নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনী ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদেরও দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, যাঁরা কর্মজীবনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন, তাঁদের দিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন বাহিনীর ট্রাফিক শাখায় কর্মরত অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, যাঁদের বয়স অনূর্ধ্ব ৫০ বছর, তাঁদের ফিরিয়ে আনা হবে। এ তালিকায় রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ অধিদপ্তর, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও ভিডিপি, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী। তালিকা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিএমপিকে। গত ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির চতুর্থ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কমিটির আহ্বায়ক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অবসরপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অস্থায়ীভাবে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীতে যানবাহন চলাচলে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। অনেক জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে না। কোথাও কোথাও সন্ধ্যার পর পুলিশের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। ফলে ওই সব এলাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে। যানজট নিরসনের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে অন্তর্র্বতী সরকার ৭০০ শিক্ষার্থীকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের যুক্ত করা হচ্ছে।
এদিকে গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ভুয়া, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধে তিন সদস্যদের কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারকে রাখা হয়েছে। এই কমিটি নিজ নিজ জেলায় ভুয়া, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা বাছাই করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এক মামলায় অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ কমিটি সেটিও পর্যালোচনা করবে। যদিও আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত ১৯ নভেম্বর জানিয়েছেন, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়ের হওয়া প্রায় সব ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসত্য ও ভিত্তিহীন অডিও, ভিডিও অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণে পাল্টা ভাষ্য (কাউন্টার ন্যারেটিভ) তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ। পাল্টা ভাষ্য তৈরি করে প্রতিটি সরকারি দপ্তর তাদের মুখপাত্রের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে দফায় দফায় জুবায়েরপন্থী ও সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের সঙ্গে বৈঠক করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জুবায়ের অনুসারীরা বলছেন, টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদকে আসতে দেওয়া হবে না। অন্যদিকে মাওলানা সাদকে ঢাকায় আনার বিষয়ে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁর অনুসারীরা। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের অনুসারীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিবদমান সমস্যার সমাধান খুঁজছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গাজীপুরের টঙ্গীতে অন্যবারের মতো এবারও বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে হবে। এর মধ্যে প্রথম পর্ব হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময় ইজতেমায় অংশ নেবেন জুবায়ের অনুসারীরা। দ্বিতীয় পর্ব হবে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, সেখানে থাকবেন সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্ত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির চতুর্থ সভায় তাদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জামিনে মুক্ত পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নজরদারিতে রাখতে হবে। তাঁরা পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হলে দ্রুত গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত হয় ওই সভায়। কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর ৪৩ মামলার আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্ত হয়েছেন। জামিনে মুক্ত হওয়া এই ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন পুলিশের খাতায় ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন।