রাঙামাটি প্রতিনিধি : জন্মের পর যে মেয়ে বাবার ডাক শোনেনি। পাইনি বাবার আদর। তার জন্মের আগেই বাবা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। আমরা যার কথা বলছি, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা।
গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালের মাটিতে স্বাগতিকদের ৩-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা শিরোপ অর্জন করে। সেই দলের অন্যতম সদস্য রুপনা চাকমা। বাবার ছায়া মাথায় না পেলেও রুপনা আত্মবিশ্বাস হারায়নি। অদম্য স্পৃহা তার। রুপনা শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক হয়ে তিনি দেশের নাম উজ্জ্বল করছেন। তার অসাধারণ অর্জনে গর্বিত পাহাড়ের মানুষেরা।
রুপনা চাকমার বাড়ি : পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়া আদাম গ্রামে জন্ম রূপনা চাকমার। বাবা গাছা মনি চাকমা এবং মা কালা সোনা চাকমা। রুপনা চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। রুপনার দুই বড় ভাই পেশায় দিনমজুর। আর মা কালা সোনা চাকমা মানুষের ক্ষেতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘিলাছড়ির ভূঁইয়া আদামের আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে কাঠের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় তার বাড়ি। রুপনার বাড়িটি জরাজীর্ণ। ঝড় হলে ভেঙে পড়বে সেটি। এই ছোট্ট কুটিরে বাস করছে রুপনা চাকমার পরিবার। সরেজমিনে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল রুপনার। হাজাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে নানিয়ারচরে ফুটবল খেলতে গিয়ে রুপনা নজরে আসেন শিক্ষক বীরসেন চাকমার। পরে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঘাগড়াতে নিয়ে যান বীরসেন চাকমা ও শান্তি মনি চাকমা। রুপনা এখন ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। রূপনার মা কালা সোনা বলেন, ‘মোবাইলে খেলা দেখেছি। আমি খুশি। বাবা হারা গরিব ঘরের মেয়ে এখন দেশে-বিদেশে ঘুরছে। গ্রামবাসী তাকে নিয়ে প্রশংসা করছে। রুপনা নাকি গ্রামের জন্য সুনাম নিয়ে এসেছে। আমার মেয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাক, সবার কাছ থেকে তার জন্য আশীর্বাদ কামনা করছি।’ ভূইয়া আদাম গ্রামের গ্রাম প্রধান ও রুপনা চাকমার মামা সুদত্ত বিকাশ চাকমা বলেন, রূপনার ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ ছিল। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলতে পারে। গ্রামের মানুষ তাকে নিয়ে গর্ব করছে। শিক্ষক বীরসেন চাকমা বলেন, ‘ভালো লাগছে, আমরা রুপনার দেখাশোনা করেছি। সে দেশের সুনাম বয়ে এনেছে।’ আরেক শিক্ষক শান্তি মণি চাকমা বলেন, ‘আমরা গর্ববোধ করছি রুপনার জন্য।’
রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নিরুপা দেওয়ান বলেন, ‘রুপনা প্রত্যন্ত এলাকায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে তারা যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘তাদের যে প্রতিভা আছে, আমাদের দায়িত্ব এই প্রতিভা তুলে নিয়ে আসা।’ রুপনা চাকমা ও আরেক খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়িতে গিয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক তাদের অভিভাবকদের হাতে দেড় লাখ টাকা করে দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক রুপনা চাকমার জন্য নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সংবাদ শিরোনাম ::
পাহাড়ের মেয়ে রুপনা দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ