ঢাকা ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

বরিশালের কথ্যভাষার আদিরূপ

  • আপডেট সময় : ০৮:৫১:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১৬২ বার পড়া হয়েছে

এসএম মোজাম্মেল হক

 

বাংলাদেশের পুরনো জনপদের একটি বরিশাল। একসময়ের জেলা এখন বিভাগ। বরিশাল বিভাগের (২০২৪ সাল) পুরনো এলাকার মধ্যে অন্যতম হলো উজিরপুর উপজেলা। উজিরপুরের এ প্রাচীন জনপদে বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠির বসবাস। তাদের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কৃষ্টি-কালচার। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভাষাভাষীদের মধ্যে একই শব্দে উচ্চারণগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

গোপালগঞ্জ লাগোয়া উজিরপুরের পশ্চিমে সাতলা ইউনিয়নের মানুষের কথ্যভাষার সাথে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বা শব্দে উচ্চারণগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়। তবে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য অটুটই দেখা যাচ্ছে। নিচে কিছু আদি বাক্য দেয়া গেলো।

১. ‘অ্যাক্কালে লেরি ফয়জোরে উইড্ডা হারাদিন সোংসারের পিছে তালি দেই, হ্যাতেও ঘরের মানুষ খুশি না। কন দেহি মুই কী হরমু?’

অ্যাক্কালে= প্রথম সময়/ প্রথম ভাগে, লেরি= খুব আগে, ফয়জোর= মুসলমানদের সকালের প্রার্থনার নাম ফজর। লেরি ফয়জোর মানে ফজর ওয়াক্তের প্রথম দিক। উইড্ডা= উঠে/ওঠে, হারাদিন= সারাদিন, সোংসার= সংসার, তালি= এ বাক্যে তালি দেয়া মানে সংসারের পিছে সময় দেয়া, সব কাজ করা, ফাইফরমাশ খাটা, কোনো রকম টেনেটুনে সংসার চালিয়ে নেয়া। হ্যাতে= তাতে, কন=বলেন, হরমু= করবো।

২. মনু যতো গোরদাগুরদি হরো জেততে পারবা না কারণ খালি গায়র বল দিয়া জেতোন যায় না। কৌশলও লাগে। হেদিকদিয়া তোমার চাইয়া তোমার শত্তুরের চিকনা বুদ্ধি অনেক বেশি। এহোন বুইজ্জা দেহো কি হরবা।
মোনু=মানুষকে সম্বোধনসূচক প্রচলিত শব্দ, গোরদাগুরদি= চেষ্টা করা, ধরাধরি করা, শারীরিকভাবে ধস্তাধস্তি। হরো= করো, জেতোন= বিজয়/জেতা, হেদিকদিয়া= সেদিক থেকে, চাইয়া= চেয়ে, শত্তুর=শত্রু, চিকনা= সরু/সূক্ষ্ম, এহোন= এখন, বুইজ্জা= বুঝে, দেহো= দেখো, হরবা=করবা।

৩. ‘খাজুর গাছটায় সন্দার সোমায় আড়ি দেলে বেইন্নাহালে বড় আড়ির এক আড়ি রস পড়ে। আইজ দেহি আদারিও নাই। চোরের পো চোরেরা রাত্তিরে রস নিয়া মোনে অয় শিন্নি রাইন্দা খাইছে।’
সন্দা=সন্ধ্যা, সোমায়=সময়, আড়ি=হাঁড়ি (মাটির), দেলে= দিলে, বেইন্নাহালে=সকালের সময়, আইজ=আজ, দেহি=লক্ষ করা, আদারি=অর্ধেক হাঁড়ি, রাত্তিরে=রাতে, মোনে অয়=মনে হয়, রাইন্দা=রান্না।

সংগ্রহকারী : এসএম মোজাম্মেল হক
কবি ও লেখক, নিউইয়র্ক প্রবাসী
সংগ্রহ স্থান : হস্তিশুন্ড, উজিরপুর, বরিশাল
সংগ্রহের সময় : জুলাই-২০১৫

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে

বরিশালের কথ্যভাষার আদিরূপ

আপডেট সময় : ০৮:৫১:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

এসএম মোজাম্মেল হক

 

বাংলাদেশের পুরনো জনপদের একটি বরিশাল। একসময়ের জেলা এখন বিভাগ। বরিশাল বিভাগের (২০২৪ সাল) পুরনো এলাকার মধ্যে অন্যতম হলো উজিরপুর উপজেলা। উজিরপুরের এ প্রাচীন জনপদে বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠির বসবাস। তাদের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কৃষ্টি-কালচার। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভাষাভাষীদের মধ্যে একই শব্দে উচ্চারণগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

গোপালগঞ্জ লাগোয়া উজিরপুরের পশ্চিমে সাতলা ইউনিয়নের মানুষের কথ্যভাষার সাথে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বা শব্দে উচ্চারণগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়। তবে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য অটুটই দেখা যাচ্ছে। নিচে কিছু আদি বাক্য দেয়া গেলো।

১. ‘অ্যাক্কালে লেরি ফয়জোরে উইড্ডা হারাদিন সোংসারের পিছে তালি দেই, হ্যাতেও ঘরের মানুষ খুশি না। কন দেহি মুই কী হরমু?’

অ্যাক্কালে= প্রথম সময়/ প্রথম ভাগে, লেরি= খুব আগে, ফয়জোর= মুসলমানদের সকালের প্রার্থনার নাম ফজর। লেরি ফয়জোর মানে ফজর ওয়াক্তের প্রথম দিক। উইড্ডা= উঠে/ওঠে, হারাদিন= সারাদিন, সোংসার= সংসার, তালি= এ বাক্যে তালি দেয়া মানে সংসারের পিছে সময় দেয়া, সব কাজ করা, ফাইফরমাশ খাটা, কোনো রকম টেনেটুনে সংসার চালিয়ে নেয়া। হ্যাতে= তাতে, কন=বলেন, হরমু= করবো।

২. মনু যতো গোরদাগুরদি হরো জেততে পারবা না কারণ খালি গায়র বল দিয়া জেতোন যায় না। কৌশলও লাগে। হেদিকদিয়া তোমার চাইয়া তোমার শত্তুরের চিকনা বুদ্ধি অনেক বেশি। এহোন বুইজ্জা দেহো কি হরবা।
মোনু=মানুষকে সম্বোধনসূচক প্রচলিত শব্দ, গোরদাগুরদি= চেষ্টা করা, ধরাধরি করা, শারীরিকভাবে ধস্তাধস্তি। হরো= করো, জেতোন= বিজয়/জেতা, হেদিকদিয়া= সেদিক থেকে, চাইয়া= চেয়ে, শত্তুর=শত্রু, চিকনা= সরু/সূক্ষ্ম, এহোন= এখন, বুইজ্জা= বুঝে, দেহো= দেখো, হরবা=করবা।

৩. ‘খাজুর গাছটায় সন্দার সোমায় আড়ি দেলে বেইন্নাহালে বড় আড়ির এক আড়ি রস পড়ে। আইজ দেহি আদারিও নাই। চোরের পো চোরেরা রাত্তিরে রস নিয়া মোনে অয় শিন্নি রাইন্দা খাইছে।’
সন্দা=সন্ধ্যা, সোমায়=সময়, আড়ি=হাঁড়ি (মাটির), দেলে= দিলে, বেইন্নাহালে=সকালের সময়, আইজ=আজ, দেহি=লক্ষ করা, আদারি=অর্ধেক হাঁড়ি, রাত্তিরে=রাতে, মোনে অয়=মনে হয়, রাইন্দা=রান্না।

সংগ্রহকারী : এসএম মোজাম্মেল হক
কবি ও লেখক, নিউইয়র্ক প্রবাসী
সংগ্রহ স্থান : হস্তিশুন্ড, উজিরপুর, বরিশাল
সংগ্রহের সময় : জুলাই-২০১৫

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ