The Daily Ajker Prottasha

বাজারে আগুন, টিসিবির পণ্য ব্যবসায়ীদের ভান্ডারে, মানুষ যাবে কোথায়?

0 0
Read Time:7 Minute, 22 Second

নিজস্ব প্রতিবেদক : চাল, ডাল, মাছ, সবজি, চিনি- সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে অতিরিক্ত। যারা আমার মতো দিন আনে দিন খায় তারা এখন কী করবে? বাজারে গেলে কোনো পণ্য কম দামে কেনা যায় তা কেউ বলতে পারবেনা। মাছ ২০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। আর শাকসবজির দামও তো বেশি।
আলাপকালে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পল্টন এলাকার রিকশা চালক সোলেমান মিয়া। নি¤œ আয়ের এসব মানুষের সাথে কথা বলে বর্তমান বাজার অনুযায়ী তাদের জীবনের করুণ চিত্র উঠে আসে। সরকার গরিবের জন্য টিসিবির মাধ্যমে কম দামে পণ্য বিক্রি শুরু করলেও বঞ্চিত তারা। টিসিবির পণ্য অসাধু ব্যবসায়ীদের ভা-ারে চলে যায়। রিকশা চালক সোলেমান মিয়া বলেন, ‘সরকার থেকে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছি না। টিসিবির পণ্য কিনতে গেলে তো কতো ধরনের নিয়ম দেখায়। নিয়ম দেখিয়ে না করে দেয়। বড়লোক ও মধ্যবিত্তদের ভিড় দেখা যায় টিসিবির লাইনে। রাজধানীতে আমার মতো হাজার হাজার নি¤œ আয়ের মানুষ যে না খেয়ে দিন পার করছে তার কোনো খোঁজ খবর নেই সরকারের।’
দেশে ২০২০ সালে করোনা মহামারির ধাক্কায় অর্থনৈতিক মন্দায় কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তবে ২০২১ সালে কিছুটা স্বস্তি পেতে শুরু করেছিল দেশটি। বাংলাদেশ অর্থনৈতির দুর্ভোগ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন করে আরেকটি ধাক্বা লাগে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়, ডলারের দাম ও আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধি। এসব কারণে দেশে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়, বেড়ে যায় পণ্যমূল্য, বেড়ে যায় আমদানি ব্যয়ও। এ জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় খোলা ট্রাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নির্দিষ্ট ডিলারদের মাধ্যমে বাজার দরের চেয়ে কমমূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকে সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কিছুটা কম দামে পণ্য ক্রয় করে কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করেন নি¤œ আয়ের মানুষজন। তবে বিভিন্ন সময় সরকারি চাকরিজীবীসহ মধ্যবিত্তদেরও টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য ক্রয় করতে দেখা গেছে। কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সরকারের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে মনে করছেন নি¤œ আয়ের মানুষ।
গুলিস্তান এলাকার চানাচুর বিক্রেতা কবির মিয়া বলেন, ‘টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েও কোনো পণ্য পাই না। এই দুঃখ কাকে বলব! সরকার থেকে বলা হচ্ছে গরিবের নাকি টিসিবির সব পণ্য! এসব পণ্য কম দামে কিনতে পাওয়া যায়! কিন্তু এই সুযোগটাই পাচ্ছি না। আমি যা দেখলাম টিসিবির পণ্য অসাধু ব্যবসায়ীদের ভা-ারেই চলে যায়। আর আমার মতো দিন আনে দিন খায় গরিব মাঠে মারা যাচ্ছে।’
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা রিকশা চালক শিপন আহমদ বলেন, ‘প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। ২০২২ সালের শুরুর দিকে আটাশ চাল ৫০ টাকা করে কিনেছি। কেজিপ্রতি দুই টাকা তিন টাকা করে বাড়তে বাড়তে আগস্টের পরে ৬০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে।’
শিপন আহমদ বলেন, ‘আমার সংসারে দুই ছেলে দুই মেয়ে আর স্ত্রীসহ সর্বমোট ছয় জনকে নিয়ে জীবনযাপন করছি। অন্য চালের তুলনায় বাজারে আটাশ চাল একটু কমে পাওয়া যায়। মিনিকেটের কেজি ৭৫ টাকা, আর নাজিরশাইলের কেজি ৯৫ টাকা। আমাদের দেশে গরিবদের বসবাস করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি।’
কারওয়ান বাজার এলাকার ভ্যান চালক গফুর মিয়া বলেন, ‘আমার ভ্যান গাড়ি দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সবজি দেই। সবজি ব্যবসায়ীরা বলে যানবাহন টাকা বেশি নেয়। কিন্তু আমার মতো অন্য ভ্যান চালকরাও মহাবিপদে আছে। ২০২১ সালে যে ভাড়া দিতো সবজি ব্যবসায়ীরা ২০২২ সালে একই ভাড়া দেয়।’
গফুর মিয়া বলেন, ‘রাজধানীর বাজারে সবজির দাম এতো বেশি বেড়েছে, কখনো কল্পনাও করিনি। ২০২১ সালে যে সবজি ১৫ থেকে ২০ টাকায় কিনেছি এখন সেই সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের সবজির দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। অতিরিক্ত আয়ও যদি থাকতো তাহলে তো আর সমস্যা ছিল না। পরিবার নিয়ে কষ্ট করে চলতে হয়। অনেকদিন একবেলা খেয়ে থাকতে হয়।’
পল্টন এলাকার রিকশা চালক ফরিদ হোসেন বলেন, ‘গরিবের পাঙাশ প্রতিকেজি ২০০ টাকার বেশি, কই মাছের কেজি আড়াইশ থেকে প্রায় তিনশ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আমরা এসব মাছতো কিনতে পারছি না। আগস্টের পর তিন বার মাছ খেয়েছি। এতো বেশি দাম বেড়েছে কেনার সাহস হচ্ছে না। আর মাছ কিভাবে কিনবো অনেকদিন তো বউ-বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়।’ বনশ্রী এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশ এতো খারাপ এতো বেশি দুর্নীতিবাজ মানুষ! ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও সিন্ডিকেটের কারণে চিনি প্রতিকেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর অনেক দোকানে তো চিনি পাওয়াও যায় না।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Average Rating

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *