নেত্রকোণা প্রতিনিধি : নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলায় স্কুলছাত্রী মুক্তি রাণী বর্মণকে কুপিয়ে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. কাউছার মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার বিকাল ৩টার দিকে বাউসী ইউনিয়নের প্রেমনগর ছালিপুরা গ্রাম তাকে আটক করা হয় বলে জানান বারহাট্টা থানার ওসি খোকন কুমার সাহা। তিনি বলেন, “কাউছারকে ধরতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালায়। পরে প্রেমনগর ছালিপুরা গ্রামের একটি জঙ্গল থেকে তাকে আটক করে জেলা পুলিশের সম্মিলিত একটি দল।”
নিহত মুক্তা রাণী বর্মন (১৬) উপজেলার বাউসী ইউনিয়নের প্রেমনগর ছালিপুরা গ্রামের নিখিল বর্মনের মেয়ে ও প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পরিবারের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার মুক্তা বিদ্যালয় ছুটির পর তার দুই বান্ধবীর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। পথে একই গ্রামের একই গ্রামের শামছু মিয়ার ছেলে কাউছার (১৯) অতর্কিতে তার ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হয় মুক্তা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে বিকাল ৫টায় মুক্তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি জানিয়ে ওসি জানান, মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে কাউছারকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
কাউছার মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন: এদিকে মুক্তি হত্যার ঘটনায় কাউছার মিয়ার গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বারহাট্টায় নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে সদরের স্টেশন রোড সড়কে আয়োজিত এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, গোপালপুর বাজার বণিক সমিতির সম্পাদক আসমত আলী মোল্লা, নারী প্রগতি সংঘ বারহাট্টা শাখার ব্যবস্থাপক সুরজিৎ ভৌমিক, জেলা উদীচীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ইমরান হাসান সাকিব।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলল স্কুলছাত্রী মুক্তির মাথা ও ঘাড়ে ৫টি কোপ দেন বখাটে কাওছার: নেত্রকোনার বারহাট্টায় নিহত স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণের (১৫) মাথা ও ঘাড়ে ধারালো দা দিয়ে পরপর পাঁচটি কোপ দেন বখাটে কাওছার। প্রথম দুটি কোপ ছাতা দিয়ে আটকালেও পরের তিনটি কোপ ফেরাতে পারেনি মুক্তি। সর্বশেষ ঘাড়ে কোপ দেওয়ার পর মুক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পাঁচ স্কুলশিক্ষার্থী গতকাল বুধবার সকালে সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সহপাঠীরা বলে, গত মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিদ্যালয় ছুটির পর মুক্তিসহ তারা হেঁটে নদীর পাড় এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় সেখানে একটি রেইনট্রিগাছের নিচে কাওছার দা ও কাঁচা আম নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় কাওছার সেখানকার এক ছাত্রীকে আম খাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। ওই ছাত্রী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হাঁটতে শুরু করে। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাওছার আমগুলো নদীতে ছুড়ে ফেলে মুক্তিকে দা দিয়ে কোপাতে শুরু করেন। এ সময় সঙ্গে থাকা প্রায় আট শিক্ষার্থী মুক্তিকে রক্ষায় এগিয়ে এলে কাওছার দা উঁচু করে তাদের ভয় দেখান। পরে চিৎকার শুনে নদীর তীরে কাজ করতে থাকা মো. মোস্তফা (৪৫) নামের এক ব্যক্তি এগিয়ে এলে কাওছার দা ফেলে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান।
কাওছারের প্রতিবেশী জিয়াউল হক বলেন, ‘কাওছার এলাকায় বখাটে ছেলে হিসেবে পরিচিত। সে বিভিন্ন সময় এলাকায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করত। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিল। এরপর কিছুদিন একজন গেরস্ত বাড়িতে কাজ করত। আমরা চাই এই বখাটেকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’
মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে উপজেলার ছালিপুরা এলাকায় মুক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেন মো. কাওছার মিয়া (১৮)। বিকেল পাঁচটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা ওই স্কুলছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মুক্তি উপজেলার প্রেমনগর গ্রামের নিখিল বর্মণের মেয়ে এবং প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর অভিযুক্ত কাওছার মিয়া একই গ্রামের মো. শামসু মিয়ার ছেলে।
গতকাল বুধবার সকাল আটটার দিকে উপজেলার প্রেমনগর গ্রামে নিহত মুক্তির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা প্রণবা বর্মণ ও বাবা নিখিল বর্মণ অসাড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। একজন গ্রাম্য চিকিৎসক তাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। মুক্তির বড় বোন দীপা বর্মণ স্থানীয় একটি কলেজে পড়েন। তিনি দাবি করেন, অভিযুক্ত কাওছার বেশ কয়েকবার তাঁর বোনকে উত্ত্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস আগে কাওসার আমার চাচাতো ভাই জয়কে মারধর করে। পরে মুক্তি ও আমার ছোট বোন ইতি প্রতিবাদ করেছিল। পরে কাওছারের পরিবারের কাছে বিচার দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে কাওছার আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমরা তো আর আমাদের বোনকে ফিরে পাব না। তবে এ হত্যাকা-ে জড়িত বখাটে কাওছারের ফাঁসি চাই।’
সংবাদ শিরোনাম ::
নেত্রকোণায় স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যার আসামি কাউছার আটক
জনপ্রিয় সংবাদ