নিজস্ব প্রতিবেদক : বৃষ্টিপাতে রাজধানীসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সৃষ্ট ‘জলাবন্ধতা’ সরকারের মেগা উন্নয়নের ফল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার মতিঝিলে নয়া দিগন্তের কার্যালয়ে দৈনিকটির ১৮তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা।
ফখরুল বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে অনেক কষ্ট করে এসেছি। উত্তরার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ডিএমপি কমিশনার এই সড়কটা ব্যবহার না করার সার্কুলার দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এই রাস্তাটি আর চলাচলের উপযোগী নয়। বেশ কিছুদিন ধরে আমি এই রাস্তাটার কথা বলে আসছি।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই যে মেগা প্রজেক্ট, মেগা উন্নয়ন তার জন্যই আজকে এই অবস্থা। কথাটা এ জন্য বললাম যে, আজকে এই জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছে সরকারের মেগা উন্নয়নের কারণেই।’ উত্তরার বাসায় কিভাবে যাবেন তা নিয়ে দুচিন্তার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি জানি না আমি এখন ফিরব কী করে। ধরে নিচ্ছি বিকল্প কোনো রাস্তা বের করে ফিরতে হবে।’
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একটা নষ্ট সময়, একটা ভয়ংকর সময় অতিক্রম করছি। আমার কাছে আজকে বিস্ময় মনে হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা সরাসরি জড়িত ছিলাম।’ ফখরুলের প্রশ্ন, ‘তখন কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য, ভোটের অধিকার কেড়ে নেবে বলে, তার কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য, সাংবাদিকদের লেখার অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য?’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে একাত্তরের চেতনাকে সরকার বাস্তবায়িত করেছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে তারা স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়িত করেছে। আজকে আবার একইভাবে তারা এই স্বাধীনতার কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধে কথা বলে তারা মানুষের অধিকারগুলোকে পুরোপুরিভাবে কেড়ে নিচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘এই সময়টা আমাদের অত্যন্ত ধৈর্য্যের সঙ্গে, অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে অতিক্রম করতে হবে এবং আমাদের জয়লাভ করতে হবে। ১৯৭১ সালে যে আশা, যে স্বপ্ন, যে আকাংখা আমরা দেখিছিলাম, সেটাকে বাস্তবায়িত করার জন্য আজকে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে যে, যারা আমাদের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে দিচ্ছে, যারা আমাদের সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করব। যদি আমরা জনগণের ম্যান্ডেটে বিজয় অর্জন করতে পারি, সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করে আমরা সেই অগণতান্ত্রিক, জনগনবিরোধী যে সমস্ত বিষয় সংযোজন করা হয়েছে, সেগুলোকে আমরা বাতিল করে জনগণের জন্য যেটা প্রয়োজন, ৭২ সালে যেটা করা হয়েছিল তার আশেপাশে নিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা যুগোপযোগী একটা সংবিধান আমরা নিয়ে আসার চেষ্টা করব।’
সাংবাদিকদের প্রতি আহবান রেখে ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, বাংলাদেশকে যেন আমরা সত্যিকার অর্থেই একটা অত্যন্ত প্রগতিশীল জনপদ হিসেবে তৈরি করতে পারি। আমরা যেন বাংলাদেশে মুক্ত চিন্তার যে অবস্থা সেই অবস্থা সৃষ্টি করতে পারি, আমরা যেন বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটা সাম্য, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মূল্যবোধের কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করতে পারি, সে জন্য আপনারা অতীতে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অব্যাহত রাখবেন। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়াবেন, এই বিশ্বাস আমার আছে।’
অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইকতেদার আহমেদ, ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম, নয়া দিগন্তের ব্যারিস্টার শিব্বির মাহমুদ, আলমগীর মহিউদ্দিন, সালাউদ্দিন বাবর, মাসুম খলিলী, বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিই্উজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।