নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরকারকে ফের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলমত নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, পেশাজীবী, শ্রমিক, কৃষকসহ আপামর জনসাধারণকে ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে’ শামিল হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “জাতির এই চরম ক্রান্তি লগ্নে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্র প্রিয় আপামর জনসাধারণ এবং বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রাজপথে নেমে এসে ছাত্র-জনতার সাথে একাত্ম হয়ে গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের পতন তরান্বিত করতে অসহযোগ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানাচ্ছি। “শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাঈদ, মুগ্ধসহ শত নিরীহ ছাত্র শিশু ও জনতার রক্তে অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর হাত রঞ্জিত হয়েছে। জনগণ এই ভয়াবহ গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। দলমত, ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ ফুলে উঠেছে ক্রোধে। এখনো কি তাদের (সরকার) বোধদয় হচ্ছে না? আমি সেজন্য বলছি যে, প্রার্থনা করি, তাদের সম্বিত ফিরে আসুক, শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আর কোনো রক্তপাত না, আর কোনো সংঘাত না দিয়ে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে তারা সরে যাক।”
সরকার যদি দাবি মেনেও নেয়, পদত্যাগের প্রক্রিয়া কী হবে- সেই প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই প্রক্রিয়াটা আমরা তখনই দেব, আমরা সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলন যারা করছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা পরে এই বিষয়টাকে আপনাদেরকে জানাব।
“এখনই সেই সময়টায় উত্তীর্ণ হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।”
সরকারি কর্মচারীদের প্রতি বার্তা: দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের অবস্থান জানাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও সেলিমা রহমানকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল। এ সময় জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতে সরকারের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “জনগণের রক্তে, ছাত্রদের রক্তে আর যেন আমাদের রাস্তা রঞ্জিত না হয়, আমাদের সন্তানরা যেন শহীদ না হয় সেদিকে তারা অবশ্যই তাদের দায়িত্ব দেবেন।”
সরকার পদত্যাগ না করলে কী হবে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “এমন পরিস্থিতি কি কোনো দিন কোনো শাসক গোষ্ঠীর পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব হয়েছে? আপনি বলেন, আজ থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস, পাকিস্তান আমলের যে ইতিহাস সেই ইতিহাসগুলো আপনি দেখেন। যখন জনতার আন্দোলন শুরু হয়, জনতার যখন উত্তাল সমুদ্রের সূচনা হয় তথন কারো পক্ষেই সম্ভব হয় না যে এটা ঠেকিয়ে রাখা।”
ফখরুল বলেন, “কিছুক্ষণ আগ আমার স্ত্রী বলছিলেন যে, আমি কি ঘরে থাকব? আমার মেয়েরা চলে গেছে, প্রত্যেকের মেয়েরা চলে গেছে। আমার মনে হয় আপনাদের বাসায়ও এখন আর কেউ নেই, সব বেরিয়ে গেছে।” বর্তমান আন্দোলনের সঙ্গে ঊনসত্তরে গণঅভ্যুত্থানের ‘সাদৃশ্য’ খুঁজে পাচ্ছেন ফখরুল। তিনি বলেন, “৬৯ ছাড়াও আমি দেখেছি ৯০ সালে, আমি দেখেছি ৭০ এ, ৭১ এ। আজকে আবার তার চেয়ে অনেকে বেশি শক্তি নিয়ে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। দেখুন কয়েকজন ছাত্র যারা কিন্তু প্রফেশনাল স্টুন্ডেন্ট লিডারও নয়, যারা কোনো ছাত্র সংগঠনও করে না এরা কিন্তু সমস্ত জাতিগুলোকে জাগিয়ে তুলেছে।”
এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে: ‘সরকার পরিকল্পিতভাবে এই দেশকে ধবংস করে ফেলছে’ অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময় এবং এখনই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। “এদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে এবং তাদের চলে যেতে বাধ্য করতে হবে। এখনই সময় এটার।” বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকের পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী। আদালতকে ব্যবহার করে তারা সবসময় অপকর্মগুলো করেছে। আবারও তারা আদালতকে ব্যবহার করে এই কোটার সমস্যাটাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে সেখান থেকে পয়েন্ট অব নো রিটার্ন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিণতি ওটাই এই সরকারকে এভাবে চলে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।”
পদত্যাগের বিলম্ব হলে ক্ষতি রাষ্ট্রের হবে: সরকারের পদত্যাগে বিলম্ব হলে তাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, এটা কি আওয়ামী লীগ? আমরা যে আওয়ামী লীগকে অতীতে চিনতাম, সেটা এই আওয়ামী লীগ নয়। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গেছে।” এ সময় চট্টগ্রামে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মীর নাসির উদ্দিন, চট্টগ্রামের সাবেক মহানগর আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, বর্তমান আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও ঢাকায় দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সস্পাদক রুমিন ফারহানা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ফখরুল। তিনি বলেন, “সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ গত রাতে সন্ত্রাস চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আমরা বলতে চাই, এসব করে তারা সরকারের পতন ঠেকাতে পারবে না। “ছাত্র-জনতার ঐক্যের মধ্য দিয়ে যে চূড়ান্ত আন্দোলন সেই আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত, তাকে স্তব্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই।”
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রার্থনা করি সম্বিত ফিরুক: ফখরুল
ট্যাগস :
প্রার্থনা করি সম্বিত ফিরুক: ফখরুল
জনপ্রিয় সংবাদ