ঢাকা ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদে জাল টাকার আতঙ্ক

  • আপডেট সময় : ০২:২১:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪
  • ৩৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেটে ধরা পড়ছে জাল টাকা। বিশেষ করে ঈদ মৌসুম এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল নোট কারবারিরা। ঈদের কেনাকাটার ভিড়ে সাধারণ ক্রেতা সেজে জাল টাকা দিয়ে সটকে পড়ছে এ চক্রের সদস্যরা। যেসব মার্কেট বা দেকানে বেচাকেনার ভিড় জমে, সেখানেই এমন অপরাধ কর্মকা- চালাচ্ছে তারা। এতে আতঙ্কে থাকেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার জাল টাকা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তারা বলছেন, এ বছর প্রতিদিনই জাল নোট ধরা পড়ছে। কখনও ক্রেতার সামনে আবার কখনও ব্যাংকে যাওয়ার পর জানা যাচ্ছে এসব টাকা জাল। রাজধানীর চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের দ্বিতলায় এম কে স্টাইলের কর্ণধার মোহাম্মদ রাজু বলেন, ঈদ, পূজা কিংবা বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে জাল টাকা কারবারিরা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত রমজানের চেয়ে এ বছর পাঁচ থেকে ছয়বার জাল টাকা পাওয়া গেছে। বেচাকেনার চাপে বা তাড়াহুড়োর মধ্যে তারা জাল টাকা দিয়ে দিচ্ছে। ফলে অনেক সময় এসব জাল টাকা ধরার উপায় থাকছে না। ব্যাংকে নিয়ে যাওয়ার পর জানা যাচ্ছে এসব টাকা জাল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, জাল টাকা কারবারিদের রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সময় অভিযান চালায়। বিভিন্ন সময় জাল টাকা কারবারিদের গ্রেফতার ও বিপুল পরিমাণে জাল টাকা ও জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হচ্ছে।
পুলিশ বলছে, আগে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জাল টাকা তৈরি করে ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতো। বর্তমানে অধিকাংশ কারবারি তাদের কৌশল পাল্টে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় আস্তানা গেড়ে জাল টাকা তৈরি করছে। এসব কারখানা দুর্গম এলাকায় হওয়ায় অভিযান চালিয়েও খুব একটা সফলতা পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত সোমবার সরেজমিনে রাজধানীর চাদনী চক, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট ও ঢাকা নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই অধিকাংশ দোকানে জাল টাকা ধরা পড়ছে। কখনও ক্রেতার সামনে আবার কখনও ক্রেতা চলে যাওয়ার পর জানা যাচ্ছে এসব জাল টাকা। এতে লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
চন্দিমা সুপার মার্কেটের প্যান্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, চক্রটি এমনভাবে জাল টাকা ঢুকিয়ে দেয়, যা স্বাভাবিকভাবে বোঝার উপায় থাকে না। তারা অনেক সূক্ষ্মভাবে জাল টাকার কারবার করে। যখন সাধারণ ক্রেতাদের অনেক ভিড় তৈরি হয়। তখন চক্রের একাধিক সদস্য দোকানের স্টাফদের নানাভাবে ব্যস্ত রেখে জাল টাকা দিয়ে দেয়। ফলে ধরার সুযোগ থাকে না। নিউ সুপার মার্কেটের তানিয়া ফ্যাশনের ম্যানেজার সুমন বলেন, জাল টাকা চক্রের কিছু নারী সদস্যও রয়েছে। তারা কেনাকাটার নামে দোকানের স্টাফদের বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখে। কিছু সময় আমাদের প্রচ- বিরক্ত করে তুলে। এ ছাড়া তাদের পোশাক ও আচার-ব্যবহারও অনেক ভালো থাকে। ফলে জাল টাকার সন্দেহ থাকে না কিংবা চেক করার সুযোগ থাকে না।
এ বিষয়ে নিউ সুপার মার্কেট (দ.) বণিক সমিতির প্রচার সম্পাদক আনিসুর রহমান রনি বলেন, জাল টাকা প্রতিরোধে আমরা ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে সতর্ক করছি। মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া জাল টাকা পেলেই সমিতির অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ঢাকা নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী গ্রুপের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, সারা বছরই জাল টাকা পাওয়া যায়। তবে ঈদ মৌসুমে একটু বেশি পাওয়া যায়। জাল টাকা চক্রের সদস্যরা ধুরন্ধর। তারা একসঙ্গে বেশ কয়েকজন একটি দোকানে ঢুকে কেনাকাটা করে এবং টাকা দেওয়ার সময় স্টাফদের নানাভাবে ব্যস্ত রাখে, যাতে টাকা চেক করে রাখার সুযোগ কম থাকে। তিনি আরও বলেন, জাল টাকা প্রতিরোধে আমরা প্রত্যেক ব্যবসায়ী ও স্টাফদের আরও সতর্ক করে তুলছি। কোনও কোনও ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন কিনছেন। তবে জাল টাকা প্রতিরোধে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন মনে করেন তিনি।
সম্প্রতি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার একটি দুর্গম এলাকায় জাল টাকার কারখানায় অভিযান চালায় র‌্যাব। গ্রেফতার করা হয় তিন কারবারিকে। এ সময় ২০ লাখ টাকার জাল নোট ও জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়। অন্যদিকে রাজধানীর বসুন্ধারা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোন। অভিযানে জাল টাকার কারবারি চক্রের মূল হোতা মোহাম্মদ ফয়েজ আহমেদ রাসেলসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ৮৩ হাজার টাকার জাল নোট ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
জানতে চাইলে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সহকারী পুলিশ কমশিনার (এসি) রাজন কুমার সাহা বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মার্কেটে এসব জাল নোট ছড়িয়ে দিতো চক্রটি। বেচাকেনা সরগরম হওয়ায় খুব সহজেই এসব জাল নোট ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে ছড়িয়ে দিচ্ছিল। পবিত্র রমজান মাস ও আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে সাধারণ মানুষের স্বার্থে জাল নোট কারবারিদের ধরতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঈদে জাল টাকার আতঙ্ক

আপডেট সময় : ০২:২১:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেটে ধরা পড়ছে জাল টাকা। বিশেষ করে ঈদ মৌসুম এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল নোট কারবারিরা। ঈদের কেনাকাটার ভিড়ে সাধারণ ক্রেতা সেজে জাল টাকা দিয়ে সটকে পড়ছে এ চক্রের সদস্যরা। যেসব মার্কেট বা দেকানে বেচাকেনার ভিড় জমে, সেখানেই এমন অপরাধ কর্মকা- চালাচ্ছে তারা। এতে আতঙ্কে থাকেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার জাল টাকা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তারা বলছেন, এ বছর প্রতিদিনই জাল নোট ধরা পড়ছে। কখনও ক্রেতার সামনে আবার কখনও ব্যাংকে যাওয়ার পর জানা যাচ্ছে এসব টাকা জাল। রাজধানীর চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের দ্বিতলায় এম কে স্টাইলের কর্ণধার মোহাম্মদ রাজু বলেন, ঈদ, পূজা কিংবা বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে জাল টাকা কারবারিরা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত রমজানের চেয়ে এ বছর পাঁচ থেকে ছয়বার জাল টাকা পাওয়া গেছে। বেচাকেনার চাপে বা তাড়াহুড়োর মধ্যে তারা জাল টাকা দিয়ে দিচ্ছে। ফলে অনেক সময় এসব জাল টাকা ধরার উপায় থাকছে না। ব্যাংকে নিয়ে যাওয়ার পর জানা যাচ্ছে এসব টাকা জাল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, জাল টাকা কারবারিদের রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সময় অভিযান চালায়। বিভিন্ন সময় জাল টাকা কারবারিদের গ্রেফতার ও বিপুল পরিমাণে জাল টাকা ও জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হচ্ছে।
পুলিশ বলছে, আগে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জাল টাকা তৈরি করে ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতো। বর্তমানে অধিকাংশ কারবারি তাদের কৌশল পাল্টে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় আস্তানা গেড়ে জাল টাকা তৈরি করছে। এসব কারখানা দুর্গম এলাকায় হওয়ায় অভিযান চালিয়েও খুব একটা সফলতা পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত সোমবার সরেজমিনে রাজধানীর চাদনী চক, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট ও ঢাকা নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই অধিকাংশ দোকানে জাল টাকা ধরা পড়ছে। কখনও ক্রেতার সামনে আবার কখনও ক্রেতা চলে যাওয়ার পর জানা যাচ্ছে এসব জাল টাকা। এতে লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
চন্দিমা সুপার মার্কেটের প্যান্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, চক্রটি এমনভাবে জাল টাকা ঢুকিয়ে দেয়, যা স্বাভাবিকভাবে বোঝার উপায় থাকে না। তারা অনেক সূক্ষ্মভাবে জাল টাকার কারবার করে। যখন সাধারণ ক্রেতাদের অনেক ভিড় তৈরি হয়। তখন চক্রের একাধিক সদস্য দোকানের স্টাফদের নানাভাবে ব্যস্ত রেখে জাল টাকা দিয়ে দেয়। ফলে ধরার সুযোগ থাকে না। নিউ সুপার মার্কেটের তানিয়া ফ্যাশনের ম্যানেজার সুমন বলেন, জাল টাকা চক্রের কিছু নারী সদস্যও রয়েছে। তারা কেনাকাটার নামে দোকানের স্টাফদের বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখে। কিছু সময় আমাদের প্রচ- বিরক্ত করে তুলে। এ ছাড়া তাদের পোশাক ও আচার-ব্যবহারও অনেক ভালো থাকে। ফলে জাল টাকার সন্দেহ থাকে না কিংবা চেক করার সুযোগ থাকে না।
এ বিষয়ে নিউ সুপার মার্কেট (দ.) বণিক সমিতির প্রচার সম্পাদক আনিসুর রহমান রনি বলেন, জাল টাকা প্রতিরোধে আমরা ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে সতর্ক করছি। মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া জাল টাকা পেলেই সমিতির অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ঢাকা নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী গ্রুপের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, সারা বছরই জাল টাকা পাওয়া যায়। তবে ঈদ মৌসুমে একটু বেশি পাওয়া যায়। জাল টাকা চক্রের সদস্যরা ধুরন্ধর। তারা একসঙ্গে বেশ কয়েকজন একটি দোকানে ঢুকে কেনাকাটা করে এবং টাকা দেওয়ার সময় স্টাফদের নানাভাবে ব্যস্ত রাখে, যাতে টাকা চেক করে রাখার সুযোগ কম থাকে। তিনি আরও বলেন, জাল টাকা প্রতিরোধে আমরা প্রত্যেক ব্যবসায়ী ও স্টাফদের আরও সতর্ক করে তুলছি। কোনও কোনও ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন কিনছেন। তবে জাল টাকা প্রতিরোধে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন মনে করেন তিনি।
সম্প্রতি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার একটি দুর্গম এলাকায় জাল টাকার কারখানায় অভিযান চালায় র‌্যাব। গ্রেফতার করা হয় তিন কারবারিকে। এ সময় ২০ লাখ টাকার জাল নোট ও জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়। অন্যদিকে রাজধানীর বসুন্ধারা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোন। অভিযানে জাল টাকার কারবারি চক্রের মূল হোতা মোহাম্মদ ফয়েজ আহমেদ রাসেলসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ৮৩ হাজার টাকার জাল নোট ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
জানতে চাইলে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সহকারী পুলিশ কমশিনার (এসি) রাজন কুমার সাহা বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মার্কেটে এসব জাল নোট ছড়িয়ে দিতো চক্রটি। বেচাকেনা সরগরম হওয়ায় খুব সহজেই এসব জাল নোট ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে ছড়িয়ে দিচ্ছিল। পবিত্র রমজান মাস ও আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে সাধারণ মানুষের স্বার্থে জাল নোট কারবারিদের ধরতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।