ঢাকা ০৮:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

বহ্নির তৈরি গয়নার গল্প

  • আপডেট সময় : ১০:১৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক : নারী নিজেকে সাজাতে যে গয়না ব্যবহার করেন সেই গয়না বিক্রির টাকায় কেউ কেউ সংসার সাজায়। তাদেরই একজন সংহিতা বহ্নি। গয়না তৈরির উপাদানগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো নিজের মনের মতো করে নতুন রূপ দেন সংহিতা। তার তৈরি গয়না ময়মনসিংহের অনেক নারীর কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কেউ নিজে সাজতে আবার কেউ প্রিয়জনকে সাজাতে সংহিতার তৈরি গয়না কেনেন। গয়না তৈরি একটি সৃজনশীল কাজ। এই কাজ সংহিতার মনের আনন্দ দেয় আবার বেঁচে থাকার পথও দেখায়।
মা আর সন্তানকে নিয়ে সংহিতা বহ্নির সংসার। একসময় বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করেছেন আড়ংয়ে। এরপর চাকরি করেছেন বাংলালিঙ্কের কাস্টমার কেয়ারে। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠান ‘কাহার’-এর কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন সংহিতা। সন্তান আর স্বপ্ন আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন সংহিতা। সংহিতা বহ্নি বলেন, ‘আমার বিজনেসে আসাটা একদম হুট করে। ২০২০ সালে আব্বা চলে যান। তখন করোনা পিরিয়ড চলছে। সংসার কীভাবে চালাবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন মাত্র ২৬০০ টাকা দিয়ে ব্যবসার কাজ শুরু করি।’
বুটিকস আইটেম নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন সংহিতা। অ্যাপ্লিকের কয়টা শাড়ি আর থ্রি-পিস বিক্রি করে একটু একটু করে সাহস সঞ্চয় করেন। এরপরে শাড়ির সঙ্গে বিছানার চাদর বিক্রি শুরু করেন। ধীরে ধীরে নিজ হাতে তৈরি গয়নাকে করে তোলেন কাহারের সিগনেচার পণ্য। দেশীয় ফ্যাশনধারাকে সমৃদ্ধ করছে হাতে তৈরি গয়না। কানের দুল, নাকফুল, চুড়ি, চেইনসহ প্রায় সব ধরনের গয়নায় পাওয়া যায় কাহারে। বিভিন্ন ধাতু, সুতা, মুক্তা, কড়ি, কাপড়, শুকনো ফুল, পাথরের সুষম বিন্যাসে তৈরি হয় এসব গয়না।
কাহারের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য কী করেন?- এ প্রশ্নের জবাবে সংহিতা বহ্নি বলেন, বিভিন্ন বিজনেস গ্রুপে নিয়মিত পোস্ট করি। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পণ্য নিয়ে পোস্ট করি। লাইভ, ভিডিও করে পণ্য প্রচার করছি। আর ‘অফলাইনে’ ময়মনসিংহের স্থানীয় লোকজনকে জানানোর চেষ্টা করি। অনেক সময় একজন ক্রেতা অন্যজনকে জানান বা একজনের গয়না দেখে অন্যজন জানতে চান। অনেকেই আমার থেকে নিয়মিত পণ্য সংগ্রহ করছেন। শুরুর পর থেকে বাঁধা এসেছে। কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবেননি সংহিতা। ময়মনসিংহ শহরের বাইরে হলে কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দেন তিনি। আর শহরের মধ্যে হলে কখনো কখনো নিজে গিয়েও পণ্য পৌঁছে দিয়ে আসেন। পরিচিত অনেকে দেশের বাইরে থেকেও সংহিতার তৈরি গয়না সংগ্রহ করেন তাদের আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে। গয়না তৈরি শিখতে ইউটিউবের সহযোগিতা নিয়েছেন সংহিতা। এর সঙ্গে নিজের সৃজনশীল চিন্তা কাজে লাগান তিনি। মাস্টার্স পাস করে গয়না বানানোর জন্য মানুষের কটু নানা কথাও শুনতে হয় তাকে। পণ্য পৌঁছে দিতে অচেনা গন্তব্যে ছুটতে হয় তাকে। এরজন্য ‘বাজে মেয়ে’র তকমাও পেতে হয়েছে!
দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে গেছে ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর। সংহিতা বলেন আমার প্রাক্তন শাশুড়ি বলতেন, ‘তুমি কী বাজারের মেয়ে যে এসব করে বেড়াও?’
আরও অনেকেই এমন কথা বলেন। কেউ কেউ উৎসাহও দেন। সংহিতা মনে করেন অর্থনৈতিক কষ্ট আর সামাজিক বাধা মানুষের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে। তার স্বপ্ন ‘কাহার’ একদিন অনেক বড় হবে। সেই লক্ষ্যে এসএমই লোন নিয়ে কাজের পরিধি আগের থেকে বাড়িয়েছেন তিনি। এর মধ্যে লোনের টাকাও পরিশোধ করেছেন। সংহিতার স্বপ্ন কাহারের একটি আউটলেট হবে। এর পাশাপাশি একটি কারখানাও থাকবে তার। যেখানে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বহ্নির তৈরি গয়নার গল্প

আপডেট সময় : ১০:১৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

নারী ও শিশু ডেস্ক : নারী নিজেকে সাজাতে যে গয়না ব্যবহার করেন সেই গয়না বিক্রির টাকায় কেউ কেউ সংসার সাজায়। তাদেরই একজন সংহিতা বহ্নি। গয়না তৈরির উপাদানগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো নিজের মনের মতো করে নতুন রূপ দেন সংহিতা। তার তৈরি গয়না ময়মনসিংহের অনেক নারীর কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কেউ নিজে সাজতে আবার কেউ প্রিয়জনকে সাজাতে সংহিতার তৈরি গয়না কেনেন। গয়না তৈরি একটি সৃজনশীল কাজ। এই কাজ সংহিতার মনের আনন্দ দেয় আবার বেঁচে থাকার পথও দেখায়।
মা আর সন্তানকে নিয়ে সংহিতা বহ্নির সংসার। একসময় বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করেছেন আড়ংয়ে। এরপর চাকরি করেছেন বাংলালিঙ্কের কাস্টমার কেয়ারে। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠান ‘কাহার’-এর কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন সংহিতা। সন্তান আর স্বপ্ন আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন সংহিতা। সংহিতা বহ্নি বলেন, ‘আমার বিজনেসে আসাটা একদম হুট করে। ২০২০ সালে আব্বা চলে যান। তখন করোনা পিরিয়ড চলছে। সংসার কীভাবে চালাবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন মাত্র ২৬০০ টাকা দিয়ে ব্যবসার কাজ শুরু করি।’
বুটিকস আইটেম নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন সংহিতা। অ্যাপ্লিকের কয়টা শাড়ি আর থ্রি-পিস বিক্রি করে একটু একটু করে সাহস সঞ্চয় করেন। এরপরে শাড়ির সঙ্গে বিছানার চাদর বিক্রি শুরু করেন। ধীরে ধীরে নিজ হাতে তৈরি গয়নাকে করে তোলেন কাহারের সিগনেচার পণ্য। দেশীয় ফ্যাশনধারাকে সমৃদ্ধ করছে হাতে তৈরি গয়না। কানের দুল, নাকফুল, চুড়ি, চেইনসহ প্রায় সব ধরনের গয়নায় পাওয়া যায় কাহারে। বিভিন্ন ধাতু, সুতা, মুক্তা, কড়ি, কাপড়, শুকনো ফুল, পাথরের সুষম বিন্যাসে তৈরি হয় এসব গয়না।
কাহারের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য কী করেন?- এ প্রশ্নের জবাবে সংহিতা বহ্নি বলেন, বিভিন্ন বিজনেস গ্রুপে নিয়মিত পোস্ট করি। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পণ্য নিয়ে পোস্ট করি। লাইভ, ভিডিও করে পণ্য প্রচার করছি। আর ‘অফলাইনে’ ময়মনসিংহের স্থানীয় লোকজনকে জানানোর চেষ্টা করি। অনেক সময় একজন ক্রেতা অন্যজনকে জানান বা একজনের গয়না দেখে অন্যজন জানতে চান। অনেকেই আমার থেকে নিয়মিত পণ্য সংগ্রহ করছেন। শুরুর পর থেকে বাঁধা এসেছে। কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবেননি সংহিতা। ময়মনসিংহ শহরের বাইরে হলে কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দেন তিনি। আর শহরের মধ্যে হলে কখনো কখনো নিজে গিয়েও পণ্য পৌঁছে দিয়ে আসেন। পরিচিত অনেকে দেশের বাইরে থেকেও সংহিতার তৈরি গয়না সংগ্রহ করেন তাদের আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে। গয়না তৈরি শিখতে ইউটিউবের সহযোগিতা নিয়েছেন সংহিতা। এর সঙ্গে নিজের সৃজনশীল চিন্তা কাজে লাগান তিনি। মাস্টার্স পাস করে গয়না বানানোর জন্য মানুষের কটু নানা কথাও শুনতে হয় তাকে। পণ্য পৌঁছে দিতে অচেনা গন্তব্যে ছুটতে হয় তাকে। এরজন্য ‘বাজে মেয়ে’র তকমাও পেতে হয়েছে!
দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে গেছে ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর। সংহিতা বলেন আমার প্রাক্তন শাশুড়ি বলতেন, ‘তুমি কী বাজারের মেয়ে যে এসব করে বেড়াও?’
আরও অনেকেই এমন কথা বলেন। কেউ কেউ উৎসাহও দেন। সংহিতা মনে করেন অর্থনৈতিক কষ্ট আর সামাজিক বাধা মানুষের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে। তার স্বপ্ন ‘কাহার’ একদিন অনেক বড় হবে। সেই লক্ষ্যে এসএমই লোন নিয়ে কাজের পরিধি আগের থেকে বাড়িয়েছেন তিনি। এর মধ্যে লোনের টাকাও পরিশোধ করেছেন। সংহিতার স্বপ্ন কাহারের একটি আউটলেট হবে। এর পাশাপাশি একটি কারখানাও থাকবে তার। যেখানে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে।