ঢাকা ০১:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ঝুঁকিতে শিশু ও গর্ভবতী নারীরা

  • আপডেট সময় : ০৯:৫৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তন শিশুদের সুখী, সুস্থ ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে আরো কমিয়ে দিচ্ছে। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী বন্যায় স্কুল ও স্বাস্থ্য ক্লিনিক ধ্বংস হয়ে যায়। যখন খরা হয়, তখন শিশুরা স্কুলে কম সময় কাটায় কারণ তাদের পানি সংগ্রহের জন্য মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়। ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং বিষাক্ত বায়ু দূষণ শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।
ইউনিসেফ বলছে, মায়ানমার, ফিলিপাইন, পাপুয়া নিউ গিনি এবং ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়াতে বসবাসকারী শিশু এবং তরুণরা পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অঞ্চলের শিশুরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সুরক্ষার চরম হুমকিতে রয়েছে।
২০২১ সালের ২০ আগস্টে প্রকাশিত ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, মারাত্মক রোগের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম, চীন, লাওস, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডও রয়েছে।
ফ্রাইডেস ফর ফিউচার-এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হওয়া যুব-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট আন্দোলনের তৃতীয় বার্ষিকীর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বে প্রায় ২২০ কোটি শিশু রয়েছে যার মধ্যে ১০০ কোটি শিশু এমন ৩৩ টি দেশে বাস করে যে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই শিশুরা পানি ও স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো অপর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলির কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে। জলবায়ু পরিবর্তন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই পরিসংখ্যানও পরিবর্তিত হবে।
হার্ভার্ড টিএইচ-এর জলবায়ু, স্বাস্থ্য এবং বৈশ্বিক পরিবেশের কেন্দ্রের অন্তর্র্বতীকালীন পরিচালক, চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ (হার্ভার্ড চ্যান সি-চেঞ্জ), বোস্টন চিলড্রেনস হাসপাতালের একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের শিশুরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অ্যারন বার্নস্টেইন। তিনি জলবায়ু সংকটে শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব নিয়ে গবেষণা এবং বিশ্বজুড়ে শিশুদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতির জন্য এর কারণগুলিকে মোকাবেলা করার সমাধান নিয়ে গবেষণা করেছেন।
অ্যারন বার্নস্টাইন প্রায় ২৫ বছর আগে যখন একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু করেন, তখনও তার মনে হয়নি জলবায়ু সংকট শিশুদের জন্য এমন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে। পেশা জীবন যতই অতিবাহিত হতে লাগলো ততই তিনি দেখতে পেলেন তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে প্রতি বছর হাসপাতালে শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু সঙ্কট কারো কারো ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যারও কারণ ঘটাচ্ছে।

বার্নস্টাইন বলেন, সেসময় বলতে গেলে কেউই জলবায়ু পরিবর্তনকে স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে মনে করেনি। বিষয়টি আগে খেয়াল না করার জন্য নিজেকেই এখন বোকা মনে হচ্ছে। সময়মতো বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে হয়তো এখন এতো জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন হালনাগাদ তথ্য নিয়ে একটি গবেষণার বিস্তৃত পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর প্রভাব, বায়ু দূষণ ও মারাত্মক আবহাওয়ার মতো বিষয়গুলো, পানির নি¤œ মান, চরম তাপ শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ও ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি তৈরি করেছে। এই জার্নালকে সব মেডিক্যাল জার্নালের ‘পবিত্র আধার’ বলে থাকেন বার্নস্টাইন।
গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক কলাম্বিয়া সেন্টার ফর চিলড্রেনস এনভায়রনমেন্ট হেলথের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ফ্রেডেরিকা পেরেরা বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পৃথিবীর অধিক নির্ভরতা এবং শিশু স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাবের যোগসূত্র দেখানো ওই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল না। শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার উপায়গুলোও তুলে ধরাও এর লক্ষ্য ছিল। তিনি বলেন, কীভাবে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলা করা যায় আমরা তা জানি। আমরা জানি কীভাবে কার্বন গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনা যায়। আমরা এখনই ব্যবস্থা নিতে পারি এবং এটাই ছিল নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
বন্যার পাশাপাশি বায়ু দূষণসহ বেশ কয়েকটি চরম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঘটনার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে গবেষণা নিবন্ধে। গবেষকদের মতে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে মারাত্মক হলো উচ্চ তাপমাত্রা।
আমেরিকান পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেইলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের কলম্বিয়া সেন্টার ফর চিলড্রেনস এনভায়রনমেন্টাল হেলথের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেডেরিকা পেরেরা বলেন, প্রাপ্ত বয়স্করা উচ্চ তাপমাত্রায় নিজেদের সামলাতে পারেন। কিন্তু বাচ্চারা তা পারে না, তাদের ভুগতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা কয়েক দশক ধরেই বলে আসছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শিশু এবং গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর তালিকায় রয়েছে। তাদের হিট স্ট্রোকের মতো তাপজনিত সমস্যার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পেরেরা বলেন, শিশুদের যখন পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ করা দরকার তখনও তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া অভিভাবকরা এমনিতেই তাদের ঠা-া বা শীতল জায়গায় রাখেন। সে কারণেও বাচ্চারা তাপে কাবু হয়ে পড়ে। আমরা অতিরিক্তি গরমের সময় পার্কিংয়ে রাখা গাড়িতে শিশুদের মারা যাওয়ার মত দুঃখজনক ঘটনাও দেখেছি, যেখানে তার বাবা-মায়েরা বুঝতেই পারেননি সেখানে কতটা গরম। বার্নস্টাইন গত জানুয়ারিতে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালের প্রচ- উত্তাপের কারণে শিশুদের হাসাপাতালে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি যে সময় তাপমাত্রা খুব একটা বেশি থাকে না তখনও এমনটি ঘটে। জলবায়ু সংকটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এখন জন্ম নেওয়া শিশুরা ৬০ বছর আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের তুলনায় ৩৫ গুণ বেশি চরম তাপমাত্রা অনুভব করে। গবেষণায় আরো বলা হয়, তাপ শিশু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায় আমরা তা জানি। গরমের কারণে শিশুদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। এমনকি গর্ভবতী নারীরা তীব্র তাপের সংস্পর্শে এলে তাদের সন্তানের ওপরও প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে দেখা গেছে সেই শিশুরা শিক্ষা বা পরীক্ষায় ভালো করতে পারে না।
পেরেরা বলেন, এই নিবন্ধটি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের আরও সচেতন করবে। সেইসঙ্গে জলবায়ু প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করতে জলবায়ু নীতির পক্ষে বড় ভূমিকা রাখবে এটি। কার্বন গ্যাস নিঃসরণ এবং তাপমাত্রা বাড়ার যে ঊর্ধ্বগতি, তাতে আমাদের হাতে সময় নেই। তবে পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিশু ও পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারি।-

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ঝুঁকিতে শিশু ও গর্ভবতী নারীরা

আপডেট সময় : ০৯:৫৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২

নারী ও শিশু ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তন শিশুদের সুখী, সুস্থ ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে আরো কমিয়ে দিচ্ছে। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী বন্যায় স্কুল ও স্বাস্থ্য ক্লিনিক ধ্বংস হয়ে যায়। যখন খরা হয়, তখন শিশুরা স্কুলে কম সময় কাটায় কারণ তাদের পানি সংগ্রহের জন্য মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়। ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং বিষাক্ত বায়ু দূষণ শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।
ইউনিসেফ বলছে, মায়ানমার, ফিলিপাইন, পাপুয়া নিউ গিনি এবং ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়াতে বসবাসকারী শিশু এবং তরুণরা পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অঞ্চলের শিশুরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সুরক্ষার চরম হুমকিতে রয়েছে।
২০২১ সালের ২০ আগস্টে প্রকাশিত ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, মারাত্মক রোগের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম, চীন, লাওস, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডও রয়েছে।
ফ্রাইডেস ফর ফিউচার-এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হওয়া যুব-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট আন্দোলনের তৃতীয় বার্ষিকীর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বে প্রায় ২২০ কোটি শিশু রয়েছে যার মধ্যে ১০০ কোটি শিশু এমন ৩৩ টি দেশে বাস করে যে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই শিশুরা পানি ও স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো অপর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলির কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে। জলবায়ু পরিবর্তন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই পরিসংখ্যানও পরিবর্তিত হবে।
হার্ভার্ড টিএইচ-এর জলবায়ু, স্বাস্থ্য এবং বৈশ্বিক পরিবেশের কেন্দ্রের অন্তর্র্বতীকালীন পরিচালক, চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ (হার্ভার্ড চ্যান সি-চেঞ্জ), বোস্টন চিলড্রেনস হাসপাতালের একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের শিশুরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অ্যারন বার্নস্টেইন। তিনি জলবায়ু সংকটে শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব নিয়ে গবেষণা এবং বিশ্বজুড়ে শিশুদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতির জন্য এর কারণগুলিকে মোকাবেলা করার সমাধান নিয়ে গবেষণা করেছেন।
অ্যারন বার্নস্টাইন প্রায় ২৫ বছর আগে যখন একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু করেন, তখনও তার মনে হয়নি জলবায়ু সংকট শিশুদের জন্য এমন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে। পেশা জীবন যতই অতিবাহিত হতে লাগলো ততই তিনি দেখতে পেলেন তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে প্রতি বছর হাসপাতালে শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু সঙ্কট কারো কারো ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যারও কারণ ঘটাচ্ছে।

বার্নস্টাইন বলেন, সেসময় বলতে গেলে কেউই জলবায়ু পরিবর্তনকে স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে মনে করেনি। বিষয়টি আগে খেয়াল না করার জন্য নিজেকেই এখন বোকা মনে হচ্ছে। সময়মতো বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে হয়তো এখন এতো জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন হালনাগাদ তথ্য নিয়ে একটি গবেষণার বিস্তৃত পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর প্রভাব, বায়ু দূষণ ও মারাত্মক আবহাওয়ার মতো বিষয়গুলো, পানির নি¤œ মান, চরম তাপ শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ও ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি তৈরি করেছে। এই জার্নালকে সব মেডিক্যাল জার্নালের ‘পবিত্র আধার’ বলে থাকেন বার্নস্টাইন।
গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক কলাম্বিয়া সেন্টার ফর চিলড্রেনস এনভায়রনমেন্ট হেলথের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ফ্রেডেরিকা পেরেরা বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পৃথিবীর অধিক নির্ভরতা এবং শিশু স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাবের যোগসূত্র দেখানো ওই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল না। শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার উপায়গুলোও তুলে ধরাও এর লক্ষ্য ছিল। তিনি বলেন, কীভাবে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলা করা যায় আমরা তা জানি। আমরা জানি কীভাবে কার্বন গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনা যায়। আমরা এখনই ব্যবস্থা নিতে পারি এবং এটাই ছিল নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
বন্যার পাশাপাশি বায়ু দূষণসহ বেশ কয়েকটি চরম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঘটনার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে গবেষণা নিবন্ধে। গবেষকদের মতে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে মারাত্মক হলো উচ্চ তাপমাত্রা।
আমেরিকান পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেইলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের কলম্বিয়া সেন্টার ফর চিলড্রেনস এনভায়রনমেন্টাল হেলথের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেডেরিকা পেরেরা বলেন, প্রাপ্ত বয়স্করা উচ্চ তাপমাত্রায় নিজেদের সামলাতে পারেন। কিন্তু বাচ্চারা তা পারে না, তাদের ভুগতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা কয়েক দশক ধরেই বলে আসছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শিশু এবং গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর তালিকায় রয়েছে। তাদের হিট স্ট্রোকের মতো তাপজনিত সমস্যার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পেরেরা বলেন, শিশুদের যখন পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ করা দরকার তখনও তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া অভিভাবকরা এমনিতেই তাদের ঠা-া বা শীতল জায়গায় রাখেন। সে কারণেও বাচ্চারা তাপে কাবু হয়ে পড়ে। আমরা অতিরিক্তি গরমের সময় পার্কিংয়ে রাখা গাড়িতে শিশুদের মারা যাওয়ার মত দুঃখজনক ঘটনাও দেখেছি, যেখানে তার বাবা-মায়েরা বুঝতেই পারেননি সেখানে কতটা গরম। বার্নস্টাইন গত জানুয়ারিতে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালের প্রচ- উত্তাপের কারণে শিশুদের হাসাপাতালে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি যে সময় তাপমাত্রা খুব একটা বেশি থাকে না তখনও এমনটি ঘটে। জলবায়ু সংকটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এখন জন্ম নেওয়া শিশুরা ৬০ বছর আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের তুলনায় ৩৫ গুণ বেশি চরম তাপমাত্রা অনুভব করে। গবেষণায় আরো বলা হয়, তাপ শিশু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায় আমরা তা জানি। গরমের কারণে শিশুদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। এমনকি গর্ভবতী নারীরা তীব্র তাপের সংস্পর্শে এলে তাদের সন্তানের ওপরও প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে দেখা গেছে সেই শিশুরা শিক্ষা বা পরীক্ষায় ভালো করতে পারে না।
পেরেরা বলেন, এই নিবন্ধটি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের আরও সচেতন করবে। সেইসঙ্গে জলবায়ু প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করতে জলবায়ু নীতির পক্ষে বড় ভূমিকা রাখবে এটি। কার্বন গ্যাস নিঃসরণ এবং তাপমাত্রা বাড়ার যে ঊর্ধ্বগতি, তাতে আমাদের হাতে সময় নেই। তবে পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিশু ও পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারি।-