ঢাকা ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তীব্র হচ্ছে গ্যাস সংকট =========

ঢাকায় দিনের বেলা জ্বলছে না চুলা

  • আপডেট সময় : ০৫:০৩:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৭৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

বিশেষ সংবাদদাতা: প্রায় প্রতি বছরই শীতকালে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গ্যাসের সংকট দেখা যায়। এবারও শুরু হয়েছে তীব্র সংকট। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় দিনের প্রথমাংশ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চুলায় গ্যাসের চাপ এতটাই কম যে, চুলা জ¦লে তো জ¦লে না। তাতে রান্না করা যাচ্ছে না।

এরই মাঝে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) রি-গ্যাসিফিকেশনের দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি চার দিনের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে গ্যাসের ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সারা দেশে ২ হাজার ৭৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল থেকে এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে ৮৩১ মিলিয়ন ঘনফুট এবং দেশীয় খনি থেকে ১ হাজার ৯৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সংকট রয়েছে ১৬৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুটি টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে সামিটের সক্ষমতা ৫০০ এবং এক্সিলারেট এনার্জির সক্ষমতা ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে বর্তমানে প্রতিদিন দুটি টার্মিনাল থেকে সর্বোচ্চ ৮৫০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বুধবার (১ জানুয়ারি) থেকে এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি মেরামত কাজের জন্য চার দিন বন্ধ থাকবে। এতে প্রতিদিন গ্যাসের সরবরাহ আরও ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমতে পারে। অর্থাৎ অপর টার্মিনাল সামিট যদি সর্বোচ্চ পরিমাণ সরবরাহ করে তাতেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।

চলতি বছর শীতের শুরু থেকে সারা দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় দিনের বেলা চুলা জ্বলছে না। এর বাইরে শীত মৌসুমের কারণে গ্যাস সংকট থাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়েছে। যদিও শীতে গৃহস্থালির বিদ্যুৎ চাহিদা কম থাকায় এতে বড় কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।

মোহাম্মদপুর বাবর রোডের গৃহিণী রেখা সানা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এবার শীতকাল আসার আগে থেকেই বাসায় গ্যাসের সংকট শুরু হয়েছে। সকাল থেকে বেলা ৩-৪টা পর্যন্ত চুলায় গ্যাসের যে চাপ থাকে, চুলা জ্বলে টিমটিম করে। তাতে রান্না করা যায় না। চায়ের পানি গরম করতেও ঘণ্টা পার হয়ে যায়। ৪টার পর যাও আসে, তাতে কোনোরকমে রান্না করতে হয়। সন্ধ্যার দিকে আবার চাপ কমে যায়। রাত বাড়লে গ্যাস পাওয়া যায়। তবে রান্নার প্রয়োজন সকালে, তাই রাতে গ্যাস থাকলে তাতে আমাদের অন্যান্য কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। প্রায়ই সকালের নাস্তা বাইরে থেকে আনতে হয়। অতিরিক্ত খরচ পড়ে যাচ্ছে; খুব কষ্ট হচ্ছে গ্যাসের সংকটে। আমাদের পাঁচতলা ভবনে সব বাসায় গ্যাসের একই পরিস্থিতি।’

অভিন্ন অভিযোগ রামপুরার উলনের বাসিন্দা কাজী মিলির। তিনি বলেন, ‘আগে সকালে রান্না করে সব গুছিয়ে অফিসে যেতাম। এখন গ্যাস থাকে না। বাধ্য হয়ে বাইরে নাস্তা করে নিই। দুপুরের রান্নাটা এলপিজির চুলায় সেরে বের হই। এতে ব্যয় যেমন বেড়েছে, ভোগান্তিও বেড়েছে। এর মধ্যে যদি নতুন করে গ্যাসের ঘাটতি বাড়ে তাহলে চলবো কীভাবে, তা-ই ভাবছি।’

পুরান ঢাকার বাসিন্দা আবিদুর রহমান বলেন, শীত এলে সকালের নাস্তা হোটেল থেকে এনে খাই। গ্যাস দেরি করে আসায় দুপুরের খাবার বিকালে খাই। শুনেছি, বুধবার থেকে নাকি গ্যাসের সরবরাহ আরও কমবে। সেটা হলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছাবে। এমন অভিযোগ মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বছিলা, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ীসহ আরও অনেক এলাকার বাসিন্দাদের।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান জানান, ‘টার্মিনাল মেরামত করা একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। প্রতিবছর একবার করে এটার সংস্কার প্রয়োজন হয়। ৭২ ঘণ্টা মেরামত কাজ চলবে। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ে টার্মিনাল থেকে এলএনজি পাওয়া যাবে।’

এদিকে পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, গত বছর ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গড়ে প্রতিদিন গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি। সে তুলনায় এখন প্রতিদিন গড়ে ২৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় কম গ্যাস সরবরাহ করায় এই জনভোগান্তি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দাভোসে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

তীব্র হচ্ছে গ্যাস সংকট =========

ঢাকায় দিনের বেলা জ্বলছে না চুলা

আপডেট সময় : ০৫:০৩:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

বিশেষ সংবাদদাতা: প্রায় প্রতি বছরই শীতকালে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গ্যাসের সংকট দেখা যায়। এবারও শুরু হয়েছে তীব্র সংকট। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় দিনের প্রথমাংশ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চুলায় গ্যাসের চাপ এতটাই কম যে, চুলা জ¦লে তো জ¦লে না। তাতে রান্না করা যাচ্ছে না।

এরই মাঝে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) রি-গ্যাসিফিকেশনের দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি চার দিনের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে গ্যাসের ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সারা দেশে ২ হাজার ৭৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল থেকে এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে ৮৩১ মিলিয়ন ঘনফুট এবং দেশীয় খনি থেকে ১ হাজার ৯৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সংকট রয়েছে ১৬৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুটি টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে সামিটের সক্ষমতা ৫০০ এবং এক্সিলারেট এনার্জির সক্ষমতা ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে বর্তমানে প্রতিদিন দুটি টার্মিনাল থেকে সর্বোচ্চ ৮৫০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বুধবার (১ জানুয়ারি) থেকে এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি মেরামত কাজের জন্য চার দিন বন্ধ থাকবে। এতে প্রতিদিন গ্যাসের সরবরাহ আরও ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমতে পারে। অর্থাৎ অপর টার্মিনাল সামিট যদি সর্বোচ্চ পরিমাণ সরবরাহ করে তাতেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।

চলতি বছর শীতের শুরু থেকে সারা দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় দিনের বেলা চুলা জ্বলছে না। এর বাইরে শীত মৌসুমের কারণে গ্যাস সংকট থাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়েছে। যদিও শীতে গৃহস্থালির বিদ্যুৎ চাহিদা কম থাকায় এতে বড় কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।

মোহাম্মদপুর বাবর রোডের গৃহিণী রেখা সানা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এবার শীতকাল আসার আগে থেকেই বাসায় গ্যাসের সংকট শুরু হয়েছে। সকাল থেকে বেলা ৩-৪টা পর্যন্ত চুলায় গ্যাসের যে চাপ থাকে, চুলা জ্বলে টিমটিম করে। তাতে রান্না করা যায় না। চায়ের পানি গরম করতেও ঘণ্টা পার হয়ে যায়। ৪টার পর যাও আসে, তাতে কোনোরকমে রান্না করতে হয়। সন্ধ্যার দিকে আবার চাপ কমে যায়। রাত বাড়লে গ্যাস পাওয়া যায়। তবে রান্নার প্রয়োজন সকালে, তাই রাতে গ্যাস থাকলে তাতে আমাদের অন্যান্য কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। প্রায়ই সকালের নাস্তা বাইরে থেকে আনতে হয়। অতিরিক্ত খরচ পড়ে যাচ্ছে; খুব কষ্ট হচ্ছে গ্যাসের সংকটে। আমাদের পাঁচতলা ভবনে সব বাসায় গ্যাসের একই পরিস্থিতি।’

অভিন্ন অভিযোগ রামপুরার উলনের বাসিন্দা কাজী মিলির। তিনি বলেন, ‘আগে সকালে রান্না করে সব গুছিয়ে অফিসে যেতাম। এখন গ্যাস থাকে না। বাধ্য হয়ে বাইরে নাস্তা করে নিই। দুপুরের রান্নাটা এলপিজির চুলায় সেরে বের হই। এতে ব্যয় যেমন বেড়েছে, ভোগান্তিও বেড়েছে। এর মধ্যে যদি নতুন করে গ্যাসের ঘাটতি বাড়ে তাহলে চলবো কীভাবে, তা-ই ভাবছি।’

পুরান ঢাকার বাসিন্দা আবিদুর রহমান বলেন, শীত এলে সকালের নাস্তা হোটেল থেকে এনে খাই। গ্যাস দেরি করে আসায় দুপুরের খাবার বিকালে খাই। শুনেছি, বুধবার থেকে নাকি গ্যাসের সরবরাহ আরও কমবে। সেটা হলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছাবে। এমন অভিযোগ মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বছিলা, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ীসহ আরও অনেক এলাকার বাসিন্দাদের।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান জানান, ‘টার্মিনাল মেরামত করা একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। প্রতিবছর একবার করে এটার সংস্কার প্রয়োজন হয়। ৭২ ঘণ্টা মেরামত কাজ চলবে। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ে টার্মিনাল থেকে এলএনজি পাওয়া যাবে।’

এদিকে পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, গত বছর ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গড়ে প্রতিদিন গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি। সে তুলনায় এখন প্রতিদিন গড়ে ২৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় কম গ্যাস সরবরাহ করায় এই জনভোগান্তি।