নিজস্ব প্রতিবেদক : সহিংসতামূলক কনটেন্ট ছড়ানোয় বাংলাদেশে মেটার তিনটি প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টিকটক বন্ধ রয়েছে। তবে কবে এসব প্ল্যাটফর্ম খুলে দেওয়া হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন জুনাইদ আহমেদ পলককে। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যদি তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হয়, তাহলে তো আমরা শিগগির খুলে দেবো। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ। যেখানে কোনো বাধা নেই। আমরা শুধু তাদের জিজ্ঞাসা করেছি যে, বাংলাদেশের আইন, সংবিধান এবং তাদের নিজস্ব যে পলিসি ও কমিউনিটি গাইডলাইন আছে, সেটা তারা কীভাবে মেইনটেইন করছে বা আদৌও করছে কি না। সেটা আমরা জানতে চাই।’
এদিকে এই তিনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সরকারের পক্ষ থেকে তলব করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। পাশাপাশি ইউটিউব চালু থাকলেও তাদেরও তলব করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) পর্যন্ত তাদের জবাব দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আজ বুধবার (৩১ জুলাই) ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবের প্রতিনিধিদের সশরীরে বিটিআরসিতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত শুধু টিকটকের পক্ষ থেকে ই-মেইলে সাড়া মিলেছে। ইউটিউব ও মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ) বিটিআরসিকে এখনো পর্যন্ত কোনো জবাব দেয়নি।
ভিপিএন ব্যবহার ৫ হাজার শতাংশ বাড়ায় ইন্টারনেটে ধীরগতি: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার পর বাংলাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউন হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ইন্টারনেট সেবা চালু হলেও ‘গুজব ও অপপ্রচার’ ঠেকাতে ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম বন্ধ রেখেছে সরকার। বাধ্য হয়ে ভিপিএন ব্যবহার করে এসব মাধ্যমে সক্রিয় হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। সম্প্রতি দেশে ভিপিএনের ব্যবহার ৫ হাজার শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে ইন্টারনেটে ধীরগতি বলে দাবি করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ‘টেকনিক্যাল পারসনরা (প্রযুক্তিবিদরা) আমাদের জানিয়েছেন, দেশে সম্প্রতি ভিপিএন ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৫০০০ শতাংশ। যখন তারা ভিপিএন ব্যবহার করছেন; তখন তারা বাংলাদেশ নয়, অন্য দেশের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন। বিদেশের ব্যান্ডউইথের ট্র্যাফিক বেড়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের গতি কমে যাওয়ার এটা একটা অন্যতম কারণ। এতে অনেক সময় মোবাইলে ফোরজি ইন্টারনেট একটু স্লো পাওয়া যাচ্ছে। ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রেও ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।’
ইন্টারনেটের গতি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা-নিষেধ নেই জানিয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘ইন্টারনেটের গতি নিয়ে আমরা কোনো রেস্ট্রিকশন (নিষেধাজ্ঞা) রাখিনি। বিটিআরসির পক্ষ থেকে সম্পূর্ণরূপে এটা অবাধ ও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, কোথাও কোনো বাধা নেই। কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, কোনো গাইডলাইনও (নির্দেশনা) নেই।’
১০ দিনে সরকারি ওয়েবসাইটে ৫০ হাজার বার সাইবার হামলা: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট দখলে নিতে দফায় দফায় সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ দিনে ৫০ হাজারেরও বেশি বার এমন সাইবার হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে ‘চলমান সময়ে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক জরুরি সভা’ শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমাদের হাতে এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে, তাতে গত ১০ দিনে ৫০ হাজারের বেশি বার সাইবার হামলা চালানো হয়েছে। তাতে আমাদের ৮টি সরকারি ওয়েবসাইট ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে হ্যাকাররা। কোনো ওয়েবসাইট পুরোপুরি হ্যাকড হয়নি। সরকারি কোনো ওয়েবসাইট থেকে তথ্য-উপাত্ত চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ তিনি বলেন, ‘ডিএনএস সিস্টেম যেটাকে আমরা বলি, সেটা যখন ডাইভার্ট করে যখন কেউ কোনো ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে গেছেন, তখন তাকে সেখান থেকে অন্য একটা ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে নেওয়ার পর ব্যবহারকারীকে শুধু ফ্রন্ট পেজটা দেখানো হয়েছে যে, এই ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে।’
গত ২২ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছিল- এমন তথ্য সঠিক নয় দাবি করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা পর্যালোচনা ও অনুসন্ধান করে দেখেছি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাকড হয়নি। তাদের নিয়মিত লেনদেন ও সব কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলেছে। যে সমস্যাটুকু হয়েছিল, সেটা আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি, সমাধানও করেছি। বিষয়টি আমরা তদন্ত করেছি, এটা অতি গোপনীয়। এজন্য এটা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সাইবার হামলা বেড়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘সাইবার হামলা প্রতিনিয়তই হয়। হামলাকারীরা প্রতিনিয়তই জাতীয় নিরাপত্তার আওতায় থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করার চেষ্টা করে থাকে। তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালায়, সেখান থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। তবে হ্যাঁ, সম্প্রতি আন্দোলনের মধ্যে সাইবার হামলা কিছুটা বেড়েছে, এটাও সত্য।’
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সাইবার নিরাপত্তা সভায় উপস্থিত ছিলেন টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমান, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিভিল অ্যাভিয়েশন, পুলিশ, ডিজিএফআই ও এনএসআই-এর প্রতিনিধিরা।
ফেসবুক খুলে দেওয়া নিয়ে যা বললেন পলক
ট্যাগস :
ফেসবুক খুলে দেওয়া নিয়ে যা বললেন পলক
জনপ্রিয় সংবাদ