ঢাকা ০৬:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গার্মেন্টসে বিশৃঙ্খলায় শঙ্কিত মালিকেরা

  • আপডেট সময় : ০৫:২৬:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : কারখানার ভেতরে ভাঙচুর, শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পক্ষে-বিপক্ষে হেনস্তা থেকে রাজপথের আন্দোলন তাদের ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হবে মনে করলেও তা পুরোপুরি শেষ হয়নি। এতে নতুন করে চিন্তায় মালিকপক্ষ। শ্রমিক সংগঠনগুলোর কাছেও এ পরিস্থিতি বেশ ধোঁয়াটে। ১৮ দফা মেনে নেওয়ার পরও কেন আন্দোলন থামছে না, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, ১৮ দফা মেনে নিলেও তা বাস্তবায়ন করা যাবে কিনা, সেই চিন্তা দূর না হতেই দীর্ঘ সময় কারখানা বন্ধের যে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে, সেটার চিন্তাও ভর করেছে। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না হলে সামনে দুর্ভোগে পড়তে হবে বলেও শঙ্কা তাদের। ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের টানা ৫২ ঘণ্টার অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন শ্রমিকরা। বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে পুলিশের আশ্বাসে তারা সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ওই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখেন বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। আশুলিয়া থানার ওসি আবু বক্কর জানান, শ্রমিকদের বুঝিয়ে এবং মালিকপক্ষকে তাদের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, নতুন করে ১০টি কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা। চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহাল এবং পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে গাজীপুরে পোশাকশ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগরা এলাকায় তারা বিক্ষোভ শুরু করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বিশৃঙ্খলা এড়াতে আশপাশের ১০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ১৫ দিন ধরে যেসব এলাকায় দফায় দফায় আন্দোলন হয়েছে, সেখানকার কারখানা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিকদের ক্ষোভের অনেক কারণের একটি হলো শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা, যেখানে বলা আছে, কোনও প্রতিষ্ঠানের কোনও শাখা বা বিভাগে বে-আইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করিয়া দিতে পারিবেন, এবং এরূপ বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনও মজুরি পাইবেন না। বেতন বকেয়া রয়েছে, এমন অনেক কারখানায় শ্রমিকরা এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপেক্ষাকৃত ছোট কারখানার শ্রমিকরা নানা বৈষম্যের শিকার হয় এবং মালিকপক্ষের এই সিদ্ধান্তে সাধারণ শ্রমিক ভুক্তভোগী হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুরুষ শ্রমিক বনাম নারী শ্রমিকের দ্বন্দ্ব। কিছু কিছু কারখানায় পুরুষ শ্রমিকরা মনে করেন তারা বৈষম্যের শিকার। নানা অজুহাতে তাদের চাকরিচ্যুত করে নারীদের কাজে নিয়োগ দেওয়ার প্রবণতা বন্ধের দাবি জানান তারা। এর আগে, ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে পোশাক শিল্পের বর্তমান সংকট নিরসনে করণীয় নিয়ে মতবিনিময় সভায় পোশাক মালিকরা বিশৃঙ্খলা ঠেকানো না গেলে কারখানা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন। তৈরি পোশাক মালিকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানা চালু হওয়ায় বেশিরভাগ মালিক আপাতত খুশি হলেও অনেকের মধ্যে নতুন দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, বাস্তবে সব কারখানায় নতুন করে মজুরি বৃদ্ধি ও বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া সম্ভব হবে না। আর সেটা সম্ভব না হলে শ্রমিকদের কীভাবে সামলানো হবে, তা আমাদের জানা নেই। এছাড়া অনেকেই এখনও কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কারখানার ভেতরে হুটহাট অরাজকতা তৈরি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতদিনেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলো না কেন প্রশ্নে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরের সভাপতি আবুল হোসাইন বলেন, সব কারখানার পরিস্থিতি একরকম না। কয়েকটি বড় কারখানা বাদে অসংখ্য ছোট কারখানা ১৮ দফা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ফলে শ্রমিকরা মনে করছেন তারা আরও বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার হবেন। তিনি বলেন, বকেয়া বেতন দিতে হবে, কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এখন শ্রমিকরা অধিকার সচেতন ও মালিকদের সান-শওকত বেড়েছে। কিন্তু মালিক শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেনি। মালিকেরা শ্রমিকদের আন্দোলনকে নাশকতা, অন্তর্ঘাত ও বাজার হারানোর ভয় দেখিয়ে ১৩(১) ধারার মতো অগণতান্ত্রিক আইনের অপপ্রয়োগ করে কারখানা বন্ধ করার কারণে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ব্যবসা হলে তবেই শ্রমিককে বেতন দিতে পারবেন মালিকেরা। এভাবে অস্থিরতা বিরাজ করলে ব্যবসা কমবে এবং পুরো খাতটাই অস্থির হয়ে থাকবে। আরও নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। তিনি বলেন, যে কারখানা আজ বন্ধ তার আজকের দিনের কস্ট লস হবে। এই যে তিনি উৎপাদন করতে পারছেন না এর জন্য ক্রেতা তাকে কী করবে সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। ফলে নানাদিক থেকে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। আর্থিক ক্ষতিটা তো ভয়াবহ আকার নেবেই, যে ইমেজ ক্ষতি হবে সেটা পুনরুদ্ধারে বেগ পেতে হয় সবচেয়ে বেশি।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গার্মেন্টসে বিশৃঙ্খলায় শঙ্কিত মালিকেরা

আপডেট সময় : ০৫:২৬:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

বিশেষ সংবাদদাতা : কারখানার ভেতরে ভাঙচুর, শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পক্ষে-বিপক্ষে হেনস্তা থেকে রাজপথের আন্দোলন তাদের ১৮ দফা দাবি মেনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হবে মনে করলেও তা পুরোপুরি শেষ হয়নি। এতে নতুন করে চিন্তায় মালিকপক্ষ। শ্রমিক সংগঠনগুলোর কাছেও এ পরিস্থিতি বেশ ধোঁয়াটে। ১৮ দফা মেনে নেওয়ার পরও কেন আন্দোলন থামছে না, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, ১৮ দফা মেনে নিলেও তা বাস্তবায়ন করা যাবে কিনা, সেই চিন্তা দূর না হতেই দীর্ঘ সময় কারখানা বন্ধের যে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে, সেটার চিন্তাও ভর করেছে। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না হলে সামনে দুর্ভোগে পড়তে হবে বলেও শঙ্কা তাদের। ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের টানা ৫২ ঘণ্টার অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন শ্রমিকরা। বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে পুলিশের আশ্বাসে তারা সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ওই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখেন বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। আশুলিয়া থানার ওসি আবু বক্কর জানান, শ্রমিকদের বুঝিয়ে এবং মালিকপক্ষকে তাদের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, নতুন করে ১০টি কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা। চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহাল এবং পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে গাজীপুরে পোশাকশ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগরা এলাকায় তারা বিক্ষোভ শুরু করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বিশৃঙ্খলা এড়াতে আশপাশের ১০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ১৫ দিন ধরে যেসব এলাকায় দফায় দফায় আন্দোলন হয়েছে, সেখানকার কারখানা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিকদের ক্ষোভের অনেক কারণের একটি হলো শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা, যেখানে বলা আছে, কোনও প্রতিষ্ঠানের কোনও শাখা বা বিভাগে বে-আইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করিয়া দিতে পারিবেন, এবং এরূপ বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনও মজুরি পাইবেন না। বেতন বকেয়া রয়েছে, এমন অনেক কারখানায় শ্রমিকরা এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপেক্ষাকৃত ছোট কারখানার শ্রমিকরা নানা বৈষম্যের শিকার হয় এবং মালিকপক্ষের এই সিদ্ধান্তে সাধারণ শ্রমিক ভুক্তভোগী হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুরুষ শ্রমিক বনাম নারী শ্রমিকের দ্বন্দ্ব। কিছু কিছু কারখানায় পুরুষ শ্রমিকরা মনে করেন তারা বৈষম্যের শিকার। নানা অজুহাতে তাদের চাকরিচ্যুত করে নারীদের কাজে নিয়োগ দেওয়ার প্রবণতা বন্ধের দাবি জানান তারা। এর আগে, ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে পোশাক শিল্পের বর্তমান সংকট নিরসনে করণীয় নিয়ে মতবিনিময় সভায় পোশাক মালিকরা বিশৃঙ্খলা ঠেকানো না গেলে কারখানা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন। তৈরি পোশাক মালিকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানা চালু হওয়ায় বেশিরভাগ মালিক আপাতত খুশি হলেও অনেকের মধ্যে নতুন দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, বাস্তবে সব কারখানায় নতুন করে মজুরি বৃদ্ধি ও বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া সম্ভব হবে না। আর সেটা সম্ভব না হলে শ্রমিকদের কীভাবে সামলানো হবে, তা আমাদের জানা নেই। এছাড়া অনেকেই এখনও কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কারখানার ভেতরে হুটহাট অরাজকতা তৈরি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতদিনেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলো না কেন প্রশ্নে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরের সভাপতি আবুল হোসাইন বলেন, সব কারখানার পরিস্থিতি একরকম না। কয়েকটি বড় কারখানা বাদে অসংখ্য ছোট কারখানা ১৮ দফা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ফলে শ্রমিকরা মনে করছেন তারা আরও বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার হবেন। তিনি বলেন, বকেয়া বেতন দিতে হবে, কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এখন শ্রমিকরা অধিকার সচেতন ও মালিকদের সান-শওকত বেড়েছে। কিন্তু মালিক শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেনি। মালিকেরা শ্রমিকদের আন্দোলনকে নাশকতা, অন্তর্ঘাত ও বাজার হারানোর ভয় দেখিয়ে ১৩(১) ধারার মতো অগণতান্ত্রিক আইনের অপপ্রয়োগ করে কারখানা বন্ধ করার কারণে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ব্যবসা হলে তবেই শ্রমিককে বেতন দিতে পারবেন মালিকেরা। এভাবে অস্থিরতা বিরাজ করলে ব্যবসা কমবে এবং পুরো খাতটাই অস্থির হয়ে থাকবে। আরও নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। তিনি বলেন, যে কারখানা আজ বন্ধ তার আজকের দিনের কস্ট লস হবে। এই যে তিনি উৎপাদন করতে পারছেন না এর জন্য ক্রেতা তাকে কী করবে সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। ফলে নানাদিক থেকে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। আর্থিক ক্ষতিটা তো ভয়াবহ আকার নেবেই, যে ইমেজ ক্ষতি হবে সেটা পুনরুদ্ধারে বেগ পেতে হয় সবচেয়ে বেশি।