ঢাকা ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

ঢাবি শিক্ষার্থী ছাত্রদলের সাম্য হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার ৩ জন

  • আপডেট সময় : ০৫:১১:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • ১৩১ বার পড়া হয়েছে

ছাত্রদলের নিহত নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার তিনজনকেই ‘বহিরাগত’ বলছে পুলিশ। যারা কিছুদিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসে ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করে বলে পুলিশে ভাষ্য।

বুধবার (১৪ মে) সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ এক বার্তায় জানিয়েছে, সাম্য হত্যার ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানিয়েছেন, নিহত সাম্যর মেজ ভাই শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ওই মামলায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গ্রেফতার তিনজন হলেন- মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)।

ওসি মনসুর বলেন, এদের মধ্যে দুইজন ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে এমন তথ্য দিয়েছে সাম্যর বন্ধু। ওই বন্ধুই তাদের সনাক্ত করেছেন। এদিকে এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর তৌফিক হাসান।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত ১১টার ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাম্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়তেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। তার বন্ধুরা জানিয়েছেন, ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত সাম্য এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।

সাম্যকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাফি ও তার আরেক বন্ধু আবাবিল আহমেদ বিশাল বলেন, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এসময় অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের উরুতে আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই মোটরসাইকেলের আরোহী। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে তার মৃত্যু হয়।

তারা ঢাকায় আসেন ২০ দিন আগে: মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌফিক হাসান জানিয়েছেন গ্রেফতার তিনজন ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে কিছুদিন আগে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করেছে। তিনি বলেন, প্রায় ২০দিন আগে ওই মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তারা মাদক সেবনের জন্য সে জায়গায় গিয়েছিল। ঘটনার সময় দুইজন আহত হয়ে শেরে বাংলা নগর থানা এলাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানান এসআই তৌফিক হাসান।

সাম্য হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার তিনজন কিছুদিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসে ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করে বলে জানায় পুলিশ -ছবি সংগৃহীত

পুলিশের রিমান্ড আবেদন: সাম্য হত্যা মামলায় গ্রেফতার তামিম, পলাশ ও মল্লিককে ১০ দিনের চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ। ঢাকার মহানগর হাকিম জামসেদ আলমের আদালতে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর তৌফিক হাসান বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করে এ রিমান্ড আবেদন করেন।

ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রতিবাদ বিক্ষোভ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা-উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি: এদিকে সাম্য হত্যার ঘটনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এবং প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন ছাত্রদলের নেতারা। বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ছাত্রদল নেতারা এই দাবি জানান। বিক্ষোভ-সমাবেশে ‘দফা এক দাবি এক, ভিসির পদত্যাগ’, ‘আমার ভাইয়ের লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’, ‘নয় মাসে দুই খুন, ভিসি প্রক্টরের অনেক গুণ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে জোহরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ভেতরে শাহরিয়ারের জানাজা হয়। সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাদকে সয়লাব ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেভাবে মাদকসেবীদের আড্ডা বজায় রয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের সামান্যতম পদক্ষেপ তাঁরা লক্ষ করেননি।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে এই প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু তাঁরা মনে করছেন, এই প্রশাসনের দ্বারা হয়তোবা সে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এমনকি শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো স্পষ্ট বিবৃতি বা বক্তব্য তাঁরা পাননি।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাই সাম্যকে হারিয়েছি। কিন্তু ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী যেন আক্রান্ত না হয়।’

রাকিবুল ইসলাম বলেন, পদত্যাগের যে দাবি ছাত্রসমাজের মাঝখান থেকে উঠেছে, আশা করছি, তাঁরা পদত্যাগ করবেন। তাঁরা তাঁদের দাবির পক্ষে রাজপথে থাকবেন। ক্যাম্পাসে তাঁদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

ছাত্রদলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আপনারা দেখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল নামের একজন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন লোককে কীভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। আজকের এই সমাবেশ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গণ-অভুত্থানপরবর্তী সময়ে যে প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েছে, সেই প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’

নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, তাঁরা সাম্যর হত্যাকারীদের গ্রেফতারের ও বিচার দাবি করছেন। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যিনি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, সে জন্য তাঁরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কোনোভাবে এই ঘটনার দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। গণ-অভুত্থানপরবর্তী সময়ে দুটি হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তাঁরা উপাচার্যেরও পদত্যাগ দাবি করছেন।

নাছির আরোবলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলার চরমভাবে অবনতি হচ্ছে। এর আগে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের কর্মী পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং তাঁরা মনে করেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সে জন্য তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, তাঁরা এখন পর্যন্ত সহিষ্ণু আচরণ করে যাচ্ছেন। আজকের এই সমাবেশ থেকে তিনি আবার উচ্চারণ করছেন, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা যদি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না দেখেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দিকেও আঙুল তুলবেন তাঁরা। তিনি উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।

এর আগে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বর, মধুর ক্যানটিন, কলাভবন হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন বড় ভাই সাগর: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার সাম্যের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন তার বড় ভাই আনোয়ারুজ্জামান সাগর।

বুধবার (১৪ মে) বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ছোট ভাইয়ের জানাজার আগে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। বলেন, আর কোনো মেধাবী সন্তান যেন এমন নৃশংসতার শিকার না হন। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাম্যের রাজনৈতিক সহকর্মী এবং সহপাঠীরাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।

আনোয়ারুজ্জামান সাগর বলেন, সাম্য আমার চেয়ে ১৬ বছরের ছোট। সে অষ্টম শ্রেণিতে থাকতে মাকে হারিয়েছি। সেই থেকে তাকে আগলে রেখেছি। কোনো কষ্ট বুঝতে দিইনি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পাঠিয়েছিলাম। কিন্ত এভাবে ভাইকে হারাতে হবে ভাবতেও পারিনি। কী কারণে তার ভাইকে প্রাণ হারাতে হলো তার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে উপাচার্যকে আহ্বান জানান তিনি।

জানাজায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

জানাজা শেষে সাম্যের মরদেহ গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন নিহতের বড় ভাই আনোয়ারুজ্জামান খান।

‘তোমাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি’ বলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের দুঃখ প্রকাশ: দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে সবসময় সামনের সারিতে থাকতেন বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সাম্যকে নিরাপত্তা দিতে না পারায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

বুধবার (১৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে সাম্যকে নিয়ে একটি পোস্ট দেন আসিফ মাহমুদ। ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লেখেন, ‘২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্পাসে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিংবা শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে আমাদের সাথে যেসব মুখ সবসময় দেখা যেত, সাম্য তাদের একজন। মশিউর আমিন শুভ আর শাহরিয়ার আলম সৌম্য- এই দুজন সবসময় একসাথে আসত। প্রথমবর্ষ থেকেই সাম্য ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অসম্ভব ভদ্র একজন ছেলে। সেই ছোট ভাই সাম্য আজ আর আমাদের মাঝে নেই- এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর।
এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে শুধু ব্যক্তি নয়, উদ্যান কেন্দ্রিক অপরাধচক্র, মাদক চক্র এবং উদ্যানের অনিরাপদ পরিবেশও এ ঘটনার জন্য সমানভাবে দায়ী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হওয়ার কথা ছিল স্বস্তির জায়গা, অথচ অবৈধ দোকান, মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধচক্রের কারণে এটি দীর্ঘদিন যাবত আতঙ্কের স্থানে পরিণত হয়েছে।

ইতোমধ্যে ঢাবি প্রশাসন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী খুব শিগগিরই উদ্যানকে একটি নিরাপদ স্থানে পরিণত করা হবে। আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নিরাপদ একটি জায়গা হিসেবে গড়ে তুলব। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

আমরা দুঃখিত সাম্য, তোমাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি। তবে আর কারো সাথে যেন এমন কিছু না ঘটে তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।’

ভিসি ও প্রক্টরের ওপর দায় চাপানো স্রেফ অপচেষ্টা: সারজিস: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। সাম্য হত্যার বিচার দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও। এ ঘটনার দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরকে চাপানো স্রেফ অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। বুধবার সকালে ফেসবুক স্ট্যাটাসে সারজিস তার ক্যাম্পাস অভিজ্ঞতা থেকে বিস্তারিত জানিয়ে একটি পোস্ট দেন।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঢাবি শিক্ষার্থী ছাত্রদলের সাম্য হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার ৩ জন

আপডেট সময় : ০৫:১১:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার তিনজনকেই ‘বহিরাগত’ বলছে পুলিশ। যারা কিছুদিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসে ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করে বলে পুলিশে ভাষ্য।

বুধবার (১৪ মে) সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ এক বার্তায় জানিয়েছে, সাম্য হত্যার ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানিয়েছেন, নিহত সাম্যর মেজ ভাই শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ওই মামলায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গ্রেফতার তিনজন হলেন- মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)।

ওসি মনসুর বলেন, এদের মধ্যে দুইজন ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে এমন তথ্য দিয়েছে সাম্যর বন্ধু। ওই বন্ধুই তাদের সনাক্ত করেছেন। এদিকে এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর তৌফিক হাসান।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত ১১টার ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাম্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়তেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। তার বন্ধুরা জানিয়েছেন, ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত সাম্য এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।

সাম্যকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাফি ও তার আরেক বন্ধু আবাবিল আহমেদ বিশাল বলেন, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এসময় অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের উরুতে আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই মোটরসাইকেলের আরোহী। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে তার মৃত্যু হয়।

তারা ঢাকায় আসেন ২০ দিন আগে: মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌফিক হাসান জানিয়েছেন গ্রেফতার তিনজন ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে কিছুদিন আগে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করেছে। তিনি বলেন, প্রায় ২০দিন আগে ওই মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তারা মাদক সেবনের জন্য সে জায়গায় গিয়েছিল। ঘটনার সময় দুইজন আহত হয়ে শেরে বাংলা নগর থানা এলাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানান এসআই তৌফিক হাসান।

সাম্য হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার তিনজন কিছুদিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসে ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে গেঞ্জির ব্যবসা শুরু করে বলে জানায় পুলিশ -ছবি সংগৃহীত

পুলিশের রিমান্ড আবেদন: সাম্য হত্যা মামলায় গ্রেফতার তামিম, পলাশ ও মল্লিককে ১০ দিনের চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ। ঢাকার মহানগর হাকিম জামসেদ আলমের আদালতে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর তৌফিক হাসান বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করে এ রিমান্ড আবেদন করেন।

ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রতিবাদ বিক্ষোভ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা-উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি: এদিকে সাম্য হত্যার ঘটনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এবং প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন ছাত্রদলের নেতারা। বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ছাত্রদল নেতারা এই দাবি জানান। বিক্ষোভ-সমাবেশে ‘দফা এক দাবি এক, ভিসির পদত্যাগ’, ‘আমার ভাইয়ের লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’, ‘নয় মাসে দুই খুন, ভিসি প্রক্টরের অনেক গুণ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে জোহরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ভেতরে শাহরিয়ারের জানাজা হয়। সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাদকে সয়লাব ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেভাবে মাদকসেবীদের আড্ডা বজায় রয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের সামান্যতম পদক্ষেপ তাঁরা লক্ষ করেননি।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে এই প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু তাঁরা মনে করছেন, এই প্রশাসনের দ্বারা হয়তোবা সে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এমনকি শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো স্পষ্ট বিবৃতি বা বক্তব্য তাঁরা পাননি।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাই সাম্যকে হারিয়েছি। কিন্তু ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী যেন আক্রান্ত না হয়।’

রাকিবুল ইসলাম বলেন, পদত্যাগের যে দাবি ছাত্রসমাজের মাঝখান থেকে উঠেছে, আশা করছি, তাঁরা পদত্যাগ করবেন। তাঁরা তাঁদের দাবির পক্ষে রাজপথে থাকবেন। ক্যাম্পাসে তাঁদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

ছাত্রদলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আপনারা দেখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল নামের একজন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন লোককে কীভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। আজকের এই সমাবেশ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গণ-অভুত্থানপরবর্তী সময়ে যে প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েছে, সেই প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’

নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, তাঁরা সাম্যর হত্যাকারীদের গ্রেফতারের ও বিচার দাবি করছেন। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যিনি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, সে জন্য তাঁরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কোনোভাবে এই ঘটনার দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। গণ-অভুত্থানপরবর্তী সময়ে দুটি হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তাঁরা উপাচার্যেরও পদত্যাগ দাবি করছেন।

নাছির আরোবলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলার চরমভাবে অবনতি হচ্ছে। এর আগে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের কর্মী পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং তাঁরা মনে করেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সে জন্য তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, তাঁরা এখন পর্যন্ত সহিষ্ণু আচরণ করে যাচ্ছেন। আজকের এই সমাবেশ থেকে তিনি আবার উচ্চারণ করছেন, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা যদি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না দেখেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দিকেও আঙুল তুলবেন তাঁরা। তিনি উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।

এর আগে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বর, মধুর ক্যানটিন, কলাভবন হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন বড় ভাই সাগর: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার সাম্যের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন তার বড় ভাই আনোয়ারুজ্জামান সাগর।

বুধবার (১৪ মে) বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ছোট ভাইয়ের জানাজার আগে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। বলেন, আর কোনো মেধাবী সন্তান যেন এমন নৃশংসতার শিকার না হন। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাম্যের রাজনৈতিক সহকর্মী এবং সহপাঠীরাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।

আনোয়ারুজ্জামান সাগর বলেন, সাম্য আমার চেয়ে ১৬ বছরের ছোট। সে অষ্টম শ্রেণিতে থাকতে মাকে হারিয়েছি। সেই থেকে তাকে আগলে রেখেছি। কোনো কষ্ট বুঝতে দিইনি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পাঠিয়েছিলাম। কিন্ত এভাবে ভাইকে হারাতে হবে ভাবতেও পারিনি। কী কারণে তার ভাইকে প্রাণ হারাতে হলো তার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে উপাচার্যকে আহ্বান জানান তিনি।

জানাজায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

জানাজা শেষে সাম্যের মরদেহ গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন নিহতের বড় ভাই আনোয়ারুজ্জামান খান।

‘তোমাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি’ বলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের দুঃখ প্রকাশ: দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে সবসময় সামনের সারিতে থাকতেন বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সাম্যকে নিরাপত্তা দিতে না পারায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

বুধবার (১৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে সাম্যকে নিয়ে একটি পোস্ট দেন আসিফ মাহমুদ। ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লেখেন, ‘২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্পাসে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিংবা শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে আমাদের সাথে যেসব মুখ সবসময় দেখা যেত, সাম্য তাদের একজন। মশিউর আমিন শুভ আর শাহরিয়ার আলম সৌম্য- এই দুজন সবসময় একসাথে আসত। প্রথমবর্ষ থেকেই সাম্য ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অসম্ভব ভদ্র একজন ছেলে। সেই ছোট ভাই সাম্য আজ আর আমাদের মাঝে নেই- এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর।
এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে শুধু ব্যক্তি নয়, উদ্যান কেন্দ্রিক অপরাধচক্র, মাদক চক্র এবং উদ্যানের অনিরাপদ পরিবেশও এ ঘটনার জন্য সমানভাবে দায়ী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হওয়ার কথা ছিল স্বস্তির জায়গা, অথচ অবৈধ দোকান, মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধচক্রের কারণে এটি দীর্ঘদিন যাবত আতঙ্কের স্থানে পরিণত হয়েছে।

ইতোমধ্যে ঢাবি প্রশাসন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী খুব শিগগিরই উদ্যানকে একটি নিরাপদ স্থানে পরিণত করা হবে। আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নিরাপদ একটি জায়গা হিসেবে গড়ে তুলব। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

আমরা দুঃখিত সাম্য, তোমাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি। তবে আর কারো সাথে যেন এমন কিছু না ঘটে তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।’

ভিসি ও প্রক্টরের ওপর দায় চাপানো স্রেফ অপচেষ্টা: সারজিস: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। সাম্য হত্যার বিচার দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও। এ ঘটনার দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরকে চাপানো স্রেফ অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। বুধবার সকালে ফেসবুক স্ট্যাটাসে সারজিস তার ক্যাম্পাস অভিজ্ঞতা থেকে বিস্তারিত জানিয়ে একটি পোস্ট দেন।