ঢাকা ০৯:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

খেলাটা কি আগুন নিয়ে নাকি অন্য কিছু?

  • আপডেট সময় : ১০:৪৪:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

ড. মাহবুব হাসান : চলতি বছরের ২ আগস্ট রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের নি¤œকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের (জাতীয় সংসদ) স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে আসেন। তার সফরসূচিতে তাইওয়ান সফরের নাম ছিল না। তিনি জাপান, মালয়েশিয়া সফরের পর তাইপেতে আসেন একটি সামরিক বিমানে করে। তিনি ৯ সদস্যের কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে সফর করছেন। সেখানে আছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন এই সময় তাইওয়ান সফর ঠিক হবে না। তার পরামর্শ শোনেননি ন্যান্সি। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, সবখানে যাওয়ার অধিকারের মতো তাইওয়ান সফরেরও অধিকার আছে ন্যান্সি পেলোসির।

এটুকু পড়লেই বোঝা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার গণতন্ত্রের বহুমুখী সৌন্দর্যের চর্চা করছে নাকি এর পেছনের বৈশ্বিক রাজনীতির নতুন খেলায় কোনও মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে? এটা বলার কারণ চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বহুকাল ধরেই সামরিক বিরোধে জড়িত। অনেক আন্তর্জাতিক বিষয়ের সঙ্গে আছে তাইওয়ান নিয়ে চীন ও মার্কিনি দ্বন্দ্ব। চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের দেশেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ আর তাইওয়ানের শাসকরা মনে করেন তারা স্বাধীন দেশ। যদিও আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে তাইওয়ানের রাজনৈতিক স্বীকৃতি নেই বললেই চলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইপেকে অস্ত্র ও অর্থ সহযোগিতা দিয়ে আসছে। সফরে এসে ন্যান্সি পেলোসিও বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পাশে আছে, তাকে ছেড়ে যাবে না।
এদিকে ন্যান্সির সফর শুরুর পরপরই ২১টি চীনা সামরিক বিমান তাইওয়ানের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করেছে বলে এক টুইট বার্তায় বলেছে তাইপে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। টুইটারে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ২১টি সামরিক বিমান গতকাল দিবাগত রাতে (২ আগস্ট) তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে (এডিআইজেড) প্রবেশ করেছিল। (প্রথম আলো/০৮/০৩/২২)
ন্যান্সির সফরে ক্ষুব্ধ চীন বলেছে, তার সফরের পর সামরিক জবাব দেওয়া হবে। তবে কবে তা শুরু করবে তা জানা না গেলেও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাকৃতিক বালু রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে বেইজিং। এছাড়াও, তাইওয়ান থেকে কয়েক প্রকার ফল ও সবজি আমদানিও নিষিদ্ধ করেছে করোনাভাইরাসসহ আরো কিছু কারণ দেখিয়ে। বোঝা যাচ্ছে জলে-স্থলে-আকাশ পথেও তাইওয়ান পড়তে যাচ্ছে বেইজিংয়ের প্রতিবাদী প্রতিক্রিয়ার ঘেরে, যা ওই অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিকে নস্যাৎ করতে পারে।
গত ২৫ বছরের মধ্যে ন্যান্সি পেলোসিই সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ মার্কিনি রাজনীতিক তাইপে সফরে এলেন। এবং পেলোসি যেভাবে তাইপের রাজনৈতিক ইচ্ছার পক্ষে দাঁড়িয়ে তার দেশের সমর্থনের কথা জানালেন, তাকে সর্বোচ্চ ক্ষুব্ধতার বিষয় বলে বর্ণনা করছেন বিশ্লেষকগণ। কারণ একটি স্ব-শাসিত দ্বীপ তাইওয়ানকে ঘিরে যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা রয়েছে বহুকাল ধরে, তাকে উসকে দেবার পেছনে আসলে কী আছে, তা জানা জরুরি। কারণ, সামান্য বিষয় থেকেই মূলত অসামান্য ক্ষতি ও রাজনৈতিক-সামরিক স্খলন ঘটে যেতে পারে, যা বিশ্ব জুড়ে আরেকটি মহাসংকটকে ডেকে আনতে পারে।
এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘যারা আগুন নিয়ে খেলবে, তাদের সেই আগুনে পুড়তে হবে’।
এ কথার মানে চীন পেলোসির তাইওয়ান সফর ও তার প্রতিক্রিয়ায় এমন কিছু পদক্ষেপ নেবে যা দুই দেশের মধ্যেকার রাজনৈতিক সম্পর্ক অনেকটাই ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে, যা বিশ্ব রাজনৈতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে নিয়ে যেতে পারে সংঘাতেরে উপকূলে। পেলোসির সফর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া সমর্থন করছে চীনকে। প্রকাশ্যে এই সমর্থন মানে হচ্ছে চীন ও রাশিয়া একই বলয়ভুক্ত হয়েছে এখন।
আমরা লক্ষ্য করেছি, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে একটি সমঝোতা তৈরি হয়েছে বৈশ্বিক স্তরে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে। দক্ষিণ চীন সাগর কেন্দ্রিক মার্কিনি ও চীনের মধ্যেকার কনফ্লিক্টকে চীনের পক্ষে নীরবে সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া। ফলে ইন্দো প্যাসফিকের নিরাপত্তা প্রশ্নে পরোক্ষে রাশিয়াও অংশিদার। ওই এলাকার অংশিদার হিসেবে রাশিয়া যখন চীনের প্রতি সমর্থন দেয়, তখন বুঝে নিতে হবে যে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতিতে নতুন কোনও সামরিক মেরুকরণ হতে চলেছে। সেটাই আমরা দেখতে পেলাম ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পরিচালনার পর। যুক্তরাষ্ট্র যখন রাশিয়ার ওপর নানান ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চাপের মধ্যে ফেলে রাশিয়াকে কাবু করতে চাইছিলো, দেখা গেলো চীন সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়াকে। কেবল তাই নয়, উল্টো রাশিয়া যখন ইইউ’র দেশগুলোকে জ্বালানির দাম পরিশোধে রুবলের বাধ্যবাধকতা দিলো, ইউরোপের কয়েকটি দেশ সে পথেই গেছে। কারণ তাদের রাশিয়ার জ্বালানি দরকার। তাদের হাতে নেই দ্বিতীয় কোনও জ্বালানি কেনার উৎস। জার্মান রুবলেই কিনছে রাশিয়ান জ্বালানি তেল ও গ্যাস। আসন্ন শীতকালের আগেই রাশিয়ান গ্যাস ও তেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে না পেলে সংকট থেকেই যাবে, যা জার্মান জনজীবনে মারাত্মক ভয় জমিয়ে রাখবে। তারা মার্কিনি নিষেধাজ্ঞা না মেনে রুবলে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে জ্বালানির দাম পরিশোধ করে চলেছে। কিন্তু রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ লাইন সংস্কারের কথা বলে ২৫% কমিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ চাপের মধ্যে রেখেছে। রাশিয়ার গ্যাস-তেল ছাড়া ইউরোপ অন্ধকার—
এই বাস্তবতা কেবল বাদবাকি বিশ্বকেই চমকিত করেনি, মার্কিনি আধিপত্যকেও অনেকটাই নাজুক করে ফেলছে। সেই সাথে ইউরো-ডলার ও রুবলের সঙ্গে ইউয়ানের শক্তিও দেখা দিচ্ছে বিশ্ববাণিজ্যে । ইউরোপের অনেক দেশই যখন বিনিময় মুদ্রা হিসেবে রুবলকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে, তেমনি ইউয়ানের শক্তিও এশিয়ান আকাশে উদিত হচ্ছে। রাশিয়া তার ৬৩ হাজার কোটি টাকার রিজার্ভের ১৬ শতাংশ রেখেছে ডলারে, আর ১৩ শতাংশই রেখেছে ইউয়ানে। এই ঘটনা থেকেই প্রতীয়মান হয় যে এই দুই দেশ অনেক আগে থেকেই একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করে আসছে, যার সূচিমুখ দেখা গেলো মার্কিনি পণ্য ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পর। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এশিয়ার দেশগুলোকে একটি নতুন অর্থব্যবস্থায় চলতে হবে। তখন ডলারের যে একচ্ছত্র অধিপত্য ছিল এবং আজো আছে, তা অনেকটাই খর্ব হবে। কেন না, ডলারের পাশাপাশি ইউরোর দামও কমেছে এবং শঙ্কাতুর মানুষ দেখছে এই রাজনৈতিক-সামরিক খেলায় পৃথিবীর সাধারণ মানুষ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গণমানুষের কল্যাণ ও তাদের নিত্যপ্রয়োজনের কথা চিন্তা না করে কেবল শক্তির খেলায় মত্ত হওয়ার পেছনে দুরভিসন্ধিই কাজ করে। ন্যান্সি পেলোসির অকস্মাৎ তাইওয়ান সফর সম্পর্কে বলা যায়, তিনি স্বভাবগতভাবেই বোধহয় এ-রকম। তিনি যখন কেবল প্রতিনিধি পরিষদের ক্যালিফোরনিয়ার সাংসদ, এসেছিলেন বেইজিং সফরে। সে-সময়ই তিনি চীন সরকারকে না জানিয়ে উপস্থিত হন তিয়েনআনমেন স্কয়ারে। সেখানে তিনি একটি ছোট ব্যানার তুলে ধরেন। তাতে লেখা ছিল, চীনা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নির্যাতিত নেতাদের উদ্দেশে। তবে চীনা সরকারের লোকজন সঙ্গে সঙ্গেই ওই ব্যানার সরিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘটনা তিনি ব্যক্তিগতভাবে করেছিলেন। এবার যদিও সরকারকে জানিয়েই এসেছেন যে তিনি তাইওয়ান সফর করবেন। তার এই সফর যে বিতর্ক সৃষ্টি করবে এবং একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ভেঙে যেতে পারে এই শঙ্কা সত্ত্বেও, একজন জেষ্ঠ্য রাজনীতিক হয়ে তিনি ও তার সহকর্মী সফরসঙ্গীরা বুঝেননি? তার সঙ্গে সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যতই এটা বলুন না কেন, তিনি তাইওয়ান যেতে মানা করেছেন, কিন্তু সেটা হয়তো কূটনৈতিক শিষ্টাচারের কারণেই। অপ্রকাশ্যে কি তার গোপন সায়ও ছিল না পেলোসির এই সফরে? তিনি কি চাইছেন চীনের সঙ্গে একটি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক যুক্তরাষ্ট্র? তার দেশের ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির মালিকদের চাপে পড়েই কি তিনি ওই নরম ভাষায় বলেছেন তাইওয়ানে এই সময় যাওয়া ঠিক হবে না?
অন্যদিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়দার প্রধান জাওয়াহিরিকে ড্রোনের মাধ্যমে রকেট হামলা করে হত্যার পর জো বাইডেন বলেছেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো। বিচারটি কোথায় হলো? মানছি আল কায়দা সন্ত্রাসী সংগঠন। কিন্তু আল কায়দার নির্মাতা লাদেন তো মার্কিনি প্রোডাক্ট। রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) আফগানিস্তান দখল করে নেওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎখাতে সামরিক সাহায্য দেয়। আর ওসামা বিন লাদেনকে আল কায়দা সৃষ্টির সব উপকরণ উপাদান, ট্রেনিং,অস্ত্র দেয়। লাদেনের সশস্ত্র সংগ্রামীরা সোভিয়েত সেনাদের তাড়াতে সাহায্য করায় আফগানিস্তান দখলমুক্ত হয়। সেই ইতিহাস নিশ্চয়ই মার্কিনি চেতনায় আছে।
জাওয়াহিরিকে হত্যার কয়েক বছর আগে ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানি মাটি থেকে তুলে এনেছিলো মার্কিনি সামরিক গোয়েন্দাবাহিনীর একটি দল। এমনও মিথ আছে– সেই বিমানটি আটলানটিকে ধ্বংস হয়ে যায়। বলা হয় অ্যাক্সিডেন্ট, কিন্তু আসলে দূরপাল্লার রকেট হামলায় ওই বিমান ধ্বংস করা হয়েছিলো বলে মনে করা হয়। সত্যটা লুকিয়ে আছে মার্কিনি গোপন নথিতে। এই দুটি হত্যাকা-কে বাইডেন প্রশাসন মনে করে সন্ত্রাসীদের হত্যা করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মার্কিনিদের এই ধরনের হত্যাকা- যে সন্ত্রাসী দমনের পরও মানুষ হত্যা, এটা কেন তারা মনে রাখে না? যে উপায়ে লাদেন ও জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হয়েছে, সেই কায়দাটা সন্ত্রাসীদের পথ। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে আমরা সন্ত্রাস বলে অভিহিত করি না। দৃষ্টিভঙ্গিগত বিষয় এখানে লুকিয়ে আছে। মানুষ হত্যাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিলেই তা অপরাধী হত্যা হিসেবে গণ্য হবে না। ভিকটিম বিচারের মুখোমুখি হয় না।
আবার জাওয়াহিরি হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে আল কায়েদা এর প্রতিশোধ নিতে পারে যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে। তাদের এই রকম ধারণার পেছনেও রয়েছে আরেকটি পরিকল্পনা, যা নতুন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সব কিছু জেনে-বুঝেই তাইওয়ান সফর করেছেন। এবং তাইওয়ানকে আশ্বস্ত করেছেন যে তারা তাদের পাশে আছেন এবং থাকবেন। তার মানে এই যে গণচীনের রাজনৈতিক চিন্তাকে উসকে দিয়ে তার রেজাল্ট কী হয় তা পরখ করতেই যেন চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার চোখ তো দক্ষিণ চীন সাগরের তলদেশের খনিজ সম্পদ ও মৎস্য সম্পদের ওপর। ওই সম্পদ চীন একা ভোগ করুক তা মেনে নিতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ চীন সাগরের তীরবর্তী দেশগুলোকে নানাভাবে উসকে দিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধারের ওয়াদা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনও সেই সব দেশের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ওভারল্যাপ করে নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটাও প্রতিবেশি দেশগুলোর প্রতি অন্যায় আচরণ। এই সব রাজনৈতিক ও পারস্পরিক সমস্যাকে কেন্দ্র করেই নানা পরিকল্পনার অংশ হচ্ছে পেলোসির তাইওয়ান সফর। আমরা মনে করি উত্তেজনা সামরিক মহড়ার বাইরে আসবে না। এই অঞ্চলে যুদ্ধ লেগে গেলে গোটা বিশ্ব পরিস্থিতি নারকীয় হয়ে যাবে, যা পরাশক্তিগুলো বিবেচ্য বিষয়। তা তারা করতে পারেন না। তাই আমরা আশ্বস্ত হয়ে আছি, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কোনও হানাহানির মধ্যে যাবে না।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সংস্কার, সেই সংস্কার আদায় করে ছাড়ব

খেলাটা কি আগুন নিয়ে নাকি অন্য কিছু?

আপডেট সময় : ১০:৪৪:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২

ড. মাহবুব হাসান : চলতি বছরের ২ আগস্ট রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের নি¤œকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের (জাতীয় সংসদ) স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে আসেন। তার সফরসূচিতে তাইওয়ান সফরের নাম ছিল না। তিনি জাপান, মালয়েশিয়া সফরের পর তাইপেতে আসেন একটি সামরিক বিমানে করে। তিনি ৯ সদস্যের কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে সফর করছেন। সেখানে আছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন এই সময় তাইওয়ান সফর ঠিক হবে না। তার পরামর্শ শোনেননি ন্যান্সি। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, সবখানে যাওয়ার অধিকারের মতো তাইওয়ান সফরেরও অধিকার আছে ন্যান্সি পেলোসির।

এটুকু পড়লেই বোঝা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার গণতন্ত্রের বহুমুখী সৌন্দর্যের চর্চা করছে নাকি এর পেছনের বৈশ্বিক রাজনীতির নতুন খেলায় কোনও মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে? এটা বলার কারণ চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বহুকাল ধরেই সামরিক বিরোধে জড়িত। অনেক আন্তর্জাতিক বিষয়ের সঙ্গে আছে তাইওয়ান নিয়ে চীন ও মার্কিনি দ্বন্দ্ব। চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের দেশেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ আর তাইওয়ানের শাসকরা মনে করেন তারা স্বাধীন দেশ। যদিও আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে তাইওয়ানের রাজনৈতিক স্বীকৃতি নেই বললেই চলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইপেকে অস্ত্র ও অর্থ সহযোগিতা দিয়ে আসছে। সফরে এসে ন্যান্সি পেলোসিও বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পাশে আছে, তাকে ছেড়ে যাবে না।
এদিকে ন্যান্সির সফর শুরুর পরপরই ২১টি চীনা সামরিক বিমান তাইওয়ানের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করেছে বলে এক টুইট বার্তায় বলেছে তাইপে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। টুইটারে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ২১টি সামরিক বিমান গতকাল দিবাগত রাতে (২ আগস্ট) তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে (এডিআইজেড) প্রবেশ করেছিল। (প্রথম আলো/০৮/০৩/২২)
ন্যান্সির সফরে ক্ষুব্ধ চীন বলেছে, তার সফরের পর সামরিক জবাব দেওয়া হবে। তবে কবে তা শুরু করবে তা জানা না গেলেও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাকৃতিক বালু রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে বেইজিং। এছাড়াও, তাইওয়ান থেকে কয়েক প্রকার ফল ও সবজি আমদানিও নিষিদ্ধ করেছে করোনাভাইরাসসহ আরো কিছু কারণ দেখিয়ে। বোঝা যাচ্ছে জলে-স্থলে-আকাশ পথেও তাইওয়ান পড়তে যাচ্ছে বেইজিংয়ের প্রতিবাদী প্রতিক্রিয়ার ঘেরে, যা ওই অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিকে নস্যাৎ করতে পারে।
গত ২৫ বছরের মধ্যে ন্যান্সি পেলোসিই সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ মার্কিনি রাজনীতিক তাইপে সফরে এলেন। এবং পেলোসি যেভাবে তাইপের রাজনৈতিক ইচ্ছার পক্ষে দাঁড়িয়ে তার দেশের সমর্থনের কথা জানালেন, তাকে সর্বোচ্চ ক্ষুব্ধতার বিষয় বলে বর্ণনা করছেন বিশ্লেষকগণ। কারণ একটি স্ব-শাসিত দ্বীপ তাইওয়ানকে ঘিরে যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা রয়েছে বহুকাল ধরে, তাকে উসকে দেবার পেছনে আসলে কী আছে, তা জানা জরুরি। কারণ, সামান্য বিষয় থেকেই মূলত অসামান্য ক্ষতি ও রাজনৈতিক-সামরিক স্খলন ঘটে যেতে পারে, যা বিশ্ব জুড়ে আরেকটি মহাসংকটকে ডেকে আনতে পারে।
এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘যারা আগুন নিয়ে খেলবে, তাদের সেই আগুনে পুড়তে হবে’।
এ কথার মানে চীন পেলোসির তাইওয়ান সফর ও তার প্রতিক্রিয়ায় এমন কিছু পদক্ষেপ নেবে যা দুই দেশের মধ্যেকার রাজনৈতিক সম্পর্ক অনেকটাই ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে, যা বিশ্ব রাজনৈতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে নিয়ে যেতে পারে সংঘাতেরে উপকূলে। পেলোসির সফর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া সমর্থন করছে চীনকে। প্রকাশ্যে এই সমর্থন মানে হচ্ছে চীন ও রাশিয়া একই বলয়ভুক্ত হয়েছে এখন।
আমরা লক্ষ্য করেছি, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে একটি সমঝোতা তৈরি হয়েছে বৈশ্বিক স্তরে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে। দক্ষিণ চীন সাগর কেন্দ্রিক মার্কিনি ও চীনের মধ্যেকার কনফ্লিক্টকে চীনের পক্ষে নীরবে সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া। ফলে ইন্দো প্যাসফিকের নিরাপত্তা প্রশ্নে পরোক্ষে রাশিয়াও অংশিদার। ওই এলাকার অংশিদার হিসেবে রাশিয়া যখন চীনের প্রতি সমর্থন দেয়, তখন বুঝে নিতে হবে যে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতিতে নতুন কোনও সামরিক মেরুকরণ হতে চলেছে। সেটাই আমরা দেখতে পেলাম ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পরিচালনার পর। যুক্তরাষ্ট্র যখন রাশিয়ার ওপর নানান ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চাপের মধ্যে ফেলে রাশিয়াকে কাবু করতে চাইছিলো, দেখা গেলো চীন সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়াকে। কেবল তাই নয়, উল্টো রাশিয়া যখন ইইউ’র দেশগুলোকে জ্বালানির দাম পরিশোধে রুবলের বাধ্যবাধকতা দিলো, ইউরোপের কয়েকটি দেশ সে পথেই গেছে। কারণ তাদের রাশিয়ার জ্বালানি দরকার। তাদের হাতে নেই দ্বিতীয় কোনও জ্বালানি কেনার উৎস। জার্মান রুবলেই কিনছে রাশিয়ান জ্বালানি তেল ও গ্যাস। আসন্ন শীতকালের আগেই রাশিয়ান গ্যাস ও তেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে না পেলে সংকট থেকেই যাবে, যা জার্মান জনজীবনে মারাত্মক ভয় জমিয়ে রাখবে। তারা মার্কিনি নিষেধাজ্ঞা না মেনে রুবলে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে জ্বালানির দাম পরিশোধ করে চলেছে। কিন্তু রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ লাইন সংস্কারের কথা বলে ২৫% কমিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ চাপের মধ্যে রেখেছে। রাশিয়ার গ্যাস-তেল ছাড়া ইউরোপ অন্ধকার—
এই বাস্তবতা কেবল বাদবাকি বিশ্বকেই চমকিত করেনি, মার্কিনি আধিপত্যকেও অনেকটাই নাজুক করে ফেলছে। সেই সাথে ইউরো-ডলার ও রুবলের সঙ্গে ইউয়ানের শক্তিও দেখা দিচ্ছে বিশ্ববাণিজ্যে । ইউরোপের অনেক দেশই যখন বিনিময় মুদ্রা হিসেবে রুবলকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে, তেমনি ইউয়ানের শক্তিও এশিয়ান আকাশে উদিত হচ্ছে। রাশিয়া তার ৬৩ হাজার কোটি টাকার রিজার্ভের ১৬ শতাংশ রেখেছে ডলারে, আর ১৩ শতাংশই রেখেছে ইউয়ানে। এই ঘটনা থেকেই প্রতীয়মান হয় যে এই দুই দেশ অনেক আগে থেকেই একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করে আসছে, যার সূচিমুখ দেখা গেলো মার্কিনি পণ্য ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পর। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এশিয়ার দেশগুলোকে একটি নতুন অর্থব্যবস্থায় চলতে হবে। তখন ডলারের যে একচ্ছত্র অধিপত্য ছিল এবং আজো আছে, তা অনেকটাই খর্ব হবে। কেন না, ডলারের পাশাপাশি ইউরোর দামও কমেছে এবং শঙ্কাতুর মানুষ দেখছে এই রাজনৈতিক-সামরিক খেলায় পৃথিবীর সাধারণ মানুষ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গণমানুষের কল্যাণ ও তাদের নিত্যপ্রয়োজনের কথা চিন্তা না করে কেবল শক্তির খেলায় মত্ত হওয়ার পেছনে দুরভিসন্ধিই কাজ করে। ন্যান্সি পেলোসির অকস্মাৎ তাইওয়ান সফর সম্পর্কে বলা যায়, তিনি স্বভাবগতভাবেই বোধহয় এ-রকম। তিনি যখন কেবল প্রতিনিধি পরিষদের ক্যালিফোরনিয়ার সাংসদ, এসেছিলেন বেইজিং সফরে। সে-সময়ই তিনি চীন সরকারকে না জানিয়ে উপস্থিত হন তিয়েনআনমেন স্কয়ারে। সেখানে তিনি একটি ছোট ব্যানার তুলে ধরেন। তাতে লেখা ছিল, চীনা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নির্যাতিত নেতাদের উদ্দেশে। তবে চীনা সরকারের লোকজন সঙ্গে সঙ্গেই ওই ব্যানার সরিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘটনা তিনি ব্যক্তিগতভাবে করেছিলেন। এবার যদিও সরকারকে জানিয়েই এসেছেন যে তিনি তাইওয়ান সফর করবেন। তার এই সফর যে বিতর্ক সৃষ্টি করবে এবং একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ভেঙে যেতে পারে এই শঙ্কা সত্ত্বেও, একজন জেষ্ঠ্য রাজনীতিক হয়ে তিনি ও তার সহকর্মী সফরসঙ্গীরা বুঝেননি? তার সঙ্গে সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যতই এটা বলুন না কেন, তিনি তাইওয়ান যেতে মানা করেছেন, কিন্তু সেটা হয়তো কূটনৈতিক শিষ্টাচারের কারণেই। অপ্রকাশ্যে কি তার গোপন সায়ও ছিল না পেলোসির এই সফরে? তিনি কি চাইছেন চীনের সঙ্গে একটি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক যুক্তরাষ্ট্র? তার দেশের ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির মালিকদের চাপে পড়েই কি তিনি ওই নরম ভাষায় বলেছেন তাইওয়ানে এই সময় যাওয়া ঠিক হবে না?
অন্যদিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়দার প্রধান জাওয়াহিরিকে ড্রোনের মাধ্যমে রকেট হামলা করে হত্যার পর জো বাইডেন বলেছেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো। বিচারটি কোথায় হলো? মানছি আল কায়দা সন্ত্রাসী সংগঠন। কিন্তু আল কায়দার নির্মাতা লাদেন তো মার্কিনি প্রোডাক্ট। রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) আফগানিস্তান দখল করে নেওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎখাতে সামরিক সাহায্য দেয়। আর ওসামা বিন লাদেনকে আল কায়দা সৃষ্টির সব উপকরণ উপাদান, ট্রেনিং,অস্ত্র দেয়। লাদেনের সশস্ত্র সংগ্রামীরা সোভিয়েত সেনাদের তাড়াতে সাহায্য করায় আফগানিস্তান দখলমুক্ত হয়। সেই ইতিহাস নিশ্চয়ই মার্কিনি চেতনায় আছে।
জাওয়াহিরিকে হত্যার কয়েক বছর আগে ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানি মাটি থেকে তুলে এনেছিলো মার্কিনি সামরিক গোয়েন্দাবাহিনীর একটি দল। এমনও মিথ আছে– সেই বিমানটি আটলানটিকে ধ্বংস হয়ে যায়। বলা হয় অ্যাক্সিডেন্ট, কিন্তু আসলে দূরপাল্লার রকেট হামলায় ওই বিমান ধ্বংস করা হয়েছিলো বলে মনে করা হয়। সত্যটা লুকিয়ে আছে মার্কিনি গোপন নথিতে। এই দুটি হত্যাকা-কে বাইডেন প্রশাসন মনে করে সন্ত্রাসীদের হত্যা করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মার্কিনিদের এই ধরনের হত্যাকা- যে সন্ত্রাসী দমনের পরও মানুষ হত্যা, এটা কেন তারা মনে রাখে না? যে উপায়ে লাদেন ও জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হয়েছে, সেই কায়দাটা সন্ত্রাসীদের পথ। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে আমরা সন্ত্রাস বলে অভিহিত করি না। দৃষ্টিভঙ্গিগত বিষয় এখানে লুকিয়ে আছে। মানুষ হত্যাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিলেই তা অপরাধী হত্যা হিসেবে গণ্য হবে না। ভিকটিম বিচারের মুখোমুখি হয় না।
আবার জাওয়াহিরি হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে আল কায়েদা এর প্রতিশোধ নিতে পারে যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে। তাদের এই রকম ধারণার পেছনেও রয়েছে আরেকটি পরিকল্পনা, যা নতুন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সব কিছু জেনে-বুঝেই তাইওয়ান সফর করেছেন। এবং তাইওয়ানকে আশ্বস্ত করেছেন যে তারা তাদের পাশে আছেন এবং থাকবেন। তার মানে এই যে গণচীনের রাজনৈতিক চিন্তাকে উসকে দিয়ে তার রেজাল্ট কী হয় তা পরখ করতেই যেন চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার চোখ তো দক্ষিণ চীন সাগরের তলদেশের খনিজ সম্পদ ও মৎস্য সম্পদের ওপর। ওই সম্পদ চীন একা ভোগ করুক তা মেনে নিতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ চীন সাগরের তীরবর্তী দেশগুলোকে নানাভাবে উসকে দিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধারের ওয়াদা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনও সেই সব দেশের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ওভারল্যাপ করে নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটাও প্রতিবেশি দেশগুলোর প্রতি অন্যায় আচরণ। এই সব রাজনৈতিক ও পারস্পরিক সমস্যাকে কেন্দ্র করেই নানা পরিকল্পনার অংশ হচ্ছে পেলোসির তাইওয়ান সফর। আমরা মনে করি উত্তেজনা সামরিক মহড়ার বাইরে আসবে না। এই অঞ্চলে যুদ্ধ লেগে গেলে গোটা বিশ্ব পরিস্থিতি নারকীয় হয়ে যাবে, যা পরাশক্তিগুলো বিবেচ্য বিষয়। তা তারা করতে পারেন না। তাই আমরা আশ্বস্ত হয়ে আছি, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কোনও হানাহানির মধ্যে যাবে না।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক