ঢাকা ১০:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোটা আন্দোলনের অবরোধ-সংঘাতে অচল রাজধানী :ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৬

  • আপডেট সময় : ০৩:৪১:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
  • ১৮২ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় দুইজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আরও কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই আন্দোলনে গতকাল মঙ্গলবারও উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা।
বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এ সময় কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। চট্টগ্রামে নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া আহত অন্তত ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক নুজহাত ইমু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নিহত দুজনের মধ্যে ফারুকের বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। ওয়াসিমের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত অপরজনের পিঠেও গুলির চিহ্ন জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন। নিহত ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. রিফাতুল ইসলাম বলেছেন, বিকেলে ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তায় একদল লোককে এক ব্যক্তিকে পেটাতে দেখেন। পরে জানতে পেরেছেন, তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা গেছেন। রাত সোয়া আটটার দিকে জানা যায়, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় এলাকায় সাংঘর্ষেও ঘটনায় আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তাঁর মৃত্যু হয় বলে পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা দুইটার দিকে ওই মিছিলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এর পর থেকে ওই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এরই মধ্যে বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর সেখানে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।
রংপুরেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত আবু সাঈদ (২২) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সদস্য ছিলেন। মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে আহত হন আবু সাঈদ। পরে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।
স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা: এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব স্কুল, কলেজ ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক (স্কুল) ও উচ্চমাধ্যমিক (কলেজ) পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
অবরোধ, সংঘাতে অচল রাজধানী: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবারও উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা। নগরীরর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়, গাবতলী-মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, নতুন বাজার, মধ্যবাড্ডা থেকে শুরু করে নদ্দা/বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কুড়িল বিশ্বরোড, মহাখালী-বনানী সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। সকাল থেকে ছোট ছোট দলে যুক্ত হয়ে তারা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারসহ কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। রাস্তা অবরোধের কারণে সড়কগুলোতে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। সাইন্সল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা, গাবতলী-মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), নতুন বাজার/সাতারকুল এলাকায় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), মধ্যবাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নদ্দা/বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, কুড়িল বিশ্বরোডে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে বিইউবিটি ও মিরপুর বাঙলা কলেজ, মহাখালী-বনানী সড়কে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরায় সাধারণ শিক্ষার্থী, তাঁতীবাজার এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থী, বেইলিরোড মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নতুন বাজারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা অবরোধ শুরু করেন। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কয়েকশ শিক্ষার্থী নতুন বাজার সিগন্যালের সামনে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় নতুনবাজার এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধের কারণে রাস্তায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীদের নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে বাড্ডা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডমুখী সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। বনশ্রী ও আবুল হোটেল হয়ে আসা গণপরিবহন দীর্ঘ জটে পড়ে। অনেকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে হাতিরঝিল বেছে নেন। একই এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যুক্ত হন।
বেড়িবাঁধে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: কোটা বাতিল এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা। ফলে রাজধানীর গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে ধানমন্ডি সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অচল মিরপুর ১০: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) ও বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টার পর রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। রাস্তা অবরোধের ফলে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর ঘিরে থাকা সবগুলো সড়কে বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন: কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন রাজধানীর নীলক্ষেতের গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা। এ দিন সকাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেননি। একইসঙ্গে তাদেরকে ‘বয়কট এক্সাম, বয়কট ক্লাস’ প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ: অন্যদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে পল্টন চায়না টাওয়ার সামনে দিয়ে আবার নয়াপল্টন এসে মিছিলটি শেষ হয়।
গুলিতে আহত জগন্নাথের ৪ শিক্ষার্থী: কোটা সংস্কারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির ঘটনায় চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে রায়সাহেব বাজার অতিক্রম করার সময় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস, ১৭ ব্যাচের অন্তু ও অনিকসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আতঙ্কে ঢাবির হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তেজনা আর নিরাপত্তা শঙ্কায় হল ছাড়ছেন অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অনেক শিক্ষার্থীকে হয়রানি ও মারধর করেছে। এতে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিজয় একাত্তর হল, রোকেয়া হল, কবি জসীম উদ্দিন হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হলসহ প্রায় সব হল থেকেই শিক্ষার্থীদের অনেকেই বেরিয়ে গেছেন। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যাগ গুছিয়ে হল ছাড়তে দেখা গেছে। পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
আন্দোলনকারীদের হামলায় আহত ঢাবি’র সহকারী প্রক্টর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. আবদুল মুহিত সেই এলাকায় গেলে তার ওপর চড়াও হয় আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল দেখে তিনি দৌড় দিলে তাকে লক্ষ্য করে লাঠি-সোটা দিয়ে আঘাত করতে থাকে বেশ কয়েকজন। একপর্যায়ে তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। উঠে দৌড় দিলে তাকে ধাওয়া দিয়ে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা।
ঢাবিতে দেশীয় অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ, নিশ্চুপ প্রশাসন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশকে কেন্দ্র করে লাঠি, বাঁশ, রড, হকিস্টিক হাতে হেলমেট পরে জড়ো হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংঘঠনটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের দেখা যায়। তবে দেশীয় অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ নেতারা মহড়া দিলেও নিশ্চুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আমরা কোনো ধরনের সংঘাতে যেতে চাই না: ছাত্রলীগ: ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেছেন, আমরা কোনো ধরনের সংঘাতে যেতে চাই না, সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। যেকোনো বিষয় যৌক্তিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে তিনি এ কথা বলেন। ইনান বলেন, রাজাকারদের আস্ফালন শুধু ছাত্রলীগ নয় দেশের কেউই মেনে নেবে না।
মেট্রোরেলের ভেতরে সংঘর্ষ: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ছড়িয়ে পরেছে মেট্রোরেলের ভেতরেও। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩টায় মেট্রোরেলের ফার্মগেট স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। স্টেশনে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, ফার্মগেট থেকে ছাত্রলীগের একটি দল খামারবাড়ি অভিমুখে স্লোগান নিয়ে যেতে থাকে। এমন সময় খামারবাড়ি মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি জমায়েত দেখলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। লাঠি নিয়ে ধাওয়া দিলে আন্দোলনকারীরা দৌড়ে মেট্রোরেলের স্টেশনে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানেও ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠি নিয়ে আন্দোলনকারীদের পেটাতে থাকে। এক সময় তারা পেইড জোনে প্রবেশ করে আন্দোলনকারীদের পেটায়। এসময় উপস্থিত মেট্রোরেল পুলিশের সদস্যরা ছাত্রলীগ কর্মীদের থামাতে স্টেশন থেকে তাদের নামিয়ে দেয়।
বেইলি রোড অবরোধ করলো ভিকারুননিসার ছাত্রীরা: হামলার প্রতিবাদে এবার আন্দোলনে নেমেছেন রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরের পর তার বেইলি রোডে অবরোধ করেন। এ ছাড়া, বেইলি রোডে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
উল্লেখ্য, রোববার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে।
রাবিতে হলে ঢুকে মোটরসাইকেলে আগুন, ব্যাপক ভাঙচুর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ঢুকে তারা ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এ সময় হলের ভেতরে থাকা অন্তত ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কোটা আন্দোলনের অবরোধ-সংঘাতে অচল রাজধানী :ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৬

আপডেট সময় : ০৩:৪১:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় দুইজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আরও কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই আন্দোলনে গতকাল মঙ্গলবারও উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা।
বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এ সময় কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। চট্টগ্রামে নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া আহত অন্তত ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক নুজহাত ইমু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নিহত দুজনের মধ্যে ফারুকের বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। ওয়াসিমের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত অপরজনের পিঠেও গুলির চিহ্ন জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন। নিহত ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. রিফাতুল ইসলাম বলেছেন, বিকেলে ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তায় একদল লোককে এক ব্যক্তিকে পেটাতে দেখেন। পরে জানতে পেরেছেন, তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা গেছেন। রাত সোয়া আটটার দিকে জানা যায়, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় এলাকায় সাংঘর্ষেও ঘটনায় আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তাঁর মৃত্যু হয় বলে পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা দুইটার দিকে ওই মিছিলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এর পর থেকে ওই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এরই মধ্যে বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর সেখানে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।
রংপুরেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত আবু সাঈদ (২২) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সদস্য ছিলেন। মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে আহত হন আবু সাঈদ। পরে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।
স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা: এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব স্কুল, কলেজ ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক (স্কুল) ও উচ্চমাধ্যমিক (কলেজ) পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
অবরোধ, সংঘাতে অচল রাজধানী: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবারও উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা। নগরীরর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়, গাবতলী-মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, নতুন বাজার, মধ্যবাড্ডা থেকে শুরু করে নদ্দা/বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কুড়িল বিশ্বরোড, মহাখালী-বনানী সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। সকাল থেকে ছোট ছোট দলে যুক্ত হয়ে তারা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারসহ কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। রাস্তা অবরোধের কারণে সড়কগুলোতে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। সাইন্সল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা, গাবতলী-মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), নতুন বাজার/সাতারকুল এলাকায় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), মধ্যবাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নদ্দা/বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, কুড়িল বিশ্বরোডে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে বিইউবিটি ও মিরপুর বাঙলা কলেজ, মহাখালী-বনানী সড়কে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরায় সাধারণ শিক্ষার্থী, তাঁতীবাজার এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থী, বেইলিরোড মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নতুন বাজারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা অবরোধ শুরু করেন। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কয়েকশ শিক্ষার্থী নতুন বাজার সিগন্যালের সামনে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় নতুনবাজার এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধের কারণে রাস্তায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীদের নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে বাড্ডা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডমুখী সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। বনশ্রী ও আবুল হোটেল হয়ে আসা গণপরিবহন দীর্ঘ জটে পড়ে। অনেকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে হাতিরঝিল বেছে নেন। একই এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যুক্ত হন।
বেড়িবাঁধে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: কোটা বাতিল এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা। ফলে রাজধানীর গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে ধানমন্ডি সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অচল মিরপুর ১০: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) ও বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টার পর রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। রাস্তা অবরোধের ফলে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর ঘিরে থাকা সবগুলো সড়কে বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন: কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন রাজধানীর নীলক্ষেতের গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা। এ দিন সকাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেননি। একইসঙ্গে তাদেরকে ‘বয়কট এক্সাম, বয়কট ক্লাস’ প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ: অন্যদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে পল্টন চায়না টাওয়ার সামনে দিয়ে আবার নয়াপল্টন এসে মিছিলটি শেষ হয়।
গুলিতে আহত জগন্নাথের ৪ শিক্ষার্থী: কোটা সংস্কারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির ঘটনায় চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে রায়সাহেব বাজার অতিক্রম করার সময় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস, ১৭ ব্যাচের অন্তু ও অনিকসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আতঙ্কে ঢাবির হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তেজনা আর নিরাপত্তা শঙ্কায় হল ছাড়ছেন অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অনেক শিক্ষার্থীকে হয়রানি ও মারধর করেছে। এতে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিজয় একাত্তর হল, রোকেয়া হল, কবি জসীম উদ্দিন হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হলসহ প্রায় সব হল থেকেই শিক্ষার্থীদের অনেকেই বেরিয়ে গেছেন। বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যাগ গুছিয়ে হল ছাড়তে দেখা গেছে। পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
আন্দোলনকারীদের হামলায় আহত ঢাবি’র সহকারী প্রক্টর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মো. আবদুল মুহিত সেই এলাকায় গেলে তার ওপর চড়াও হয় আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল দেখে তিনি দৌড় দিলে তাকে লক্ষ্য করে লাঠি-সোটা দিয়ে আঘাত করতে থাকে বেশ কয়েকজন। একপর্যায়ে তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। উঠে দৌড় দিলে তাকে ধাওয়া দিয়ে হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা।
ঢাবিতে দেশীয় অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ, নিশ্চুপ প্রশাসন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশকে কেন্দ্র করে লাঠি, বাঁশ, রড, হকিস্টিক হাতে হেলমেট পরে জড়ো হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংঘঠনটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের দেখা যায়। তবে দেশীয় অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ নেতারা মহড়া দিলেও নিশ্চুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আমরা কোনো ধরনের সংঘাতে যেতে চাই না: ছাত্রলীগ: ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেছেন, আমরা কোনো ধরনের সংঘাতে যেতে চাই না, সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। যেকোনো বিষয় যৌক্তিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে তিনি এ কথা বলেন। ইনান বলেন, রাজাকারদের আস্ফালন শুধু ছাত্রলীগ নয় দেশের কেউই মেনে নেবে না।
মেট্রোরেলের ভেতরে সংঘর্ষ: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ছড়িয়ে পরেছে মেট্রোরেলের ভেতরেও। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩টায় মেট্রোরেলের ফার্মগেট স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। স্টেশনে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, ফার্মগেট থেকে ছাত্রলীগের একটি দল খামারবাড়ি অভিমুখে স্লোগান নিয়ে যেতে থাকে। এমন সময় খামারবাড়ি মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি জমায়েত দেখলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। লাঠি নিয়ে ধাওয়া দিলে আন্দোলনকারীরা দৌড়ে মেট্রোরেলের স্টেশনে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানেও ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠি নিয়ে আন্দোলনকারীদের পেটাতে থাকে। এক সময় তারা পেইড জোনে প্রবেশ করে আন্দোলনকারীদের পেটায়। এসময় উপস্থিত মেট্রোরেল পুলিশের সদস্যরা ছাত্রলীগ কর্মীদের থামাতে স্টেশন থেকে তাদের নামিয়ে দেয়।
বেইলি রোড অবরোধ করলো ভিকারুননিসার ছাত্রীরা: হামলার প্রতিবাদে এবার আন্দোলনে নেমেছেন রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরের পর তার বেইলি রোডে অবরোধ করেন। এ ছাড়া, বেইলি রোডে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
উল্লেখ্য, রোববার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে।
রাবিতে হলে ঢুকে মোটরসাইকেলে আগুন, ব্যাপক ভাঙচুর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ঢুকে তারা ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এ সময় হলের ভেতরে থাকা অন্তত ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।