ঢাকা ১০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে পর্যটনে

  • আপডেট সময় : ০৭:৪০:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি সংবাদদাতা : দীর্ঘ প্রায় এক মাস পর খাগড়াছড়ি জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ খাতের দীর্ঘ স্থবিরতা কাটিয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে এমন প্রত্যাশা তাদের। জুলাইয়ে গণঅভ্যূত্থানের শুরু থেকেই পাহাড়ে পর্যটকদের আনাগোনা কমতে থাকে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে খাগড়াছড়িতে অনাকাঙ্খিত কয়েকটি ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন এ জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে। মূলত বৈশ্বিক মহামারি করোনাকাল থেকেই খাগড়াছড়ি জেলার পর্যটক খাতে ভাটার শুরু। জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে পর্যটকের সমাগম ছিল সীমিত। খাগড়াছড়ির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পর্যটন খাত। পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। হোটেল-মোটেলের পাশাপাশি পরিবহন ব্যবসা নির্ভর করে পর্যটকদের ওপর। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় এ খাতে ধস নামে। ব্যয় সংকোচনে অনেকেই ছাঁটাই করে দিয়েছেন কর্মচারী। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আসায় আবারও স্বপ্ন দেখছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে ডাব বিক্রি করেন ধনয়ন ত্রিপুরা। সংসার চালাতে তার একমাত্র আয়ের উৎস এই ব্যবসা। তিনি বলেন, পর্যটক থাকলে প্রতিদিন দেড়/দুইশত ডাব বিক্রি হতো। এখন সপ্তাহে ৩০-৪০টাও ডাব বিক্রি করতে পারি না। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। সন্তানদের লেখাপড়া খরচ চালাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ জানান, তার প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারীকে বিদায় করে দিতে হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ায় আবারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসার। ব্যবসায়ীরা যেন আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বরত মোহাম্মদ ইউছুফ বলেন, এতোদিন পর্যটক বন্ধ থাকায় অলস সময় পার করেছি। পর্যটকের সমাগম বাড়লে কর্মব্যস্ত সময় কাটবে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কের ব্যবসায়ী টিটু চাকমা জানান, কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলে প্রতি মাসে অনেক টাকা চলে যায়। দীর্ঘদিন ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে। খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার মজুমদার বলেন, পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতিতে আছে। ক্ষতি পোষাতে লম্বা সময় ব্যবসা করতে হবে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ৫ নভেম্বর থেকে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে স্বাভাবিক নিয়মে যাতায়াত করতে পারবেন পর্যটকরা।
সাজেকের দুয়ার খুলছে আজ
এদিকে দেড় মাস পর পর্যটকদের জন্য আজ মঙ্গলবার খুলছে আকর্ষণীয় সাজেক ভ্যালি। ২০ সেপ্টেম্বরের পর পাহাড়ের সংঘাত এবং নিরাপত্তার জন্য পর্যটক ভ্রমণে প্রশাসনের নিরুৎসাহিতকরণের ফলে পর্যটকরা সাজেকমুখী হতে পারেননি। রাঙামাটি জেলায় গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ বিধি-নিষেধ তুলে নিলেও সাজেকের অবস্থানগত কারণে খাগড়াছড়ি জেলার সড়ক ব্যবহার করে এই স্পটে যাতায়াতের ফলে আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) থেকে পর্যটকরা সাজেক যেতে পারবেন। সাজেক পর্যটকসংশ্লিষ্টরা জানান, সাজেকে ১১৬টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। এখানে ১৪টির বেশি রেস্তোরাঁ থাকলেও গত দেড় মাস কোনো বিক্রি ছিল না। সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, দেড় মাসে প্রায় ৮-৯ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। পর্যটকরা আসলে লোকসান পুষিয়ে নিতে পারব। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, গত ১ নভেম্বর থেকে রাঙামাটিতে পর্যটক ভ্রমণে যে বিধি-নিষেধ ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সাজেক রাঙামাটি জেলায় হলেও এর অবস্থানগত কারণে এটি খাগড়াছড়ি জেলার ওপর দিয়ে যেতে হয়, যেহেতু খাগড়াছড়িতে ৫ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য বিধি-নিষেধ খুলে দেয়া হচ্ছে, তাই ৫ নভেম্বর থেকে পর্যটকরা সাজেকে ভ্রমণ করতে পারবেন। আর নিরাপত্তা নিয়ে কোনও শঙ্কা নেই বলে তিনি জানান।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে পর্যটনে

আপডেট সময় : ০৭:৪০:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি সংবাদদাতা : দীর্ঘ প্রায় এক মাস পর খাগড়াছড়ি জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ খাতের দীর্ঘ স্থবিরতা কাটিয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে এমন প্রত্যাশা তাদের। জুলাইয়ে গণঅভ্যূত্থানের শুরু থেকেই পাহাড়ে পর্যটকদের আনাগোনা কমতে থাকে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে খাগড়াছড়িতে অনাকাঙ্খিত কয়েকটি ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন এ জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে। মূলত বৈশ্বিক মহামারি করোনাকাল থেকেই খাগড়াছড়ি জেলার পর্যটক খাতে ভাটার শুরু। জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে পর্যটকের সমাগম ছিল সীমিত। খাগড়াছড়ির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পর্যটন খাত। পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। হোটেল-মোটেলের পাশাপাশি পরিবহন ব্যবসা নির্ভর করে পর্যটকদের ওপর। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় এ খাতে ধস নামে। ব্যয় সংকোচনে অনেকেই ছাঁটাই করে দিয়েছেন কর্মচারী। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আসায় আবারও স্বপ্ন দেখছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে ডাব বিক্রি করেন ধনয়ন ত্রিপুরা। সংসার চালাতে তার একমাত্র আয়ের উৎস এই ব্যবসা। তিনি বলেন, পর্যটক থাকলে প্রতিদিন দেড়/দুইশত ডাব বিক্রি হতো। এখন সপ্তাহে ৩০-৪০টাও ডাব বিক্রি করতে পারি না। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। সন্তানদের লেখাপড়া খরচ চালাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ জানান, তার প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারীকে বিদায় করে দিতে হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ায় আবারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসার। ব্যবসায়ীরা যেন আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বরত মোহাম্মদ ইউছুফ বলেন, এতোদিন পর্যটক বন্ধ থাকায় অলস সময় পার করেছি। পর্যটকের সমাগম বাড়লে কর্মব্যস্ত সময় কাটবে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কের ব্যবসায়ী টিটু চাকমা জানান, কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলে প্রতি মাসে অনেক টাকা চলে যায়। দীর্ঘদিন ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে। খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার মজুমদার বলেন, পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতিতে আছে। ক্ষতি পোষাতে লম্বা সময় ব্যবসা করতে হবে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ৫ নভেম্বর থেকে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে স্বাভাবিক নিয়মে যাতায়াত করতে পারবেন পর্যটকরা।
সাজেকের দুয়ার খুলছে আজ
এদিকে দেড় মাস পর পর্যটকদের জন্য আজ মঙ্গলবার খুলছে আকর্ষণীয় সাজেক ভ্যালি। ২০ সেপ্টেম্বরের পর পাহাড়ের সংঘাত এবং নিরাপত্তার জন্য পর্যটক ভ্রমণে প্রশাসনের নিরুৎসাহিতকরণের ফলে পর্যটকরা সাজেকমুখী হতে পারেননি। রাঙামাটি জেলায় গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ বিধি-নিষেধ তুলে নিলেও সাজেকের অবস্থানগত কারণে খাগড়াছড়ি জেলার সড়ক ব্যবহার করে এই স্পটে যাতায়াতের ফলে আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) থেকে পর্যটকরা সাজেক যেতে পারবেন। সাজেক পর্যটকসংশ্লিষ্টরা জানান, সাজেকে ১১৬টি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। এখানে ১৪টির বেশি রেস্তোরাঁ থাকলেও গত দেড় মাস কোনো বিক্রি ছিল না। সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, দেড় মাসে প্রায় ৮-৯ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। পর্যটকরা আসলে লোকসান পুষিয়ে নিতে পারব। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, গত ১ নভেম্বর থেকে রাঙামাটিতে পর্যটক ভ্রমণে যে বিধি-নিষেধ ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সাজেক রাঙামাটি জেলায় হলেও এর অবস্থানগত কারণে এটি খাগড়াছড়ি জেলার ওপর দিয়ে যেতে হয়, যেহেতু খাগড়াছড়িতে ৫ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য বিধি-নিষেধ খুলে দেয়া হচ্ছে, তাই ৫ নভেম্বর থেকে পর্যটকরা সাজেকে ভ্রমণ করতে পারবেন। আর নিরাপত্তা নিয়ে কোনও শঙ্কা নেই বলে তিনি জানান।