নিজস্ব প্রতিবেদক : রাশিয়ার ‘স্পুৎনিক-ভির’ পর এবার চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিল বাংলাদেশ সরকার। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, “সিনোফার্ম যে টিকা উদ্ভাবন করেছে, আমরা আজকে সেটার ইমার্জেন্সি ইউজের অথরাইজেশন দিয়েছি।”
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার সরবরাহ সঙ্কটে টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে জটিলতার মধ্যে দ্রুত দুটি নতুন টিকার অনুমোদন দেওয়া হল।
গত ৮ জানুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার অনুমোদন দেওয়ার পর গত বুধবার মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি স্পুৎনিক-ভি টিকাও বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসনের সবুজ সংকেত পায়। সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার আনুষ্ঠানিক নাম বিবিআইবিপি-সিওরভি (ইইওইচ-ঈড়ৎঠ)। এ টিকাও ২৮ দিনের ব্যবধানে দুই ডোজ করে নিতে হয়। পরীামূলক প্রয়োগে এ টিকা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকরিতা দেখিয়েছে বলে উৎপাদনকারীদের ভাষ্য। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “এই টিকা কেনা হবে সরকারি পর্যায়ে। চীন অনুদান হিসেবে ৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। এগুলো আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে।”
মাহবুবুর রহমান বলেন, এই টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল হয়েছে চীনে। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল বিশ্বের পাঁচটি দেশের ৫৫ হাজার মানুষের ওপর হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি কমিটি এ টিকার সব নথিপত্র যাচাই করেছে।
“সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমাদের যে কমিটি আছে, সেই কমিটি এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে আমরা আজ চীনের সিনোফার্মের এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছি।”
তিনি বলেন, টিকা বাংলাদেশে আসার পর প্রথমে ১ হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করে তাদের পর্যবেণ করা হবে। “আমরা দেখব এই টিকার সেইফটি এবং অ্যাফিকেসি কেমন। এরপর গণটিকাদান কার্যক্রমে সিনোফার্মের টিকা ব্যবহার করা হবে।” যারা প্রথম ডোজে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডোজে সিনোফার্মের টিকা নিতে পারবেন কি না জানতে চাইলে মেজর জেনারেল মাহবুব বলেন, দ্বিতীয় ডোজে তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই নেবেন।
“অন্য কোনো টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে কি না সে বিষয়ে আমাদের ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ আছেন, তাদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। উনারা একটা মিটিং করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।”
কেবল আমদানি নয়, স্পুৎনিক-ভি ও সিনোফার্মের টিকা দেশেই উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে অথবা কাঁচামাল নিয়ে এসে বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিতে টিকা উৎপাদন করা যাবে। বাংলাদেশের ইনসেপ্টা, পপুলার এবং হেলথকেয়ার ফার্মার টিকা উৎপাদনের সমতা আছে।
তবে প্রাথমিকভাবে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে কথা হচ্ছে বলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান। তিনি বলেন, “উনারা (চীনের প্রতিনিধি) আসবেন। তিনটি ফার্মাসিউটিক্যালসই দেখবেন, সমতা অ্যাসেস করবেন। করার পরে সেই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে তাদের একটা সমঝোতা হবে।”
করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সরকার দেশের ১৩ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। সেই ল্েয গত নভেম্বরে সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা আনতে চুক্তি করে সরকার। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে এই টিকা আসার কথা ছিল চুক্তিতে। তবে জানুয়ারিতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ, ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে ২০ লাখ ডোজ মিলিয়ে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে আরও ৩২ লাখ ডোজ টিকা। ভারতে করোনাভাইরাস মহামারী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দেশটি টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে বাংলাদেশের কেনা বাকি ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা কবে আসবে, তা এখনও নিশ্চিত না। সরকার গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে। ৮ এপ্রিল শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান। ভারত থেকে টিকা আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। কেনা টিকার বাইরে কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজারের এক লাখ ডোজ টিকা মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশে পৌঁছাবে বলে সরকার আশা করছে।
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশে অনুমোদন পেল চীনের সিনোফার্মের টিকা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ