ঢাকা ১২:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

দেশে বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষ মৃত্যু হয় হৃদরোগে

  • আপডেট সময় : ০৫:০৫:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • ৬২ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: বাংলাদেশে প্রতি বছর দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। এর ২৪ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক। এছাড়া হৃদরোগে মৃত্যুর ২৫ শতাংশের পেছনে আছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে সারা বিশ্বে ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবমতে, সারা বিশ্বে বছরে ১৯ লাখ মানুষ তামাকের কারণে হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি (জিবিডি) ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) তামাক ব্যবহার করছে, যা হৃদরোগ পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৯ সেপ্টেম্ব বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। হার্টের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশে এদিন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘হৃদয়ের যন্ত্র হোক সর্বজনীন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে মিলে বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়।
চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় হৃদরোগকে বলা হয় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। হৃদরোগের কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেন থাকেন, সচল থাকতে গোটা শরীরের মতো হৃদযন্ত্রেরও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। আর করোনারি ধমনী হৃদযন্ত্রে ওই অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপনে করোনারি ধমনীর ভেতরের দেয়ালে ফ্যাট জমে যায়। ফলে সময়ের সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফুসফুসে রক্তের সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। কার্ডিয়াক ইস্কেমিয়ার পরিস্থতি তৈরি হয়, যাতে হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। বেশ কিছু সময় পর্যন্ত বুঝতে না পারলে বা চিকিৎসায় দেরি হলে হৃদযন্ত্রের কোষগুলোর একে একে মৃত্যু ঘটে। এভাবেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয় একজন মানুষ।
চিকিৎসকদের মতে, পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে হৃদরোগে, যার অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। দেশে মৃত্যুর শীর্ষ কারণগুলোর অন্যতম হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ বা কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ। একটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট মৃত্যুর ৩৪ শতাংশের পেছনে আছে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ।
এত দিন বলা হয়েছে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও কায়িক পরিশ্রমহীন জীবনযাপন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুদূষণ এই রোগের প্রকোপ বাড়াচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী হৃদরোগে মৃত্যুর ২৫ শতাংশের পেছনে আছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে সারা বিশ্বে ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বায়ুদূষণ বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। গত বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যানুয়েশনের যৌথ প্রতিবেদন ‘এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন সিটিস’-এ বলা হয়েছিল, বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান পঞ্চম।
২০১৯ সালে বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা শহরে ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে ২০২০ সালে প্রকাশিত বৈশ্বিক বায়ুদূষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে হৃদরোগে যত মানুষ মারা যায়, তার ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী বায়ুতে থাকা অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা (পিএম ২ দশমিক ৫)। বেশ কয়েক বছর ধরে হৃদরোগের কারণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার নিয়ে গবেষণা করছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগ।
রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও কার্ডিয়াক সার্জন জানিয়েছেন, তিনটি বিষয় ছাড়া বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য দক্ষ জনবল, আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি দেশে আছে। তবে দেশে এখনও কার্ডিয়াক ট্রান্সপ্লান্ট বা হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন শুরু হয়নি। জন্মগত কিছু জটিল হৃদরোগের চিকিৎসা এখনও দেশের চিকিৎসকদের আয়ত্তে আসেনি। মাংসপেশির দুর্বলতাজনিত হৃদরোগের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো চিকিৎসকদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি আছে। তিনি জানান, হৃদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও রোগটি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নগরায়ণ, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্যে অভ্যস্ত হওয়া, কায়িক পরিশ্রম কম করা, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না নেওয়া, অত্যধিক মানসিক চাপে থাকা এসব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এ প্রসঙ্গ জানতে চাইলে ডা. নজরুল ইসলাম মোড়ল জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হৃদরোগকে বলেন ‘ডেডলি ডিজিজ’। এতে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। ঝুঁকি দেখা দেয় আচমকা। প্রায় সূত্রহীনভাবে হঠাৎই ‘হার্ট অ্যাটাকের’ সংবাদ শোনা যায়। দিশেহারা হয়ে পড়ে মানুষ। ঘটনার আকস্মিকতা ছাড়াও হৃদরোগ নিয়ে ভয়ের অন্যদিক হচ্ছে, এর চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খসড়া সংশোধনীতে সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করাসহ সব ধরনের খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খসড়াটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) জানিয়েছে, বাংলাদেশে হৃদরোগ ঝুঁকি ও হৃদরোগজনিত মৃত্যু ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে হৃদরোগের অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রতি ৪ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।
বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের জানিয়েছেন, তামাকজনিত হৃদরোগ ঝুঁকি হ্রাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইন সংশোধনের পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী। তামাক কোম্পানির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ জানিয়েছেন, সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খুব দ্রুতই আইনটি সংশোধন হয়ে কার্যকর হবে।
বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ উপলক্ষে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহযোগিতায় আজ ২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার ‘উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ ঝুঁকি’ শীর্ষক ওয়েবিনার আয়োজন করেছে।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেশে বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষ মৃত্যু হয় হৃদরোগে

আপডেট সময় : ০৫:০৫:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: বাংলাদেশে প্রতি বছর দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। এর ২৪ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক। এছাড়া হৃদরোগে মৃত্যুর ২৫ শতাংশের পেছনে আছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে সারা বিশ্বে ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবমতে, সারা বিশ্বে বছরে ১৯ লাখ মানুষ তামাকের কারণে হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি (জিবিডি) ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) তামাক ব্যবহার করছে, যা হৃদরোগ পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৯ সেপ্টেম্ব বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। হার্টের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশে এদিন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘হৃদয়ের যন্ত্র হোক সর্বজনীন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে মিলে বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়।
চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় হৃদরোগকে বলা হয় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। হৃদরোগের কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেন থাকেন, সচল থাকতে গোটা শরীরের মতো হৃদযন্ত্রেরও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। আর করোনারি ধমনী হৃদযন্ত্রে ওই অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপনে করোনারি ধমনীর ভেতরের দেয়ালে ফ্যাট জমে যায়। ফলে সময়ের সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফুসফুসে রক্তের সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। কার্ডিয়াক ইস্কেমিয়ার পরিস্থতি তৈরি হয়, যাতে হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। বেশ কিছু সময় পর্যন্ত বুঝতে না পারলে বা চিকিৎসায় দেরি হলে হৃদযন্ত্রের কোষগুলোর একে একে মৃত্যু ঘটে। এভাবেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয় একজন মানুষ।
চিকিৎসকদের মতে, পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে হৃদরোগে, যার অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। দেশে মৃত্যুর শীর্ষ কারণগুলোর অন্যতম হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ বা কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ। একটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট মৃত্যুর ৩৪ শতাংশের পেছনে আছে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ।
এত দিন বলা হয়েছে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও কায়িক পরিশ্রমহীন জীবনযাপন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুদূষণ এই রোগের প্রকোপ বাড়াচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী হৃদরোগে মৃত্যুর ২৫ শতাংশের পেছনে আছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে সারা বিশ্বে ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বায়ুদূষণ বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। গত বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যানুয়েশনের যৌথ প্রতিবেদন ‘এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন সিটিস’-এ বলা হয়েছিল, বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান পঞ্চম।
২০১৯ সালে বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা শহরে ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে ২০২০ সালে প্রকাশিত বৈশ্বিক বায়ুদূষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে হৃদরোগে যত মানুষ মারা যায়, তার ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী বায়ুতে থাকা অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা (পিএম ২ দশমিক ৫)। বেশ কয়েক বছর ধরে হৃদরোগের কারণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার নিয়ে গবেষণা করছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগ।
রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও কার্ডিয়াক সার্জন জানিয়েছেন, তিনটি বিষয় ছাড়া বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য দক্ষ জনবল, আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি দেশে আছে। তবে দেশে এখনও কার্ডিয়াক ট্রান্সপ্লান্ট বা হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন শুরু হয়নি। জন্মগত কিছু জটিল হৃদরোগের চিকিৎসা এখনও দেশের চিকিৎসকদের আয়ত্তে আসেনি। মাংসপেশির দুর্বলতাজনিত হৃদরোগের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো চিকিৎসকদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি আছে। তিনি জানান, হৃদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও রোগটি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নগরায়ণ, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাদ্যে অভ্যস্ত হওয়া, কায়িক পরিশ্রম কম করা, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না নেওয়া, অত্যধিক মানসিক চাপে থাকা এসব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এ প্রসঙ্গ জানতে চাইলে ডা. নজরুল ইসলাম মোড়ল জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হৃদরোগকে বলেন ‘ডেডলি ডিজিজ’। এতে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। ঝুঁকি দেখা দেয় আচমকা। প্রায় সূত্রহীনভাবে হঠাৎই ‘হার্ট অ্যাটাকের’ সংবাদ শোনা যায়। দিশেহারা হয়ে পড়ে মানুষ। ঘটনার আকস্মিকতা ছাড়াও হৃদরোগ নিয়ে ভয়ের অন্যদিক হচ্ছে, এর চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খসড়া সংশোধনীতে সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করাসহ সব ধরনের খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খসড়াটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) জানিয়েছে, বাংলাদেশে হৃদরোগ ঝুঁকি ও হৃদরোগজনিত মৃত্যু ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে হৃদরোগের অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রতি ৪ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।
বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের জানিয়েছেন, তামাকজনিত হৃদরোগ ঝুঁকি হ্রাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইন সংশোধনের পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী। তামাক কোম্পানির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ জানিয়েছেন, সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খুব দ্রুতই আইনটি সংশোধন হয়ে কার্যকর হবে।
বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ উপলক্ষে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহযোগিতায় আজ ২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার ‘উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ ঝুঁকি’ শীর্ষক ওয়েবিনার আয়োজন করেছে।