ঢাকা ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ওয়ার্ল্ডফিশের জি৩ রুই বাড়ে ‘৩০% দ্রুত’

  • আপডেট সময় : ০৩:০৫:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংশাদেশে রুই মাছের ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ সংক্ষেপে জি৩ নামে একটি নতুন উদ্ভাবন করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশ। এ জাতের রুই প্রচলিত জাতের চেয়ে ৩০ শতাংশ দ্রুত বড় হয় বলে জানিয়েছে তারা।
গত রোববার ওয়ার্ল্ডফিশ ও বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের যৌথ আয়োজনে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ বছর থেকেই নতুন জাতের এই রুইয়ের পোনা সংগ্রহ করতে পারবেন মাছ চাষিরা। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যের বরাতে অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশে বছরে ৪৫ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ২৬ লাখ টন মাছের চাষ হয় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পাওয়া ডিম ও পোনা থেকে। অথচ জিনগতভাবে ভালো বৈশিষ্টের মাছের ডিমের ঘাটতি থাকায় রপ্তানি ও মুনাফা অর্জনের বিচারে দেশের চাষিরা রুই মাছ চাষের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছেন না।
ওয়ার্ল্ডফিশের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বিনয় কুমার বর্মণ বলেন, “জি৩-এর মত জেনেটিকেলি ইম্প্রুভড মাছের জাত ঠিকমত লালনপালন করতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা আরও বেশি মাছ উৎপাদন করতে পারব। (দেশে মাছের) উৎপাদন ২০৪০ সাল নাগাদ দ্বিগুণ করতে চাই আমরা।”
তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ হয়ত ধারণা করতে পারে যে জি৩ জাতের মাছ তাদের জন্য ক্ষতিকর হবে, কিন্তু এখানে ক্ষতি হওয়ার মত কিছু নেই। একটি দীর্ঘ ও বিস্তৃত বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই জাতটি বেছে নেওয়া হয়েছে। আমরা বেশ কয়েকটি নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করার পর সবচেয়ে ভালোটি বেছে নিয়েছি। এই জি৩ জাতটি হচ্ছে সর্বোত্তম।” ওয়ার্ল্ডফিশ ২০২০ ও ২০২১ সালে বেশ কয়েকটি হ্যাচারিতে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনের জন্য রুই মাছের জি৩ জাতের ডিম ও পোনা সরবরাহ করে। পোনা উৎপাদনের হ্যাচারি ও মাছ চাষিদের সংগ্রহ করার জন্য ওইসব (পরীক্ষামূলক) হ্যাচারিতে মাছগুলো বড় হয় এবং ডিম ছাড়ে।
মৎস্য অধিদপ্তরের যশোর শাখার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, “ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত জি৩ জাতের রুই মাছ আসন্ন বছরে সরকারের মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হালদা, পদ্মা ও যমুনা নদী থেকে সংগ্রহ করা রুই মাছের ডিমের জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নত জাত উদ্ভাবনে ওয়ার্ল্ডফিশের এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১২ সালে। উদ্ভাবকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খামারে এই জাতের মাছের উৎপাদন সম্ভাবনা জানতে ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী বিভাগের ৯টি ও খুলনা বিভাগের ১০টি খামারে রুইয়ের জি৩ জাতের চাষ করেছেন তারা। এসব খামার দেশের মৎস্য খামারগুলোর সবচেয়ে বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করছে। সেখানে হালদা, পদ্মা ও যমুনা নদীর প্রাকৃতিক রুইয়ের ডিম, দেশের একটি হ্যাচারি থেকে বাণিজ্যিক চাষের জন্য ব্যবহার করা ডিম ও ওয়ার্ল্ডফিশের ‘জেনেটিকালি ইম্প্রুভড’ ডিম থেকে পোনা উৎপাদন করে মাছ বড় করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই ১৯টি খামারে জি৩ জাতের রুই সবচেয়ে দ্রুত বড় হয়েছে এবং অন্য জাতের চেয়ে এই জাতের মাছের ওজন গড়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। ওয়ার্ল্ডফিশের ডিসেমিনেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, “উদ্ভাবিত জাতের মাছ চাষের পরীক্ষামূলক এই ফলাফল মৎস্যচাষিদের উৎসাতি করবে এবং আসন্ন বছরগুলোতে আরও বেশি সংখ্যক মৎস্য চাষি উন্নত জাতের এই রুই চায়ে উৎসাহিত হবেন।”
রুই ছাড়াও কাতলা এবং সিলভার কার্প মাছের উন্নতর জাত উদ্ভাবনে কাজ করার কথা জানিয়েছে ওয়ার্ল্ডফিশ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ওয়ার্ল্ডফিশের জি৩ রুই বাড়ে ‘৩০% দ্রুত’

আপডেট সময় : ০৩:০৫:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংশাদেশে রুই মাছের ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ সংক্ষেপে জি৩ নামে একটি নতুন উদ্ভাবন করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশ। এ জাতের রুই প্রচলিত জাতের চেয়ে ৩০ শতাংশ দ্রুত বড় হয় বলে জানিয়েছে তারা।
গত রোববার ওয়ার্ল্ডফিশ ও বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের যৌথ আয়োজনে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ বছর থেকেই নতুন জাতের এই রুইয়ের পোনা সংগ্রহ করতে পারবেন মাছ চাষিরা। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যের বরাতে অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশে বছরে ৪৫ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ২৬ লাখ টন মাছের চাষ হয় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পাওয়া ডিম ও পোনা থেকে। অথচ জিনগতভাবে ভালো বৈশিষ্টের মাছের ডিমের ঘাটতি থাকায় রপ্তানি ও মুনাফা অর্জনের বিচারে দেশের চাষিরা রুই মাছ চাষের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছেন না।
ওয়ার্ল্ডফিশের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বিনয় কুমার বর্মণ বলেন, “জি৩-এর মত জেনেটিকেলি ইম্প্রুভড মাছের জাত ঠিকমত লালনপালন করতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা আরও বেশি মাছ উৎপাদন করতে পারব। (দেশে মাছের) উৎপাদন ২০৪০ সাল নাগাদ দ্বিগুণ করতে চাই আমরা।”
তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ হয়ত ধারণা করতে পারে যে জি৩ জাতের মাছ তাদের জন্য ক্ষতিকর হবে, কিন্তু এখানে ক্ষতি হওয়ার মত কিছু নেই। একটি দীর্ঘ ও বিস্তৃত বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই জাতটি বেছে নেওয়া হয়েছে। আমরা বেশ কয়েকটি নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করার পর সবচেয়ে ভালোটি বেছে নিয়েছি। এই জি৩ জাতটি হচ্ছে সর্বোত্তম।” ওয়ার্ল্ডফিশ ২০২০ ও ২০২১ সালে বেশ কয়েকটি হ্যাচারিতে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনের জন্য রুই মাছের জি৩ জাতের ডিম ও পোনা সরবরাহ করে। পোনা উৎপাদনের হ্যাচারি ও মাছ চাষিদের সংগ্রহ করার জন্য ওইসব (পরীক্ষামূলক) হ্যাচারিতে মাছগুলো বড় হয় এবং ডিম ছাড়ে।
মৎস্য অধিদপ্তরের যশোর শাখার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, “ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত জি৩ জাতের রুই মাছ আসন্ন বছরে সরকারের মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হালদা, পদ্মা ও যমুনা নদী থেকে সংগ্রহ করা রুই মাছের ডিমের জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নত জাত উদ্ভাবনে ওয়ার্ল্ডফিশের এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১২ সালে। উদ্ভাবকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খামারে এই জাতের মাছের উৎপাদন সম্ভাবনা জানতে ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহী বিভাগের ৯টি ও খুলনা বিভাগের ১০টি খামারে রুইয়ের জি৩ জাতের চাষ করেছেন তারা। এসব খামার দেশের মৎস্য খামারগুলোর সবচেয়ে বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করছে। সেখানে হালদা, পদ্মা ও যমুনা নদীর প্রাকৃতিক রুইয়ের ডিম, দেশের একটি হ্যাচারি থেকে বাণিজ্যিক চাষের জন্য ব্যবহার করা ডিম ও ওয়ার্ল্ডফিশের ‘জেনেটিকালি ইম্প্রুভড’ ডিম থেকে পোনা উৎপাদন করে মাছ বড় করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই ১৯টি খামারে জি৩ জাতের রুই সবচেয়ে দ্রুত বড় হয়েছে এবং অন্য জাতের চেয়ে এই জাতের মাছের ওজন গড়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। ওয়ার্ল্ডফিশের ডিসেমিনেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, “উদ্ভাবিত জাতের মাছ চাষের পরীক্ষামূলক এই ফলাফল মৎস্যচাষিদের উৎসাতি করবে এবং আসন্ন বছরগুলোতে আরও বেশি সংখ্যক মৎস্য চাষি উন্নত জাতের এই রুই চায়ে উৎসাহিত হবেন।”
রুই ছাড়াও কাতলা এবং সিলভার কার্প মাছের উন্নতর জাত উদ্ভাবনে কাজ করার কথা জানিয়েছে ওয়ার্ল্ডফিশ।