ঢাকা ০৮:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

দিনমজুরি নেই, কুঁচিয়া শিকার

  • আপডেট সময় : ০১:১৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩
  • ১১১ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা: বোরো ধান তোলা শেষ। এখন এলাকায় দিনমজুরির কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন মৌলভীবাজারের হাওরপাড়ের শ্রমিকরা। এ অবস্থায় সংসারের খরচ যোগাতে কুঁচিয়া শিকারে নেমেছেন তারা। এ চিত্র দেখা গেছে মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘি হাওর জনপদের নমসুদ্র সম্প্রদায়ের দিনমজুরদের মাঝে। সপ্তাহে তিন থেকে চার কেজি কুঁচিয়া ধরেন তারা। প্রতি কেজি বিক্রি করেন ৩০০ টাকায়। আয় হয় ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। তা দিয়ে সংসার চলে অনেকের। তবে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা বাড়ি থেকে কমদামে কিনে নেন কুঁচিয়াগুলো। এতে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে আহরণকারীদের অভিযোগ। কুঁচিয়া দেখতে অনেকটা সাপের মতো। এটি ইল প্রজাতির মাছ। এই কুঁচিয়া বিভিন্ন রোগের প্রতিকারের জন্য অনেকে খেয়ে থাকেন। জানা গেছে, নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত কুঁচিয়া ধরার উপযুক্ত সময়। একজন শিকারি সপ্তাহে তিন/চার কেজি কুঁচিয়া ধরে থাকেন। কাউয়াদিঘি হাওর এলাকায় গেলে দেখা হয় রাজনগর উপজেলার ঢেউরবন্দ গ্রামের কুঁচিয়া শিকারি সুধাংশু নমসুদ্রের সঙ্গে। তিনি বলেন, বোরো ধান তোলা শেষ হয়েছে। এখন কোনো কাজ নেই। বেকার সময় চলছে। তাই ছয়জনের সংসার চালাতে কুঁচিয়া শিকার করি। পাশের হবিগঞ্জ জেলার পাইকাররা বাড়ি থেকে প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় কিনে নিয়ে যায়। সপ্তাহে তিন থেকে চার কেজি ধরতে পারি। কাঁধে বাঁশের তৈরি ফলই (স্থানীয় ভাষায় উকা) নিয়ে ঘর হতে বেড় হচ্ছেন কাউয়াদিঘি হাওরপাড়ের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের দুর্গাচরণ নমসুদ্র। তিনি বলেন, আটজনের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। দিনমজুরির কাজ নেই, এখন কুঁচিয়া শিকারই ভরসা। দুর্গাচরণ বলেন, ফলইয়ের ভেতরে ছোট সরু বাঁশের কাঠিতে কেঁচোর টোপ লাগিয়ে খাল ও ডোবাতে রাখলেই কুঁচিয়া ধরা পড়ে। দুই থেকে তিন কেজি কুঁচিয়া ধরলে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা বিক্রি করতে পারি। বাড়ি থেকে পাইকাররা নিয়ে যায়।
হাওরপাড়ের জাহিদপুর গ্রামের কুচিয়া শিকারি সৌরভ নমসুদ্র বলেন, কুঁচিয়া ধরার ফাঁদ উকা/ফলই কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার থেকে সংগ্রহ করে আনা হয়। প্রতিটি ফলই ১০ থেকে ১৫ টাকা মূল্যে কিনতে হয়। একসঙ্গে শতাধিক ফলই পাতানো হয়। সব ফলইয়ে কুঁচিয়া ধরা পড়ে না। চার/পাঁচদিনে তিন থেকে চার কেজি সংগ্রহ করা যায়। সরাসরি বিক্রি করতে না পারায় আমরা লোকসানে আছি। মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা আমাদের কাছ থেকে কমমূল্যে কিনে তারা চড়া দামে বিক্রি করে। সুধাংশু, দুর্গাচরণ, সৌরভের মতো হাওরপাড়ের আব্দুল্লাহপুর, জাহিদপুর, কাশিমপুরের নমসুদ্র সম্প্রদায়ের অর্ধশত পরিবারের সংসার চলে কুঁচিয়া বিক্রি করে। বিষয়টি নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য অফিসার মুহম্মদ মিজানুর রহমান বলেন বলেন, কুঁচিয়া ধরতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বাংলাদেশ থেকে চীন ও কোরিয়াতেও প্রচুর কুঁচিয়া রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের হাতে কোনো প্রজেক্ট নেই। যদি প্রজেক্ট আসে তাহলে আমরা কুঁচিয়া চাষ করবো। মৌলভীবাজারে কুঁচিয়া চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কুঁচিয়া রপ্তানিতে দেশ লাভবান হবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দিনমজুরি নেই, কুঁচিয়া শিকার

আপডেট সময় : ০১:১৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা: বোরো ধান তোলা শেষ। এখন এলাকায় দিনমজুরির কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন মৌলভীবাজারের হাওরপাড়ের শ্রমিকরা। এ অবস্থায় সংসারের খরচ যোগাতে কুঁচিয়া শিকারে নেমেছেন তারা। এ চিত্র দেখা গেছে মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘি হাওর জনপদের নমসুদ্র সম্প্রদায়ের দিনমজুরদের মাঝে। সপ্তাহে তিন থেকে চার কেজি কুঁচিয়া ধরেন তারা। প্রতি কেজি বিক্রি করেন ৩০০ টাকায়। আয় হয় ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। তা দিয়ে সংসার চলে অনেকের। তবে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা বাড়ি থেকে কমদামে কিনে নেন কুঁচিয়াগুলো। এতে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে আহরণকারীদের অভিযোগ। কুঁচিয়া দেখতে অনেকটা সাপের মতো। এটি ইল প্রজাতির মাছ। এই কুঁচিয়া বিভিন্ন রোগের প্রতিকারের জন্য অনেকে খেয়ে থাকেন। জানা গেছে, নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত কুঁচিয়া ধরার উপযুক্ত সময়। একজন শিকারি সপ্তাহে তিন/চার কেজি কুঁচিয়া ধরে থাকেন। কাউয়াদিঘি হাওর এলাকায় গেলে দেখা হয় রাজনগর উপজেলার ঢেউরবন্দ গ্রামের কুঁচিয়া শিকারি সুধাংশু নমসুদ্রের সঙ্গে। তিনি বলেন, বোরো ধান তোলা শেষ হয়েছে। এখন কোনো কাজ নেই। বেকার সময় চলছে। তাই ছয়জনের সংসার চালাতে কুঁচিয়া শিকার করি। পাশের হবিগঞ্জ জেলার পাইকাররা বাড়ি থেকে প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় কিনে নিয়ে যায়। সপ্তাহে তিন থেকে চার কেজি ধরতে পারি। কাঁধে বাঁশের তৈরি ফলই (স্থানীয় ভাষায় উকা) নিয়ে ঘর হতে বেড় হচ্ছেন কাউয়াদিঘি হাওরপাড়ের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের দুর্গাচরণ নমসুদ্র। তিনি বলেন, আটজনের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। দিনমজুরির কাজ নেই, এখন কুঁচিয়া শিকারই ভরসা। দুর্গাচরণ বলেন, ফলইয়ের ভেতরে ছোট সরু বাঁশের কাঠিতে কেঁচোর টোপ লাগিয়ে খাল ও ডোবাতে রাখলেই কুঁচিয়া ধরা পড়ে। দুই থেকে তিন কেজি কুঁচিয়া ধরলে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা বিক্রি করতে পারি। বাড়ি থেকে পাইকাররা নিয়ে যায়।
হাওরপাড়ের জাহিদপুর গ্রামের কুচিয়া শিকারি সৌরভ নমসুদ্র বলেন, কুঁচিয়া ধরার ফাঁদ উকা/ফলই কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার থেকে সংগ্রহ করে আনা হয়। প্রতিটি ফলই ১০ থেকে ১৫ টাকা মূল্যে কিনতে হয়। একসঙ্গে শতাধিক ফলই পাতানো হয়। সব ফলইয়ে কুঁচিয়া ধরা পড়ে না। চার/পাঁচদিনে তিন থেকে চার কেজি সংগ্রহ করা যায়। সরাসরি বিক্রি করতে না পারায় আমরা লোকসানে আছি। মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা আমাদের কাছ থেকে কমমূল্যে কিনে তারা চড়া দামে বিক্রি করে। সুধাংশু, দুর্গাচরণ, সৌরভের মতো হাওরপাড়ের আব্দুল্লাহপুর, জাহিদপুর, কাশিমপুরের নমসুদ্র সম্প্রদায়ের অর্ধশত পরিবারের সংসার চলে কুঁচিয়া বিক্রি করে। বিষয়টি নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য অফিসার মুহম্মদ মিজানুর রহমান বলেন বলেন, কুঁচিয়া ধরতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বাংলাদেশ থেকে চীন ও কোরিয়াতেও প্রচুর কুঁচিয়া রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের হাতে কোনো প্রজেক্ট নেই। যদি প্রজেক্ট আসে তাহলে আমরা কুঁচিয়া চাষ করবো। মৌলভীবাজারে কুঁচিয়া চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কুঁচিয়া রপ্তানিতে দেশ লাভবান হবে।