নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ফুটবল খেলার উন্নয়নে বর্তমান বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার সহযোগিতা চেয়েছেন। বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে অভিমত ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, “মেসির নাম এবং আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে খুবই জনপ্রিয়।” আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরো গতকাল মঙ্গলবার সকালে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।
আর্জেন্টিনার সঙ্গে যোগাযোগ জোরদারে তাঁর সরকারের আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বুয়েন্স আয়ার্সের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে খুবই আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ধিত সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে তাদের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আর্জেন্টিনা বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাকের পাশাপাশি উচ্চমানের ফার্মাসিউটিক্যালস, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য পণ্য কিনতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন, এনিমেল ভেজিটেবল ফ্যাটস এন্ড ওয়েল, তৈলবীজ, ফলমূল, দুগ্ধজাত পণ্য এবং প্রাকৃতিক মধু আমদানি করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিল্পায়নের লক্ষ্যে সারা দেশে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বিপণন কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শুধু দেশের মধ্যেই নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও শক্তিশালী যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তুলছে।
সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরো আশা প্রকাশ করেছেন যে ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস পুনরায় খোলার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, ঢাকায় তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু হওয়ায় আর্জেন্টিনা খুবই খুশি এবং এ লক্ষ্যে সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। আর্জেন্টিনা প্রথম ১৯৭৪ সালে ঢাকায় তার দূতাবাস খোলে। কিন্তু ১৯৭৮ সালে সামরিক জান্তার শাসনামলে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়। সোমবার ঢাকার বনানীতে আর্জেন্টিনা দূতাবাস পুণরায় খোলা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সারা বিশ্ব দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বে খাদ্য দ্রব্যের দাম এবং মূদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক উন্নত দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সফররত মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ ও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আর্জেন্টিনার জনগণও উচ্চ মূদ্রাস্ফীতিতে ভুগছে।
তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সম্মিলিত ভাবে গ্লোবাল সাউথ ফোরামের সদস্য দেশগুলোর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার ও প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেখে তিনি মুগ্ধ বলেও জানান।
এটি প্রথম সফর উল্লেখ করে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এত সুন্দর হবে তা কখনোই ভাবিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হুগো গোবি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে ভোজ্যতেল কারখানা করার আহ্বান আর্জেন্টিনাকে: ভোগ্যপণ্যের অন্যতম যোগানদাতা দেশ আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও বাড়াতে আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার সচিবালয়ে আর্জেন্টিনার ফরেন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড মিনিস্টার সান্তিয়াগো কাফিরোর সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বৈঠকে বাংলাদেশের তরফ থেকে এই আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরা হলে আর্জেন্টিনাও ইতিবাচক সাড়া দেয়। পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব জোরদার এবং বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে এ সময় একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেন দুই দেশের মন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পরে বলেন, “আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বিশ্বের প্রধান খাদ্য উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল ও চিনি আমদানি করে। আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের স্পেশাল ইকোনমিক জোনে কারখানা স্থাপন করে ভোজ্যতেল বাজারজাত করলে তুলনামূলক কম মূল্যে তা সরবরাহ করা সম্ভব হবে।”
এ দেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার করসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বড় বাজার, এখানে পণ্য উৎপাদন করে পাশের দেশগুলোতেও রপ্তানি করা সম্ভব।” টিপু মুনশি বলেন, মার্কোসুর গ্রুপের চারটি (আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে) সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের ক্রয় ক্ষমতা অনেক শক্তিশালী। এ বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি অনেক বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চায়। অন্যদিকে বাণিজ্য বিনিয়োগে আর্জেন্টিনার আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরেন দেশটির মন্ত্রী সান্তিয়াগো কাফিরো। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের বড় সমর্থক। বাংলাদেশে রপ্তানিমুখী শিল্পে আর্জেন্টিনা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে আগ্রহী আর্জেন্টিনা।” আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন তেল, চিনি ও গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে সূর্যমুখী তেল আমদানির কথাও ভাবছে সরকার। দুদেশের বর্তমান বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০১ দশমিক শূন্য ২ মিলিয়ন ডলার; ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে আমদানি করেছে ৭৯১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঞ্চালনায় এমওইউ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আর্জেন্টিনা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ছাড়াও বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক ও মো. হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে আর্জেন্টিনার সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ