আনিসুর রহমান : মধ্য জুলাইয়ে তুঙ্গে ওঠার প্রায় দেড় মাস আগে থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন দৃশ্যমান হতে শুরু করে। ধারণা করা যায়, আমাদের গোচরে আসার আগে থেকেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হতে থাকে। যোগাযোগ বলয় গড়ে তুলতে তাদের আরও খানিকটা সময় লেগেছিল। ভুলত্রুটি, অসঙ্গতি আর সমন্বয়হীনতা থাকলেও, আন্দোলনটাকে অযৌক্তিক অভিহিত করার কোনো সুযোগ নেই। কোটা সংস্কারের অবশ্যকতা ছিল। তবে আন্দোলনের পেছনে সরকারবিরোধী কুশীলবদের সংশ্লিষ্টতাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আন্দোলন ঘিরে প্রশ্ন হলো, একটি কার্যকর রাষ্ট্র, সরকার এবং সংসদ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় বিষয়টি আন্দোলন পর্যন্ত গড়াল কেন? যতদূর মনে পড়ে, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম জাতীয় সংসদে একবার কোটা সংস্কারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। একই সঙ্গে সরকারকে আহবান জানিয়েছিলেন কোটা সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্যে। তার বক্তব্যের পরে সংশ্লিষ্ট কোনো মন্ত্রী বিষয়টি আমলে নিয়েছিলেন বলে আমাদের জানা নেই। তার মানে বিষয়টি তবে কি সংসদেও উপেক্ষিত হয়েছিল?
সাধারণ শিক্ষার্থীরা শাহবাগে প্রতিদিন অবস্থান নিয়ে দৃশ্যত নিরীহ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যতদূর ধারণা করা যায়, সরকার সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাড়া প্রায় তাবৎ ছাত্রসংগঠন এই আন্দোলনের পক্ষে কৌশলগত সমর্থন দিয়ে গেছে এবং তলে তলে সংগঠিত হতে সাহায্য করেছে। পত্রিকায় কোটার পক্ষে-বিপক্ষে লেখালেখি হলেও, সংস্কারের পক্ষে ছিলেন প্রায় সকলেই।
শিক্ষার্থীরা যখন প্রতিপক্ষ: আন্দোলন চলছিল। পাশাপাশি আদালতেও বিষয়টি বিচারাধীন ছিল। পরে যদিও অবস্থা বেগতিক দেখে সরকারই উদ্যোগ নিয়ে আদালতকে শুনানি এগিয়ে আনতে অনুরোধ করেছিল। এই পদক্ষেপ নিতে সরকার কেন বিলম্ব করল? আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার কোনোরকম যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা কেন করল না?
গ্রামেগঞ্জে একটি প্রবাদ বহুল প্রচলিত, পচা শামুকেও পা কাটে। প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দলের মাঝে কেন এই দূরদৃষ্টি অনুপস্থিত? সেই আত্মজিজ্ঞাসা ক্ষমতাসীনদের জন্যে যেমন বাঞ্ছনীয়, তেমনি অন্যদের কার কোথায় দায়, তা চিহ্নিত করা কার্যকর গণতান্ত্রিক চর্চারই অংশ। সরকারের নানা পর্যায় থেকে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন। একজনের কথার সঙ্গে আরেকজনের কথার সমন্বয় সবসময় থাকেনি। একই বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী কথা বলেছেন। সবাই আদালতের দোহাই দিয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে এমন কাউকে কি দেখা গেছে, সময় থাকতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে কথা বলতে পেরেছেন?
এমনকি সংবাদমাধ্যমে একাধিক লেখা ছাপা হয়েছে, সরকার কেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানাচ্ছে? এই প্রশ্নটিও সরকারের পক্ষ থেকে আমলে নেওয়া হয়নি। এই সুযোগে সরকারবিরোধী নানা পক্ষ নিরবে নিভৃতে এই আন্দোলনে একাট্টা হয়েছে। এরকম আভাস সাধারণ নাগরিকরা পেয়ে থাকলে, ক্ষমতার ভেতরের লোকজন কেন পেলেন না? এটা কিসের আলামত?
কর্মী-সমর্থকদের কথা বাদই দিলাম, ক্ষমতাসীনদের পক্ষে এত এত সংগঠন, কমিটি, নেতা, উপনেতা, পাতিনেতারা করলেনটা কী? গোয়েন্দা ব্যর্থতার প্রসঙ্গও কি সামনে আসবে না?
আন্দোলনের ভেতরে-বাইরে: ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকলে প্রশাসন ও রাজনীতির বড় একটা অংশের মধ্যে দম্ভ আর উপেক্ষা করার প্রবণতা জেঁকে বসে। এরকম ঘটনা সব দেশেই হয়ে থাকে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসর ভাতাসহ বেশকিছু দাবি নিয়ে ধর্মঘটে গিয়েছিলেন এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমান্তরালে চলছিল শিক্ষকদের আন্দোলনও । এরকম একটি অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিল কার্যত অচল। গ্রন্থাগার পর্যন্ত বন্ধ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পিছুটান খুব একটা ছিল না।
বাস্তবতা হচ্ছে, ছাত্র আর শ্রমিক আন্দোলন দমন করতে নেই। আওয়ামীগ লীগের মত প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকদের মাঝে এই সত্য অনুভব করতে পারার মতো কেউ না কেউ থাকবেন, এই প্রত্যাশাটুকু তো অতি আশা হয় না। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে দুটি পর্বে চিহ্নিত করা যায়। প্রথম পর্ব আন্দোলনের শুরু থেকে রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে তাকে গুলি করার পরবর্তী সময়ের ঘটনাবলি।
১৪ জুলাই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে পরে মধ্যরাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ‘রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল। ‘রাজাকার’ স্লোগান উচ্চারণকারী কারও বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কতিপয় মন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা আন্দোলনকে আরও উসকে দিয়েছিল কি না? মন্ত্রীদের কারো কারো ভূমিকা আন্দোলনকে উসকে দিয়ে থাকলে, বিপর্যয়ের দায় কতটুকু নেবেন? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় একজন মন্ত্রীর যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় কাজে, হঠকারিতায় নয়। সময় বাস্তবতাও বোঝার দরকার আছে। মানুষ আদতে মন্ত্রীর কথা শোনার অপেক্ষায় থাকে না। মানুষ দেখতে চায় তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয় কতটা অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত। মন্ত্রীরা এই সত্যটি যদি দয়া করে উপলব্ধি করতেন, তাহলে কোটা আন্দোলনের মতো নিরীহ একটি ঘটনা জাতীয় বিপদের কারণ হতে পারত না।
বুধবার ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলির ঘটনা দেশে বিদেশের সকলকে নাড়া দেয়। এরপর গোটা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই ঘটনার পর সরকার নড়েচড়ে বসলেও পরিস্থিতে ক্রমেই ঘোলাটে হতে থাকে। আন্দোলনকারীরা দিনের পর দিন রোদে-বৃষ্টিতে রাস্তায় বসে থেকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছে, সরকার কার্যত তাদের পাত্তা দেয়নি। শেষতক সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের ওই উপেক্ষিত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপের জন্যে কাঙাল হতে হলো। আন্দোলন ততক্ষণে সরকারবিরোধী কুশীলবদের কব্জায় চলে গেছে, সহিংসতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। একেই বলে, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। আন্দোলনের সুযোগে ওৎ পেতে থাকা সরকারবিরোধী সংঘবদ্ধ জঙ্গি সন্ত্রাসীরা নানা স্থাপনায় হামলা চালায়। বলা হচ্ছে সারাদেশ থেকে শিবিরের ক্যাডারদের ঢাকার আশেপাশে জড়ো করা হয়েছিল। এখানেও প্রশ্ন জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধ হলো, তার অগ্রিম খবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে থাকবে না কেন?
১৭ জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে খুনের ঘটনা সুরাহার জন্যে ত্বরিৎ কোনো ঘোষণা ছিল কি? বিশৃঙ্খলা উসকে দেওয়ার ব্যাপারে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করা যেত, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব থাকতে পারত, আদালতের শুনানি এগিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকতে পারত! এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে যারা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার কথা, তারা কি ঠিক পরামর্শটি দিয়েছিলেন? নাকি কোনো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল? এই দায়টিও নির্ধারিত হওয়া জরুরি। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগ পর্যন্ত সরকারের তরফে এমন কেউ কি ছিলেন, যিনি এই আন্দোলন নিয়ে নমনীয়তা দেখিয়েছিলেনÑ উস্কানি এবং দাম্ভিকতা এড়িয়ে আন্দোলকারীদের শান্ত এবং আশ্বস্ত করতে পারে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন? ১৭ জুলাইয়ের পরে পরিস্থিতি যখন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, তখন ঠিক কতই না নমনীয় হলেন তারা। বিচক্ষণতার তাগিদে রাজনীতিবিদের কথা ও আচরণে দম্ভের চেয়ে যুক্তি এবং নমনীয়তা আবশ্যক।
আন্দোলনের ভেতরে-বাইরে জামায়াত, বিএনপি, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং আরও সব জঙ্গিদের অনেকের সংশ্লিষ্টতা সামনে চলে আসছে। এর থেকে যেমন ভবিষ্যতের শেখার আছে, ঠিক একইভাবে ১৭ জুলাইয়ের আগপর্যন্ত আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের বচন এবং শরীরী ভাষাও একটু পেছন ফিরে দেখে নেওয়ার দরকার আছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমে উস্কানির মধ্যে রেখে প্রতিপক্ষ বানাবার কি এমন দরকার ছিল, সেটাও যদি মন্ত্রীদের কেউ খোলাসা করতেন, জাতির এই সন্ধিক্ষণে দেশের মানুষ ধন্য হতে পারত।
একের পর এক দুর্নীতির খবর, বিদেশে টাকা পাচারের মচ্ছব, প্রয়াত এক অর্থমন্ত্রীর মুখে আপ্তবাক্য ব্যাংক লুটের চার হাজার টাকা কিছুই না, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে ইন্দোনেশিয়ান অজগরের মতো এক একটা দুর্নীতিবাজের সহজে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া, সীমাহীন বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমলাতন্ত্রের লাগামহীন বাড়াবাড়ি দেখে দেখে মানুষ এমনিতেই হাঁপিয়ে উঠেছিল। মূল্যস্ফীতির পেছনের কারণ ইউক্রেইন এবং গাজার চলমান যুদ্ধ আর করোনা মহামারীর ধাক্কা হলেও দুর্নীতিও যে বড় একটি কারণ, এই সত্যটি স্বীকার করার মধ্যে মঙ্গল নিহিত আছে। ক্ষমতাসীন তরফের লোকজন এই বাস্তবতা কি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন?
ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক দায়: ক্ষমতাসীন দল এবং সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনে সুযোগসন্ধানীরা ভিড় করে। বিবিধ সরকারের সময়, ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের হালুয়ারুটির বিশাল বহর দেখে মনে করার কারণ নেই এরা দুঃসময়েও সেই মনোবল নিয়ে বিপদ ঠেকানোর জন্যে পিঠ পেতে দাঁড়াবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনে পৃথক দুটি দলের শাসনামল পেয়েছিলাম। সকল সরকারের সময় একই বাস্তবতা। কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনগুলো হয়ে যায় অনেকটা রকমারি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর লাভজনক প্ল্যাটফর্ম। এই বাস্তবতা থেকে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ কি মুক্ত? পুরো সময়ে ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দ মেঠো বক্তৃতা দিয়ে গেছেন। একই ঢোল আর ক্যাসেট বারবার বাজিয়েছেন। তারা একবারের জন্যও খতিয়ে দেখেননি, মানুষ তাদের এসব বক্তৃতা শুনতে চায় কিনা?
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের দুর্বলতা আর সক্ষমতার চিত্র বের করে আনার জন্যে বেশি সমীক্ষা আর গবেষণার দরকার নেই। দূরের ইতিহাস ঘাটারও দরকার নেই। প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বের তুলনামূলক চিত্র সামনে নিয়ে আসলেই ক্ষমতাসীন দলটি তাদের আমলনামার একটা চিত্র পেতে পারে। দুর্বলতা বা গাফিলতি কি কেবল ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলোর? কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোনো দায় বা দুর্বলতা নেই? দলটির এত এত মন্ত্রী, নির্বাচিত সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, কমিশনারÑ সাংগঠনিক পর্যায়ে তাদের কার কী ভূমিকা? সংকট মোকাবেলায় তারা কে কী করেছেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি স্বীকারোক্তি এখানে উল্লেখ করা যায়। রংপুরে মতবিনিময় সভায় গিয়ে দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, আপনারা ব্যর্থ, আপনাদের অফিস ধ্বংস করা হলো, আপনারা চেয়ে চেয়ে দেখলেন। প্রায় একই অবস্থা হয়েছে ঢাকা, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মাদারীপুর, ফেনী, নরসিংদী, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী এবং দেশের আরও অনেক জেলায়। অথচ এসব অঞ্চলের নেতারা মেঠো বক্তৃতায় কতই না দম্ভ আর আস্ফালন প্রকাশ করে গেছেন। আত্মশুদ্ধি এবং আত্মজিজ্ঞাসা রাজনীতিরই অংশ। এতে দোষের কিছু নেই। দোষ এবং ভুল স্বীকার করলে মানুষের মন পাওয়া যায়। আর এর উল্টোটা করলে মন হারাতে হয়। ক্ষমতাসীনরা কী করবেন ভেবে দেখতে পারেন।
পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, কর্মকমিশন: দৃশ্যমান হচ্ছে ঢাকার বাইরে থেকে এক লাখ মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় ঢুকেছিল। সংশ্লিষ্ট সংস্থা এই তথ্য সময় মত সরকারের গোচরে আনতে ব্যর্থ হলো কেন? সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট হ্যাক করা হলো। তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের রক্ষাকবচ কোথায়? এর দায় কার? রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ চলছ, গাজায় ইসরায়েলের দখলদারি চলছে। কিন্তু তাদের গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটগুলো তো অরক্ষিত নয়। আমাদের ওয়েবসাইটে এতটা অরক্ষিত কেন? এর দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। পুলিশের পোশাক পরে হামলার কথাও সামনে আসছে। এখন নানা জায়গা থেকে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। বেশ। কিন্তু এসব ঠেকাতে কিংবা এসবের ব্যাপারে অগ্রিম পদক্ষেপ নিতে পেরেছে কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ? পদক্ষেপ নিয়ে না থাকলে কিংবা নিতে ব্যর্থ হলে, জাতিকে তা পরিষ্কার জানানো দরকার।
মার্কিনমুল্লুকে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে ব্যর্থতার দায় নিয়ে গোয়েন্দাপ্রধানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আইনপ্রণেতাদের কাছেও জবাবদিহি করেছেন সিক্রেট সার্ভিসের প্রধান কিমবারলি শিয়াটেল। ঘটনার পর গোয়েন্দা প্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। আমাদের এত বড় একটি ঘটনায় দায় নেওয়ার মতো এখন পর্যন্ত কাউকেই কি পাওয়া গেল না?
যে পুলিশ সদস্য আবু সাঈদকে গুলি করল, তার যে ঊর্ধ্বতন, তার ঊর্ধ্বতন– এইভাবে পুলিশ প্রধান থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত কেউ কি দায় স্বীকার করেছেন, গুলির ঘটনার দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে পদত্যাগ করেছেন কিংবা দৃশ্যত কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? যুক্তি দেখাতে পারেন তদন্ত কমিশনের তদন্তের পরে ব্যবস্থা নেবেন। তাহলে বলে রাখি, গণতান্ত্রিক রেওয়াজ হলো, আপাত প্রতীয়মান দৃশ্যত রাষ্ট্রযন্ত্রে কর্মরত কেউ অভিযোগের মুখে পড়লে তৎক্ষণাৎ তাকে আইনের আওতায় আনা এবং তদন্তে দোষ বেরিয়ে আসলে শাস্তির মুখোমুখি করা আর নির্দোষ হলে দায়মুক্তি দেওয়া। কোটা নিয়ে সরকারি কর্মকমিশনের কি কিছু করার বা বলার ছিল না? কমিশনের সভাপতি পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং কোটাবিন্যাস নিয়ে একটি উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করতে পারতেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সামনাসামনি বসে সম্ভব না হলে, নিদেনপক্ষে অনলাইনেও আলোচনা করতে পারতেন। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল, সবাই যেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে পদায়ন হয়ে আছেন। কারও যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
প্রশ্নবিদ্ধ বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের তারকারা: বিপর্যয় অনেক দূর গড়াবার পর, শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সারাদশে অনেক প্রাণ ঝরে গেছে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এসেছে মোমবাতি জ্বালাতে। তাদের এই আচরণকে প্রহসন না মস্করা বলব শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। এই জোটের মোড়লরা আন্দোলন চলাকালীন কোথায় ছিলেন? তারা এসে তো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন, সংহতি জানাতে পারতেন, তাতে তাদের ক্ষোভ প্রশমিত হতে পারত, তাদের সঙ্গে সংলাপ বা যোগাযোগ করার বিকল্প একটা মাধ্যম বেরিয়ে আসতে পারত। আন্দোলন ঘিরে একের পর এক দুর্ঘটনা সামনে আসতে থাকল আর জাতির বিনোদন, সঙ্গীত, ইউটিউবার, লেখালেখি, ক্রীড়াসহ নানা অঙ্গনের তারকারা এক-একজন সব স্ট্যাটাস দেওয়া শুরু করলেন, অথচ এদের একজনও প্রায় দেড়মাস ধরে চলমান আন্দোলনে একদিনের জন্যেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কাছে যাননি। ক্ষেত্রবিশেষে আমাদের দেশে ‘আজাইরা’ সংবাদমাধ্যমও নিশ্চয়ই কিছু আছে, উপরে ইঙ্গিত করা তারকাগণ ফেইসবুকে ‘ছাইপাশ’ যা লেখেন, তাই ‘গাপুসগুপুস’ গিলে কিছু খবরের শিরোনাম করে আসছে। আমাদের একজন নোবেলজয়ী আছেন। তিনি কালবিলম্ব না করে বাংলাদেশকে উদ্ধারের জন্যে বিদেশি নেতাদের হস্তক্ষেপ করার আহবান জানিয়েছেন। আমি বুঝে পাই না, স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এরকম আকুতি করার এখতিয়ার কোথায় পেলেন তিনি? অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, দেশে যুদ্ধ বেঁধে গেছে। উনি বিবদমান দুটি পক্ষের একটি পক্ষ বেছে নিয়ে দুনিয়ার সমর্থন আদায়ের জন্যে তৎপর হয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমের পেশাদারি দায়: সংবাদমাধ্যম পেশাদারির জায়গা থেকে পুরোপুরি ভূমিকা পালন করতে পেরেছে কি? আন্দোলন ঘিরে প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশ থেকে কখনো কখনো মনে হয়েছে, এ যেন ‘মেলার ‘বা ‘কনসার্টের’ খবর। সরাসরি প্রতিবেদন প্রচারের সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই বিবেচনার মধ্যে রাখা উচিত। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সব ঘটনার দীর্ঘ তথ্য-প্রামাণ্য, অডিও-ভিডিও সংবাদমাধ্যমের সংগ্রহে থাকাটাই যথাযথ। কিন্তু সরাসরি প্রচারের সময় তো যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ থাকে না। তাতে অনেক সময় পরিস্থিতি ক্ষেত্রবিশেষে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আন্দোলন ঘিরে আগাম কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন কোনো গণমাধ্যম করতে পেরেছে কি? পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াচ্ছে কিংবা কোন দিকে গড়াতে পারেÑ এরকম যদি কোনো প্রতিবেদন না থাকে তাহলে এত এত সংবাদমাধ্যম দিয়ে আমরা করবটা কি? সংবামাধ্যমের অনুসন্ধানী চোখে তো অনেক কিছু বোধগম্য হবার কথা। দোষ কি কেবল ফেইসবুক এবং বিবিধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাড়াবাড়ি নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ কোনো প্রতিবেদন করেছিল কি সংবাদমাধ্যমগুলো?
একদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যে। অন্যদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্ভর করলেন দলীয় ছাত্রসংগঠনের ওপর। তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়াল? একটা বিষয় সংবাদমাধ্যমেও ঠিকভাবে আসেনি, সরকারি তরফ থেকেও স্পষ্ট করে কেউ বিবৃত করতে পারেননি। ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের গণ্ডগোল শুরু হবার আগে উস্কানিটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তরফ থেকেই এসেছে। আক্রমণের শুরুটাও তারা করেছে যা দেশের প্রথম সারির একটি সংবাদমাধ্যমে এসেছে। অথচ প্রায় বাকিসব সংবাদমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলো এর উল্টোটা।
বিদেশের মাটিতে ’হুজুগে’ বাঙালি: ঢাকায় কোটা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৮ এবং ১৯ জুলাই ইউরোপ-আমেরিকাসহ দুনিয়ার বিভিন্ন শহরের নানা জায়গায় এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে বিদেশে অবস্থানরত বাঙালিদের একটি অংশ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ইউরোপের অনেক দেশে এরকম জনসমাগমের জন্যে পুলিশের কাছ থেকে আগাম অনুমতির জন্যে লিখিত আবেদন করতে হয়। দরখাস্ত যাচাই-বাছাইয়ের এক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ফি জমা দিতে হয়। ফি জমা দেবার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনসমাগমের অনুমতি প্রদানের নিমিত্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। কখনো কখনো এই এই প্রক্রিয়ায় কয়েক সপ্তাহ চলে যায়। যেসব দেশ স্বল্পতম সময়ে অনুমতি প্রদান করতে পারে তাতেও দিন তিনেক লেগে যায়। আমার প্রশ্ন আমাদের দেশের বাইরে নিজ দেশের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্যে কত আগে থেকে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন?
আমার জানা মতে, এমন কোনো রাষ্ট্র নেই, যেখানকার নাগরিকরা কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদেশে নিজ দেশের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অথচ আমাদের দেশের নাগরিকরা এরকম একটি কাজ করে বসল। এতে দেশের সম্মান বাড়ল না কমল? এই প্রশ্নটি রাখতে চাই। হ্যা ফিলিস্তিনের নাগরিকরা দেশে দেশে বিক্ষোভ করে। সেটা তাদের দূতাবাসের সামনেও নয়, নিজ দেশের বিরুদ্ধেও নয়। সেই বিক্ষোভ তারা করে থাকে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। এরকম বিদ্রোহ বাঙালিও একবার করেছিল ১৯৭১ সালে, মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে। সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ১৯৭১ আর ২০২৪ এর মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। আরও কয়েকটা বিষয় সামনে নিয়ে আসতে চাই, ভারতের কাশ্মীরে রক্তপাত হলো, দিনের পর দিন কারফিউ ছিল, মনিপুরে একের পর এক রক্তপাত হল, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে একের পর এক অঘটন ঘটে চলছে, চীনের উইঘুর নিয়ে প্রশ্ন অনেক, আফ্রিকা মহাদেশসহ দুনিয়ার দেশে দেশে নানা ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেসবকে কেন্দ্র করে ওইসব দেশের নাগরিকরা নিজ দেশকে বিব্রত করতে বিদেশের মাটিতে নিজেদের মানবতার ঠিকাদার হিসেবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে না। শ্রীলঙ্কায় সিংহলি-তামিল যুদ্ধ হয়েছে, নেপালে মাওবাদীদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই এসব দেশের নাগরিকরা বিদেশের মাটিতে নিজেদের সস্তা করেছে কি? ব্রিটিশদের অধীনে দুইশ বছর আর পাকিস্তানের কব্জায় ২৪ বছরের গোলামির খেসারত বাঙালি এত সহজে ভুলে গেল?
বিদেশের মাটিতে বিক্ষোভের মাধ্যমে বিশ্বকে কি বার্তা দিলেন বাঙালিরা? বাংলাদেশ একটা বিপদজনক দেশ? এদেশে বিনিয়োগ নিরাপদ নয়? এদেশে ভ্রমণ বিপজ্জনক? এদেশের মানুষগুলো কলহপ্রিয়? এদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার? এটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র? বিক্ষোভ করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশে বসবাসকারী বাঙালিদের বড় একটি অংশ শাস্তির মুখে পড়েছে। একেই বলে যেচে বিপদ ডেকে আনা।
প্রশ্নটা দেশপ্রেমের: শত শত মামলা আর হাজার হাজার গ্রেফতার নিয়ে একটি বিষয় সামনে আনতে চাই। কোটা আন্দোলনের আড়ালে সংঘটিত অরাজকতা আর ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা আধুনিক যুগে অসম্ভব নয়। তাই হাজারে হাজারে গ্রেফতারের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে কি না? এতে করে মানুষের মাঝে ভুল ধারণার সৃষ্টি হবার সুযোগ কি নেই? মানুষ এসব নিয়ে ভুল বার্তা পেয়ে যেতে পারে।
আধুনিক প্রযুক্তিতে অপরাধীকে চিহ্নিত করার জন্যে আমেরিকার গুয়ানতানামো বন্দীশালার যেমন দরকার নেই, তেমনি হেফাজতে নিয়ে ‘নির্যাতন করা’র আবশ্যকতা কতটুকু, সেই প্রশ্নটিও তোলা যায়। ভুল বার্তা এড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের সমর্থনে তাণ্ডবের আগের কুশীলব ষড়যন্ত্রকারীদের এবং তাণ্ডবের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের অডিও-ভিডিওসহ নানা প্রমাণাদি জনসমক্ষে নিয়ে আসা জরুরি।
সরকারের সামগ্রিক পদপক্ষেপের পক্ষে মানুষের সমর্থন পাবার জন্যে সব প্রশ্নের সুরাহা করতে হবে। দেশের নাগরিক হিসেবে একজন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন, আন্দোলন সমর্থন করতে পারেন, আন্দোলনের বিরোধিতাও করতে পারেন, তিনি সরকারের পক্ষের বা বিপক্ষের যে দলেরই হোন, যদি তিনি তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত না হন, এমন নিরীহ কাউকেই গ্রেফতার বা হয়রানি কাম্য হতে পারে না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কারীদের গোয়েন্দা হেফাজতে নেওয়ার প্রেক্ষাপটে একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। ১৮৬৮ সালের গ্রীষ্মকালে ফরাসি দার্শনিক জাঁ পল সার্ত্রেকে আইন অমান্য করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই সময়ে ফরাসি রাষ্ট্রপতি চার্লস ডি গল হস্তক্ষেপ করে সার্ত্রেকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে মন্তব্য ভলতেয়ারকে গ্রেফতার করতে নিষেধ করেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী আন্দোলন সমন্বয়কারী শিক্ষার্থীদের যদি হাসপাতাল বা পরিবারে নিরাপত্তার সমস্যা থাকে, তাহলে প্রয়োজনে তাদেরকে সেনানিবাসের হাসপাতালে কিংবা পুলিশ হাসপাতালে রাখুন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সময়ের সার্ত্রে বা ভলতেয়ার নন ঠিক; তারা কিন্তু প্রজন্মের প্রতিনিধি। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বা সমন্বয়কারীদের কেউ সহিংসতায় জড়িয়ে থাকলে তাদেরকেও বিচারের মুখোমুখি করা কাম্য। লুকোছাপার তো কিছু নেই।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা এখন আবশ্যক। আন্দোলনে লাভ আর ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। স্বস্তি ও সম্ভাব্য শান্তি ফিরিয়ে আনার মধ্যেই এই মুহূর্তের বিপ্লব। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কারও খায়েশে শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত না হবার মধ্যেই মঙ্গল। অন্যথায় সর্বনাশ সকলের সবদিকে। মেনে নেওয়ার মত, শিক্ষার্থীদের তরফে বাকি দাবি হতে পারে আন্দোলনে আহত-নিহত-ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারের পুনর্বাসন, চিহ্নিত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং হয়রানি থেকে রেহাই। এসব কিছুর জন্যে সর্বাগ্রে দরকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সংলাপ। সময়টা এখনই। কারণ প্রতিদিনই দেখছি, নতুন কর্মসূচিÑ লালকাপড় মুখে বেঁধে দাঁড়ানো দেখলাম। ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ ঘোষিত হয়েছে।
কেউ ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক কিংবা ক্ষমতার বাইরের কোনো দলের সমর্থকÑ গণতান্ত্রিক রীতিতে তা পৃথক বিবেচ্য বিষয় নয়। জাতীয় ঐক্য আর অগ্রযাত্রার জন্য প্রজন্মের তারুণ্যকে আস্থায় রাখতে হয়। বলে রাখি, শেষতক কোটা আন্দোলন ঘিরে আখেরে মূল প্রশ্নটি কিন্তু দেশপ্রেমেরÑ কার দায়, কোথায় কতটুকু? দায় থেকে ইতিহাস কাউকেই ছাড় দেবে না।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক, কলামিস্ট