প্রত্যাশা ডেস্ক: কাতারের কাছ থেকে বিলাসবহুল বোয়িং জেট উপহার হিসেবে নিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এয়ার ফোর্স ওয়ান বা প্রেসিডেন্টের সরকারি বিমান হিসেবে ব্যবহারের জন্য এটিকে কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে গ্রহণ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
গত রোববার (১১ মে) রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প নিজেই এই পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে ডেমোক্র্যাট এবং ‘গুড গভর্নেন্স’ কর্মীরা বলেছেন, কাতারের পক্ষে এমন উপহার দেওয়া অনৈতিক এবং সংবিধানবিরোধী। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘তথ্যটি হলো, প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি উপহার পাচ্ছে- একেবারেই বিনামূল্যে – একটি ৭৪৭ বিমান, যা ৪০ বছর পুরোনো এয়ার ফোর্স ওয়ানের (প্রেসিডেন্টের সরকারি বিমান) বিকল্প হিসেবে অস্থায়ীভাবে ব্যবহৃত হবে। এটি একটি খোলামেলা ও স্বচ্ছ লেনদেন। অথচ দুর্নীতিপরায়ণ ডেমোক্র্যাটরা এতটাই বিরক্ত যে তারা বলছে, আমাদের ‘সর্বোচ্চ ডলার’ দিয়ে এই বিমান কিনতে হবে।’
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বিলাসবহুল বিমানটি মার্কিন সরকারের ইতিহাসে পাওয়া অন্যতম মূল্যবান বা সবচেয়ে ব্যয়বহুল উপহার হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের মেয়াদ শেষে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের জন্য বিমানটি রেখে দিতে চান তিনি।
নতুন বাণিজ্যিক বোয়িং ৭৪৭–৮ জাম্বো জেট নামের বিমানটির মূল্য আনুমানিক ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রোববার প্রথম এই উপহার দেওয়ার পরিকল্পনার খবর প্রকাশ করে এবিসি নিউজ। তাদের প্রতিবেদনে বিমানটিকে ‘উড়ন্ত প্রাসাদ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টদের উপহার নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম রয়েছে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বিদেশি সরকার থেকে দেওয়া যেকোনও উপহার সম্পূর্ণভাবে প্রযোজ্য সব আইন মেনে গ্রহণ করা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার কাতারের সৌজন্যে ট্রাম্পের এয়ার ফোর্স ওয়ান গ্রহণের বিষয়টিকে শুধু ঘুষই নয়, বরং অতিরিক্ত বিদেশি প্রভাব বলে অভিহিত করেছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে জানানো হয়, কাতারের মুখপাত্র আলি আল-আনসারি জানিয়েছেন যে বিমান হস্তান্তরের বিষয়টি এখনও বিবেচনায় রয়েছে। এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা কোনো বিদেশি রাষ্ট্র থেকে উপহার গ্রহণ করতে পারবেন না।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিক্স’ নামক সুশাসন সংস্থার একজন মুখপাত্র জর্ডান লিবোভিটজ বলেন, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া বিদেশি সরকারের কাছ থেকে মার্কিন কর্মকর্তার উপহার গ্রহণের বিষয়ে সংবিধানের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই লেনদেন সেই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করতে পারে।
তিনি বলেন, এটি দেখতে অনেকটাই এমন, যেন এমন একটি দেশ, যেখানে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে, সেই দেশ প্রেসিডেন্টকে তার রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ঠিক আগে ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের উপহার দিচ্ছে।
এবিসি নিউজ আরো জানায়, হোয়াইট হাউজের কনসেল অফিস এবং বিচার বিভাগ বিষয়টি নিয়ে একটি আইনি বিশ্লেষণ প্রস্তুত করেছে। এতে বলা হয়েছে — উপহারটি বৈধ এবং এটা কোনো ঘুষ নয়। কেননা, কোনো নির্দিষ্ট সুবিধা বা কাজের বিনিময়ে এটি নেওয়া হচ্ছে না। এটি প্রথমে মার্কিন বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরে প্রেসিডেন্টের সংগ্রহশালায় দেওয়া হবে। ফলে এটি ব্যক্তিগত উপহার হিসেবে বিবেচিত হবে না। এই সপ্তাহে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে কাতার ভ্রমণ করবেন।