ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ছুটি থাকে প্রায় ১৮০ দিন। ফলে করোনাকালীন সেশনজট কাটিয়ে উঠতে পারছে না বিদ্যাপীঠটি। সেশন জটের ভোগান্তি নিয়ে বছরের অর্ধেক দিনের মতো বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র মৈত্রী। শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এস এম সুইট বলেন, করোনার কারণে এমনিতেই একাডেমিক ভাবে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে এরকম ছুটি সেশন জটের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বাড়াবে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৮০ দিনের মধ্যে শুক্র ও শনিবারের মোট সাপ্তাহিক ছুটি ১০৫ দিন। এ ছাড়া ঈদুল ফিতর, আজহা, দুর্গাপূজা, গ্রীষ্ম ও শীতকালীনসহ অন্য ছুটি মিলে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে ৭৫দিন। এ ছাড়া উপাচার্যের হাতে সংরক্ষণ আছে কয়েকদিনের ছুটি। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইবির সব বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ নিয়মে প্রতি বিভাগকে বছরে দুটি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হয়। দীর্ঘ ছুটি থাকার কারণে অনেক বিভাগের শিক্ষকরা ক্লাস শেষ না করেই পরীক্ষা নিয়ে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, ইংরেজি, আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ, ইইই, পরিসংখ্যান বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে। বিভাগগুলো সেশনজট কাটানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। এদিকে প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান অনুষদের অধীনে বিভাগুলোতে মূল পরীক্ষার পাশাপাশি আছে ব্যবহারিক পরীক্ষাও। এসব বিভাগের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগে যায়। ব্যবহারিক পরীক্ষায় সময় লাগে আরও ১৫ দিন। সেমিস্টারের দীর্ঘ সময় পরীক্ষা থাকায় সময়মতো কোর্স সম্পন্ন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষকরা কমপক্ষে সাড়ে তিন মাস ক্লাস নেবেন। তাহলে দুই সেমিস্টার মিলে ক্লাস নিতে হবে সাত মাস। আর ক্লাস শেষের ১৫ দিন পর পরীক্ষা হবে। এক সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করতে কমপক্ষে সময় লাগে এক মাস। সে হিসেবে কোর্স ও পরীক্ষায় সময় লাগার কথা ৯ মাস।
অর্থাৎ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষার জন্য ২৭০ দিনের প্রয়োজন। কিন্তু ক্যালেন্ডার হিসাবে ১৮০ দিনে তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হয়। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করতে পারছে না বিভাগগুলো। বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া মহমুদ বলেন, ‘আমাদের তত্ত্বীয় পরীক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক পরীক্ষাও হয়। এটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে সময়ের প্রয়োজন। এজন্য ছুটি কমিয়ে ক্লাসের সংখ্যা বাড়ালে শিক্ষার্থীদের উপকার হবে।’ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ওবায়দুর আনাস বলেন, ‘আমরা এক থেকে দু’বছরের সেশনজটে পড়েছি। আমাদের যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, সে মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। স্নাতক শেষে সরকারি চাকরির বয়সও থাকছে না। শিক্ষকরা চাইলে শিক্ষার্থীদের দুঃশ্চিন্তা দূর করতে পারেন।’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে একটা মিটিং করেছি। তবে ছুটি কমাতে শিক্ষকরা অনেকে একমত হয়েছেন। আবার অনেকে বিরোধিতাও করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা ঠিক মতো নিলে সেশনজট থাকার কথা নয়। এছাড়া, পূর্ব ঘোষিত ছুটি থাকায় অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা ছুটি নিয়েছেন বিধায় বিষয়টি পরিবর্তন করা কঠিন।