ঢাকা ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজেপি’র বিজয়ে বিএনপি কি আবারও মিষ্টি বিতরণ করবে?

  • আপডেট সময় : ১১:০৯:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
  • ৪২ বার পড়া হয়েছে

ড. সুলতান মাহমুদ রানা : ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও, শরিকদের ওপর ভর করেই টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের অপেক্ষায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘এনডিএ’ জোট। তবে, শেষ পর্যন্ত যারাই সরকার গঠন করুক না কেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে খুব একটা পরিবর্তন আসবে না- এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
গত এক দশকে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের একটা চমৎকার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দুই দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমাধান হয়েছে হৃদ্যতাপূর্ণভাবেই। তবে, অমীমাংসিত কোনো বিষয় যে নেই এমনটাও নয়। বিশেষ করে গঙ্গা ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে অনেকদিন ধরেই কিছুটা টানাপোড়েন চলছে।

অন্যদিকে, কংগ্রেসের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের বেশ ভাল একটা সম্পর্ক রয়েছে। গেল কয়েক দশকের ইতিহাস বলে, যারাই ক্ষমতায় আসবে তারাই চাইবে দু’দেশের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। তবে, এই মুহূর্তে ভারত নিয়ে বাংলাদেশের একটিই চাওয়া, আর তা হলো একটি স্থিতিশীল সরকার। কেননা, দেশটির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, অতীতের জোট সরকারগুলোর অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না।
বাংলাদেশের জনগণের সুস্পষ্ট কোনো সুবিধার সম্ভাবনা না থাকলেও বিজেপির এই ধারাবাহিক জয় বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে বলে অনুমান করা যায়। এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের জন্য অর্থবহ কিছু হবে কিছু বহন করে না- এটাও ঠিক। তবে ২০১৪ সালে ভারতের নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল নাকি বিএনপি- বাংলাদেশে বিএনপি নেতাদের উচ্ছ্বাস দেখে তা বোঝা কঠিন ছিল।
বাংলাদেশের অনেকগুলো পত্রিকায় বিএনপির উল্লাস নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছিল। সবার আগে অভিনন্দন জানানোর একধরনের শিশুসুলভ তাড়াহুড়োও এড়ায়নি কারো চোখ। নির্বাচনের ফলাফলের পরদিন সকাল ১০টায় ভারতীয় হাইকমিশন অফিসের তালা খোলার আগেই বিএনপি দূত খালেদা জিয়ার অভিনন্দন বার্তা নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছিল। মোদির বিজয়ের পর বিএনপির বগল বাজানোর মতো কী এমন ঘটনা ঘটেছিল সেটা বুঝে উঠতে পারা যাচ্ছিল না। এমনকি ২০১৯ সালের নির্বাচনে মোদির বিজয়ের পর ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
২০১৪ ও ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে নতুন সরকার গঠনের পর মোদিকে শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছিল জামায়াত। এবার কী হবে, এ নিয়ে এখনও কোনও নেতা কিছু বলতে নারাজ। তারেক রহমান কিংবা জামায়াতের কোনো নেতার অভিনন্দন বার্তা আমাদের চোখে পড়েনি।
ওই সময় বিএনপি নিশ্চিত হয়তো ভেবেছিল যে মোদি এসে তাদের ক্ষমতার চেয়ারে বসিয়ে দেবেন। বিজেপির জয়ে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা সময়ের ব্যাপার- এমনটাই হয়তো ভেবেছিল বিএনপি। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিজেপির সম্পর্ক দেখে তারা এখন এমন ধারণা পোষণ করে না। অবশ্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ভারতে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। কিন্তু ভারতের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর নির্বাচন সাধারণত এভাবেই অনুষ্ঠিত হয়।
সময় অনেকটা গড়িয়ে গেছে। রাজনীতি, চিন্তা, সম্পর্ক এবং অবস্থান সবই এখন পরিবর্তন হয়েছে। এবারে বিজেপির জয়ে বিএনপির জয়- এমন চিন্তা আর দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বিচারে আওয়ামী লীগ সরকারের ভারতের সাথে খুব যুক্তিসঙ্গত সম্পর্ক রয়েছে।
বিএনপি একসময় প্রচার করতো, কংগ্রেসের আওয়ামী লীগের বিশেষ একটি সম্পর্ক রয়েছে। আর এ জন্যই হয়তো কংগ্রেস যখন ক্ষমতা থেকে চলে যায় তখন বিএনপি আনন্দ করেছিল। এমনকি বিএনপির শীর্ষ নেতারা একসময় বিজেপির বিজয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছিল। তাহলে এবার কি বিজেপির জয়ে বিএনপি মিষ্টি বিতরণ করবে?
লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বিজেপি’র বিজয়ে বিএনপি কি আবারও মিষ্টি বিতরণ করবে?

আপডেট সময় : ১১:০৯:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

ড. সুলতান মাহমুদ রানা : ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও, শরিকদের ওপর ভর করেই টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের অপেক্ষায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘এনডিএ’ জোট। তবে, শেষ পর্যন্ত যারাই সরকার গঠন করুক না কেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে খুব একটা পরিবর্তন আসবে না- এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
গত এক দশকে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের একটা চমৎকার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দুই দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমাধান হয়েছে হৃদ্যতাপূর্ণভাবেই। তবে, অমীমাংসিত কোনো বিষয় যে নেই এমনটাও নয়। বিশেষ করে গঙ্গা ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে অনেকদিন ধরেই কিছুটা টানাপোড়েন চলছে।

অন্যদিকে, কংগ্রেসের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের বেশ ভাল একটা সম্পর্ক রয়েছে। গেল কয়েক দশকের ইতিহাস বলে, যারাই ক্ষমতায় আসবে তারাই চাইবে দু’দেশের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। তবে, এই মুহূর্তে ভারত নিয়ে বাংলাদেশের একটিই চাওয়া, আর তা হলো একটি স্থিতিশীল সরকার। কেননা, দেশটির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, অতীতের জোট সরকারগুলোর অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না।
বাংলাদেশের জনগণের সুস্পষ্ট কোনো সুবিধার সম্ভাবনা না থাকলেও বিজেপির এই ধারাবাহিক জয় বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে বলে অনুমান করা যায়। এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের জন্য অর্থবহ কিছু হবে কিছু বহন করে না- এটাও ঠিক। তবে ২০১৪ সালে ভারতের নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল নাকি বিএনপি- বাংলাদেশে বিএনপি নেতাদের উচ্ছ্বাস দেখে তা বোঝা কঠিন ছিল।
বাংলাদেশের অনেকগুলো পত্রিকায় বিএনপির উল্লাস নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছিল। সবার আগে অভিনন্দন জানানোর একধরনের শিশুসুলভ তাড়াহুড়োও এড়ায়নি কারো চোখ। নির্বাচনের ফলাফলের পরদিন সকাল ১০টায় ভারতীয় হাইকমিশন অফিসের তালা খোলার আগেই বিএনপি দূত খালেদা জিয়ার অভিনন্দন বার্তা নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছিল। মোদির বিজয়ের পর বিএনপির বগল বাজানোর মতো কী এমন ঘটনা ঘটেছিল সেটা বুঝে উঠতে পারা যাচ্ছিল না। এমনকি ২০১৯ সালের নির্বাচনে মোদির বিজয়ের পর ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
২০১৪ ও ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে নতুন সরকার গঠনের পর মোদিকে শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছিল জামায়াত। এবার কী হবে, এ নিয়ে এখনও কোনও নেতা কিছু বলতে নারাজ। তারেক রহমান কিংবা জামায়াতের কোনো নেতার অভিনন্দন বার্তা আমাদের চোখে পড়েনি।
ওই সময় বিএনপি নিশ্চিত হয়তো ভেবেছিল যে মোদি এসে তাদের ক্ষমতার চেয়ারে বসিয়ে দেবেন। বিজেপির জয়ে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা সময়ের ব্যাপার- এমনটাই হয়তো ভেবেছিল বিএনপি। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিজেপির সম্পর্ক দেখে তারা এখন এমন ধারণা পোষণ করে না। অবশ্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ভারতে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। কিন্তু ভারতের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর নির্বাচন সাধারণত এভাবেই অনুষ্ঠিত হয়।
সময় অনেকটা গড়িয়ে গেছে। রাজনীতি, চিন্তা, সম্পর্ক এবং অবস্থান সবই এখন পরিবর্তন হয়েছে। এবারে বিজেপির জয়ে বিএনপির জয়- এমন চিন্তা আর দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বিচারে আওয়ামী লীগ সরকারের ভারতের সাথে খুব যুক্তিসঙ্গত সম্পর্ক রয়েছে।
বিএনপি একসময় প্রচার করতো, কংগ্রেসের আওয়ামী লীগের বিশেষ একটি সম্পর্ক রয়েছে। আর এ জন্যই হয়তো কংগ্রেস যখন ক্ষমতা থেকে চলে যায় তখন বিএনপি আনন্দ করেছিল। এমনকি বিএনপির শীর্ষ নেতারা একসময় বিজেপির বিজয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছিল। তাহলে এবার কি বিজেপির জয়ে বিএনপি মিষ্টি বিতরণ করবে?
লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।