চবি সংবাদদাতা : সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করার এক দফা দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও চবি অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও সিলেট রুটে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। শিডিউল বিপর্যয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধের কারণে দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস (৭২১) ও বিকেল ৩টায় মহানগর গোধূলি (৭০৩) যথাসময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। এ ছাড়া ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেনটি চট্টগ্রাম পাহাড়তলী রেলস্টেশনে আটকা রয়েছে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধের আগে সকালে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী সকল ট্রেন চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে।
এর আগে বেলা ১১টায় দেওয়ান হাটে রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে সকাল পৌনে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে চড়ে ১৭ কিলোমিটার দূরে দেওয়ান হাটে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মেধা না কোটা? মেধা- মেধা’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না, আর না, কোটার বিরুদ্ধে -লড়ায় হবে একসাথে’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়। প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চবি অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার দেওয়ান হাটে রেলপথ অবরোধ করেন তারা। বর্তমানে এক দফা দাবি আন্দোলন করছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। দাবি হলো- সব গ্রেডে সব প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।
রাবি-রুয়েট শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ
রাবি সংবাদদাতা
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভে যোগ দেন। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আন্দোলন করেন। এ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। এর আগে, বেলা ১১টার দিকে সকল হল থেকে প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে এক বিশাল মিছিল নিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ‘মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ এমন সব স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পুরো ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেওয়া আবির মাহমুদ বলেন, ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ আমরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেছি। তবে অনেকদিন যাত্রীদের কথা চিন্তা করেছি এখন আর করবো না। আমাদের দেশে শিক্ষিত যুবকের অভাব নেই কিন্তু তারপরও এই কোটার মাধ্যমে চাকরি দিয়ে শিক্ষিত বেকার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর দায় কার? কোটা পদ্ধতির সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এ সময় রুয়েটের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা রুয়েটের সকল শিক্ষার্থী আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছি। শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব আমাদের এ আন্দোলন বাস্তবায়ন করা। আপিল বিভাগ রায় না দিয়ে আজও চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন। তারা এখনো শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় দিচ্ছেন না। রায় আমাদের পক্ষে না আসা পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে। রাজশাহীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আমান উল্লাহ খান বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছি। কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আমাদের আন্দোলনও চলমান থাকবে। এ সময় প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ সমাবেশে অবস্থান নেন।
রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ
রংপুর সংবাদদাতা
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার ও ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি আদায়ে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা প্রত্যাখ্যান করেন তারা। সুষ্ঠু সমাধান না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবুধবার (১০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। পরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড় হয়ে রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তারা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আদালতের স্থিতাবস্থা প্রত্যাখ্যান করেছেন জানিয়ে বেরোবির বাংলা বিভাগের শামসুর রহমান সুমন বলেন, আদালত ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রেখেছে। তবে এখানে কিছু আইনি দুর্বলতা থাকার সুযোগ রয়েছে। আমরা কোটা নিয়ে স্থায়ী সমাধান চাই। সব গ্রেডে অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় আনতে হবে। বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শিহাব মন্ডল বলেন, আমরা বারবার টালবাহানা দেখতে চাই না। আন্দোলন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা দেশের সুনাগরিক হতে চাই। আমরা চাই, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারি চাকরিতে বৈষম্যহীন কোটা ব্যবস্থা চলে আসুক, যেটা বার বার পরিবর্তনের দরকার হবে না। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আহসান হাবিব বলেন, আমাদের দাবি হচ্ছে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা বাতিল করে সকল পক্ষের জন্য মোট ৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে। তাই কোটা সংস্কারের বিষয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সড়কের দুইপাশ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদেরও দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন -‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’ ‘আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি।