লাইফস্টাইল ডেস্ক: ফেসবুকে বেশ কিছুদিন ধরে একটি মিম বেশ ভাইরাল। সেখানে তিনটি বাড়ির ছবি রয়েছে- পাশাপাশি দুটি জমকালো আধুনিক বাড়ির ছবি আর নিচে একটি ভাঙা বাড়ি। এর পাশাপাশি আধুনিক বাড়ি দুটির ওপরে লেখা- বাবার বাড়ি, চাচার বাড়ি। আর নিচের মাটির ভাঙা বাড়িটির ওপর লেখা- দু’জনের পৈতৃক বাড়ি। ওই বাড়ির ভাগ নিয়ে বাবা-চাচার কথা বন্ধ। এমন ঘটনা অনেক পরিবারের সঙ্গেই মিলে যায়। তাই সেখানে হা হা ও স্যাড রি-অ্যাকশনের ছড়াছড়ি।
ঈদের ছুটিতে এমন অনেক আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেই আমাদের দেখা হয় পেশাগত প্রয়োজনে যারা দূরে থাকেন। হইচই, আড্ডা, গল্প, খুনসুটিতে দারুণ কাটে সময়টা। তবে এর মধ্যেও কখনো কখনো প্রকট হয়ে উঠতে পারে কারো কারো দ্বন্দ্ব। হয়তো চাচাদের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল বাগ্বিতণ্ডা কিংবা খালাদের মধ্যে খানিক কথা কাটাকাটি। মতের অমিল যে বিষয়েই হোক, পরিবারের বড়দের নেতিবাচক আচরণে পরের প্রজন্মের মনের জগৎ বেশ প্রভাবিত হয়।
কাছের সব আত্মীয়ই পরিবারের সব শিশুকে কমবেশি আদর করেন। শিশুর মনে তাদের জন্য যে জায়গাটা গড়ে ওঠে, তা আদর-ভালোবাসা দিয়েই ভরে থাকে। আত্মীয়দের কাউকে কাউকে নিজের জীবনের আদর্শও মনে করে কোনো কোনো শিশু। বড় হতে হতে যে কোনো বয়সে দাঁড়িয়েই এমন আত্মীয়ের সঙ্গে নিজের মা কিংবা বাবার ঝগড়া হলে স্বাভাবিকভাবেই সে কষ্ট পায়। ওই আত্মীয়ের প্রতি তো বটেই, নিজের মা-বাবার প্রতিও তার খারাপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। সম্মানের জায়গা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি তার আচরণেও নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে- এমনটাই বলছিলেন শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ।
ঈদের আনন্দে পারিবারিক কিছু সমস্যা যদি সৃষ্টি হয়েই যায়, তাহলে ওই সময়টায় পরিবারের বড়দের এবং ছোটদের করণীয় সম্পর্কে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
পরিবারের নতুন প্রজন্মের সদস্য: বড়দের ঝগড়ার সময় অবুঝ শিশু কেমন আচরণ করবে, তা তো আর তাকে শিখিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই! কিন্তু আপনি যদি কৈশোর কিংবা তারুণ্যে পৌঁছানো একজন মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে এমন পরিস্থিতিতে আপনার ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ঝগড়ার সময় এমন আচরণ করবেন না; যাতে ঝামেলা আরও উসকে যায়। কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলারই প্রয়োজন নেই; বরঙ আপনিই হয়ে উঠতে পারেন বন্ধনের সূত্র। কেবল কিছু সময়ের ঝগড়া বা খারাপ আচরণ দিয়ে কাউকেই বিচার করবেন না। মা-বাবা ও এসব আত্মীয় সবাই আপনার আপনজন। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু অবদান রয়েছে আপনার জীবনে, এমনকি অনেক অবদানের কথা হয়তো আপনি জানেনও না। বিপদে-আপদে এসব মানুষই আপনার পাশে দাঁড়াবেন। তাই চরম উত্তেজনার মুহূর্তটুকু পেরিয়ে গেলে আপনিই সবাইকে পুরোনো সুখস্মৃতি মনে করিয়ে দিতে পারেন। মিল করিয়ে দিতে পারেন তাদের।
উত্তেজনা থামাতে উভয়পক্ষকে শান্ত করা: ওই আত্মীয়ের সন্তান- যারা সম্পর্কে আপনার ভাই বা বোন হন, তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করুন। অমন মনোমালিন্যের জেরে এই সম্পর্কগুলোকে নষ্ট হতে দেবেন না। এমনকি তারা আপনার সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ করলেও আপনি তাদের আবেগের জায়গাটাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। ইতিবাচক থাকুন।
বড়দের দলে থাকা: অন্তত ঈদের কটা দিন কথা কাটাকাটিতে না জড়ানোর চেষ্টাই করুন। নিতান্তই যদি এমন কোনো বিষয়ে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে; যাতে পরিবেশ নষ্ট হতে পারে, তাহলে তা বলুন আলাদাভাবে। পরের প্রজন্মের সামনে এসব কথা তুলবেন না। আলাদা ঘরে গিয়ে কথা সম্পন্ন করুন; যাতে অন্য কেউই শুনতে না পায়। আর যদি ঝগড়ার সময় অন্য কেউ চলেই আসে, তাহলে তার সামনেই ঝগড়া মিটিয়ে নিন, যত দ্রুত সম্ভব। এমনকি হুট করে চলে আসা মানুষটা যদি ‘অবুঝ’ শিশুও হয়, তাহলে এ কাজটি করুন। যার সঙ্গে ঝগড়া করে ফেলেছেন, তার কাছে ওই মুহূর্তেই আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করুন নিজের আচরণের জন্য। তাকে জড়িয়েও ধরতে পারেন। ‘ঝগড়ার সাক্ষী’ হয়ে যাওয়া মানুষটাকে তখনই বুঝিয়ে দিন, এটা একটা সাময়িক ভুল বোঝাবুঝি; আদতে আপনাদের পারিবারিক বন্ধন ভালো।
শেষ কথা: কেবল নতুন প্রজন্ম নয়, পুরোনো প্রজন্মের জন্যও ঝগড়াঝাঁটি ভীষণ নেতিবাচক হয়ে দাঁড়ায়। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির সামনে তার সন্তান, নাতি-নাতনিরা যদি বিবাদে লিপ্ত হন, তাহলে তিনি হয়তো নিভৃতে কাঁদেন। পরিবারে মতের অমিল থাকতেই পারে। তবে কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নেই। পৃথিবী নশ্বর। কেউ জানেনও না কার আয়ু কত দিন। জীবনের এই অজানা কিন্তু সীমিত সময়টাকে উপভোগ করুন প্রাণভরে। ঈদের আগে দুর্ঘটনায় ভাতিজা, ভাগ্নি কিংবা সন্তান হারানো সব মানুষেৎর অসহায়ত্বের কথা ভাবুন। পৃথিবীর অন্য কোথাও যুদ্ধ, রোগবালাই কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত পরিবারগুলোর কথা ভাবুন। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদ্যাপন করতে পেরেছেন মানে তো আপনি ভাগ্যবান মানুষ। কখনো কখনো কিছু ছাড় না হয় দিলেনই আপনজনদের জন্য।