নারী ও শিশু ডেস্ক : এক সময় দেখা যেত সিনেমায় অন্য সব চরিত্রের মতো শিশু চরিত্র গল্পে হাজির হতো নায়কের মতো। মাস্টার সুমন, মাস্টার শাকিলের মতো অভিনেতারা পর্দা ভাগাভাগি করে নিতেন দাপুটে নায়কদের সঙ্গে। ছুটির ঘণ্টা, আমার বন্ধু রাশেদ, অশিক্ষিত কিংবা ডুমুরের ফুল- এমন অসংখ্য সিনেমার নাম বলা যায়, যেখানে নায়ককে ছাপিয়ে শিশু চরিত্রই হয়ে উঠেছে যেন মহানায়ক। মাস্টার সুমন, মাস্টার শাকিল সেইসব শিশু অভিনয় শিল্পীদের প্রতিনিধি। ৮০ দশকের রুপালি পর্দায় রাজত্ব করেছেন তারা। গল্পে তাদের উপস্থিতি কখনো দর্শকদের হাসিয়েছে আবার কখনো করেছে বিষাদের সঙ্গী। পরবর্তীতে অন্তরা, মাটির ময়নার অনু এবং সবশেষ শিশুশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন দিঘী। তবে কালের যাত্রায় হারিয়ে গেছেন তারা। এরপর তৈরি হয়নি নতুন কোনো শিশুশিল্পী। এখনো প্রতি বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শিশু শিল্পী ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়। তবে সেই অর্থে জনপ্রিয় হয়নি কেউ মাস্টার সুমন অথবা মাস্টার শাকিলের মতো। গল্পে কী ভূমিকা ছিল শিশু চরিত্রের? কেনই বা গল্প থেকে হারিয়ে গেল শিশু চরিত্র? একটি সংবাদসংস্থা তা উদঘাটনের চেষ্টা করেছে। যা এখানে তুলে ধরা হলো।
এ বিষয়ে খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক মতিন রহমান বলেন, ‘সামাজিক সিনেমার ভেতর প্রচলিত ধারার যে কমার্শিয়াল এলিমেন্টসগুলো, ততটা রাখা যায় না, যার কারণে চরিত্রগুলোই সিনেমা থেকে বাদ হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এখনকার সিনেমাগুলোতে সামাজিক পারিবারিক গল্প ওইভাবে বলতে চাই না। এটা একটা সংকট, আর এই সংকটের একটি বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এ ধরনের শিশু চরিত্র নাই হয়ে যাওয়া। তাদের নিয়ে এখন নির্মাতারা সেভাবে ভাবছেও না। কিন্তু শিশু-কিশোর সবার কাছেই প্রিয়। এজন্য সিনেমার গল্প, কাহিনী ও সংলাপে শিশুদের জায়গা রাখতে হবে। সিনেমায় শিশুদের সুযোগ দিতে হবে।’
চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান বিবেরু বলেন, ‘সময়ের সঙ্গেসঙ্গে শিশুভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে না। কারণ, এ ব্যাপারে নির্মাতাদের আগ্রহও কম। চিত্রনাট্য সংকট, সেইসঙ্গে শিশুদের নিয়ে সিনেমা বানানোর ব্যাপারে এখনকার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর সরকারিভাবে শিশুতোষ সিনেমা বানানোর জন্য অনুদান দেওয়া হচ্ছে। সেই টাকা নিয়েও সেভাবে শিশুতোষ সিনেমা বানানো হচ্ছে না।’
এ মুহূর্তে শিশু চরিত্রের গুরুত্ব বাড়াতে কী প্রদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে-প্রশ্নে এই চিত্রসমালোচক বলেন, ‘যদি শিশু চরিত্র আর্কষণীয় করে তোলা যায়, তাহলে শিশুরা নিশ্চই সেই সিনেমা দেখার জন্য বাবা-মাকে নিয়ে আসবে। এজন্য এখনকার নির্মাতাদের উচিত শিশুদের নিয়েও ভাবা।’
এ প্রজন্মের শিশুশিল্পী মুনতাহা এমিলিয়ার বাবা আরমান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি মনে করি প্রকৃত শিশু শিল্পীদের শুধু শিশু হিসেবে মূল্যায়ন না করে, একজন শিশু শিল্পীকে তার কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা উচিত। শিল্পী হিসেবে কাজের প্রতি তার ত্যাগ ও স্পৃহাকে যথাযথভাবে মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন, রাষ্ট্রীয় এবং সব পর্যায়ের। আমাদের দেশে শিশু শিল্পীদের শুধু শিশু হিসেবেই মূল্যায়ন না করে, বড়-ছোট ভেদাভেদ না করে, তার মেধার মূল্যায়ন করে সে যেন ভবিষ্যতে এই শিল্পের একজন অংশীদার হতে পারে সেজন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতা করা দরকার।’
‘এই মুহূর্তে শিশু চরিত্রে গুরুত্ব বাড়াতে বড়দের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা, যেমন সরকারি বেসরকারিভাবে শিশুশিল্পীদের কাজের মূল্যায়ন করে তাদের পুরস্কৃত করা উচিত’ বলে মনে করেন এই তিনি।
কী ভাবছে এ প্রজন্মের শিশু অভিনেত্রীরা: শিশুশিল্পী মুগ্ধতা মোর্শেদ ঋদ্ধি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখন নানা ধরনের সিনেমা তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সিনেমায় শিশুদেরকে সেভাবে প্রাধ্যান্য দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু চাইল্ড আর্টিস্টেরও তো গুরুত্ব আছে। কিন্তু এখন সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।’
এ প্রজন্মের শিশু অভিনয় শিল্পী সিমরান লুবাবা বলেন, ‘সিনেমায় বাচ্চাদের অভিনয় আছে শুনলে হয়তো মানুষ সেভাবে গুরুত্ব দেয় না, মনে করে বাচ্চারা তো সেভাবে অভিনয় করতে পারবে না। কিন্তু যদি আগের মতো করে ভাবে ও গুরুত্ব দেয় তাহলে আগের মতো শিশু চরিত্র জনপ্রিয় হবে।’