ঢাকা ১০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা-বেইজিং ২১টি দলিল সই এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করতে ৭ প্রকল্প ঘোষণা

  • আপডেট সময় : ০২:৪০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪
  • ৪১ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বিকালে চীনের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপলে’ তাদের এ বৈঠক হয় বলে বাসস জানিয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারপ্রধানের চীন সফরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হল। রাতেই চীন থেকে দেশের পথে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।
শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে সকালে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধি দল কয়েকটি সমঝোতা স্মারকসহ (এমওইউ) ২১টি দলিলে সই করে।
অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে এসব দলিল সই হয়েছে। চীনা প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাণিজ্য ও উন্নয়নে সহযোগিতার মত বিষয়গুলো। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সফরের দুই সপ্তাহ পর চীনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সোমবার বিকালে দ্বিপক্ষীয় সফরে বেইজিং পৌঁছান শেখ হাসিনা। চীনে এটি তার চতুর্থ সফর; এর আগে ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে দেশটিতে সফর করেন তিনি। এবার বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্য নিয়ে চীনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
এদিন সাং-গ্রি-লা সার্কেলে বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। চায়নিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) চতুর্দশ জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিংয়ের সঙ্গেও শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।
গত মঙ্গলবার বিকালে ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআনমেন স্কয়ারে চীনের বিপ্লবী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। রাতে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন। বুধবার সকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক ও দলিল সই করেন। বিকালে প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাতে দেশের পথে রওনা হন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।
ঢাকা-বেইজিং ২১টি দলিল সই এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করতে ৭টি প্রকল্প ঘোষণা: বাংলাদেশ ও চীন উভয় দেশ বিদ্যমান ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ থেকে ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত হতে ২১টি দলিল সই করেছে। এর মধ্যে ২টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নবায়ন এবং আরও ৭টি প্রকল্পের ঘোষণা রয়েছে। বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের উপস্থিতিতে দলিলগুলো সই হয়।

এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে এখানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য গ্রেট হল অব দ্য পিপলে পৌঁছালে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপল প্রাঙ্গণে পৌঁছালে চীনের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানান। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় মূলত রোহিঙ্গা ইস্যু, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের প্রধানমন্ত্রী নথি বিনিময় প্রত্যক্ষ করেন। দলিলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এবং চায়না মিডিয়া গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ও সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার মধ্যে একটি চুক্তিতে সই হয়েছে। অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে চুক্তি সই হয়।
যেসব বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক: ১. ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই। ২. চায়না ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রেগুলেটরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএফআরএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে ব্যাংকিং ও বিমা নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই। ৩. বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত (ফাইটোস্যানিটারি) উপকরণ বিষয়ে একটি প্রটোকল সই করে দুই দেশ। ৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। ৫. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ৬. বাংলাদেশে প্রকল্পে চায়না-এইড ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ বিষয়ে আলোচনার একটি সাইনিং অব মিনিটস (কার্যবিবরণী) সই হয়। ৭. চীনের সহায়তায় ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু সংস্কার প্রকল্পের চিঠি বিনিময় হয়। ৮. নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা পার্ক প্রকল্পে চায়না-এইড কনস্ট্রাকশনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বিষয়ে চিঠি বিনিময় হয়। ৯. চীনের সহায়তায় নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্প বিষয়ে চিঠি বিনিময় হয়। ১০. চিকিৎসাসেবা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সহযোগিতা শক্তিশালী করতে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ১১. অবকাঠামোগত সহযোগিতা জোরদারে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ১২. গ্রিন অ্যান্ড লো-কার্বন উন্নয়নে সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ। ১৩. বন্যার মৌসুমে ইয়ালুজাংবু (ব্রহ্মপুত্র) নদের হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য বাংলাদেশকে দেওয়ার বিধিবিষয়ক সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়। ১৪. চীনের জাতীয় বেতার ও টেলিভিশন প্রশাসন এবং বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ১৫. চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এতে সই করেন। ১৬. চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) ও বিটিভির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ১৭. সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি ও বিটিভির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই। ১৮. চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের মধ্যেও একটি স্মারক সই হয়। ১৯. অপর আরেকটি দলিল সই করে সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা ও বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। ২০. একটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২১. টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
৭টি ঘোষণাপত্র: ১. চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সমাপ্তি ঘোষণা। ২. চীন-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি ত্বরান্বিতকরণ নিয়ে আলোচনা শুরুর ঘোষণা। ৩. ডিজিটাল কানেকটিভিটি প্রকল্পের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণের সমাপ্তির ঘোষণা। ৪. ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পের সঙ্গে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের ট্রায়াল রান সমাপ্তির ঘোষণা। ৫. রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালুর ঘোষণা। ৬. শানদং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই। ৭. বাংলাদেশে লুবান ওয়ার্কশপ নির্মাণের ঘোষণা।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা-বেইজিং ২১টি দলিল সই এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করতে ৭ প্রকল্প ঘোষণা

আপডেট সময় : ০২:৪০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বিকালে চীনের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপলে’ তাদের এ বৈঠক হয় বলে বাসস জানিয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারপ্রধানের চীন সফরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হল। রাতেই চীন থেকে দেশের পথে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।
শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে সকালে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধি দল কয়েকটি সমঝোতা স্মারকসহ (এমওইউ) ২১টি দলিলে সই করে।
অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে এসব দলিল সই হয়েছে। চীনা প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাণিজ্য ও উন্নয়নে সহযোগিতার মত বিষয়গুলো। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সফরের দুই সপ্তাহ পর চীনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সোমবার বিকালে দ্বিপক্ষীয় সফরে বেইজিং পৌঁছান শেখ হাসিনা। চীনে এটি তার চতুর্থ সফর; এর আগে ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে দেশটিতে সফর করেন তিনি। এবার বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্য নিয়ে চীনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
এদিন সাং-গ্রি-লা সার্কেলে বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। চায়নিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) চতুর্দশ জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিংয়ের সঙ্গেও শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়।
গত মঙ্গলবার বিকালে ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআনমেন স্কয়ারে চীনের বিপ্লবী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। রাতে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন। বুধবার সকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলসহ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক ও দলিল সই করেন। বিকালে প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাতে দেশের পথে রওনা হন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।
ঢাকা-বেইজিং ২১টি দলিল সই এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করতে ৭টি প্রকল্প ঘোষণা: বাংলাদেশ ও চীন উভয় দেশ বিদ্যমান ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ থেকে ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত হতে ২১টি দলিল সই করেছে। এর মধ্যে ২টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নবায়ন এবং আরও ৭টি প্রকল্পের ঘোষণা রয়েছে। বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের উপস্থিতিতে দলিলগুলো সই হয়।

এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে এখানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য গ্রেট হল অব দ্য পিপলে পৌঁছালে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপল প্রাঙ্গণে পৌঁছালে চীনের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানান। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় মূলত রোহিঙ্গা ইস্যু, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের প্রধানমন্ত্রী নথি বিনিময় প্রত্যক্ষ করেন। দলিলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এবং চায়না মিডিয়া গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ও সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার মধ্যে একটি চুক্তিতে সই হয়েছে। অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে চুক্তি সই হয়।
যেসব বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক: ১. ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই। ২. চায়না ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রেগুলেটরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএফআরএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে ব্যাংকিং ও বিমা নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই। ৩. বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত (ফাইটোস্যানিটারি) উপকরণ বিষয়ে একটি প্রটোকল সই করে দুই দেশ। ৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। ৫. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ৬. বাংলাদেশে প্রকল্পে চায়না-এইড ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ বিষয়ে আলোচনার একটি সাইনিং অব মিনিটস (কার্যবিবরণী) সই হয়। ৭. চীনের সহায়তায় ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু সংস্কার প্রকল্পের চিঠি বিনিময় হয়। ৮. নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা পার্ক প্রকল্পে চায়না-এইড কনস্ট্রাকশনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বিষয়ে চিঠি বিনিময় হয়। ৯. চীনের সহায়তায় নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্প বিষয়ে চিঠি বিনিময় হয়। ১০. চিকিৎসাসেবা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সহযোগিতা শক্তিশালী করতে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ১১. অবকাঠামোগত সহযোগিতা জোরদারে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ১২. গ্রিন অ্যান্ড লো-কার্বন উন্নয়নে সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ। ১৩. বন্যার মৌসুমে ইয়ালুজাংবু (ব্রহ্মপুত্র) নদের হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য বাংলাদেশকে দেওয়ার বিধিবিষয়ক সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়। ১৪. চীনের জাতীয় বেতার ও টেলিভিশন প্রশাসন এবং বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ১৫. চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এতে সই করেন। ১৬. চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) ও বিটিভির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ১৭. সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি ও বিটিভির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই। ১৮. চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের মধ্যেও একটি স্মারক সই হয়। ১৯. অপর আরেকটি দলিল সই করে সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা ও বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। ২০. একটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২১. টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
৭টি ঘোষণাপত্র: ১. চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সমাপ্তি ঘোষণা। ২. চীন-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি ত্বরান্বিতকরণ নিয়ে আলোচনা শুরুর ঘোষণা। ৩. ডিজিটাল কানেকটিভিটি প্রকল্পের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণের সমাপ্তির ঘোষণা। ৪. ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পের সঙ্গে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের ট্রায়াল রান সমাপ্তির ঘোষণা। ৫. রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালুর ঘোষণা। ৬. শানদং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই। ৭. বাংলাদেশে লুবান ওয়ার্কশপ নির্মাণের ঘোষণা।