ঢাকা ০৪:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

ছাত্র রাজনীতির পথ খুলল বুয়েটে, শিক্ষার্থীদের শঙ্কা কাটবে কীভাবে

  • আপডেট সময় : ১০:২২:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪
  • ১৫০ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক: সাড়ে চার বছর আগে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার জেরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে উচ্চ আদালত; তবে যে প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ, সেটির প্রতিকার কীভাবে হবে তা নিয়েও কথা উঠছে। হাই কোর্টের রায় মেনে আবার প্রকৌশল শিক্ষার এ বিদ্যাপীঠে ছাত্র রাজনীতি চালু হলে ক্যাম্পাসে রাজনীতির নামে এর অপব্যবহার বন্ধ এবং শিক্ষার্থী ‘নিপীড়নের’ শেষ দেখতে চান শিক্ষাবিদরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও শঙ্কা বহাল থাকার প্রেক্ষাপটে সাময়িক বিরতির পর ছাত্র রাজনীতির পথ খুললে আবরার হত্যায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত এবং ছাত্র রাজনীতির নামে ‘অবৈধ ও বেআইনি’ আচরণ বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়কে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে দুই ধরনের অবস্থানের মধ্যে সাবেক শিক্ষার্থীরাও এক্ষেত্রে দ্বিধা বিভক্ত। সাবেকদের মধ্যে অনেকে যেমন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি চান, তেমনি অনেকেই রাজনীতির নামে পেশিশক্তির অপতৎপরতা দেখতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন। হঠাৎ করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে আসা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের আন্দোলনের মধ্যে আবার ছাত্র রাজনীতির বিষয়টি সামনে আসে গত কয়েকদিনে। ছাত্র রাজনীতি চালুর দাবিতে ছাত্রলীগ ও সমমনা বুয়েট শিক্ষার্থী এবং এর বিপরীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যে সোমবার হাই কোর্টের আদেশ আসে। এরপর আদালতের রায় মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মনোভাব প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হাল ছাড়ছেন না। তারা চান হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুরুটা কীভাবে: ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। ওই হত্যাকা-ের দুই বছর পর ২৫ আসামীর সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০ জনকে মৃত্যুদ- এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় আদালত। ওই হত্যাকা-ের পর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আনেন শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট প্রশাসন। ওই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। পরে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
এরপর রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এর মধ্যে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ। রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে তারা অবিলম্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালুর অনুমতি দেওয়ার দাবি জানায়। পরে বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতি চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অতীতের নানান আলোচিত-বিতর্কিত কর্মকা- কিংবা শিক্ষার্থীদের দমন নিপীড়ন পুরনো চেহারা পাবে না সেই বির্তকও সামনে আসে। শিক্ষাবিদদের কেউ যেমন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি চালু রেখে অপরাজনীতি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তাগিদ আসে। তেমনি কেউ ছাত্র রাজনীতির নামে অশান্তি ডেকে আনার পক্ষপাতি নন বলে মন্তব্য করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের নামে র‌্যাগ, মারধরসহ ‘অবৈধ ও বেআইনি’ আচরণ চলত আগে।
“যে কারণে এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সেই বেআইনি আচরণগুলো বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কঠোরভাবে মনিটর করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা দলমত নির্বিশেষে।” তিনি বলেন, “আমি মনে করি, ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির উপর যে বাধা সেটা অপসারণ করে দিতে হবে। “আবরার হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে দোষীদের দ্রুত শাস্তি দিতে, এই হল প্রথম কথা। ওই আশঙ্কা দূর করতে। শাস্তি যদি দেয়, একটা বিশ্বাস ফিরে আসবে।” বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেছেন, ছাত্র রাজনীতির নামে শিক্ষার পরিবেশ বিঘœ করার কার্যক্রম ‘মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়’। সব পর্যায়ে মূল্যবোধ সম্পন্ন নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একইভাবে আমরা চাইব, ছাত্রত্ব নেতৃত্বে আসবে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্ররা। যাদের কথা অন্যান্য ছাত্র শুনবে, যাদেরকে অনুসরণ করবে। “একজন অত্যন্ত ভালো ছাত্র কখনও চাইবে না, পরীক্ষা পিছিয়ে যাক, আমাদের গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে যাক, আমাদের দেশ পিছিয়ে যাক। আমরা চাইব, ভালো মানের নেতৃত্ব, পরিষ্কার-স্বচ্ছ। একজন নেতা যদি নিজে সন্ত্রাসী হয়, তার কথা কে শুনবে?”
রাজনীতি নিষিদ্ধের বাধা উঠল বুয়েটে
এবারের আন্দোলনের মুখে হল থেকে সিট হারানো শিক্ষার্থীর রিট আবেদনে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে দিয়েছে হাই কোর্ট। ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়। এর ফলে দেশে প্রকৌশল শিক্ষার শীর্ষ এ বিদ্যাপীঠে ছাত্র রাজনীতি চর্চায় আর কোনো বাধা থাকছে না বলে আইনজীবীরা বলেছেন। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক সমাবেশ ঘটানোর অভিযোগে হল থেকে বহিষ্কৃত ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বী হাই কোর্টে এ রিট আবেদন করেন। তার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ। পরে অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল বলেন, “২০১৯ সালের বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করায় বুয়েটে রাজনীতি করায় আর বাধা থাকল না।” আদালতের রায়ের পর বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, তা অনুসরণ করা হবে। সোমবার নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “কোর্ট যেটা বলবে- আমাদের সেটা মানতে হবে। কোর্টের আদেশ শিরোধার্য। আদালত অবমাননা আমরা করতে পারব না।“ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আপিল করা হবে কি না, পরে এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, “এটি নিয়ে আমরা আমাদের উকিলের সাথে আলোচনা করব। কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী তো আমাদের চলতে হবে। আমরা তো এই কোর্টকে ভায়োলেট করতে পারব না। এজ পার ল আমাদের এগোতে হবে। “প্রথমে এটি আমরা দেখব এরপর আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের সাথে কথা বলব। তার উপদেশ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব। যেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটে আর রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও যেন ক্ষুন্ন না হয়। দুই দিকেই দেখতে হবে।”
দাবিতে ‘অটল’ শিক্ষার্থীরা চান আইনি লড়াই : ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে যে আদেশ হাই কোর্ট দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়তে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। হাই কোর্টের রায়ের বিষয়ে সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার জরুরি বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাই কোর্ট। আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। বিচার বিভাগের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখব, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি না থাকার যে দাবি, তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল।
“যে ছাত্র রাজনীতি র‌্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে, তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনই বয়ে আনেনি, আনবেও না। এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ০৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭ এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।” নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, “বুয়েটে ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের পক্ষে আন্দোলনরত সকল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীরা আজ নিরাপত্তাজনিত তীব্র শঙ্কার কারণে কেউ কোনরূপ সমাগম করেনি। “ক্যাম্পাসের আশপাশের সকল এলাকায় গতকাল রাত থেকে ক্রমাগত মাইকিং, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি ধামকি প্রদান করা, সোশাল মিডিয়ায় নানারকম গুজব, বুয়েট শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘিœত হয়- এমন সকল অপপ্রচার চালানো হয়েছে।”
ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে বুয়েটে আন্দোলন নতুন নয়: ২০০২ সালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে ক্রসফায়ারে পড়ে বুয়েটের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি নিহতের পরও বড় রকমের আন্দোলন সংগঠিত করেছিল শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলনের পরে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ছাত্রদলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি তুলেছিলেন শিক্ষার্থীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংগঠনকে প্রশাসন নিষিদ্ধ না করলেও আন্দোলনের কারণে ছাত্রদল ‘কোনঠাসা’ হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন তখনকার ছাত্র নেতারা। ২০০২ সালের ৮ জুন বুয়েটে দরপত্র নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সনি।
বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ আন্দোলনের পর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বিচারে নি¤œ আদালতে মুকি, টগর ও নুরুল ইসলাম সাগরের মৃত্যুদ-ের রায় হয়। ২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাই কোর্ট তাদের মৃত্যুদ-াদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেয় হাই কোর্ট। মুকি পরে পালিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সাগরও পলাতক রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন টগর। সনি হত্যার পর বুয়েটে আন্দোলনের সংগঠক ইমরান হাবিব রুমন বলেন, “ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন হলেও আন্দোলনের কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল দাঁড়াতেই পারেনি। অন্যদিকে ছাত্রলীগও তেমন সংগঠিত ছিল না। বাম সংগঠনের কার্যক্রম ভালোভাবে কার্যক্রম চালিয়েছে।” বুয়েটের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হয়ে ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে মনে করছেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বুয়েটে আসন বন্টন হল প্রশাসন করার কারণে সেখানে ক্ষমতাসীন সংগঠনের তেমন প্রভাব থাকত না। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা গেল, ছাত্রলীগ হলগুলোকে ‘মিনি ক্যান্টনমেন্টের’ মত বানিয়ে ফেলছে। “হলের রুমের দখল নিচ্ছে, কেউ বিরুদ্ধে গেলে তাকে ডেকে এনে মারধর করছে, নির্যাতন করছে। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করল। এসবের মধ্যে আবরার ফাহাদ হত্যা হল।” ছাত্রলীগের এমন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধেই চলে গেছে বলে মন্তব্য করে ছাত্রফ্রন্টের সাবেক সভাপতি রুমন বলেন, সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধের দাবি তুলতে পারত ওরা। “কিন্তু সব ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও আন্দোলনের মুখে ওই দাবি মেনে নিল।” আবরার হত্যার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তিন মাস অচল ছিল বুয়েট ক্যাম্পাস। মামলার বিচার কার্যক্রমের অগ্রগতি হলে আন্দোলন থেকে সরে আসে শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে সাবেকরাও : বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নিয়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলনের মধ্যে সাবেক শিক্ষার্থীরাও এর পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি চালুর পক্ষের শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাজনীতি চালু রাখতে হবে এবং এর মধ্য দিয়ে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করতে হবে। নিষিদ্ধের পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র রাজনীতি ছাড়াই শিক্ষার্থীরা ‘ভালো আছে’। কোনো যুক্তিতে সেটাকে ফিরিয়ে আনার মানে হয় না। ২০০২ সালে সনি হত্যার আন্দোলন চলার মধ্যে বুয়েট থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন তখনকার ছাত্র নেতা সুব্রত সরকার; হাই কোর্টের রায় নিয়ে পরে শিক্ষাজীবন শেষ করেন ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষের স্থাপত্য বিভাগের এই ছাত্র। ছাত্র রাজনীতি চালু রাখার পক্ষে মত দিয়ে ছাত্রফ্রন্টের এ নেতা বলেন, সব জায়গায় রাজনৈতিক কার্যক্রম চলবে আর বুয়েটে বন্ধ থাকবে তা কোনোভাবে হতে পারে না। এই সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারেরও পরিপন্থি।
“ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হলে সেটা রুখে দিতে হবে। বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, ঐক্যবদ্ধ শক্তির সামনে সন্ত্রাসীরা টিকতে পারবে না।” বুয়েটের সাবেকদের মধ্যে রাজনীতি বিমুখতার ‘প্রবল মনোভাব থাকার কথা তুলে ধরে সুব্রত সরকার বলেন, “তারা মনে করে, ‘না থাক’, ওভারলুক করি। এটা এক ধরনের স্বার্থপরতা যে, আমি পড়াশোনা করব, দেশের-দশের কী হলো- আমার মাথাব্যথা নাই।” বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পক্ষে ফেইসবুকে বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী চমক হাসান লিখেছেন, “আমি বুয়েটের অ্যালামনাইদের একজন হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি বুয়েটে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ থাকা উচিত। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রশিবির- কিছুরই দরকার নাই। কারণ দেখানো খুব সহজ। “দুই কলামের একটা সারণি বানানো হোক। বামপাশে থাকুক ছাত্র রাজনীতির উপস্থিতি বুয়েটে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন উপহার দিয়েছে তার একটা তালিকা। আর ডানপাশে থাকুক ছাত্র রাজনীতির উপস্থিতির কারণে কী কী যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে গেছে ছাত্র-শিক্ষক-প্রশাসন, তার একটা খতিয়ান। ডানপাশে আবরার, সনি এই নামগুলোর কোনো একটার যে ভার, সেটা বামপাশের সম্মিলিত ভারের চেয়েও বহুগুণে বেশি। এরপরও ডান দিকের তালিকায় র‌্যাগিং, অত্যাচার, চাঁদাবাজি, ক্ষমতা প্রদর্শনী, অন্যায় সুবিধাভোগ-এসবের উপাখ্যান পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে যাওয়া যাবে।” চমক হাসান বলেন, “ছাত্র-রাজনীতি কেন চাইবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা? ডিপার্টমেন্টের প্রিয় জুনিয়র আবরারকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, মন থেকে সেই ক্ষত এখনও মুছে যায়নি। চেনা জুনিয়রদের সাথে যত আলাপ হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আবরার-হত্যার ঘটনার পর যখন ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ করার হয়, তার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক শান্তিতে ছিল, আছে। “কোনো যুক্তিতেই আবার ঐ নরক ফিরিয়ে আনার মানে হয় না। ছাত্রলীগ না থাকলে শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে- এটাও মেনে নেওয়ার মতো যুক্তি না। সহজ কথা- ছাত্র রাজনীতি নেই মানে কোনো সংগঠনেরই কার্যক্রম নেই। ছাত্রলীগও না, শিবিরও না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবাইকেই প্রতিহত করবে।”
আলোচনায় ছাত্রশিবির-হিযবুত তাহরীর : ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার সুযোগে বুয়েটে ইসলামী ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম চলার অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগ। আন্দোলনের মধ্যে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটি অংশও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের কার্যক্রম ক্যাম্পাসে চলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে। শিক্ষামন্ত্রীও বুয়েটে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি ও উগ্রবাদী সংগঠনের তৎপরতার বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন। বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদ বলছেন, বুয়েটে শিবির বা হিযবুতের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুললেই নানা ধরনের অপপ্রচার শুরু হয়। এমনকি মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা সোশাল মিডিয়ায় হিজবুত ও শিবির নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও এটাকে বিভ্রান্তিমূলক ও অপপ্রচার বলে চালানোর চেষ্টা করেছে বুয়েটের আন্দোলনকারী নামের শিবির-হিজবুত তাহরীররা। তিনি বলেন, গত ৩০ তারিখে তাদের আন্দোলনে শিবির বা হিযবুত তাহরীরের কর্মকা- সম্পর্কে কোনো রকম আলোচনা ছিল না। সংবাদমাধ্যম থেকে তাদেরকে ফোন করা হলে তারা স্পষ্ট বলেছে যে শিবির এখন তাদের প্রসঙ্গ না, তারা পরে এ নিয়ে কথা বলবে। সংবাদমাধ্যমে সব প্রকাশ পাওয়ার একদিন পর সুর পাল্টে তারা শিবির ও হিযবুতের ব্যাপারে সোচ্চার। “শিবিরের যেই ছেলেরা হাওরে এরেস্ট হয়েছে – তারা আদৌ শিবির কি না, বুয়েটের ছেলেমেয়েরা সেটা জানে না, কারণ আদালতে প্রমাণ হয় নাই। তাদের দাবি মতে। অথচ মিডিয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মোমতাজুল হাসান আবেদ তাদের ছাত্র সংগঠনের কর্মী থাকার কথা স্বীকার করেন। তাহলে বুয়েটের আন্দোলনকারীরা ইচ্ছা করেই শিবিরের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন এটা প্রমাণিত। কারণ, আদালতে কে কোন দল করে, এটা নিয়ে কোন আলোচনার সুযোগ নাই, সবাইকে আসামি বা পার্সন হিসেবে দেখা হয়। এখানেই শিবিরের ধোকাবাজি পরিস্কার।” সম্প্রতি হিযবুত তাহরীরের মেইল আসা এবং ক্যাম্পাসে পোস্টারিংয়ের কথা তুলে ধরে তন্ময় বলেন, “হিযবুতের মেইল আসার পর বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা সেটি মেইল করে ডিএসডব্লিউকে জানিয়েছে মেইলের মাধ্যমে যেটা তারা দাবি করেছে। “কিন্তু তাদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নিয়ে কোনো উদ্বেগ তাদের মাঝে দেখা যায়নি বা তারা কোনো রকম মুভমেন্ট এ যায় নাই-কারণ টার্ম পরীক্ষা শুরু হচ্ছিল বলে। সেই টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাকেই জিম্মি করে, ছাত্রলীগের নেতার ক্যাম্পাসে আসাকে কেন্দ্র করে তারা আন্দোলনে নেমে পড়ে।” এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, “আমি বলব আন্দোলনে যারা এসেছে তারা কেউ সাধারণ ছাত্র নয়। তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত। ঢাবির সাবেক ভিপি নুর যেমন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এসে এখন বিএনপি জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, তেমনেই বুয়েটের এই শিক্ষার্থীরাও মৌলবাদী সংগঠন ও হিযবুত তাহরীর। “ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিও কিন্তু এই বুয়েটের ছাত্রই। তারা কৌশলে ছাত্রলীগের বিরোধী। তারা কিন্তু ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে না, কৌশল করে ছাত্রলীগের বিরোধীতা করছে। যেন ছাত্রলীগ না ঢুকলে মৌলবাদী কার্যক্রম ভালোভাবে করতে পারে। তাদের রাজনৈতির কর্মকা- কিন্তু গোপনে হচ্ছে।”
রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও ছাত্রলীগের অভিযোগগুলোর তদন্ত করার দাবি জানিয়ে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে, ছাত্রলীগ যে অভিযোগটা করছে যে, ওখানে হিযবুত তাহরীর এবং শিবিরের রাজনীতি গোপনে গোপনে হচ্ছে, সেই অভিযোগে ওদের কাছ থেকে নাম চাইতে হবে- কারা। “তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে। যদি রাজনীতি বন্ধ করতে হয়। আর রাজনীতি চালু করলেও তাদের রাজনীতি চালু না করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” রোববার বিকালে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটে হিযবুত তাহরীর কার্যক্রমের বিষয়টিও আসে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীরা বলেন, “বর্তমানে হিজবুত তাহরীর নিয়ে কথা উঠেছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল না, বরং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। এদের কর্মকা- আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে পাই বহিরাগতদের (সিসি ফুটেজ অনুযায়ী) লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে। তাদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট না। “আমাদের ইন্সটিটিউশনাল মেইলে হিজবুত তাহরীর সংক্রান্ত মেইল দেখার পর অনতিবিলম্বে সর্বপ্রথম ডিএসডব্লিউ স্যারকে ভার্চুয়ালি এই মর্মে ইনফর্ম করা হয়, আমাদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই। এ ব্যাপারে ডিএসডব্লিউ স্যারের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ আহ্বান করা হয়। পরবর্তীতে ভিসি স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে স্যার জানান, এ ব্যাপারে বুয়েট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।”
ছাত্র রাজনীতির পক্ষের শিক্ষার্থীরা কী বলছেন : বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক আলম বলেন, “আমরা আজকে খুবই উচ্ছ্বসিত। বলতে গেলে, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, নিজের সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেয়েছি। এটি আমাদেরকে আজকে খুব বেশি খুশি করেছে। “বুয়েটে নিষিদ্ধ কোনো ছাত্র সংগঠনের জায়গা হবে না। আমরা চাই, যারা হিযবুত তাহরির বা শিবিরের মতো সংগঠনে জড়িত, তাদের শনাক্ত করে শাস্তি প্রদান করা হোক।” বুয়েটের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ সকল ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম চালুর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই, সবগুলো প্রগতি ছাত্র সংগঠন বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি শুরু করুক। সবাই যাতে ছাত্রদের অধিকারের জন্য লড়াই করে, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি যাতে দৃষ্টান্ত রাখতে পারে, সেই রকম একটা পরিবেশ চাই আমরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিন আজফার পান্থ বলেন, ২০১৯ সাল থেকে বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির চর্চাটা নাই। দেখা যাচ্ছে, ছাত্রলীগ একটা অপরাধে জড়িয়েছে, তার মানে এই নয় যে, আর কেউ ছাত্রলীগ করতে পারবে না কিংবা ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না। এই জিনিসটা তো অন্যায় হয়ে যায়। “ছাত্র রাজনীতির আড়ালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্রদের কোনঠাসা করে রাখা, বয়কট করা এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই প্রচেষ্টাটা একটা গোষ্ঠীর ইন্ধনে হয়েছে। আবরার হত্যার আবেগকে বার বার ব্যবহার করা হয়েছে। ছাত্র রাজনীতির জন্য এর আগে সনি ও দ্বীপ নামে আরও দুজন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের মুখে কিন্তু তাদের নাম শুনতে পাই না। “ছাত্র রাজনীতির কিছু খারাপ বা নেতিবাচক দিক আছে, সেটি আমরা স্বীকার করি। তবে গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে স্মার্ট রাজনীতি করার সুযোগ বুয়েটে আছে।”

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ছাত্র রাজনীতির পথ খুলল বুয়েটে, শিক্ষার্থীদের শঙ্কা কাটবে কীভাবে

আপডেট সময় : ১০:২২:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক: সাড়ে চার বছর আগে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার জেরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে উচ্চ আদালত; তবে যে প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ, সেটির প্রতিকার কীভাবে হবে তা নিয়েও কথা উঠছে। হাই কোর্টের রায় মেনে আবার প্রকৌশল শিক্ষার এ বিদ্যাপীঠে ছাত্র রাজনীতি চালু হলে ক্যাম্পাসে রাজনীতির নামে এর অপব্যবহার বন্ধ এবং শিক্ষার্থী ‘নিপীড়নের’ শেষ দেখতে চান শিক্ষাবিদরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও শঙ্কা বহাল থাকার প্রেক্ষাপটে সাময়িক বিরতির পর ছাত্র রাজনীতির পথ খুললে আবরার হত্যায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত এবং ছাত্র রাজনীতির নামে ‘অবৈধ ও বেআইনি’ আচরণ বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়কে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে দুই ধরনের অবস্থানের মধ্যে সাবেক শিক্ষার্থীরাও এক্ষেত্রে দ্বিধা বিভক্ত। সাবেকদের মধ্যে অনেকে যেমন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি চান, তেমনি অনেকেই রাজনীতির নামে পেশিশক্তির অপতৎপরতা দেখতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন। হঠাৎ করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে আসা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের আন্দোলনের মধ্যে আবার ছাত্র রাজনীতির বিষয়টি সামনে আসে গত কয়েকদিনে। ছাত্র রাজনীতি চালুর দাবিতে ছাত্রলীগ ও সমমনা বুয়েট শিক্ষার্থী এবং এর বিপরীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যে সোমবার হাই কোর্টের আদেশ আসে। এরপর আদালতের রায় মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মনোভাব প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হাল ছাড়ছেন না। তারা চান হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুরুটা কীভাবে: ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। ওই হত্যাকা-ের দুই বছর পর ২৫ আসামীর সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০ জনকে মৃত্যুদ- এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় আদালত। ওই হত্যাকা-ের পর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আনেন শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট প্রশাসন। ওই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। পরে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
এরপর রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এর মধ্যে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ। রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে তারা অবিলম্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালুর অনুমতি দেওয়ার দাবি জানায়। পরে বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতি চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অতীতের নানান আলোচিত-বিতর্কিত কর্মকা- কিংবা শিক্ষার্থীদের দমন নিপীড়ন পুরনো চেহারা পাবে না সেই বির্তকও সামনে আসে। শিক্ষাবিদদের কেউ যেমন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি চালু রেখে অপরাজনীতি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তাগিদ আসে। তেমনি কেউ ছাত্র রাজনীতির নামে অশান্তি ডেকে আনার পক্ষপাতি নন বলে মন্তব্য করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের নামে র‌্যাগ, মারধরসহ ‘অবৈধ ও বেআইনি’ আচরণ চলত আগে।
“যে কারণে এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সেই বেআইনি আচরণগুলো বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কঠোরভাবে মনিটর করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা দলমত নির্বিশেষে।” তিনি বলেন, “আমি মনে করি, ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির উপর যে বাধা সেটা অপসারণ করে দিতে হবে। “আবরার হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে দোষীদের দ্রুত শাস্তি দিতে, এই হল প্রথম কথা। ওই আশঙ্কা দূর করতে। শাস্তি যদি দেয়, একটা বিশ্বাস ফিরে আসবে।” বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেছেন, ছাত্র রাজনীতির নামে শিক্ষার পরিবেশ বিঘœ করার কার্যক্রম ‘মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়’। সব পর্যায়ে মূল্যবোধ সম্পন্ন নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একইভাবে আমরা চাইব, ছাত্রত্ব নেতৃত্বে আসবে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্ররা। যাদের কথা অন্যান্য ছাত্র শুনবে, যাদেরকে অনুসরণ করবে। “একজন অত্যন্ত ভালো ছাত্র কখনও চাইবে না, পরীক্ষা পিছিয়ে যাক, আমাদের গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে যাক, আমাদের দেশ পিছিয়ে যাক। আমরা চাইব, ভালো মানের নেতৃত্ব, পরিষ্কার-স্বচ্ছ। একজন নেতা যদি নিজে সন্ত্রাসী হয়, তার কথা কে শুনবে?”
রাজনীতি নিষিদ্ধের বাধা উঠল বুয়েটে
এবারের আন্দোলনের মুখে হল থেকে সিট হারানো শিক্ষার্থীর রিট আবেদনে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে দিয়েছে হাই কোর্ট। ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়। এর ফলে দেশে প্রকৌশল শিক্ষার শীর্ষ এ বিদ্যাপীঠে ছাত্র রাজনীতি চর্চায় আর কোনো বাধা থাকছে না বলে আইনজীবীরা বলেছেন। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক সমাবেশ ঘটানোর অভিযোগে হল থেকে বহিষ্কৃত ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বী হাই কোর্টে এ রিট আবেদন করেন। তার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ। পরে অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল বলেন, “২০১৯ সালের বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করায় বুয়েটে রাজনীতি করায় আর বাধা থাকল না।” আদালতের রায়ের পর বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, তা অনুসরণ করা হবে। সোমবার নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “কোর্ট যেটা বলবে- আমাদের সেটা মানতে হবে। কোর্টের আদেশ শিরোধার্য। আদালত অবমাননা আমরা করতে পারব না।“ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আপিল করা হবে কি না, পরে এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, “এটি নিয়ে আমরা আমাদের উকিলের সাথে আলোচনা করব। কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী তো আমাদের চলতে হবে। আমরা তো এই কোর্টকে ভায়োলেট করতে পারব না। এজ পার ল আমাদের এগোতে হবে। “প্রথমে এটি আমরা দেখব এরপর আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজারের সাথে কথা বলব। তার উপদেশ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব। যেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটে আর রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও যেন ক্ষুন্ন না হয়। দুই দিকেই দেখতে হবে।”
দাবিতে ‘অটল’ শিক্ষার্থীরা চান আইনি লড়াই : ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে যে আদেশ হাই কোর্ট দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়তে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। হাই কোর্টের রায়ের বিষয়ে সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার জরুরি বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাই কোর্ট। আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। বিচার বিভাগের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখব, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি না থাকার যে দাবি, তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল।
“যে ছাত্র রাজনীতি র‌্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে, তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনই বয়ে আনেনি, আনবেও না। এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ০৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭ এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।” নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, “বুয়েটে ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের পক্ষে আন্দোলনরত সকল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীরা আজ নিরাপত্তাজনিত তীব্র শঙ্কার কারণে কেউ কোনরূপ সমাগম করেনি। “ক্যাম্পাসের আশপাশের সকল এলাকায় গতকাল রাত থেকে ক্রমাগত মাইকিং, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি ধামকি প্রদান করা, সোশাল মিডিয়ায় নানারকম গুজব, বুয়েট শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘিœত হয়- এমন সকল অপপ্রচার চালানো হয়েছে।”
ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে বুয়েটে আন্দোলন নতুন নয়: ২০০২ সালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে ক্রসফায়ারে পড়ে বুয়েটের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি নিহতের পরও বড় রকমের আন্দোলন সংগঠিত করেছিল শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলনের পরে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ছাত্রদলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি তুলেছিলেন শিক্ষার্থীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংগঠনকে প্রশাসন নিষিদ্ধ না করলেও আন্দোলনের কারণে ছাত্রদল ‘কোনঠাসা’ হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন তখনকার ছাত্র নেতারা। ২০০২ সালের ৮ জুন বুয়েটে দরপত্র নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সনি।
বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ আন্দোলনের পর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বিচারে নি¤œ আদালতে মুকি, টগর ও নুরুল ইসলাম সাগরের মৃত্যুদ-ের রায় হয়। ২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাই কোর্ট তাদের মৃত্যুদ-াদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেয় হাই কোর্ট। মুকি পরে পালিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সাগরও পলাতক রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন টগর। সনি হত্যার পর বুয়েটে আন্দোলনের সংগঠক ইমরান হাবিব রুমন বলেন, “ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন হলেও আন্দোলনের কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল দাঁড়াতেই পারেনি। অন্যদিকে ছাত্রলীগও তেমন সংগঠিত ছিল না। বাম সংগঠনের কার্যক্রম ভালোভাবে কার্যক্রম চালিয়েছে।” বুয়েটের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হয়ে ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে মনে করছেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বুয়েটে আসন বন্টন হল প্রশাসন করার কারণে সেখানে ক্ষমতাসীন সংগঠনের তেমন প্রভাব থাকত না। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা গেল, ছাত্রলীগ হলগুলোকে ‘মিনি ক্যান্টনমেন্টের’ মত বানিয়ে ফেলছে। “হলের রুমের দখল নিচ্ছে, কেউ বিরুদ্ধে গেলে তাকে ডেকে এনে মারধর করছে, নির্যাতন করছে। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করল। এসবের মধ্যে আবরার ফাহাদ হত্যা হল।” ছাত্রলীগের এমন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধেই চলে গেছে বলে মন্তব্য করে ছাত্রফ্রন্টের সাবেক সভাপতি রুমন বলেন, সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধের দাবি তুলতে পারত ওরা। “কিন্তু সব ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও আন্দোলনের মুখে ওই দাবি মেনে নিল।” আবরার হত্যার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তিন মাস অচল ছিল বুয়েট ক্যাম্পাস। মামলার বিচার কার্যক্রমের অগ্রগতি হলে আন্দোলন থেকে সরে আসে শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে সাবেকরাও : বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নিয়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলনের মধ্যে সাবেক শিক্ষার্থীরাও এর পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি চালুর পক্ষের শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাজনীতি চালু রাখতে হবে এবং এর মধ্য দিয়ে রাজনীতির নামে সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করতে হবে। নিষিদ্ধের পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র রাজনীতি ছাড়াই শিক্ষার্থীরা ‘ভালো আছে’। কোনো যুক্তিতে সেটাকে ফিরিয়ে আনার মানে হয় না। ২০০২ সালে সনি হত্যার আন্দোলন চলার মধ্যে বুয়েট থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন তখনকার ছাত্র নেতা সুব্রত সরকার; হাই কোর্টের রায় নিয়ে পরে শিক্ষাজীবন শেষ করেন ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষের স্থাপত্য বিভাগের এই ছাত্র। ছাত্র রাজনীতি চালু রাখার পক্ষে মত দিয়ে ছাত্রফ্রন্টের এ নেতা বলেন, সব জায়গায় রাজনৈতিক কার্যক্রম চলবে আর বুয়েটে বন্ধ থাকবে তা কোনোভাবে হতে পারে না। এই সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারেরও পরিপন্থি।
“ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হলে সেটা রুখে দিতে হবে। বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, ঐক্যবদ্ধ শক্তির সামনে সন্ত্রাসীরা টিকতে পারবে না।” বুয়েটের সাবেকদের মধ্যে রাজনীতি বিমুখতার ‘প্রবল মনোভাব থাকার কথা তুলে ধরে সুব্রত সরকার বলেন, “তারা মনে করে, ‘না থাক’, ওভারলুক করি। এটা এক ধরনের স্বার্থপরতা যে, আমি পড়াশোনা করব, দেশের-দশের কী হলো- আমার মাথাব্যথা নাই।” বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পক্ষে ফেইসবুকে বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী চমক হাসান লিখেছেন, “আমি বুয়েটের অ্যালামনাইদের একজন হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি বুয়েটে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ থাকা উচিত। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রশিবির- কিছুরই দরকার নাই। কারণ দেখানো খুব সহজ। “দুই কলামের একটা সারণি বানানো হোক। বামপাশে থাকুক ছাত্র রাজনীতির উপস্থিতি বুয়েটে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন উপহার দিয়েছে তার একটা তালিকা। আর ডানপাশে থাকুক ছাত্র রাজনীতির উপস্থিতির কারণে কী কী যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে গেছে ছাত্র-শিক্ষক-প্রশাসন, তার একটা খতিয়ান। ডানপাশে আবরার, সনি এই নামগুলোর কোনো একটার যে ভার, সেটা বামপাশের সম্মিলিত ভারের চেয়েও বহুগুণে বেশি। এরপরও ডান দিকের তালিকায় র‌্যাগিং, অত্যাচার, চাঁদাবাজি, ক্ষমতা প্রদর্শনী, অন্যায় সুবিধাভোগ-এসবের উপাখ্যান পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে যাওয়া যাবে।” চমক হাসান বলেন, “ছাত্র-রাজনীতি কেন চাইবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা? ডিপার্টমেন্টের প্রিয় জুনিয়র আবরারকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, মন থেকে সেই ক্ষত এখনও মুছে যায়নি। চেনা জুনিয়রদের সাথে যত আলাপ হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আবরার-হত্যার ঘটনার পর যখন ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ করার হয়, তার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক শান্তিতে ছিল, আছে। “কোনো যুক্তিতেই আবার ঐ নরক ফিরিয়ে আনার মানে হয় না। ছাত্রলীগ না থাকলে শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে- এটাও মেনে নেওয়ার মতো যুক্তি না। সহজ কথা- ছাত্র রাজনীতি নেই মানে কোনো সংগঠনেরই কার্যক্রম নেই। ছাত্রলীগও না, শিবিরও না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবাইকেই প্রতিহত করবে।”
আলোচনায় ছাত্রশিবির-হিযবুত তাহরীর : ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার সুযোগে বুয়েটে ইসলামী ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম চলার অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগ। আন্দোলনের মধ্যে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটি অংশও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের কার্যক্রম ক্যাম্পাসে চলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে। শিক্ষামন্ত্রীও বুয়েটে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি ও উগ্রবাদী সংগঠনের তৎপরতার বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন। বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদ বলছেন, বুয়েটে শিবির বা হিযবুতের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুললেই নানা ধরনের অপপ্রচার শুরু হয়। এমনকি মূলধারার সংবাদমাধ্যম বা সোশাল মিডিয়ায় হিজবুত ও শিবির নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও এটাকে বিভ্রান্তিমূলক ও অপপ্রচার বলে চালানোর চেষ্টা করেছে বুয়েটের আন্দোলনকারী নামের শিবির-হিজবুত তাহরীররা। তিনি বলেন, গত ৩০ তারিখে তাদের আন্দোলনে শিবির বা হিযবুত তাহরীরের কর্মকা- সম্পর্কে কোনো রকম আলোচনা ছিল না। সংবাদমাধ্যম থেকে তাদেরকে ফোন করা হলে তারা স্পষ্ট বলেছে যে শিবির এখন তাদের প্রসঙ্গ না, তারা পরে এ নিয়ে কথা বলবে। সংবাদমাধ্যমে সব প্রকাশ পাওয়ার একদিন পর সুর পাল্টে তারা শিবির ও হিযবুতের ব্যাপারে সোচ্চার। “শিবিরের যেই ছেলেরা হাওরে এরেস্ট হয়েছে – তারা আদৌ শিবির কি না, বুয়েটের ছেলেমেয়েরা সেটা জানে না, কারণ আদালতে প্রমাণ হয় নাই। তাদের দাবি মতে। অথচ মিডিয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মোমতাজুল হাসান আবেদ তাদের ছাত্র সংগঠনের কর্মী থাকার কথা স্বীকার করেন। তাহলে বুয়েটের আন্দোলনকারীরা ইচ্ছা করেই শিবিরের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন এটা প্রমাণিত। কারণ, আদালতে কে কোন দল করে, এটা নিয়ে কোন আলোচনার সুযোগ নাই, সবাইকে আসামি বা পার্সন হিসেবে দেখা হয়। এখানেই শিবিরের ধোকাবাজি পরিস্কার।” সম্প্রতি হিযবুত তাহরীরের মেইল আসা এবং ক্যাম্পাসে পোস্টারিংয়ের কথা তুলে ধরে তন্ময় বলেন, “হিযবুতের মেইল আসার পর বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা সেটি মেইল করে ডিএসডব্লিউকে জানিয়েছে মেইলের মাধ্যমে যেটা তারা দাবি করেছে। “কিন্তু তাদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নিয়ে কোনো উদ্বেগ তাদের মাঝে দেখা যায়নি বা তারা কোনো রকম মুভমেন্ট এ যায় নাই-কারণ টার্ম পরীক্ষা শুরু হচ্ছিল বলে। সেই টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাকেই জিম্মি করে, ছাত্রলীগের নেতার ক্যাম্পাসে আসাকে কেন্দ্র করে তারা আন্দোলনে নেমে পড়ে।” এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, “আমি বলব আন্দোলনে যারা এসেছে তারা কেউ সাধারণ ছাত্র নয়। তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত। ঢাবির সাবেক ভিপি নুর যেমন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এসে এখন বিএনপি জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, তেমনেই বুয়েটের এই শিক্ষার্থীরাও মৌলবাদী সংগঠন ও হিযবুত তাহরীর। “ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিও কিন্তু এই বুয়েটের ছাত্রই। তারা কৌশলে ছাত্রলীগের বিরোধী। তারা কিন্তু ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে না, কৌশল করে ছাত্রলীগের বিরোধীতা করছে। যেন ছাত্রলীগ না ঢুকলে মৌলবাদী কার্যক্রম ভালোভাবে করতে পারে। তাদের রাজনৈতির কর্মকা- কিন্তু গোপনে হচ্ছে।”
রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও ছাত্রলীগের অভিযোগগুলোর তদন্ত করার দাবি জানিয়ে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে, ছাত্রলীগ যে অভিযোগটা করছে যে, ওখানে হিযবুত তাহরীর এবং শিবিরের রাজনীতি গোপনে গোপনে হচ্ছে, সেই অভিযোগে ওদের কাছ থেকে নাম চাইতে হবে- কারা। “তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে। যদি রাজনীতি বন্ধ করতে হয়। আর রাজনীতি চালু করলেও তাদের রাজনীতি চালু না করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” রোববার বিকালে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটে হিযবুত তাহরীর কার্যক্রমের বিষয়টিও আসে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীরা বলেন, “বর্তমানে হিজবুত তাহরীর নিয়ে কথা উঠেছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল না, বরং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। এদের কর্মকা- আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে পাই বহিরাগতদের (সিসি ফুটেজ অনুযায়ী) লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে। তাদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট না। “আমাদের ইন্সটিটিউশনাল মেইলে হিজবুত তাহরীর সংক্রান্ত মেইল দেখার পর অনতিবিলম্বে সর্বপ্রথম ডিএসডব্লিউ স্যারকে ভার্চুয়ালি এই মর্মে ইনফর্ম করা হয়, আমাদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই। এ ব্যাপারে ডিএসডব্লিউ স্যারের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ আহ্বান করা হয়। পরবর্তীতে ভিসি স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে স্যার জানান, এ ব্যাপারে বুয়েট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।”
ছাত্র রাজনীতির পক্ষের শিক্ষার্থীরা কী বলছেন : বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক আলম বলেন, “আমরা আজকে খুবই উচ্ছ্বসিত। বলতে গেলে, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, নিজের সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেয়েছি। এটি আমাদেরকে আজকে খুব বেশি খুশি করেছে। “বুয়েটে নিষিদ্ধ কোনো ছাত্র সংগঠনের জায়গা হবে না। আমরা চাই, যারা হিযবুত তাহরির বা শিবিরের মতো সংগঠনে জড়িত, তাদের শনাক্ত করে শাস্তি প্রদান করা হোক।” বুয়েটের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ সকল ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম চালুর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই, সবগুলো প্রগতি ছাত্র সংগঠন বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি শুরু করুক। সবাই যাতে ছাত্রদের অধিকারের জন্য লড়াই করে, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি যাতে দৃষ্টান্ত রাখতে পারে, সেই রকম একটা পরিবেশ চাই আমরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিন আজফার পান্থ বলেন, ২০১৯ সাল থেকে বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির চর্চাটা নাই। দেখা যাচ্ছে, ছাত্রলীগ একটা অপরাধে জড়িয়েছে, তার মানে এই নয় যে, আর কেউ ছাত্রলীগ করতে পারবে না কিংবা ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না। এই জিনিসটা তো অন্যায় হয়ে যায়। “ছাত্র রাজনীতির আড়ালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্রদের কোনঠাসা করে রাখা, বয়কট করা এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই প্রচেষ্টাটা একটা গোষ্ঠীর ইন্ধনে হয়েছে। আবরার হত্যার আবেগকে বার বার ব্যবহার করা হয়েছে। ছাত্র রাজনীতির জন্য এর আগে সনি ও দ্বীপ নামে আরও দুজন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের মুখে কিন্তু তাদের নাম শুনতে পাই না। “ছাত্র রাজনীতির কিছু খারাপ বা নেতিবাচক দিক আছে, সেটি আমরা স্বীকার করি। তবে গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে স্মার্ট রাজনীতি করার সুযোগ বুয়েটে আছে।”