ঢাকা ০৪:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশি নারীর আসামে নাগরিকত্বের আবেদন

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৭:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৩২ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: চিকিৎসার জন্য ২০০৭ সালে ভারতের আসামে গিয়েছিল বাংলাদেশের সিলেটের এক পরিবার। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে পরিবারের এক মেয়ে স্থানীয় এক যুবকের প্রেমে পড়ে। শেষমেশ তাকে বিয়ে করে সেখানেই থেকে যান তিনি। তবে তার ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ কখনোই প্রশস্ত ছিল না।
২০১৯ সালে বিজেপি সরকার হিন্দুসহ ছয়টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে একটি আইন পাস করে। সেই আইনের মাধ্যমে এবার ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন বাংলাদেশের ওই নারী।
মায়ের চিকিৎসার জন্য যখন ভারতে গিয়েছিলেন ওই নারী। তখন তার বয়স অনেকটাই কম। হাসপাতালেই তার সঙ্গে দেখা হয় আসামের বদরপুরের এক যুবকের। তিনিও তার বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য শিলচরে গিয়েছিলেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার প্রক্রিয়া অনেকটাই জটিল এবং এই সময় ওই মেয়ের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন যুবকটি। সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্ব ও প্রেম। এদিকে মায়ের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার আগে ওই নারী প্রেমের কথা জানান পরিবারকে।
দু’জনই হিন্দু পরিবারের হওয়ায় হিন্দু রীতি মেনে তাদের বিয়ে হয় এবং বাংলাদেশি ওই নারী থেকে যান ভারতে। পরে তাদের এক সন্তানও হয়। করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর শহরে স্বামীর সঙ্গে সুখে সংসার করছেন ওই নারী। কিন্তু ভারতের নাগরিক কখনোই হননি তিনি। এরই মধ্যে নতুন করে এনআরসির প্রক্রিয়া শুরু হয় আসামে। বহু মানুষের কাছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে নোটিশ আসে। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় আসামে। সমস্যায় পড়েন ওই নারী।
২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ পেশ করে বর্তমান বিজেপি সরকার। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন, শিখ এবং পারসি সম্প্রদায়ের মানুষেরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আইন পাস হলেও বহুদিন এর প্রণয়নবিধি প্রকাশ করেনি সরকার। এ বছরের মার্চে সেই আইনের প্রণয়নবিধি প্রকাশ হয়। তারপরই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন ওই নারী।
এপ্রিল মাসে আসামের বরাক উপত্যকার বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শরণার্থী এই আইনের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বদরপুরের ওই নারীও। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।
স্থানীয় আইনজীবীদের মতে, সিএএর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দাবি করতে গেলে আবেদনকারীকে প্রথমে প্রমাণ করতে হয় তিনি ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে তার দেশ ছেড়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন এবং ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত বারোটা পর্যন্ত যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন, শুধু তারাই আবেদন করতে পারেন। ভারতে প্রবেশ করার পর এই দেশে থাকার প্রমাণও দিতে হয় এই আইনে নাগরিকত্ব চাইলে।
ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারক ধর্মানন্দ দেব জানান, গত বছর ভারতের নির্বাচন কমিশন আসামের বদরপুরের একটি অংশকে করিমগঞ্জ জেলা থেকে বাদ দিয়ে কাছাড়ের সঙ্গে জুড়ে দেয়। বদরপুরের ওই নারী প্রথমে করিমগঞ্জের বাসিন্দা হিসেবে আবেদন করেছিলেন। তবে পরে দেখা যায়, তার বাড়ি কাছাড় জেলার আওতায়। ফলে তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেন এবং পরে আবারও আবেদন করেন। তিনি বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছেন এবং তার পরিবারের লোকেরা সেখানেই থাকেন। ২০০৭ সাল থেকে এদেশেই রয়েছেন তিনি। ফলে সিএএতে আবেদনে প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে অসুবিধা হয়নি তার। এবার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আশাবাদী শিগগিরই তিনি ভারতের নাগরিক হবেন।
ধর্মানন্দের মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়নের বিধি কিছতা অসম্পূর্ণ এবং জটিল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে যারা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তারা সবাই সেই দেশের নথি সঙ্গে করে আনতে পারেননি। অথচ সিএএর বিধিতে বলা হয়েছে আবেদনকারীকে অন্তত এমন একটি নথি দেখাতেই হবে। হয়তো এই কারণেই অনেকে আবেদন করছেন না। আবার প্রক্রিয়াটি এতাই জটিল, অনেকে তা সামাল দিতে পারেন না। আমরা স্বেচ্ছায় তাদের সাহায্য করছি এবং আমার হাত ধরে এখন পর্যন্ত নয়জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে একজন নাগরিকত্ব পেয়েছেন।’
ডয়চে ভেলের সঙ্গে বাংলাদেশের ওই নারীর পরিবার কথা বললেও তারা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তাদের আইনজীবী এখনই ওই নারীর নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশি নারীর আসামে নাগরিকত্বের আবেদন

আপডেট সময় : ০৪:৩৭:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

নারী ও শিশু ডেস্ক: চিকিৎসার জন্য ২০০৭ সালে ভারতের আসামে গিয়েছিল বাংলাদেশের সিলেটের এক পরিবার। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে পরিবারের এক মেয়ে স্থানীয় এক যুবকের প্রেমে পড়ে। শেষমেশ তাকে বিয়ে করে সেখানেই থেকে যান তিনি। তবে তার ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ কখনোই প্রশস্ত ছিল না।
২০১৯ সালে বিজেপি সরকার হিন্দুসহ ছয়টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে একটি আইন পাস করে। সেই আইনের মাধ্যমে এবার ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন বাংলাদেশের ওই নারী।
মায়ের চিকিৎসার জন্য যখন ভারতে গিয়েছিলেন ওই নারী। তখন তার বয়স অনেকটাই কম। হাসপাতালেই তার সঙ্গে দেখা হয় আসামের বদরপুরের এক যুবকের। তিনিও তার বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য শিলচরে গিয়েছিলেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার প্রক্রিয়া অনেকটাই জটিল এবং এই সময় ওই মেয়ের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন যুবকটি। সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্ব ও প্রেম। এদিকে মায়ের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার আগে ওই নারী প্রেমের কথা জানান পরিবারকে।
দু’জনই হিন্দু পরিবারের হওয়ায় হিন্দু রীতি মেনে তাদের বিয়ে হয় এবং বাংলাদেশি ওই নারী থেকে যান ভারতে। পরে তাদের এক সন্তানও হয়। করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর শহরে স্বামীর সঙ্গে সুখে সংসার করছেন ওই নারী। কিন্তু ভারতের নাগরিক কখনোই হননি তিনি। এরই মধ্যে নতুন করে এনআরসির প্রক্রিয়া শুরু হয় আসামে। বহু মানুষের কাছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে নোটিশ আসে। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় আসামে। সমস্যায় পড়েন ওই নারী।
২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ পেশ করে বর্তমান বিজেপি সরকার। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন, শিখ এবং পারসি সম্প্রদায়ের মানুষেরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আইন পাস হলেও বহুদিন এর প্রণয়নবিধি প্রকাশ করেনি সরকার। এ বছরের মার্চে সেই আইনের প্রণয়নবিধি প্রকাশ হয়। তারপরই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন ওই নারী।
এপ্রিল মাসে আসামের বরাক উপত্যকার বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শরণার্থী এই আইনের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বদরপুরের ওই নারীও। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।
স্থানীয় আইনজীবীদের মতে, সিএএর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দাবি করতে গেলে আবেদনকারীকে প্রথমে প্রমাণ করতে হয় তিনি ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে তার দেশ ছেড়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন এবং ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত বারোটা পর্যন্ত যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন, শুধু তারাই আবেদন করতে পারেন। ভারতে প্রবেশ করার পর এই দেশে থাকার প্রমাণও দিতে হয় এই আইনে নাগরিকত্ব চাইলে।
ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারক ধর্মানন্দ দেব জানান, গত বছর ভারতের নির্বাচন কমিশন আসামের বদরপুরের একটি অংশকে করিমগঞ্জ জেলা থেকে বাদ দিয়ে কাছাড়ের সঙ্গে জুড়ে দেয়। বদরপুরের ওই নারী প্রথমে করিমগঞ্জের বাসিন্দা হিসেবে আবেদন করেছিলেন। তবে পরে দেখা যায়, তার বাড়ি কাছাড় জেলার আওতায়। ফলে তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেন এবং পরে আবারও আবেদন করেন। তিনি বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছেন এবং তার পরিবারের লোকেরা সেখানেই থাকেন। ২০০৭ সাল থেকে এদেশেই রয়েছেন তিনি। ফলে সিএএতে আবেদনে প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে অসুবিধা হয়নি তার। এবার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আশাবাদী শিগগিরই তিনি ভারতের নাগরিক হবেন।
ধর্মানন্দের মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়নের বিধি কিছতা অসম্পূর্ণ এবং জটিল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে যারা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তারা সবাই সেই দেশের নথি সঙ্গে করে আনতে পারেননি। অথচ সিএএর বিধিতে বলা হয়েছে আবেদনকারীকে অন্তত এমন একটি নথি দেখাতেই হবে। হয়তো এই কারণেই অনেকে আবেদন করছেন না। আবার প্রক্রিয়াটি এতাই জটিল, অনেকে তা সামাল দিতে পারেন না। আমরা স্বেচ্ছায় তাদের সাহায্য করছি এবং আমার হাত ধরে এখন পর্যন্ত নয়জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে একজন নাগরিকত্ব পেয়েছেন।’
ডয়চে ভেলের সঙ্গে বাংলাদেশের ওই নারীর পরিবার কথা বললেও তারা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তাদের আইনজীবী এখনই ওই নারীর নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।