি থামার আশায় তারা বসে আছেন যাত্রী ছাউনি কিংবা বিভিন্ন মার্কেটের নিচে। অপরদিকে খুব শিগগিরই এমন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমবে না বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে। যার প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। একইসঙ্গে আগামী ৩ দিন এমন অবস্থা বজায় থাকতে পারে বলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
জনপ্রিয় সংবাদ