ঢাকা ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

চাঁদা না দেওয়ায় হত্যা!,ছুটি শেষে স্পেনে যাওয়া হলো না সাইজ উদ্দিনের

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা : ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিএনপি কর্মী প্রবাসী সাইজ উদ্দিন দেওয়ানকে (৪০) গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় থানায় বিএনপি নেতাসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা। এদিকে সাইজ উদ্দিন দেওয়ানের মৃত্যুতে তার দুই ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী নার্গিস আক্তার অসহায় হয়ে পড়েছেন। চোখে অন্ধকার দেখছেন। ছুটি শেষে গতকাল শনিবার (১২ এপ্রিল) সাইজ উদ্দিন স্পেন যাওয়ার কথা ছিল। স্পেন থেকে ভিসা পেলে স্ত্রী-সন্তানদেরও এ বছর সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

কিন্তু ৭ এপ্রিল তাকে হত্যা করা হয়। স্বজনদের দাবি- প্রথমে সাইজ উদ্দিনকে গুলি করা হয়েছে। পরে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাকে ঘণ্টাব্যাপী আটকে রাখা হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। প্রতিবেদকের কাছে এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাইজ উদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস আক্তার, বড় ভাই হানিফ দেওয়ান, বড় ছেলে নিখন হোসেন ও ছোট ছেলে নাসিম হোসেনসহ স্বজনরা। বাড়িতে গেলে সবার সঙ্গে ছোট ছেলে নাসিমকে বসে থাকতে দেখা যায়। তবে তার অপলক দৃষ্টি যেন চারপাশে বাবাকে খুঁজছিল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাইজ উদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস আক্তার বলেন, আমারতো এতো তাড়াতাড়ি স্বামী হারানোর কথা ছিল না। আমার ছেলেরা এতিম হয়ে গেল, তাদের দায়িত্ব নেবে কে। আমরাতো একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখছিলাম। স্পেন গিয়ে আমাদের নতুন করে জীবনযাপন শুরু করার কথা ছিল। ফারুক কবিরাজ-মেহেদী কবিরাজরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড চাই। সাইজ উদ্দিনের বড় ছেলে নিখন হোসেন বলেন, আব্বুর ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছিল। এজন্য নানুর বাড়ি হায়দরগঞ্জ থেকে বিদায় নিতে যায়।

সেখান থেকে আসার পথে বেড়ি এলাকার মালেকের ব্রিজের কাছে গাড়ি থামিয়ে আব্বুকে ফারুক ও তার ভাই মেহেদী গুলি করে। একপর্যায়ে তাকে কুপিয়ে আহত করে। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিতে গেলে ফারুক কবিরাজের লোক আরিফ ১ ঘণ্টার মতো আটকে রাখে। এতে রক্তক্ষরণে আব্বু মারা মারা যায়। সাইজ উদ্দিনের বড় ভাই হানিফ দেওয়ান ও চাচাতো ভাই মেজন আলী দেওয়ান বলেন, ফারুক কবিরাজের অনুসারী ফারুক গাজী রমজানে একদিন এসে সাইজ উদ্দিনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চায়। ওই টাকা না দেওয়ায় সাইজ উদ্দিনের ওপর তারা ক্ষিপ্ত ছিল। শ্বশুর বাড়ি থেকে আসার পথে তাকে কুপিয়ে আহত করে। পরে তাকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বাধা দেয়। হাত-পা ধরলেও তারা ছাড়েনি। পরে থানা থেকে পুলিশ এলে তারা ছেড়ে দেয়। এরপরও ভাইকে বাঁচাতে পারিনি। এদিকে মামলার পর ফারুক কবিরাজসহ তার অনুসারীরা আত্মগোপনে চলে গেছে। এতে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। রায়পুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে নিহতের ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজ ও তার ভাই মেহেদী কবিরাজসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চাঁদা না দেওয়ায় হত্যা!,ছুটি শেষে স্পেনে যাওয়া হলো না সাইজ উদ্দিনের

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা : ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিএনপি কর্মী প্রবাসী সাইজ উদ্দিন দেওয়ানকে (৪০) গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় থানায় বিএনপি নেতাসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা। এদিকে সাইজ উদ্দিন দেওয়ানের মৃত্যুতে তার দুই ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী নার্গিস আক্তার অসহায় হয়ে পড়েছেন। চোখে অন্ধকার দেখছেন। ছুটি শেষে গতকাল শনিবার (১২ এপ্রিল) সাইজ উদ্দিন স্পেন যাওয়ার কথা ছিল। স্পেন থেকে ভিসা পেলে স্ত্রী-সন্তানদেরও এ বছর সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

কিন্তু ৭ এপ্রিল তাকে হত্যা করা হয়। স্বজনদের দাবি- প্রথমে সাইজ উদ্দিনকে গুলি করা হয়েছে। পরে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাকে ঘণ্টাব্যাপী আটকে রাখা হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। প্রতিবেদকের কাছে এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাইজ উদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস আক্তার, বড় ভাই হানিফ দেওয়ান, বড় ছেলে নিখন হোসেন ও ছোট ছেলে নাসিম হোসেনসহ স্বজনরা। বাড়িতে গেলে সবার সঙ্গে ছোট ছেলে নাসিমকে বসে থাকতে দেখা যায়। তবে তার অপলক দৃষ্টি যেন চারপাশে বাবাকে খুঁজছিল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাইজ উদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস আক্তার বলেন, আমারতো এতো তাড়াতাড়ি স্বামী হারানোর কথা ছিল না। আমার ছেলেরা এতিম হয়ে গেল, তাদের দায়িত্ব নেবে কে। আমরাতো একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখছিলাম। স্পেন গিয়ে আমাদের নতুন করে জীবনযাপন শুরু করার কথা ছিল। ফারুক কবিরাজ-মেহেদী কবিরাজরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড চাই। সাইজ উদ্দিনের বড় ছেলে নিখন হোসেন বলেন, আব্বুর ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছিল। এজন্য নানুর বাড়ি হায়দরগঞ্জ থেকে বিদায় নিতে যায়।

সেখান থেকে আসার পথে বেড়ি এলাকার মালেকের ব্রিজের কাছে গাড়ি থামিয়ে আব্বুকে ফারুক ও তার ভাই মেহেদী গুলি করে। একপর্যায়ে তাকে কুপিয়ে আহত করে। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিতে গেলে ফারুক কবিরাজের লোক আরিফ ১ ঘণ্টার মতো আটকে রাখে। এতে রক্তক্ষরণে আব্বু মারা মারা যায়। সাইজ উদ্দিনের বড় ভাই হানিফ দেওয়ান ও চাচাতো ভাই মেজন আলী দেওয়ান বলেন, ফারুক কবিরাজের অনুসারী ফারুক গাজী রমজানে একদিন এসে সাইজ উদ্দিনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চায়। ওই টাকা না দেওয়ায় সাইজ উদ্দিনের ওপর তারা ক্ষিপ্ত ছিল। শ্বশুর বাড়ি থেকে আসার পথে তাকে কুপিয়ে আহত করে। পরে তাকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বাধা দেয়। হাত-পা ধরলেও তারা ছাড়েনি। পরে থানা থেকে পুলিশ এলে তারা ছেড়ে দেয়। এরপরও ভাইকে বাঁচাতে পারিনি। এদিকে মামলার পর ফারুক কবিরাজসহ তার অনুসারীরা আত্মগোপনে চলে গেছে। এতে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। রায়পুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে নিহতের ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজ ও তার ভাই মেহেদী কবিরাজসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।