ঢাকা ০২:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এগিয়ে যাচ্ছে নগদ, নেতৃত্বে তানভির এ মিশুক

  • আপডেট সময় : ১২:২৩:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতি নাটকীয় গতিতে অগ্রসর হয়েছে। মাত্র ১০-১২ বছরের মধ্যেই বৈদেশিক সহায়তানির্ভর দেশ থেকে মধ্য আয়ের, উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে শিল্পোন্নত, উচ্চ আয়ের উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার লক্ষে অভূতপূর্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বের প্রেক্ষিতে অভূতপূর্ব এই উন্নয়নের পেছনে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে দেশের নিবেদিত প্রাণ কিছু মানুষ। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে স্বপ্ন, তরুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সাহসী নেতৃত্বের ফলে সম্ভব হয়েছে এই ক্রমোন্নয়ন।
দেশের বদলে দেওয়া অর্থনীতির এই ক্রমোন্নয়নের চিত্র আজ থেকে ১৫ বছর আগেও অন্যরকম ছিল। অধিকাংশ মানুষই ছিল ব্যাংকিং তথা অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে। ব্যাপক আকারে অবকাঠামো সুবিধা এবং জ্বালানির সহজলভ্যতা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক অগ্রসরতা বর্তমান অগ্রগতির তুলনায় বেশ খানিকটা কম। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ এর পরিকল্পনা দেশের উন্নয়ন চিত্র নাটকীয় বদলে দিয়েছে। দেশের তরুণ উদ্যোক্তা, শিল্প, বাণিজ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিপর্যায়, সব ক্ষেত্রই এর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।
দেশব্যাপী প্রতি ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া এসে পড়ে দেশের টেলিকম, ব্যাংকিং এবং অর্থনৈতিক খাতেও। ২০১১ সালে দেশের দেশে প্রথম চালু হয় এমএফএস বা মোবাইল ফিনেন্সিয়াল সার্ভিস। ব্্র্যাক ব্যাংক দেশে প্রথমবারের মতো মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে। এরপরই বদলে যেতে থাকে দেশের অর্থলেনদেনের চিত্র। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সংযুক্ত হয় দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষেরা। সহজ লেনদেন ও অর্থের প্রবাহ প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে যাবার চিত্র সরাসরি দেখা যায় দেশের সার্বিক উন্নয়ন চিত্রে। দেশব্যাপী বিস্তৃত মোবাইল নেটওয়ার্ক এ ক্ষেত্রে একটি দ্রুত ও দক্ষ মাধ্যম হিসেবে উঠে আসে।
বিকাশের পাশাপাশি দেশের এমএফএস এ আরো বেশ কিছু কোম্পানি যুক্ত হয়। যার ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরো বেশি দৃশ্যমান হয়। দৃশ্যমান হয় সাধারণ মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা। তবে দ্রুত জনপ্রিয় এই অর্থ লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখিও হতে হয়েছিলো গ্রহকদের। যার একটি, উচ্চ সার্ভিস চার্জ বা লেনদেনে অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন হার। বাজারের এই মনোপলি ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে দেশের অন্যতম প্রাচীণ সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এবং ব্যাক্তিমালিকানার সমন্বয়ে বাজারে আসে মোবাইল লেনদেন ব্যবস্থা, ‘নগদ’।
বাজারে আসার স্বল্প সময়েই পিপিপি অর্থাৎ পাবলিক প্রইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠান ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। নগদ বাজারে আসার সাথে সাথেই লেনদেনে সার্ভিস চার্জের ক্ষেত্রে উচ্চ মূল্যের মনোপলি ভেঙ্গে ফেলে প্রতিষ্ঠানটি। পার্সন টু পার্সন লেনদেন, তুলনামূলক কম সার্ভিস চার্জ এবং ডাকবিভাগের সম্পৃক্ততার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষের আস্থার কেন্দ্রে চলে আসে। প্রতিষ্ঠানটি শুরুতেই মাত্র ১০ মাসের মধ্যে ১ কোটি ২২ লাখের বেশি মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনতে সক্ষম হয়েছে। ডিজিটাল লেনদেনের চালুর পূর্বে দেশে যেখানে ব্যাংকিং সিস্টেমের সাথে ২২ শতাংশ মানুষ জড়িত ছিলো সেখানে এমএসএফ এর প্রচেষ্টায় সেটি ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বলে হিসাববিদেরা ধারণা দিচ্ছেন।
বর্তমানে মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) বিকাশের পরই এখন নগদের অবস্থান। সেবাটির মাধ্যমে দৈনিক ৭০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। সহজে হিসাব খোলার সুবিধা ও ব্যবসার কৌশলের কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সেবাটি। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে নগদের।
থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালে মোবাইলে আর্থিক সেবা দিতে গড়ে ওঠে। প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী ও নগদের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রতিষ্ঠাতা তানভীর আহমেদের মালিকানায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে ডাক অধিদপ্তরের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার কাজ শুরু করে। ওয়েভ টেকনোলজিস নামের সেই প্রতিষ্ঠান থেকেই ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ দেশের অন্যতম প্রধান মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ‘নগদ’ নামে কার্যক্রম শুরু করে।
২০১০ সালে দেশে প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা শুরু হবার পর বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাঝে প্রতিষ্ঠানটি এখন দ্বিতীয় অবস্থানে। দেশের মোবাইল ব্যাংকিং এ মনোপলি বানিজ্য ভেঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ব্যাংকিং পৌঁছে দেবার পেছনে রয়েছে একজন প্রণবন্ত, চৌকশ এবং সাহসী তরুণ উদ্যোক্তা, তানভির এ মিশুক।
দেশ ডিজিটাল হবার সাথে সাথে যিনি এ সেক্টরের অন্যতম সম্ভাবনাময় ব্যক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
ডিজিটালাইজেশনের শুরু থেকেই এর অপার সম্ভাবনা বুঝতে পারেন তিনি। ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতের অপার সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত পরিস্থিতি বুঝতে পেরে, দেশ বিনির্মণের স্বপ্ন নিয়ে তিনি এ খাতে কাজ শুরু করেন। প্রখর মেধা বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টির কারণে এ সেক্টরে পথ চলা শুরুর সাথে সাথেই তিনি সাফল্যের দেখা পান।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে তানভির এ মিশুকের এই অব্যাহত পথ চলা শেষ পর্যন্ত তাকে পৌঁছে দেয় তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থিক নির্ভরশীলতার স্বপ্ন দেখা এই তরুণ ব্যাবসায়িক ব্যাক্তিত্ব এবং তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রনায়কের কারণে দেশের অসংখ্য মানুষ আজ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। দেশের সার্বিক অর্থনীতি এবং জিডিপিতে বড় অবদান রাখছে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান, ‘নগদ’।
তানভির এ মিশুকের একের পর এক অনন্য উদ্ভাবন ও গ্রাহকবান্ধব সেবার পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা মাত্র দুই বছরের কম সময়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এমএফএস অপারেটর হিসেবে নিজের অবস্থান দাঁড় করিয়েছে ‘নগদ’। *১৬৭# ডায়াল করে গত এক বছরে ‘নগদ’-এ যুক্ত হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ মানুষ, যা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে অ্যাকাউন্ট খোলার নতুন একটি রেকর্ড। যা গত এক বছরে গোটা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল খাতের চেহারাই বদলে দিয়েছে। নগদের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও সাড়া ফেলেছে। এর স্বীকৃতি হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এরই মধ্যে সম্মানজনক বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছে ‘নগদ’।
দেশে নগদের স্বল্প সময়ে এই অবিশ্বাস্য অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা ‘গ্লোবাল ব্যান্ডস ম্যাগাজিন’ এর ২০২২ সালের ফিনটেক পারসোনালিটি অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক। এ ছাড়া সেরা উদ্ভাবনী ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্র্যান্ড হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’।
নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুককে অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে তার ভূমিকার বিষয়টি জিবিএম মূল বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেছে। মাত্র তিন বছরের পথচলায় তিনি ‘নগদ’-এর মাধ্যমে ৫ কোটির বেশি মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এই জনসংখ্যার বেশিরভাগই একসময় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে ছিল।
কেবলমাত্র আর্থিক অন্তর্ভুক্তিই নয়, কোভিডকালীন মহামরির মাঝেও সামজিক দায়িত্ব পালন করেছে ‘নগদ’। ২০২০-২১ অর্থবছরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ৭৫ শতাংশ ভাতা বিতরণ করেছে ‘নগদ’।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই অব্যাহত অগ্রগতি সম্পর্কে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘বাজারে অনেক এমএফএস অপারেটর থাকলেও শুরু থেকেই আমরা খেয়াল করেছি, গ্রাহকের চাহিদা তারা পূরণ করতে পারছেন না। মূলত ডিজিটাল কুরিয়ার হিসেবে পাঠানোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে নতুন কিছু নেই। এ কারণই আমরা বাজারে আসি। গ্রাহক সেবা-ই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেজন্যেই আমরা শুরু থেকে কাজ করছি। সেন্ড মানি ফ্রি করে দেওয়া বা ক্যাশ আউট চার্জ প্রথমবারের মতো সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনাও সেই লক্ষ্য থেকেই করা। এছাড়া অন্যান্য সরকারি সেবার বিল পরিশোধও ‘নগদ’-এ একেবারেই ফ্রি। আমরা কেবল ব্যবসাই করছি না, আমরা সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতেই বাজারে নেমেছি।’
এইএমএফ এর বাজারে অনেক দেরিতে আসা প্রসঙ্গে তানভির এ মিশুক বলেন, ‘আসলে বাজার গবেষণার জন্যে আমারা একটু বেশি সময় নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিল, সেরা সেবা নিয়ে আসা। এজন্য বাংলাদেশের বাজারের উপযোগী ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণেও বেশি সময় নিয়েছি। তবে, বাজারে সেবা নিয়ে আসার পর এখন জোর গলায় বলতে পারি, আমাদের সেবাই সবচেয়ে বেশি কাজের। বাংলাদেশের সব নাগরিকই আমাদের টার্গেট গ্রাহক। তাই, সব গ্রাহকের কথা বিবেচনা করে আমরা সেবার কলেবর বড় করছি। সে কারণেই গ্রাম বা শহর সব জায়গায় আমরা সমান জনপ্রিয়। মূলত গ্রাহকবান্ধব সেবার কারণেই এখন প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহক আমাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছেন।’
দেশ গঠনের বিশ্বাস নিয়ে সরকারি ডাকবিভাগের সাথে ৫১-৪৯ অংশীদারিত্বে সৃষ্টি হওয়া এই আথিক প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ জনগণকে ডিজিটালি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রত্যয়ে নতুন পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট, সাহসী, উদ্যমী, আত্মপ্রত্যয়ী তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা তানভির এ মিশুকের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি আরো বেশি এগিয়ে যাবে, জনকল্যাণ ও অন্তর্ভুক্তির অথনীতিতে বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নেবে, সবার প্রত্যাশাটি এমনই।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এগিয়ে যাচ্ছে নগদ, নেতৃত্বে তানভির এ মিশুক

আপডেট সময় : ১২:২৩:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতি নাটকীয় গতিতে অগ্রসর হয়েছে। মাত্র ১০-১২ বছরের মধ্যেই বৈদেশিক সহায়তানির্ভর দেশ থেকে মধ্য আয়ের, উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে শিল্পোন্নত, উচ্চ আয়ের উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার লক্ষে অভূতপূর্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বের প্রেক্ষিতে অভূতপূর্ব এই উন্নয়নের পেছনে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে দেশের নিবেদিত প্রাণ কিছু মানুষ। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে স্বপ্ন, তরুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সাহসী নেতৃত্বের ফলে সম্ভব হয়েছে এই ক্রমোন্নয়ন।
দেশের বদলে দেওয়া অর্থনীতির এই ক্রমোন্নয়নের চিত্র আজ থেকে ১৫ বছর আগেও অন্যরকম ছিল। অধিকাংশ মানুষই ছিল ব্যাংকিং তথা অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে। ব্যাপক আকারে অবকাঠামো সুবিধা এবং জ্বালানির সহজলভ্যতা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক অগ্রসরতা বর্তমান অগ্রগতির তুলনায় বেশ খানিকটা কম। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ এর পরিকল্পনা দেশের উন্নয়ন চিত্র নাটকীয় বদলে দিয়েছে। দেশের তরুণ উদ্যোক্তা, শিল্প, বাণিজ্য থেকে শুরু করে ব্যক্তিপর্যায়, সব ক্ষেত্রই এর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।
দেশব্যাপী প্রতি ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া এসে পড়ে দেশের টেলিকম, ব্যাংকিং এবং অর্থনৈতিক খাতেও। ২০১১ সালে দেশের দেশে প্রথম চালু হয় এমএফএস বা মোবাইল ফিনেন্সিয়াল সার্ভিস। ব্্র্যাক ব্যাংক দেশে প্রথমবারের মতো মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে। এরপরই বদলে যেতে থাকে দেশের অর্থলেনদেনের চিত্র। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সংযুক্ত হয় দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষেরা। সহজ লেনদেন ও অর্থের প্রবাহ প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে যাবার চিত্র সরাসরি দেখা যায় দেশের সার্বিক উন্নয়ন চিত্রে। দেশব্যাপী বিস্তৃত মোবাইল নেটওয়ার্ক এ ক্ষেত্রে একটি দ্রুত ও দক্ষ মাধ্যম হিসেবে উঠে আসে।
বিকাশের পাশাপাশি দেশের এমএফএস এ আরো বেশ কিছু কোম্পানি যুক্ত হয়। যার ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরো বেশি দৃশ্যমান হয়। দৃশ্যমান হয় সাধারণ মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা। তবে দ্রুত জনপ্রিয় এই অর্থ লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখিও হতে হয়েছিলো গ্রহকদের। যার একটি, উচ্চ সার্ভিস চার্জ বা লেনদেনে অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন হার। বাজারের এই মনোপলি ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে দেশের অন্যতম প্রাচীণ সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এবং ব্যাক্তিমালিকানার সমন্বয়ে বাজারে আসে মোবাইল লেনদেন ব্যবস্থা, ‘নগদ’।
বাজারে আসার স্বল্প সময়েই পিপিপি অর্থাৎ পাবলিক প্রইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠান ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। নগদ বাজারে আসার সাথে সাথেই লেনদেনে সার্ভিস চার্জের ক্ষেত্রে উচ্চ মূল্যের মনোপলি ভেঙ্গে ফেলে প্রতিষ্ঠানটি। পার্সন টু পার্সন লেনদেন, তুলনামূলক কম সার্ভিস চার্জ এবং ডাকবিভাগের সম্পৃক্ততার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষের আস্থার কেন্দ্রে চলে আসে। প্রতিষ্ঠানটি শুরুতেই মাত্র ১০ মাসের মধ্যে ১ কোটি ২২ লাখের বেশি মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনতে সক্ষম হয়েছে। ডিজিটাল লেনদেনের চালুর পূর্বে দেশে যেখানে ব্যাংকিং সিস্টেমের সাথে ২২ শতাংশ মানুষ জড়িত ছিলো সেখানে এমএসএফ এর প্রচেষ্টায় সেটি ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বলে হিসাববিদেরা ধারণা দিচ্ছেন।
বর্তমানে মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) বিকাশের পরই এখন নগদের অবস্থান। সেবাটির মাধ্যমে দৈনিক ৭০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। সহজে হিসাব খোলার সুবিধা ও ব্যবসার কৌশলের কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সেবাটি। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে নগদের।
থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালে মোবাইলে আর্থিক সেবা দিতে গড়ে ওঠে। প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী ও নগদের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রতিষ্ঠাতা তানভীর আহমেদের মালিকানায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে ডাক অধিদপ্তরের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার কাজ শুরু করে। ওয়েভ টেকনোলজিস নামের সেই প্রতিষ্ঠান থেকেই ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ দেশের অন্যতম প্রধান মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ‘নগদ’ নামে কার্যক্রম শুরু করে।
২০১০ সালে দেশে প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা শুরু হবার পর বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাঝে প্রতিষ্ঠানটি এখন দ্বিতীয় অবস্থানে। দেশের মোবাইল ব্যাংকিং এ মনোপলি বানিজ্য ভেঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ব্যাংকিং পৌঁছে দেবার পেছনে রয়েছে একজন প্রণবন্ত, চৌকশ এবং সাহসী তরুণ উদ্যোক্তা, তানভির এ মিশুক।
দেশ ডিজিটাল হবার সাথে সাথে যিনি এ সেক্টরের অন্যতম সম্ভাবনাময় ব্যক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
ডিজিটালাইজেশনের শুরু থেকেই এর অপার সম্ভাবনা বুঝতে পারেন তিনি। ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতের অপার সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত পরিস্থিতি বুঝতে পেরে, দেশ বিনির্মণের স্বপ্ন নিয়ে তিনি এ খাতে কাজ শুরু করেন। প্রখর মেধা বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টির কারণে এ সেক্টরে পথ চলা শুরুর সাথে সাথেই তিনি সাফল্যের দেখা পান।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে তানভির এ মিশুকের এই অব্যাহত পথ চলা শেষ পর্যন্ত তাকে পৌঁছে দেয় তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থিক নির্ভরশীলতার স্বপ্ন দেখা এই তরুণ ব্যাবসায়িক ব্যাক্তিত্ব এবং তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রনায়কের কারণে দেশের অসংখ্য মানুষ আজ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। দেশের সার্বিক অর্থনীতি এবং জিডিপিতে বড় অবদান রাখছে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান, ‘নগদ’।
তানভির এ মিশুকের একের পর এক অনন্য উদ্ভাবন ও গ্রাহকবান্ধব সেবার পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা মাত্র দুই বছরের কম সময়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এমএফএস অপারেটর হিসেবে নিজের অবস্থান দাঁড় করিয়েছে ‘নগদ’। *১৬৭# ডায়াল করে গত এক বছরে ‘নগদ’-এ যুক্ত হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ মানুষ, যা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে অ্যাকাউন্ট খোলার নতুন একটি রেকর্ড। যা গত এক বছরে গোটা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল খাতের চেহারাই বদলে দিয়েছে। নগদের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও সাড়া ফেলেছে। এর স্বীকৃতি হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এরই মধ্যে সম্মানজনক বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছে ‘নগদ’।
দেশে নগদের স্বল্প সময়ে এই অবিশ্বাস্য অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা ‘গ্লোবাল ব্যান্ডস ম্যাগাজিন’ এর ২০২২ সালের ফিনটেক পারসোনালিটি অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক। এ ছাড়া সেরা উদ্ভাবনী ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্র্যান্ড হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’।
নগদের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুককে অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে তার ভূমিকার বিষয়টি জিবিএম মূল বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেছে। মাত্র তিন বছরের পথচলায় তিনি ‘নগদ’-এর মাধ্যমে ৫ কোটির বেশি মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এই জনসংখ্যার বেশিরভাগই একসময় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে ছিল।
কেবলমাত্র আর্থিক অন্তর্ভুক্তিই নয়, কোভিডকালীন মহামরির মাঝেও সামজিক দায়িত্ব পালন করেছে ‘নগদ’। ২০২০-২১ অর্থবছরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ৭৫ শতাংশ ভাতা বিতরণ করেছে ‘নগদ’।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই অব্যাহত অগ্রগতি সম্পর্কে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘বাজারে অনেক এমএফএস অপারেটর থাকলেও শুরু থেকেই আমরা খেয়াল করেছি, গ্রাহকের চাহিদা তারা পূরণ করতে পারছেন না। মূলত ডিজিটাল কুরিয়ার হিসেবে পাঠানোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে নতুন কিছু নেই। এ কারণই আমরা বাজারে আসি। গ্রাহক সেবা-ই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেজন্যেই আমরা শুরু থেকে কাজ করছি। সেন্ড মানি ফ্রি করে দেওয়া বা ক্যাশ আউট চার্জ প্রথমবারের মতো সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনাও সেই লক্ষ্য থেকেই করা। এছাড়া অন্যান্য সরকারি সেবার বিল পরিশোধও ‘নগদ’-এ একেবারেই ফ্রি। আমরা কেবল ব্যবসাই করছি না, আমরা সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতেই বাজারে নেমেছি।’
এইএমএফ এর বাজারে অনেক দেরিতে আসা প্রসঙ্গে তানভির এ মিশুক বলেন, ‘আসলে বাজার গবেষণার জন্যে আমারা একটু বেশি সময় নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিল, সেরা সেবা নিয়ে আসা। এজন্য বাংলাদেশের বাজারের উপযোগী ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণেও বেশি সময় নিয়েছি। তবে, বাজারে সেবা নিয়ে আসার পর এখন জোর গলায় বলতে পারি, আমাদের সেবাই সবচেয়ে বেশি কাজের। বাংলাদেশের সব নাগরিকই আমাদের টার্গেট গ্রাহক। তাই, সব গ্রাহকের কথা বিবেচনা করে আমরা সেবার কলেবর বড় করছি। সে কারণেই গ্রাম বা শহর সব জায়গায় আমরা সমান জনপ্রিয়। মূলত গ্রাহকবান্ধব সেবার কারণেই এখন প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহক আমাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছেন।’
দেশ গঠনের বিশ্বাস নিয়ে সরকারি ডাকবিভাগের সাথে ৫১-৪৯ অংশীদারিত্বে সৃষ্টি হওয়া এই আথিক প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ জনগণকে ডিজিটালি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রত্যয়ে নতুন পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট, সাহসী, উদ্যমী, আত্মপ্রত্যয়ী তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা তানভির এ মিশুকের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি আরো বেশি এগিয়ে যাবে, জনকল্যাণ ও অন্তর্ভুক্তির অথনীতিতে বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নেবে, সবার প্রত্যাশাটি এমনই।