রাজশাহী সংবাদাতা: সারাদেশে প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। মশার কামড় থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিচ্ছে নানা পরামর্শ। দেশবাসী যখন ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে মরিয়া ঠিক তখন তার উল্টো চিত্র রাজশাহীর পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এই হাসপাতালের দিনে এবং রাত্রে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রোগী ও তার স্বজনরা। অভিযোগ রয়েছে মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করার।
গতকাল রোববার সকালে সরজমিন পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেওক্স দেখা গেছে, হাসপাতাল ভবনের উত্তর-পূর্ব দিকে ড্রেনেজের ভেতরে এডিস মশার অজস্র লার্ভা। ড্রেনটি দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় মশা বংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়ে ভর্তি রোগীদের সাথে কথা বললে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা অভিযোগ করেন। তারা জানান, সন্ধ্যা হলেই মশার কামড়ে বসে থাকাই অনেক কষ্টকর হয়। মশার বিষয়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সদের জানালে তারা রোগীদের সিলিং ফ্যান ছাড়তে বলেন।
রোগীর স্বজন শহিদুল ইসলাম বলেন, বিকেলের পর থেকেই মশার অত্যাচারে এখানে আমাদের রোগীদের টিকে থাকাই মুশকিল। আমরা এমনিতেই আছি বিপদে, এর উপরে প্রতি রাতে মশার কামড়ে সহ্য করছি। নার্সদের বললেও আমাদের বকা খেতে হয়।
নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীর ওয়ার্ডের পাশে এবং টয়লেটে বাজে দুর্গন্ধে। সেখানে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যায় রোগী ও তাদের সাথে স্বজনদের। নাকমুখ গুঁজে টয়লেটে যেতে হয়। পুরো শৌচাগার কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হওয়ায় তা ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকেই পড়ে গিয়ে শরীরে আঘাত পান।
ওয়ার্ডগুলোয় বর্জ্যভর্তি গামলা রোগীর শয্যার পাশে পড়ে রয়েছে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালজুড়ে। নারী ওয়ার্ডের একমাত্র শৌচাগারের দরজা কেউ খুললে উৎকট দুর্গন্ধে ভেতরে টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়ে। ভর্তি থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা অনেকে বমি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মহিলা ওয়ার্ডের শৌচাগারের পাশে থাকা শয্যায় পেটের সমস্যা নিয়ে ভর্তি ছিলেন দর্শনপাড়া ইউনিয়নের এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘বাপু, আমি ভর্তি হওয়ার পরদিন থ্যাকায় এখানে দুর্গন্ধে বাঁচতে পারি না। নার্স আপাদের বুললে তারা আমাহেরে কথা শুইনে না। এখন কষ্ট নিয়ে আছি বাপু, কী আর বুলবো। পরে দেখা যাবেনি আমার আবার কোন সমস্যা হবি।’
ডাক্তাররা বহির্বিভাগে সময়মতো আসেন না: ৩১ শয্যার পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে কনসালটেন্ট আছে ৪ জন। কিন্তু সেবা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে কনসালটেন্টরা নিয়মিত ও সময়মতো হাসপাতালে আসেন না। ৯টা ৪৫ মিনিটে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২ জন কনসালটেন্ট। কনসালটেন্ট ২ ও ৩ নম্বর রুমে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কেউ নেই। দায়িত্বরত অফিস সহায়কদের মাধ্যমে জানা গেল তারা এখনো হাসপাতালে আসেননি।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নওহাটা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের আরেফা বেগম বলেন, ‘দারুশা হাসাপাতাল আগে ভালোই তো চিকিৎসা দিত আমাদের। কিন্তু ইদানীং ডাক্তার সাহেবদের হাসপাতালে নিয়মিত পাওয়াই যায় না। তারা যদি সঠিক সময়ে এসে উপস্থিত হয়ে চিকিৎসা দেয় তাহলে এই হাসাপাতালে রোগী আরো বাড়বে।
মাজা ব্যাথা নিয়ে স্থানীয় সাহাপুর এলাকার ইসকান আলী আসেন হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন দেখাতে। তিনি বলেন, “৫ মিনিট বসে থাকলে আর উঠে দাঁড়াতে পারি না বাবা। এখানে এসেছি ভালো ডাক্তার দেখিয়ে এখান থেকে ভালো ওষুধ দিবে। কিন্তু আমাকে দিল মাত্র কয়েকটা প্যারাসিটামল ট্যবলেট আর ভিটামিন ওষুধ। ডাক্তারদের কাছে থেকে একটু ভালো পরামর্শ নিবো। কিন্তু তাদের যে ব্যবহার! তারা তো ভালো করে আমাদের সাথে কথাই বলে না। তাদের ব্যবহার খুবই খারাপ।
এসব বিষয়ে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বসরী জানান হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও কনসালটেন্টের স্বল্পতার কথা । তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন এই হাসাপতাল ১০০ শয্যার। কিন্তু আসলে ৩১ শয্যার। এখানে রোগী ভর্তি থাকার কথা ৩১ জন। বাস্তব চিত্র হচ্ছে ভর্তি আছেন ৮০-৯০ জন। আর রোগীর সাথে থাকেন আরো প্রায় ১৫০ জন। এত সংখ্যক রোগী ও তাদের স্বজনের চাপ সামাল দেওয়া আমাদের জন্য অনেক কঠিন। আমাদের এখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছে মাত্র ১ জন এবং আউটসোর্সিংয়ে আছে ১ জন।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ