ঢাকা ১০:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে আফগান নারীদের সংগ্রাম

  • আপডেট সময় : ০৪:৩৩:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: সম্প্রতি এক নতুন ডকুমেন্টারি ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে আফগান নারীদের তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদ ও সংগ্রামের কাহিনি তুলে ধরা হয়। আফগানিস্তানে ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর সেখানে নারীদের জীবন একেবারে বদলে যায়। নতুন সরকারের অধীন নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঝাঁজ আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়। তারা এখন মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের অধিকাংশের কাজের সুযোগ বন্ধ, এমনকি পার্ক বা জিম ব্যবহারের অনুমতি নেই। বিউটি সেলুনগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং নারীদের কণ্ঠও আর জনসমক্ষে শোনা যায় না। তালেবান দাবি করছে, নতুন আইন ইসলামি শরিয়া আইনের অধীন এবং এটি আফগান সমাজে গ্রহণযোগ্য।
‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ ডকুমেন্টারিটি আফগান নারীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া নিষেধাজ্ঞা ও তাদের সংগ্রামকে তুলে ধরে। এতে নারীদের প্রতিবাদের পরিণতি হিসেবে গ্রেপ্তার, কারাবন্দি, এমনকি গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনাও দেখা যায়।
ডকুমেন্টারিতে আফগানিস্তানের তরুণ ডেন্টিস্ট ডা. মোহাম্মাদি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তালেবান ডাক্তারদের কোনো সমস্যা করেনি। তবে তারা সাইনবোর্ড থেকে আমার নাম সরাতে বলেছেন। ৎতিনি জানান, তার বাগদান শেষ করার কয়েক সপ্তাহ পর তালেবানরা কাবুল দখল করে। কিন্তু তিনি তার কর্মস্থল ছাড়েননি। বরং, তিনি সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে সাইনবোর্ডে আবার নিজের নাম সবার সামনে লেখেন। শীঘ্রই তার ডেন্টাল প্র্যাকটিসটি এক গোপন কেন্দ্র হয়ে ওঠে, যেখানে নারীকর্মীরা নিজেদের কাজ করতে পারেন। কারণ তালেবানের নিষেধাজ্ঞায় নারীরা এখন মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারছে না।
জেনিফার লরেন্স এই ডকুমেন্টারিতে অভিনয় করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, কাবুলে নজর রাখা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ তালেবান চায় না যে আমরা তাদের দৃষ্টিতে আড়াল করা কিছু দেখি। ডকুমেন্টারিতে আরো দেখা যায়, নারীদের প্রতিবাদ তাদের জীবনের জন্য বিপদজনক—এমনকি তাদের গ্রেপ্তার, কারাবন্দি বা গুমও হতেও দেখা যায়।
ওই ডকুমেন্টারিটি পরিচালনা করেছেন আফগান নির্মাতা সাহরা মানি, যিনি এর আগে ২০১৮ সালে আফগান নারীদের ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ‘এ থাউজ্যান্ড গার্লস লাইক মি’ নামক ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিলেন।
সাহরা মানি বলেন, আমি আফগানিস্তানের সীমান্তে সময় কাটিয়েছি, যেন আমি আমার দলের কাছে থাকতে পারি এবং উপকরণ সংগ্রহ করতে পারি। আমরা একটি দল তৈরি করেছি, যারা আমাদের প্রধান চরিত্রদের ক্যামেরা ব্যবহার এবং নিরাপদ উপায়ে ভিডিও ধারণ করা শিখিয়েছে, যেন তালেবান তাদের মোবাইলফোন হাতিয়ে বিষয়টি জানতে না পারে।
ডকুমেন্টারির এক্সিকিউটিভ প্রযোজক মালালা ইউসুফজাই। তিনি জানান, এটি আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার একটি শক্তিশালী উপায়। তারা তালেবানদের প্রতিরোধ করার জন্য যা কিছু করতে পারে, করছে। তিনিও তালেবানের গুলিতে আহত হয়েছিলেন।
বিবিসিকে মালালা বলেন, তালেবানদের বিরোধিতা করতে হবে। নারীদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, আফগান নারীদের পরিস্থিতি ডকুমেন্টারি তৈরির পর আরো কঠিন হয়ে উঠেছে, কারণ তালেবান সম্প্রতি নতুন একটি নির্দেশ জারি করেছে, মহিলাদের কণ্ঠ জনসমক্ষে শোনা যাবে না; এমনকি তারা বাড়িতে গান গাইতে বা উচ্চস্বরে কিছু পড়তে পারবে না। নারীদের বাধ্য করা হচ্ছে মুখ ঢেকে চলাচল করতে।
ডকুমেন্টারির এক দৃশ্যে এক নারী চিৎকার করে বলেন, তুমি স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিলে, আমাকে এখনই মেরে ফেলো। এর মাধ্যমে আফগান নারীদের মানসিক অবস্থার চিত্র ফুটে ওঠে; যারা নিজ দেশের সিস্টেমের মাধ্যমে অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছেন।
এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, আফগান নারীরা মানসিকভাবে আত্মহত্যার চিন্তায় ভুগছেন।
ডকুমেন্টারির শেষের দিকে এক দৃশ্যে দেখা যায়, একজন নারী আরেক কিশোরীকে ইংরেজি পড়াচ্ছেন। দেশে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করার পরও তারা আশাবাদী। তারা বিশ্বাস করেন, কিছুই বদলায়নি এবং তাদের সংগ্রাম একদিন অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে।
ব্রেড অ্যান্ড রোজেসের মূল বার্তা হলো এক প্রতিবাদী নারীর কথা। ইতিহাস মনে রাখুক, এক সময় আফগানিস্তানে নারীদের বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুরতা সহ্য করা হয়েছিল। এই ডকুমেন্টারি শুধু আফগান নারীদের সংগ্রামের গল্প নয়; এটি পৃথিবীজুড়ে নারীদের শক্তির প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবে।
ডকুমেন্টারিতে স্পষ্ট করে দেখায়, আফগান নারীরা সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের কণ্ঠ সারা বিশ্বে শোনাতে হবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে আফগান নারীদের সংগ্রাম

আপডেট সময় : ০৪:৩৩:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

নারী ও শিশু ডেস্ক: সম্প্রতি এক নতুন ডকুমেন্টারি ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে আফগান নারীদের তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদ ও সংগ্রামের কাহিনি তুলে ধরা হয়। আফগানিস্তানে ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর সেখানে নারীদের জীবন একেবারে বদলে যায়। নতুন সরকারের অধীন নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঝাঁজ আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়। তারা এখন মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের অধিকাংশের কাজের সুযোগ বন্ধ, এমনকি পার্ক বা জিম ব্যবহারের অনুমতি নেই। বিউটি সেলুনগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং নারীদের কণ্ঠও আর জনসমক্ষে শোনা যায় না। তালেবান দাবি করছে, নতুন আইন ইসলামি শরিয়া আইনের অধীন এবং এটি আফগান সমাজে গ্রহণযোগ্য।
‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ ডকুমেন্টারিটি আফগান নারীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া নিষেধাজ্ঞা ও তাদের সংগ্রামকে তুলে ধরে। এতে নারীদের প্রতিবাদের পরিণতি হিসেবে গ্রেপ্তার, কারাবন্দি, এমনকি গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনাও দেখা যায়।
ডকুমেন্টারিতে আফগানিস্তানের তরুণ ডেন্টিস্ট ডা. মোহাম্মাদি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তালেবান ডাক্তারদের কোনো সমস্যা করেনি। তবে তারা সাইনবোর্ড থেকে আমার নাম সরাতে বলেছেন। ৎতিনি জানান, তার বাগদান শেষ করার কয়েক সপ্তাহ পর তালেবানরা কাবুল দখল করে। কিন্তু তিনি তার কর্মস্থল ছাড়েননি। বরং, তিনি সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে সাইনবোর্ডে আবার নিজের নাম সবার সামনে লেখেন। শীঘ্রই তার ডেন্টাল প্র্যাকটিসটি এক গোপন কেন্দ্র হয়ে ওঠে, যেখানে নারীকর্মীরা নিজেদের কাজ করতে পারেন। কারণ তালেবানের নিষেধাজ্ঞায় নারীরা এখন মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারছে না।
জেনিফার লরেন্স এই ডকুমেন্টারিতে অভিনয় করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, কাবুলে নজর রাখা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ তালেবান চায় না যে আমরা তাদের দৃষ্টিতে আড়াল করা কিছু দেখি। ডকুমেন্টারিতে আরো দেখা যায়, নারীদের প্রতিবাদ তাদের জীবনের জন্য বিপদজনক—এমনকি তাদের গ্রেপ্তার, কারাবন্দি বা গুমও হতেও দেখা যায়।
ওই ডকুমেন্টারিটি পরিচালনা করেছেন আফগান নির্মাতা সাহরা মানি, যিনি এর আগে ২০১৮ সালে আফগান নারীদের ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ‘এ থাউজ্যান্ড গার্লস লাইক মি’ নামক ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিলেন।
সাহরা মানি বলেন, আমি আফগানিস্তানের সীমান্তে সময় কাটিয়েছি, যেন আমি আমার দলের কাছে থাকতে পারি এবং উপকরণ সংগ্রহ করতে পারি। আমরা একটি দল তৈরি করেছি, যারা আমাদের প্রধান চরিত্রদের ক্যামেরা ব্যবহার এবং নিরাপদ উপায়ে ভিডিও ধারণ করা শিখিয়েছে, যেন তালেবান তাদের মোবাইলফোন হাতিয়ে বিষয়টি জানতে না পারে।
ডকুমেন্টারির এক্সিকিউটিভ প্রযোজক মালালা ইউসুফজাই। তিনি জানান, এটি আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার একটি শক্তিশালী উপায়। তারা তালেবানদের প্রতিরোধ করার জন্য যা কিছু করতে পারে, করছে। তিনিও তালেবানের গুলিতে আহত হয়েছিলেন।
বিবিসিকে মালালা বলেন, তালেবানদের বিরোধিতা করতে হবে। নারীদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, আফগান নারীদের পরিস্থিতি ডকুমেন্টারি তৈরির পর আরো কঠিন হয়ে উঠেছে, কারণ তালেবান সম্প্রতি নতুন একটি নির্দেশ জারি করেছে, মহিলাদের কণ্ঠ জনসমক্ষে শোনা যাবে না; এমনকি তারা বাড়িতে গান গাইতে বা উচ্চস্বরে কিছু পড়তে পারবে না। নারীদের বাধ্য করা হচ্ছে মুখ ঢেকে চলাচল করতে।
ডকুমেন্টারির এক দৃশ্যে এক নারী চিৎকার করে বলেন, তুমি স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিলে, আমাকে এখনই মেরে ফেলো। এর মাধ্যমে আফগান নারীদের মানসিক অবস্থার চিত্র ফুটে ওঠে; যারা নিজ দেশের সিস্টেমের মাধ্যমে অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছেন।
এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, আফগান নারীরা মানসিকভাবে আত্মহত্যার চিন্তায় ভুগছেন।
ডকুমেন্টারির শেষের দিকে এক দৃশ্যে দেখা যায়, একজন নারী আরেক কিশোরীকে ইংরেজি পড়াচ্ছেন। দেশে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করার পরও তারা আশাবাদী। তারা বিশ্বাস করেন, কিছুই বদলায়নি এবং তাদের সংগ্রাম একদিন অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে।
ব্রেড অ্যান্ড রোজেসের মূল বার্তা হলো এক প্রতিবাদী নারীর কথা। ইতিহাস মনে রাখুক, এক সময় আফগানিস্তানে নারীদের বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুরতা সহ্য করা হয়েছিল। এই ডকুমেন্টারি শুধু আফগান নারীদের সংগ্রামের গল্প নয়; এটি পৃথিবীজুড়ে নারীদের শক্তির প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবে।
ডকুমেন্টারিতে স্পষ্ট করে দেখায়, আফগান নারীরা সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের কণ্ঠ সারা বিশ্বে শোনাতে হবে।